আসলেই কি নিজে ভাল তো জগৎ ভাল!!!
লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ১২ মে, ২০১৩, ১১:৩২:৩৩ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
গত দু'বছর যাবত ফেইসবুক ব্যবহার করছে রাহাত। প্রথম যখন বড় ভাইয়া অফিশিয়াল কাজের জন্য নেট কানেকশন নিয়েছিল, যারপরনাই খুশি হয়েছিল সে। সদ্য এসএসসি দিয়ে কিছুই করার ছিলনা বলে ভাইয়াই খুলে দিয়েছিলেন একাউন্টটা। তবে শর্ত ছিল অতিরিক্ত বসা যাবে না, অনৈসলামিক কিছু দেখা যাবে না। আর কি! আনলিমিটেড নেট পেলে যা হয়, তাই হল রাহাতের। দিন-রাত করে পড়ে রইল! প্রথম প্রথম পানসে লাগলেও একসময় দেখল, এ জগৎটা আসলেই অনেক বড়। যা ইচ্ছে বলা যায়, করা যায়, যার সাথে ইচ্ছে কথা বলা যায় আরও কত কি! কিছুটা লাজুক প্রকৃতির হওয়ায় কোনো মেয়েকে এড করত না প্রথম প্রথম। কিন্তু পরে ভাবল, নাহ সবাই তো করছে, কথা না হয় না বললাম! কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠে না। স্বভাব সুলভ আকর্ষণে দু-একজনের সাথে কথা হতেই লাগল। প্রথম প্রথম নার্ভাস লাগলেও পরে বেশ সাবলীল গতিতেই ফেইসবুকিং চালিয়ে গেল রাহাত। ফেইসবুকে মজা পাওয়ার জন্য কিছু রসিক বন্ধু আর পেইজে লাইক দেওয়া থাকলেই হয়। অনায়াসে কেটে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ভালই কাটছিল কয়েকমাস, কিন্তু হটাৎই একটু অদ্ভুত নাম সম্বলিত একটা পেইজ দেখে কিছুটা অস্বস্তি আর কৌতুহল নিয়েই ঢুকে পড়ল দেখার জন্য। কিন্তু ঢুকে এতটাই বিব্রত হল যে, লজ্জা আর ভয়েই কুড়কে গেল সে। ভাইয়া যদি জানতে পারেন আস্ত রাখবেননা আমায়।
বন্ধুদের আড্ডায় কথাটা তুলতেই হো হো করে হেসে দিল সবাই। তুই কি আজীবন পোলাপাইন থাকবি নাকি! গ্রো-আপ ম্যান...! এখনো কি ডিজনীর কার্টুন দেখবি নাকি!
সেই দিনের আলোচনার পর কিছুটা চিন্তিত হয়েই বাড়ি ফিরেছিল রাহাত। অতি কৌতুহলে আর বন্ধুদের মত গ্রো-আপ হবার জন্যই হয়ত আবার খুজে বের করল পেইজগুলো। ভীষণ ঘেন্না আর অস্বস্তি লাগলেও কোউতুহল দমিয়ে রাখতে পারল না। আর এভাবেই একটা সময় দেখা গেল সবার মতই গ্রো-আপ হয়ে উঠেছে রাহাত। এতটাই গ্রো-আপ করেছে যে, আগের মত তাকে আর কোনো সৃজনশীল কাজে দেখা যায় না। গঠনমূলক কোনো বইও দেখা যায় না পড়তে। বাগান করা, ডাকটিকিট সংগ্রহ আর নানা রকম শখের সবটাই বিসর্জন দিয়ে তাকে সময় কাটাতে দেখা যায় নেটে আর এক শ্রেণীর বন্ধুদের আড্ডায়।
এখন একসময়ের প্রতিভাবান, অমায়িক আর লাজুক রাহাতকে খুজে পাওয়া যায়না। বরং রাহাত এখন গ্রো-আপ! শুদ্ধ ভাষায় যাকে বড়জোর বখাটে ছেলে বলা যায়। যাকে নিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে বিব্রত তার পরিবার।
উপরের গল্পটা আবার অন্যরকম ও হতে পারত। রাহাত কিছু ভাল মানুষের সংস্পর্শে এসে আরো ভাল একজন মানুষে পরিণত হতে পারত। কিন্তু অসঙ্গতি তুলে ধরাই এ লেখার উদ্দেশ্য।
প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি জন্ম দিয়েছে নানা অনাকাংখিত বাস্তবতার। কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষ সব ধরনের পরিবেশই অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। বলা বাহুল্য,রাহাতের মত অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েরা ভার্চুয়াল জগতে এসব ভুলগুলো করার প্রথম কারণ অভিভাবকদের অসতর্কতা। আপনি আপনার উপদেশনামা সন্তানের সামনে ঝুলিয়ে দিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ করলে তা আর কতটুকুই বা ফলপ্রসু হবে! ফসলের সর্বোচ্চ উৎপাদনের জন্য যেমন সার্বক্ষনিক পরিচর্যার প্রয়োজন, তেমনি একটি ছেলে বা মেয়েকে রাষ্ট্রের সম্পদে পরিণত করতে হলে সার্বক্ষনিক পরিচর্যা প্রয়োজন তারও। নয়তো আগাছা আর পোকার আক্রমনের ন্যয় শয়তানের ওয়াসওসা আর অসৎসঙ্গে অনায়াসেই ধংস হতে পারে একটা সম্ভাবনা।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয় সম্পদ এ সন্তানদের রক্ষায় কোনো সুনির্দিষ্ট আইন-কানুন নেই। ফলে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের শিক্ষা সম্পুর্ণ বিকৃতভাবে পৌছাচ্ছেবয়সসন্ধির মত গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করা ছেলে-মেয়েদের কাছে। অভিভাবকদের ট্যাবু দৃষ্টিভঙ্গিও এর এওটা কারণ।
সর্বপরি ইন্টারনেটের কার্যকারিতা আর ইতিবাচক দিকগুলো যথার্থভাবে তুলে না ধরায় নিজে থেকে কিছু করার ধৈর্য অনেক কিশোর-কিশোরীই রাখতে পারেনা। আর যাদের কাছে টাইমপাসই মুখ্য, তারা ইবা ইতিবাচক ক্ষেত্রগুলোতে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে? এ ধরনের অসংখ্য গল্প প্রতিদিন আমাদের আশে-পাশে তৈরী হচ্ছে, যার খুব কমই আমাদের চোখে পড়ে।
বিষয়টা শুধু নিজে ভাল থাকার নয়, বরং নিজ্রের সমবয়সীদের আর অনুজদের সতর্ক করার ও।আপনি নিজে ভাল থাকছেন, ভাল পেইজে লাইক দিয়ে আর ভাল মানুষদের বন্ধু বানিয়ে নিজের জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করছেন, আর আপনারই সাথের মানুষটি সজ্ঞানএ বা অজ্ঞানে জড়িয়ে পড়ছে অনাকাংখিত কিছু বিষয়ে,যেটা কখনোই কাম্য নয়।
এখানে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু করার আছে।আর করণীয়ের ক্ষেত্রে আমি অগ্রজ-অনুজের বিভাজন করতে চাইনা। কেননা ছোটরাও কম ভূমিকা রাখতে পারে না।
আপনি যতই ইসলাম প্রচার করুন না কেন, যতই ইসলাম প্রচার করুন না কেন সেটা খুব বেশি ফলপ্রসু হবেনা যদি নাফসের দাসত্ব করার প্রবণতা ব্যক্তির মাঝে বেশি থাকে। আল হামদুলিল্লাহ, অসংখ্য ইসলামী এক্টিভিস্ট এখ প্রতিদিনই অনলাইনে যুক্ত হচ্ছেন, দাওয়াতের মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু তবুও, অনৈসলামী কার্যকলাপের তুলনায় তা যেন সীমিতই রয়ে যাচ্ছে। যেটার অন্যতম কারণ ইসলামিস্টরা বেশিরভাগই সমমনা ভাই-বোনদের মাঝেই নিজস্ব একটা গন্ডি তৈরী করে নেয় যার কারণে কাজগুলো নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়।
যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁদের মুবারকবাদ, সাথে এ বিষয়েও নজর দেয়ার অনুরোধ থাকলো। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করে নিন। আমীন।।
বিষয়: বিবিধ
১৫০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন