মনের আঁধার কালো মুছে করো আলোময়...
লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:১৩:১১ বিকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
কঠিন রকম মেজাজ খারাপ করে আধাঘন্টা যাবত অন্ধকারে বসে আছে শায়লা। সে নিজেও জানে এই বসে থাকাটা কতটা অমুলক। এক ধরনের অনুশোচনা, বিরক্তি আর মন খারাপের অনুভূতি... ব্যাপারটা ফেইসবুক নিয়ে।
শায়লা যথেষ্ট ধার্মিক, উন্নত মানসিকতার আর স্পষ্টবাদী মেয়ে। ছবি দেয়া তো দূরের কথা, কখনো কোনো ছেলের সাথে চ্যাট পর্যন্ত করেনা। সব বিষয়েই সচেতন। তবে তার কোন দূর্বলতার কারণে এমনটা ঘটল সেটাই চিন্তার বিষয়। কেমন করে এই ভাইয়ের সঙ্গে এত কথা হয়ে গেল... দরকারী কথা বলতে বলতে একসময় বেদরকারেও কথা হতে লাগল। যখন দেখল যে উনি ইসলামী বিষয়গুলো সম্পর্কে বেশ ভাল জ্ঞান রাখেন, তখন ভেবেই নিয়েছিল সমস্যা হবেনা। কিন্তু যে শয়তান মানুষের শিরায় শিরায় চলাচল করে, সে শয়তানই তাকে আল্লাহর বেধে দেয়া সীমার কথা ভুলিয়ে দিল। নাহ! অসহ্য এক মনোযাতনায় কুড়কে গেল শায়লা। ইয়া আল্লাহ! আমার দ্বারা এমন একটা ভুল কেমন করে হল! লজ্জিত কন্ঠে আল্লাহকে স্বরণ করল। আমার ভুলকে ক্ষমা করো মালিক!
উপরের গল্পটি এক কঠিন বাস্তবতা! যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হিসেবে যেসব দ্বীনী ভাই-বোন ফেইসবুক ব্যবহার করছেন, এবারের লেখাটা তাদের জন্য বিশেষভাবে লিখলাম।
সময়ের সাথে সাথে অসংখ্য ইসলামী এক্টিভিষ্ট নেটে কাজ় শুরু করেছেন। বাস্তবিকই বর্তমান পরিস্থিতিতে নেটে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কখনো কখনো শায়লার মত আমরাও ভুলে যাই, একটা সদ্বুদ্দেশ্যেই আজ এই ভার্চুয়াল জগতে পা রাখা। যেটা বাইরের জগতের চেয়ে কম তো নয়ই, বরং অনেক ক্ষেত্রে অনেক বেশিই ফিৎনাময়। তথাপি এই পথে বক্তব্য সহজে কানে পৌছানো যায় বলেই এ জগতে কাজ করা। কিন্তু যে আল্লাহর অর্পিত দায়িত্ব পালনে এখানে আসা, সে আল্লাহকেই যদি এ জগতে এসে ভুলে বসি, তবে এর চেয়ে পরিতাপের বিষয় আর কি হতে পারে! একটা কথা ভুলে গেলে চলবেনা, আপনি নিতান্তই সাধারণ মানুষ হলে আপনাকে গোমরাহ করতে শয়তান যতটা শক্তি ব্যয় করবে, একজন বুঝদার আর জ্ঞান্সম্পন্ন ব্যক্তি হলে নিঃসন্দেহে তার চেয়ে বেশি শক্তি ব্যয় করবে। যেহেতু আপনি অন্যদের তুলনায় সহজে মানুষকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। আর বাস্তব ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। যেসব ভাই-বোন এ জগতে কিছুটা পরিচিত, যাদের কাজের ফলে বা লেখা পড়ে অনেকেই সঠিক পথে ফিরে আসেন, তারা স্বাভাবিক ভাবেই অনেকের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন। আর বিপত্তির শুরুটা সেখান থেকেই। দ্বীনি ভাই-বোনদের আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের কারণে স্বাভাবিক ভাবেই অনেকে প্রভাবিত হন, আর এই প্রভাবিত হওয়াটাকেই শয়তান তার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। আপনার খ্যাতির কারণে আপনি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়া মানে অনেক বড় পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, দ্বীনি ভাই-বোনেরা কখনোই কোনো ধরনের অনাকাংখিত সম্পর্কে জড়িয়ে সুখী হতে পারেন না। কেননা ক্ষণে ক্ষণে তাঁদের মনে আল্লাহর নির্দেশাবলি ভেসে ওঠা মাত্রই তাঁরা অনুশোচনায় ভুগে ফের সঠিক পথে ফিরে আসতে চান।
আর একবার কেউ এ দোলাচালে পড়ে গেলে তার জন্য ফিরে আসাটা বেশ কঠিনই। আমি কারো উদাহারণ টানছিনা, বাস্তবে অনেকেই এধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকেন। তাই একটাই কথা, হ্নদয়ে হাহাকার রাখবেন একজন উত্তম সঙ্গীর, আর প্রায়ই কারো না কারো সাথে কথা বলে সময় কাটাবেন, এ ব্যাপারটা স্রেফ দ্বিমুখীতা। তেমনই হোন, যেমন পরিচ্ছদ চান!
আরেকটা বিষয় হল দ্বীনি সম্পর্ক। অনেক ভাই-বোনই দ্বীনি ভাই-বোন হিসেবে কথা বলতে চন। না, এ ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই। যেটা করতে পারেন, যেকোনো রকম অপ্রয়োজনীয় কথা পরিহার করুন। আর যদি গায়রে মাহরাম কারো সাথে কথা বলতে হয়, চেষ্টা করুন পাশে কাউকে রাখতে কিংবা এমন জায়গায় বসে কথা/চ্যাট করতে, যেখান থেকে সহজে দেখা যায় আপনি কি করছেন। এতে করে হয়ত আল্লাহ শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে আপনাকে রক্ষা করবেন। ভাই/বোন হিসেবে আপনি যতই এড করুন না কেন,, আল্লাহর নিয়মে তিনি কখনোই আপনার পরিবারের সদস্য হবেন না।
অপর একটি বিষয় হল বন্ধুত্ত্ব। প্রতিদিন অনেকেই ম্যাসেজ পান,"বন্ধু হতে পারি কি?" ধরনের। গায়রে মাহরামদের সঙ্গে বন্ধুত্ত্ব না থাকলে দ্বীনি ভাই-বোনদের জীবনে কখনো "তুই ছাড়া লাইফ ইনপসিবল" টাইপের অবস্থা হয় না। তাঁদের সবচেয়ে বড় বন্ধু তো আল্লাহ! তাই এ ব্যাপারে আল্লাহর নিয়ম মেনে চললেই ভাল।
সর্বশেষ যে বিষয়ে বলব, অনেকেই অনেক ভাই-বোনকে প্রস্তাব দেন। যার প্রতি আগ্রহী তার বিষয়ে জানতে চান কিংবা আকার-ইঙ্গিতে বোঝাতে চান। তাদের বক্তব্য হল, আমি তো নেক নিয়্যাতেই কথা বলতে চাচ্ছি!" ভাই/বোন, আপনি যেকথা ভেবে কথা বলতে চাচ্ছেন, সেই একই কথা ভেবে আরো দশজনই যদি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চায়, তবে কি তাদের সঙ্গেও মিষ্টি করে কথা বলাটা উচিৎ হবে!! আপনি যদি সত্যিই সদ্বুদ্দেশ্যে অগ্রসর হতে চান, তবে সাহস করে তার ওয়ালীর সাথে যোগাযোগ করুন। নইলে আপনার ওয়ালীকে যোগাযোগ করিয়ে দিন। " আগে বুঝবো, জানবো, আমার সাথে মানাবে কিনা দেখবো..." ইসলাম আপনাকে এই অনুমতি দেয়না। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে কথা না বলে তাঁর ওয়ালীর সাথে কথা বলতে চান। উক্ত ভাই/বোন বুঝদার হলে তিনি তাতে দ্বিমত করবেন না আশা করা যায়।
যে হাদীসটা আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে, মন ভরিয়ে দেয়, সরল পথে চলতে উৎসাহত করে, সে হাদীসটা দিয়ে ইতি টানছি,
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, "যখন আল্লাহ তায়ালা কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন তিনি জিবরাঈল (আঃ)-কে ডেকে বলেন, আমি অমুক বান্দাকে ভালবাসি, তাই তুমিও তাকে ভালবাসো। তখন জিবরাঈল (আঃ) তাকে ভালবাসতে থাকেন। অতঃপর তিনি আকাশে ঘোষণা করে দেন, আল্লাহ তায়ালা অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন। অতএব তোমরাও তাকে ভালবাসো। ফলে আসমানবাসীরাও তাকে ভালবাসতে থাকেন। অতঃপর ভূপৃষ্ঠে তার গ্রহনযোগ্যতা স্থাপন করা হয়।
পক্ষান্তরে আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ঘৃনা করেন, তখন তিনি জিবরাঈল (আঃ)-কে ডেকে বলেন, আমি অমুককে ঘৃণা করি। সুতরাং তুমিও তাকে ঘৃণা কর। তখন জিবরাঈল (আঃ) তাকে ঘৃণা করতে থাকেন।অত;পর তিনি আসমানবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ তায়ালা অমুক ব্যক্তিকে ঘ্রিণা করেন। তাই তোমরাও তাকে ঘৃণা কর। তখন তারাও তাকে ঘৃণা করতে থাকে। এরপর ভূপৃষ্ঠেও তার প্রতি ঘৃণা স্থাপন করা হয়।" (মুসলিম)
একবার ভাবুন তো! আপনার জীবনে এর চেয়ে আনন্দের দিন আর কোনটা হবে যেদিন আল্লাহ ঘোষণা করবেন যে, তিনি আপনাকে ভালবাসেন! মুমিনের জীবনে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কি হতে পারে?
বিষয়: বিবিধ
১২৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন