হ্নদয় ভাঙ্গার গান
লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ২১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৫৮:৪০ দুপুর
হঠাৎই ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় ফুলে ঢোল হয়ে থাকা চোখ জোড়া নিয়ে উঠে বসল রুহানী। অবাক হল, যখন বুঝল বালিশটা নোনা পানিতে ভিজে আছে। এবার মনে পড়ল, অসম্ভব মিষ্টি একটা স্বপ্ন দেখছিল মাকে নিয়ে... বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করল আবার। কতদিন হল মায়ের মৃত্যুর? বছর দেড়েক তো হবেই। এর মধ্যে আজই প্রথমবার মাকে স্বপ্ন দেখলাম!......
দু-একটা করে পাখি ডাকতে শুরু করেছে। গুটি গুটি পায়ে খোলা বারান্দাটার এককোণে হাতদুটি কোলে নিয়ে বসে গুটিসুটি মেরে অনেকক্ষণ বসে রইল রুহানী। হঠাৎই মনে হল, এই মুহুর্তে চিৎকার করে কিছুক্ষণ কেঁদে বুকটা হালকা করা উচিৎ। যদিও কান্না থামানোর কেউ নেই... কত দ্রুতই না জীবনের রঙ বদলে গেল। পাঁচটা বছর আগেও পরিবারের ছোট মেয়ে বলে কি আদুরেই না ছিল! আর আজ! সবাই এতোটাই ব্যস্ত যে, কারো দেখার সময় নেই একলা একটা ফ্ল্যাটে কি করে দিন-রাত্রি পার করে রুহানী।
এবার ঠোঁট ফুলিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল রুহানী। এত্ত অভিমান কোথায় রাখবো আমি! কেন মা? কেন এত আদর করতে তুমি? তোমার অতিরিক্ত স্নেহ আমাকে আর স্বাবলম্বী হতে দিলনা... তুমি কি জানো! এই রুক্ষ স্বভাবের মেয়েটা রাস্তা-ঘাটে রোজই কারো না কারো চেহারায় তোমাকে খুঁজে ফেরে? তুমি কি জানো! প্রতিদিন সকালে চিরুনী হাতে আয়নার সামনে দাড়ালেই মনে হয়, এইতো! এখনি এসে বেনী করে দেবে... মা,... আমি সত্যিই জানতামনা, তোমাকে এত্ত ভালবাসি। জানলে এত্ত কষ্ট দিতামনা তোমাকে...... মা,... তুমি একটাবার ভাবলে না! তুমি চলে গেলে তোমার এই ছোট্ট মেয়েটাকে কে দেখবে!... আমি এখনো ঘরময় তোমার গন্ধ পাই মা... মনের ভুলে প্রায়ই শুনি আমায় বকছো... মা, এখন দুই বেলা না খেয়ে থাকলেও আমাকে কেউ বকে না... আমার আর খাওয়ার ক্ষিদে পায় না মা। ক্ষিদে শুধু তোমায় একবার দেখার। ক্ষিদে শুধু তোমার একটু খানি আদরের... মাগো,...... তোমার মত করে আমায় কেউ বোঝেনা এত্ত বড় পৃথিবীর...
কান্নার বেগ ক্রমেই বেড়ে যায় রুহানীর। সে হ্নদয় ভাঙ্গা কান্নার শব্দ ঢাকা পড়ে যায় আযানের ছন্দে...
( মা সম্পর্কে আমার বিশেষ কোনো অনুভূতি নেই। মায়া বা এ জাতীয় বিষয় থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার যথেষ্ট চেষ্টা করি। তাই, কখনো আম্মু খাইয়ে দিতে চাইলে ও আড় চোখে একবার তাকিয়ে বলি, "খাবোনা।" অবশ্য হঠাৎ করে কখনো কখনো নিজেই বলি, "ক্ষুধা লাগসে।" তখন দেখা যায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে আম্মু তাঁর মেঝ মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছেন!:D)
গল্পটা উৎসর্গ আমার এক দায়িত্বশীলা আপুকে। আমার প্রায়ই ভীষণ কষ্ট হয় এই ভেবে যে, এত্ত বড় একটা পৃথিবীতে আব্বা-আম্মার ছায়া ছাড়া একটা মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকে!!
বিষয়: সাহিত্য
৯৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন