একান্ত উপলব্ধি-২
লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ২৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:১৪:৩২ দুপুর
আমার গান শেখাটা একেবারেই ঘরোয়া। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ একেবারেই নেই। আব্বু ছাত্রজীবনে গাইতেন, আমিও ছাত্রী জীবনে গাইতে শুরু করলাম। :D প্রথম প্রথম অবশ্য ষ্টেজে উঠে হাবা-গোবা চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম... কিন্তু যখন দু-একটা পুরষ্কার পাওয়া শুরু করলাম, তখন আমার বান্ধবীর আম্মা প্রায়ই ওনার অফিসের বিভিন্ন প্রোগ্রামে নিয়ে যেতেন গান গাওয়ার জন্য। কোথাও বেড়াতে গেলেও রাখতে হত দু-একটা শোনানোর আবদার। আমি অবশ্য খুব একটা গাইতাম না অতি সংকোচে... ( আমি আবার বেসম্ভব লাজুক কিনা! :D )
সত্যি বলতে সে বয়স পর্যন্ত একেবারেই ধারণা ছিল না, সামান্য ক'টা গানের কলি কি করে হ্নদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে বেজে ওঠে। ধমনির শিরায় শিরায় আনে উদ্দিপনা। কেমন করে ক'টা সুরেলা ছন্দ অশ্রু দিয়ে চোখের দুকোল ছাপিয়ে দিতে পারে! কিংবা আশ্চর্য শক্তিতে মৃত ঈমানকে জাগিয়ে তুলতে পারে! নাহ, আমরা আধুনিক গানের শিল্পি ছিলাম না। আমরা ছিলাম আযানের ধনি্ থেকে অনুপ্রাণিত। সাদামাটা ক'টা লাইনে কি করে রাজ্যের মায়া লুকিয়ে থাকে, তা বোঝার ক্ষমতা তখন ছিলনা। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন গানের কথাগুলো আমার হ্নদয়েও ছাপ ফেলতে লাগল, তখন হঠাৎ ই একদিন বুঝলাম, কি অসীম শক্তি গানের! একটা গান শুধু গান নয়, একটি বিপ্লব। সংস্কৃতির ধারক, ক্ষেত্রবিশেষে ইসলামী সভ্যতার পরিচায়ক।
যুগের আবর্তনে একেরপর এক সভ্যতা বিলীন হয়ে যায়, সময়ের তীব্র গতির সঙ্গে পেরে ওঠে না বলে। এ গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলে সংস্কৃতি। কালের খেয়ায় পরিভ্রমণ করে চলে সভ্যতার পর সভ্যতা। বিভিন্ন জাতি বেঁচে থাকে তাদের সংস্কৃতির মাঝেই। যতক্ষণ পর্যন্ত জাতীয় সংস্কৃতিতে স্বকীয়তা ও মৌলিকত্ব বজায় থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বতন্ত্র আত্মপরিচয় নিয়ে একটি জাতি বেঁচে থাকে অন্য জাতি গুলোর মাঝে।
জাতি হিসেবে বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধ নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই আমার। আমার চোখে, বাঙ্গালী জাতীয়তা বা স্বাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য প্রতিবেশী ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মাঝে বহু আগেই বিলীন হয়ে গেছে। আর যেটুকুকে বাঙ্গালী সংস্কৃতি হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানী হচ্ছে, তা পুরোপুরি ইসলামী চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া বাঙ্গালী জাতির যে মানসিক সংকীর্ণতা রয়েছে, কিংবা সুকৌশলে তৈরী করা হয়েছে, তার ফলে আমরা প্রায়ই প্রকৃত রত্ন চিনতে ভুল করি। যেমন, শামসুর রহমানের কবিত্ব যতটা আলোচিত আল-মাহমুদ ততটা আলোচিত ও প্রশংসিত নন কেন? অথচ সাহিত্যের জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিমাত্রই আল-মাহমুদের লেখনিতে স্বতন্ত্র একটি ধারা খুজে পাবেন। যা বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। কিন্তু তাকে লাইম লাইটে কোন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আনা হয়না, সচেতন ব্যক্তিমাত্র তা জানেন। আর ফররুখ আহমদ -এর মত অসাধারণ কবির প্রসংগ এনে আমি তাঁর কবিত্বকে অপমান করতে চাইনা। তাঁর মত যোগ্য ব্যক্তিদের যথার্থ সম্মান দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
ইসলামী সংস্কৃতি আর বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে পৃথক করতে গিয়ে এমন অসংখ্য গায়ক, কবি আর সংস্কৃতির কর্ণধারদের আমরা সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছি। যার পুরো ক্ষতিটাই আমাদের। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে বাঙ্গালী সংস্কৃতিতে মুসলিম ও ইসলামী বিষয়বস্তু ও শব্দাবলির প্রাধান্য থাকবে এটাই ছিল স্বাভাবিক! কিন্তু দুঃখজনক ভাবে বর্তমান তরুণ সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিকদের মস্তিষ্কে যেটা স্থাপন করা হয়েছে তা হল, "ইসলামী মুল্যবোধ ও বিষয়বস্তু কিছুটা সেকেলে । কিংবা ইসলামের পরিভাষাগুলো আধুনিক সাহিত্য শৈলীর সঙ্গে বেমানান। কিংবা ইসলামী ধাচের লেখা দিয়ে পাঠককে আকৃষ্ট করা যায়না।"
যার ফলশ্রুতিতে তরুণদের সাহিত্য চর্চায় নর-নারীর বৈধ-অবৈধ সম্পর্ক, হ্নদয়ের ভাঙ্গা-গড়া, যাপিত জীবনের বাস্তবতা কিংবা একাকিত্বের বেদনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়ে যায়।
কিন্তু যে জাতির রয়েছে একটি পূর্ণাংগ জীবনবিধান, যে জাতি দিনে পাঁচবার আনুগত্যের শীর নত করে, সে জাতির সাহিত্য চর্চায় তাঁর জীবনবোধের কিছু অংশ প্রতিফলিত হবে না তা কি করে হয়! আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমাদের সংস্কৃতি ইসলামী সংস্কৃতি।আমাদের সংস্কৃতি যাবতীয় অশ্লীলতা মুক্ত। যার অন্যতম উদ্দেশ্য সুস্থ্য ধারার বিনোদন ও প্রজন্মকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া। যেহেতু সাহিত্য-সংস্কৃতি আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ, তাই আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য এতে অবশ্যই প্রতিফলিত হওয়া উচিৎ।
বিষয়: বিবিধ
১২২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন