আপনাকেই বলছি বোন!কেননা আপনি অমূল্য।

লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ১০ জুন, ২০১৩, ০৭:২৯:৪৯ সকাল

এইট কি নাইনে থাকাকালীন You tube এ একটা ভিডিও দেখেছিলাম কিভাবে ইউনিফর্ম পরেও স্টাইল করা যায়! কয়েকটা দেখে আমি মিশ্র অনুভূতি নিয়ে বন্ধ করলাম। স্টাইল বলতে তারা বোঝাচ্ছিল তাদের মতে' নিজেকে স্মার্টলি (মূলত আকর্ষণীয়) ভাবে উপস্থাপন করাকে। স্মার্টনেসের সংজ্ঞা আসলে কি? সাধারণ অর্থে স্মার্ট বলতে বুঝায় সুবেশধারী/ দক্ষ/ চালাক/ বুদ্ধিমান/ পরিচ্ছন্ন। আমি বলি যারা আত্মসচেতন। অর্থাৎ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি এবং সঙ্গে সঙ্গে নিজের পোশাকে নিজের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারেন, এমন ব্যক্তি।

আজকাল পুরো ফেইসবুকে অসংখ্য পেইজের জন্ম হয়েছে যেগুলোতে টিপস দেওয়া হয়, কিভাবে আপনি হিজাব করেও স্টাইল করতে পারবেন। কোন ধরনের বোরখা/ আবায়া/ হিজাব/ আওরাহ পরলে আপনাকে ভালো লাগবে, ইউনিক লাগবে,স্পেশাল লাগবে। কেউ কেউ সেল ও করছে অনলাইনে। এবার আমার ব্যাক্তিগত উপলব্ধি তুলে ধরছি।

ব্যক্তি হিসেবে আপনি যখন নিজের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন, তখন যদি নিজের চেয়ে অন্যের দৃষ্টি ভঙ্গি, মতামত, মন্তব্যকে বেশি প্রাধান্য দেন এবং নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী না হন, তবে কিন্তূ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই আপনি হোঁচট খাবেন।সেই বাবা- ছেলের মত, যারা তাদের গাধাটি নিয়ে বাড়ি ফিরছিল, আর তখন গাধার পিঠে বাবা উঠলেও কিছু লোক তিরস্কার করল, ছেলে উঠলেও অপর কিছু লোক ভৎসনা করল, আবার দুজনে উঠলেও কটু কথা শুনতে হল, আর উভয়ে নেমে গেলেও নানা মন্তব্য শুনতে হল।

সুতরাং আপনি নিজের বা অন্য যেকোন বিষয়ে যখন সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন অবশ্যই ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং পরবর্তীতে তার উপর দৃঢ় থাকবেন। ইসলাম ও আপনাকে এটাই শেখায়। আপনার সম্পর্কে স্রষ্টার দৃষ্টি ভঙ্গি কি সেটাই গুরুত্বপুর্ণ। সৃষ্টি কি বলল বা মনে করল তা নয়। আপনি যখন হিজাব বা পর্দা করা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন

(এজন্য আপনাকে বড়সড় একটি ধন্যবাদ!) তখন এ ব্যাপারে দৃঢ় হন। নিশ্চিত হন দুনিয়াবী কোন স্বার্থে, কোন ব্যক্তি/ গোষ্ঠীর চাপে কিংবা কোন ব্যক্তি বিশেষের মনরক্ষায় আপনি হিজাব করছেন না। কেননা এর কোন একটি কারণ বিদ্যমান থাকলে আপনার এতকষ্টের পরিশ্রম পুরোপুরি অর্থহীন। বিশ্বাস করুন, পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টকর কাজের একটা হলো সঠিক

হিজাব করা। কিন্তূ আপনি ভাবতেও পারবেন না এ কষ্টের ফল কত মিষ্টি!

এবার আসি হিজাবের স্টাইলের বিষয়ে। (যারা হিজাব করেনই নতুন ধরনের স্টাইল তৈরী করার জন্যে, এ কথাগুলো তাদের জন্য নয়।) যখনই আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হিজাব করার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন আপনার জন্য পরামর্শ হল, প্রথমেই পর্দা সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতগুলো আর এ সম্পর্কে বিশুদ্ধ যত হাদীস আছে সেগুলো একবার হলেও পড়ুন। তারপর সম্ভব হলে এ সম্পর্কে প্রখ্যাত ইমামগনের দৃষ্টিভঙ্গি জানুন। এ

সবটা উল্লেখ করতে গেলে লেখাটা অনেক বড় হয়ে যায়। তাই সহজ কথায় হিজাবের ছয়টি শর্ত তুলে ধরছি:

১) হিজাব এমন হবে যাতে সমস্ত শরীর ঢেকে যায়।

২) হিজাবের কাপড় মোটা হবে। যাতে শরীর দেখা না যায়।

৩) অনেক বেশী কারুকার্য খচিত, নকশাদার বা দৃষ্টি আকর্ষণকারী রঙের বা কাপড়ের হবেনা।

৪) ঢিলেঢালা হবে। এমন সংকীর্ণ হতে পারবেনা যাতে শরীরের অবয়ব বোঝা যায়।

৫) কাপড়ে কোন সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবেনা।

৬) পুরুষের বা ভিন্ন কোন ধর্মের বা গোত্রের পোশাকের সাদৃশ হবেনা।

¤আর এগুলোর পর যে তিনটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত:

১) শর্ট বা খাটো বোরখা।

২) এমন অলংকার ব্যবহার করা যাতে শব্দ তৈরী হয়, কিংবা কোনভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

৩) পূর্ণ হিজাব করেও আকর্ষণীয় ভাবে চোখ সাজানো। কিংবা হাতে/ পায়ে মেহেদি বা অন্যকিছু দিয়ে এমন কারুকাজ করা যাতে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।

আর একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই যেটায় অনেক কঠিন হিজাবী আপুরাও শৈথিল্য দেখান। কাছের কারো কিংবা নিজের বিয়েতে "একদিনের জন্যই তো!" ভেবে পর্দাহীন হয়ে যান! (অথবা এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন যাতে পর্দার লেশমাত্র থাকেনা।) আপু! এই নিশ্চয়তা আপনাকে কে দিচ্ছে যে, ওই দিনটিই আপনার জীবনের শেষ দিন নয়!

লেখাটি পড়ে ইতিমধ্যেই কিছু বোন হতাশ হয়ে গেছেন জানি। প্রথমত বাস্তব জীবনে এতকিছু খেয়াল করে চলা কিছুটা কষ্টসাধ্য। তাছাড়া মন থেকে না চাইলে একপ্রকার অসম্ভবই বলা যায়। আপু! এবার ভাবুন তো, আপনিতো কোন প্রদর্শনীর

বস্তু নন। তবে কেন আপনার কোন না কোন অঙ্গ প্রদর্শন করতেই হবে?! আপনি যেমন নিজের জন্য উৎকৃষ্ট কোন উপহারই

পেতে চান, তেমনই সেরা একজন উপহার হয়ে যাবার নিয়ত করুন না! আপনিই তো কারো দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করবেন,

কারো দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাজৎকারী হবেন, আপনিই তো হবেন কারো জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পত্তি! তবে কেন আপনার মূল্য কমাতে চাচ্ছেন ক্লাসে কিংবা বাসের ভীড়ে অচেনা কোন চোখজোড়ার তৃপ্তিদানকারিনী হয়ে? আপনি অমূল্য, এবং আপনি অমূল্য। আর এ অমূল্য রত্নকে যাবতীয় ক্ষতির হাত থেকে বাচাতেই আল্লাহ্ তায়ালা হিজাবের মতো ফলপ্রসূ প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্ আমাদের বোনদের অন্তরসমূহ প্রশস্ত করে দিন।

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File