------ ইতি, একজন ফররুখ ভক্ত

লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ১০ জুন, ২০১৩, ০৫:১২:৩০ বিকাল

শাহবাগের ঐতিহাসিক মুভমেন্ট! শুরু হওয়ার পর আমাদের ক্লাস নিতে আসলেন একজন নতুন বাংলা শিক্ষিকা। চেহারা দেখেই খানিকটা আঁচ করলাম বেশ জয্‌বা সম্পন্ন পলিটিক্যাল কর্মী। কিছুক্ষণ কথা শুনে শিওর হলাম যে, কট্টর বাম। যাহোক, কাকতালীয় ভাবে ওনার সেদিন ফররুখ আহমেদের 'পাঞ্জেরী' কবিতাটি পড়ানোর কথা। উনি পড়ানো শেষ করে বেশ আক্ষেপের সাথেই বলতে শুরু করলেন,

আমাদের দূর্ভাগ্য, যে ফররুখের মত কবির কবিতা আমাদের এখনো পড়াতে হয়! স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে যে গুটিকয়েক মানুষ ছিলেন, ফররুখ ছিলেন তার একজন! আর তিনি তার কাব্যে অযাচিতভাবে আরবি, ফরাসি শব্দ জোর করে ঢুকিয়েছেন।

আরো অনেক কিছুই বললেন। মনে হচ্ছিল, তার কলিজার সমস্ত বিষ তিনি তার অজ্ঞ ছাত্রীগুলোর ওপর উগরে দিচ্ছেন।

এই ধরনের শিক্ষকদের প্রতি আমার কোন প্রকার শ্রদ্ধা নেই। যারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে একজন শক্তিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে অবলীলায় দলবাজির কুৎসিত খেলায় ফেলে দিয়ে তাঁর অমূল্য প্রতিভাকে তুচ্ছজ্ঞান করতে পারেন।

লেখার ক্ষেত্রে আমি যার লেখনি অনুকরণ করি, তিনি "ফররুখ আহমদ।" ওনার লেখা আমি পড়তে বসি পেন্সিল আর বাংলা ডিকশনারী নিয়ে। আমার রুমের দেয়াল জুড়ে ওনার একেকটি কবিতার ছন্দ তুলে রেখেছিলাম।

তারপর যখন ধড়পাকড় শুরু হল, একদিন বড় মামা এসে রুমের অবস্থা দেখে বললেন,

"এইযে বিপ্লবী, আপাতত এই লাইন গুলো তুলে ফেলো। নাহলে পুলিশ আসলে আর কাগজপত্র খোজা লাগবেনা।"

ওটা ছিল কষ্টকর কাজ। ওনার প্রতিটা ছন্দ আমাকে অনুপ্রাণিত করত।

"হানো দরিয়ার মরু বিয়াবানে রাতের তুফানে সুর্যতীর,

স্থির হয়ে যারা মরিতেছে তারা তোমার আগুনে হোক অধির।"

কিংবা,

"প্রমোদ-বিলাসী সমতলচারী যারা

শুনতে চায়না পাহাড় পথের ডাক,

ঈগলের সাথি হয়না ঈগল ছাড়া

আস্তাকুড়ের ছলনাকুশল কাক।"

"জিহাদের মাঝে জানি শুধু আছে জিন্দিগানি,

চলো সেই পথে মুক্ত প্রাণের হে সন্ধানী!

পাড়ি দাও স্রোত কঠিন প্রয়াসে অকুতোভয়

এই নিশীথের তীরে হবে গের সুর্যোদয়।"

"কা'রা বাধা দেয়? কূপমন্ডুক কে ভীরু প্রাণী?

চার দেয়ালের সীমানার ঘের মোরা না জানি!

মুক্ত ভোরের প্রথম সূর্য চির আযাদ!

পাল তুলে দাও, ঝান্ডা ওড়াও; সিন্দাবাদ!"

"নব সৃষ্টির বুনিয়াদ হ'ল শুরু

আমরা ক'জন কারিগর একসাথে

গড়ি বুনিয়াদ একাগ্র সাধনাতে।।

এ বুনিয়াদের প্রতি ইটে আর

প্রতিটি পাথরে লেখা

সৃষ্টি-মুখর সজীব মনের

তপ্ত রক্ত লেখা,

নতুন মিনার, রঙ্গিন খিলান

উঠবে ভিত্তি পরে

আমাদেরই বিশ্বাসে।।"

লিখে শেষ হবেনা...............

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File