জীবনের পথে, জীবনের খোজে...
লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ১০ জুন, ২০১৩, ০৯:৫০:১৯ সকাল
জীবনের পথে, জীবনের খোজে...
by Sumaya Tasnim (Notes) on Saturday, June 8, 2013 at 9:20pm
১.
দেখাদেখির বিষয়টা বরাবরই ভয়ংকর লাগে মুনিয়ার। বাপরেহ! কাজিনের বিয়ের আগে ওকে দেখানো নিয়ে কি কান্ডটাই না হল! তার উপর একবার হলে এককথা। শেষমেষ বোনের অবস্থা দেখে নিজেরই কান্না পেত। এদিকে আব্বা-আম্মার হাবভাব ও খুব একটা সুবিধার না। সেটা বোঝার পর থেকে তো রীতিমত আতংকের মধ্যে দিন কাটছে! অবশেষে বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় বারান্দায় গুটিসুটি মেরে আয়েশ করে কফি খাওয়াটাকে ভেস্তে দেওয়ার কুমতলবে আগমণ ঘটল মায়ের। হাবভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিশাল প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। অতঃপর মায়ের প্রথম প্রশ্ন,
-তোর কি কোনো পছন্দ আছে?
-এটা আবার কি প্রশ্ন? তুমি জাননা?
-জানি। আমি সেটা বুঝাইনি। এমনিতে কাউকে ভাল লাগলে বলতে পারিস।
-না।
গাল ফুলিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে বলল মুনিয়া।
-তোর জন্য একটা প্রস্তাব এসেছিল......
- দেখো আম্মু, একশজনের সামনে সপ্তাহে তিন দিন সং সেজে ইন্টারভিউ দেয়ার মত মেয়ে আমি নই, আমার পক্ষে এটা সম্ভব ও না।
- আহহা...... পুরো কথা না শুনে লেকচার দিচ্ছিস কেন?
বিরক্ত কন্ঠে বললেন মা।
নেহার বিয়েতে ওর এক বান্ধবীর কথা মনে আছে? ওইযে..., নামাযের জায়গা খুজছিল... তুই আর ও তো একসাথেই বসেছিলি। ওর বড় ভাইয়ের জন্য ওর মা কথা বলেছিলেন... ছেলে তোকে দেখেছে।
-হ্যা...!!! আমাকে দেখেছে মানে?!!! এইটা কি বললা?!
-দেখেছে মানে আমরা ছবি-টবি দেইনি।অনুষ্ঠান শেষে একনজর দেখেছে।
-বাহ! তাতেই পছন্দ হয়ে গেল?!
-সবাই তো আর চেহারা দেখেনা। যাহোক, বায়োডাটা রেখে গেলাম। তুই চাইলে ছেলেটা একদিন কথা বলতে চায় তোর সাথে।
-আরে! আমি কি বলেছি নাকি যে, আমি রাজি আছি?! মানুষের বয়স তো ফুরিয়ে যাচ্ছেনা, আর আমার বয়সই বা কত হল!!
-দেখ, তুমি খুব ভাল করেই জানো এসব বিষয়ে জোর-জবরদস্তি করার মানসিকতা আমার বা তোমার আব্বার কারোই নেই। তুমি প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছ, আর এ সময় আমাদের কাছে একটা ভাল প্রস্তাব এসেছে, একারণেই তোমাকে বলা। কেননা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) সুপাত্রের প্রস্তাব ফেরাতে নিষেধ করেছেন। দ্বীনদারী আর পরিবারের দিক থেকে ছেলেকে তোমার আব্বা পছন্দ করেছেন। সবচেয়ে বড়কথা, ছেলেও তোমাকে সেদিক থেকেই পছন্দ করেছেন। আর তোমার যদি অন্যকোন চাহিদা থাকে, তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা তোমাকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। উচিৎ-অনুচিৎ তুমি আমাদের চেয়ে কম বোঝোনা। আচ্ছা আমি গেলাম, চুলায় তরকারি।
বাপরেহ!! আম্মু এত সিরিয়াস! এতবড় লেকচার শুনে তো কলিজা ধুক্পুক্ করছে। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পা দিলাম মাত্র, আর এখনই আম্মু এইভাবে বাড়ী চাড়ার নোটিশ ধরিয়ে দিল?!!!
হাসিও আসছেনা, কান্নাও আসছেনা।
-আপু, ছেলেতো সুন্দরই!
চমকে উঠে রুমের ভেতর তাকিয়ে দেখল, একটা খাম হাতে দাঁত কেলিয়ে হাসছে জিনিয়া।
-কি! দাড়া, ওই! ভাগতেছিস কেন? নিয়া যা ওইটা! তোর পছন্দ হইলে আম্মারে বলি। ফাজিল মেয়ে কোথায়কার!
কত্ত বড় বেয়াদ্দপ হইছে বড়দের সাথে ফাইজলামি করে!
জিনিয়া ততক্ষণে পগারপার।
এইবার ধিরে ধিরে কান্না পাচ্ছে মুনিয়ার। মানে কি! আম্মু এই ফাজিলটারেও বলে দিছে? এটা-ওটা, টুকটাক কতকিছু করার শখ ছিল...... সবকিছু বাদ দিয়ে অপরিচিত একজনের সেবা করে জীবন কাটিয়ে দেবো?! এই জন্য আসছিলাম দুনিয়ায়... হু...
বিছানার উপর রাখা খামটাকে এবার জন্মের শত্রু মনে হচ্ছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানার উপর বসে পড়ল মুনিয়া।
"আল্লাহ, এমন কোন পরীক্ষার সম্মুখীন তুমি আমাকে কোরোনা যেটায় উত্তীর্ণ হওয়া আমার জন্য কষ্টকর...
অনেকক্ষণ যাবত খামটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে অবশেষে কাপা হাতে তুলে নিল। ছবিটার দিকে না তাকিয়ে উলটে বিছানায় রাখল। জনাবের সুরতের প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই। বায়োটা পড়ল, তারপর চুপচাপ আবার খামে ভরে রেখে দিল।
এইটা দিয়ে আমি কি বুঝলাম?
কিচ্ছুনা।
তাহলে এইটার কি দরকার ছিল?
কোনো দরকারই ছিলনা। আম্মা খামাখাই দিয়ে গেছে। মাঝখানে আমার সবার সাথে রাতের খানা খাওয়া বরবাদ। ধুর!
বরং একটা ঘুম দেই নামায সেরে।
২.
- তোকে না বলি, সন্ধ্যা করতে না। তাও এত দেরি করিস...
-হু।
-আচ্ছা তুই তো কিছু বললি না। ছেলেটার মা পেরেশান হয়ে আছেন।
-ছেলেটার মা বলছো কেন আম্মু! আন্টি বলল না..., ওনার ছেলেটাই পেরেশান......
বলেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল জিনিয়া।
-তুই চুপ কর! ফোনে কান পাততে বলেছি তোকে!
জিনিয়াকে মৃদু ধমক দিলেন আম্মু।
-উনি বলছিলেন একদিন আসবেন। যদি তুই ছেলের সাথে কথা বলতে না চাস।
-লাগবেনা। ছেলের যেদিন ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা আসুক। আমি কথা বলব। এই বাসায় থাকা তো সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।
চোখ লাল করে বলল মুনিয়া।
৩.
- আল্লাহ যদি আমাদের একত্রিত করেন, তবে আপনি আমার কাছে কেমন আচরণ আশা করেন?
সালামের জবাব দিয়েই মুনিয়া মুখে কুলুপ এটে বসে আছে দেখে খালেদই প্রথম প্রশ্ন করল।
-আমি এমন কাউকে আশা করি, যে পৃথিবীর যাবতীয় ফিৎনা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করেছে যাতে তার অর্ধাঙ্গীনীর হক্ নষ্ট না হয়। তেমনি ভাবে, যেমনি ভাবে আমি নিজেকে বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করেছি।
আমি এমন কাউকেই আশা করি, যার ব্যাপারে আমি আমার রবে্র কাছে নির্দিধায় সাক্ষী দিতে পারব যে তিনি একজন উত্তম সাথী ছিলেন, এবং আমি তার উপর সন্তুষ্ট।
আর তিনি কারো হক্ নষ্টকারী হবেন না।
অনেকক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চুপ থেকে অবশেষে মুখ খুলল খালেদ।
-আলহামদুলিল্লাহ, আমার আর কোন প্রশ্ন নেই। আপনার কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
-আপনি যদি এ শর্তগুলো পুরণ করতে পারবেন বলে মনে করেন, তবে আমার আর কোন প্রশ্ন নেই।
ধন্যবাদ বলে উঠে দাড়াল খালেদ নামের যুবকটি। যার চোখজোড়া কৃতজ্ঞতা, তাঁর মালিকের প্রতি......
(৮ বছর যাবত আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে কথা দিয়েছিলাম, তাঁকে নিয়ে একটা গল্প লিখব। কিন্তু লিখতে গিয়ে বুঝলাম, অতি ভাল মানুষদের কোন চরিত্রে আটকানো বেশ কঠিন। তবুও, গল্পটা মুনজিয়ার জন্যই... )
বিষয়: বিবিধ
১০৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন