"একান্ত কিছু উপলব্ধি, এ যুগের কলম সৈনিকদের জন্য"
লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:০৯:৪১ সন্ধ্যা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নিজে কিছু লেখা চেয়ে আমার অন্যদের লেখা পড়তেই বেশি ভাল লাগে। যদিও আমাদের বয়সি অধিকাংশরাই কেন যেন লেখার প্রতি খুবই অনাগ্রহী। অবশ্য, ব্লগে আর ফেইসবুকে এখন অনেককেই দেখা যায়, যাদের লেখা পড়লে মনে হয়, এই স্কুল পড়ুয়া পিচ্চিরা এতকিছু মাথায় নিয়ে ঘোরে! বাস্তবিকই অসম্ভব শানিত তাদের চিন্তা-ভাবনা।
লেখালেখির ক্ষেত্রে ব্যক্তিভেদে লেখার বিষয়বস্তুতে অনেক ভিন্নতা। আর থাকাটাই স্বাভাবিক। যেমন, কেউ জীবন ঘনিষ্ট গল্প লিখে পাঠকের অবসরটুকু উপভোগ্য করে তোলেন। আর কেউকেউ তাঁদের লেখনি দিয়ে অন্যদের জাগিয়ে তুলতে ভালবাসেন। কেউবা পছন্দ করেন, সমাজ, রাষ্ট্র আর রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে। আবার কেউ কেউ গদ্যে-পদ্যে ফুটিয়ে তোলেন যৌবনের রঙ। সবগুলোই আমাদের জীবনের অংশ তবে আমার ছোট্ট একটা নিজস্ব মত আছে। আমরা যারা কলম তুলে নিয়েছি, হয়ত আমাদের কেউই হবে কালান্তরে এ সাহিত্য-সংস্কৃতির রক্ষক। হয়ত এ সমস্ত লেখা দিয়েই হয়ত বিবেচিত হবে আমাদের সাহিত্যের মান। (বড় করে স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই। কি বলেন!) তাই আমাদের লেখায় আরো অনেক বেশি সচেতনতা আর অনেক বেশি পরিশিলিত চিন্তার প্রকাশ ঘটা উচিৎ। ব্যক্তিগতভাবে আমি এমন লেখার পক্ষে যা, প্রজন্মকে জাগিয়ে তোলে। যে লেখা তারুন্যের উচ্ছাস-উদ্দিপনাকে ছড়িয়ে দেয় প্রাণে প্রাণে। আমাদের যাদের রক্তে তারুণ্য, তাদের কলম নিঃসৃত শব্দগুলো কি একেকটি অঙ্গার হতে পারেনা!
শুধুমাত্র ব্লগেই মেধার সঠিক ব্যবহারের অজস্র উদাহারণ যেমন পাওয়া যায় তেমনি থাবা বাবার মত স্বীয় প্রতিভার চরম অপচয়কারীদের ও দেখা যায় অহরহ। যারা এ নাস্তিক সম্প্রদায়ের লেখা পড়েছেন, তারা হয়ত খেয়াল করেছেন, তাদের লেখা অসাধারণ উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন আর যথেষ্ট সৃষ্টিশীল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, তারা আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিভা ও জ্ঞানটুকু আল্লাহর বিরুদ্ধেই কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তো স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। সমগ্র পৃথিবী ও যদি তাঁকে অস্বীকার করে তবুও তাঁর উলুহিয়্যাতে, তাঁর শ্রেষ্ঠত্বে এতটুকু প্রভাব পড়বে না।
যাহোক, প্রতিটি বিষয়েরই ভাল আর খারাপ দুটো প্রতিক্রিয়াই থাকে। এসব লেখা পড়ার পর আমার মনে হয়েছে, ওরা যদি মিথ্যার জন্য এভাবে লড়তে পারে, তবে আমরা কেন পারবো না? ওর যদি মরিচিকার পেছনে এমন মরিয়া হয়ে ছুটতে পারে, তবে আমরা কেন ক্ষণে ক্ষণে মঞ্জিল চ্যুত হয়ে যাই?
নিজেদের গন্তব্য সম্পর্কে আমাদের আরো ভাবতে হবে। নিজের ভবিষ্যত করনীয় ঠিক করার সময় আমাদের এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, যদি আমার কলম তুলে নেওয়া কোনো সদুদ্দেশ্যেই হয়, তবে এ কলম কোনো কারণেই ফের রেখে দেওয়া কোনক্রমেই উচিৎ হবেনা।(কেউ যদি উদ্দেশ্যহীন ভাবেই ধরে থাকেন, তবে জলদি একটা উদ্দেশ্য ঠিক করে ফেলুন!) তাই প্রতিদিনের একটা নির্দিষ্ট সময় কাগজ-কলমকে অবশ্যই দেওয়া উচিৎ। কলম সৈনিকের মর্যাদা কিন্তু কখনোই কম নয়।
আর যে বিষয়টি না বললেই নয়,সাহিত্য মানেই কেউ কেউ মনে করেন, দুঃসাহসী! শব্দ ও চরিত্রের ব্যবহার। অর্থাৎ, জৈবিক কিছু আহবান ছাড়া সাহিত্য যেন অসম্পূর্ণ! ব্যাপারটা কিন্তু কখনোই এমনটা নয়। আমার যেটা মনে হয়, মুসলিম লেখক হিসেবে, আমরা যখনই কিছু লিখতে শুরু করবো, আমাদের উচিৎ বিসমিল্লাহ" বলে শুরু করা। আল্লাহর নামে শুরু করলে আশা করা যায় কোনোরূপ অপবিত্র ভাবনা মনে স্থান নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। লেখার বিষয়টি ভীষণ স্পর্শকাতর। কেননা ব্যক্তি হারিয়ে যায়, কিন্তু ব্যক্তির লেখাগুলো যুগ-যুগান্তরে টিকে থাকে। একটা লেখাই শত জীবনের গোমরাহ হবার কারণ হতে পারে, আবার একটা লেখাই শত প্রাণকে সঠিক মঞ্জিল চিনিয়ে দিতে পারে।
(আমি কিন্তু জীবনের স্বাভাবিক আবেগ আর ভালবাসাকে অস্বীকার করছিনা। তবে তা অশ্লীলতা মুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।)
তাই আমাদের লেখা যেন কারো ঈমানী দূর্বলতার কারণ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ।
আর একটা কথা দিয়ে শেষ করছি, অশ্লীলতা যদি সাহিত্যের কারুকাজ হয়, আধুনিকতার পরিচায়ক হয়, পাঠককে মুগ্ধ করার একমাত্র উপায় হয়, তবু তা বর্জনীয়।মুসলিমের কলম নিঃসৃত শব্দে থাকবে শুধুই পবিত্রতা। মানবীয় অনুভূতি প্রকাশে ট্যাবু শব্দের ব্যবহার কি খুবই জরুরী?
আমার বিশ্বাস, ইসলামের পতাকাধারী এমন যথেষ্ট কলম সৈনিক আছেন যারা সাহিত্যের গতিপথকে বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।
বিষয়: সাহিত্য
৯৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন