নোনা জলের স্বাক্ষর

লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ২২ জুন, ২০১৩, ০৫:১২:০৫ বিকাল

নোনা জলের স্বাক্ষর

by Sumaya Tasnim (Notes) on Saturday, June 22, 2013 at 4:56pm

হোমপেজটা ইদানিং ভীষণ অচেনা লাগে শোভার। অনেক অচেনা মানুষ... অনুরোধের ঢেকি গিলতে গিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই এড করেছে অনেককে। শোভা মিশুক মেয়ে। কিন্তু এত্ত এত্ত মানুষের সাথে কথা বলে কুলিয়ে উঠতে পারেনা। আর অপরিচিতদের সাথে কথা বলা তো বাদ দিয়েছে সে কবেই। আজকাল চেনা মানুষগুলোও অচেনা হয়ে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল জগৎটাই বোধহয় এমনই... কেমন করে যেন একেকজন মানুষ মনের কোণে স্থান করে নেয়, আবার হঠাৎ একদিন নিজেরাই জায়গা ছেড়ে দেয়। আর খুজে পাওয়া যায়না......

শোভা নোটিফিকেশন দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। গত এক বছর যাবত অনলাইনে কবিতা লিখছে সে। প্রশংসা কুড়িয়েছে নেহায়েৎই কম নয়। শোভার বিশ্বাস সে কখনোই অতটা ভাল লেখেনা যতটা মানুষ বলে...

শোভা প্রায়ই কাঁদে। ভীষণ একাকিত্বে ভুগে অঝোরে কাঁদে।কেউ তার লেখার প্রশংসা করলে তার ভীষণ কান্না পায়। চোখের জলে মাখামাখি হয়ে একেরপর এক কাব্য লিখে চলে। তবে মুখোশী কাব্যের শব্দগুলোর আড়ালে লুকোনো বিবর্ণ অনুভূতিগুলো সবাই পড়তে পারেনা। অতিরিক্ত কঠিন শব্দ চয়নের দুর্নাম আছে যে তার। হলদে মলাটের ডায়রীটা আরেকবার বুকে টেনে নেয় শোভা। চাপা কষ্টে গাল দুটি লালাভ হয়ে ওঠে। এ ডায়রী ভরা কবিতা। একান্ত নিজের কবিতা... যে ছন্দগুলোয় কারো অধিকার নেই...

শোভা নিজেই কখনো ভাবেনি সে এত সিরিয়াসলি লেখালেখি করবে। কিন্তু একবছর আগে পড়া একটা ছোটখাট কবিতা অনেককিছু বদলে দিয়েছে তার। কবিতার প্রতি কখনোই খুব বেশি আকর্ষণ ছিলনা তার। কিন্তু এক বিকেলে কোন এক অখ্যাত কবির ছোট্ট একটা কবিতা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে যায় সে। সে জানেনা সামান্য একটা কবিতায় কি ছিল, কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত আকর্ষণে প্রতিটি ছন্দ যেন বারবার হ্নদয়ে বেজে ওঠে...

একদিন কবির সাথে বন্ধুক্ত হয় তার। ছোট ছোট শব্দমালায় সমস্ত আবেগ ঢেলে দিয়ে কথা হয় তার সাথে। পরিণত বয়সের প্রথম প্রণয়ের আবেগ প্রকাশ করে সে। কবি না করে দেয়। বাচ্চা মেয়ের ঠুনকো আবেগ ভেবেই হয়ত কঠিন কিছু কথাও শুনিয়ে দেয়। কিন্তু কথা হতে থাকে। কবিও কি তাকে পছন্দ করে? নইলে কথা বলে কেন? ছেলেমানুষীতে হাসে কেন?

শোভা আশা-নিরাশার দোলাচলে ভাসে... একদিন হুট করে কবি চুপ হয়ে যায়। ম্যাসেজের কোন রিপ্লাই আসেনা। শোভা দিন-রাত ভার্চুয়াল চিরকুটের বাক্সটা খুলে পড়ে থাকে। আগের কনভারশেসনগুলো পড়তে পড়তে মুখস্ত করে ফেলে। কিন্তু কবি আর কথা বলেনা... শোভা জানে, মানুষটা আছে। কবির এক্টিভিটি কমে যায়। শোভা অপরাধবোধে ভোগে... পুরোনো লেখাগুলোই বারবার পড়ে।

তারপর প্রবল অভিমানে একদিন বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দেয় তাকে। তার লেখাগুলো পড়ার আর কোন দরজা থাকেনা... কিন্তু বেশিদিন থাকতে পারেনা শোভা।আবার রিকোয়েষ্ট পাঠায়। বারবার পাঠায়। কবি নিশ্চুপ। শোভা কবিতার তৃষ্ণায় ছটফট করে...

একসময় নিজেই পাগলের মত কবিতা লিখতে থাকে...

আজ কবিকে ব্লক করেছে সে। শোভা চায়না একটা কবিতার আশায় থাকতে। জানে, কবির কাব্যে তার স্থান হবেনা কোনদিন... প্রথম আবেগের ক্ষত ভোলা যায় কিনা জানা নেই, তবে শোভা প্রাণপন চেষ্টা করে...

রুক্ষ কণ্ঠে ফোনটা বেজে ওঠে। ভাঙ্গা কণ্ঠে সালাম দেয় শোভা। ওপাশ থেকে খুশি খুশি গলায় একটা নারী কণ্ঠ বলে, "কি খবর তোমার? তোমার আজকের লেখাটা পড়লাম। তুমিতো ভাল লেখই। কিন্তু আজকেরটা দারুণ হয়েছে! কিপ ইট আপ। আর শোন, এই সপ্তাহের মধ্যে যে তিনটা লেখা দেয়ার কথা ছিল, সেগুলোর কথা প্লিজ ভুলে যেওনা। দয়া করে এবার আর হেয়ালি করোনা। ওকে? -আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।

কোনমতে শব্দটা উচ্চারণ করে ফোনটা কেটে দেয়। তার বুক ভাঙ্গার শব্দ সে কাউকে শোনাতে চায়না। কাউকে না......

বিষয়: বিবিধ

৯৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File