আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে...

লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ১৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৫৬:৩০ রাত

হাত-মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে উকি দিল আকিব। পিঠময় লম্বা চুলগুলো ছড়িয়ে সদ্য আনা ছোট মাছ কুটছে রিমি। রিমির অসম্ভব সুন্দর চুলগুলো দেখলেই মন ভাল হয়ে যায় আকিবের। মুখ ফুটে কাউকে না বললেও সেই কৈশোর থেকে হ্নদয়ে একটা সুপ্ত ইচ্ছে ছিল যে, আমার পৃথিবীতে রাজকুমারী হয়ে যে আসবে, তার আর কিছু না থাকুক, চুলগুলোয় যেন হারিয়ে যেতে পারি।

এরেঞ্জ ম্যারেজ হওয়ায় বিয়ের আগে খুব একটা কথা হয়নি। অতি সংকচে ভাল করে চেহারাই দেখা হয়নি! কিন্তু প্রথম রাতে রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা রাজকন্যার নিস্পাপ চেহারাটুকু দেখতে দেখতে যে রাত পার করে ফেলেছিল, সেটা জানলে কি হাসিটাই না হাসতো রিমি!

-কি ব্যাপার! দরজায় দাঁড়িয়ে এভাবে নিজে নিজেই হাসছো কেন?

-না, এমনি।

-থাক, আর হাসতে হবে না। টেবিলে খাবার দেওয়া আছে, কষ্ট করে নিজে নিয়ে খাও।

বলেই ফের নিজের মনেই কাজ করতে লাগলো রিমি। কি অদ্ভুত ভাবেই না জীবন বদলে যায়! প্রথম যখন আকিবের সাথে দেখা করতে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়, লজ্জায় ছেলেটা মেঝের দিকেই তাকিয়ে ছিল পুরোটা সময়। রিমির দিকে চোখ তুলে তাকানোর আর হিম্মত করেনি। বহু কষ্টে দু-চারটে প্রশ্ন করেই ক্ষান্ত। যার ফল হয়েছিল এই যে, ভয়ানক দুঃখি চেহারা করে, গাল ফুলিয়ে মাকে বলেছিল, আমার জন্য কি এই হাবা ছেলেটাকেই পাওয়া গেল! যদিও মায়া মায়া চেহারার ছেলেটাকে খুব একটা খারাপ লাগেনি তার...

ভেবেছিল জবাবে মা আচ্ছামত বকা দিয়ে বলবে, যা ভাগ!

কিন্তু না, মা মুচকি হেসে বল, কাছে আয়। ভয়ে ভয়ে কাছে যেতেই রিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন, তোর জন্যে ওর চেয়ে যোগ্য ছেলে আমরা পাইনি।"

এই একটা কথাই রিমির জন্যে যথেষ্ট ছিল। যদিও মনে মনে ভাবছিল, "হু, তোমার মেয়ের বাদরামি সহ্য করার ক্ষমতা থাকলেই হয়।"

হাত-মুখ ধুয়ে রুমে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে কয়েক জোড়া ক্লিপ দেখে আশ্চর্য হয়ে আকিবের দিকে তাকাল রিমি। তিনি মহা মনযোগের সাথে বাসি পত্রিকা পড়ছেন! বদনখানি আড়াল করতেই যে এত মনযোগ, সেটা বুঝতে কষ্ট হয়না রিমির। গলা খাকারি দিয়ে পত্রিকাটা খানিকটা নামিয়ে বলল,

-যার জন্য ক্লিপগুলো এনেছেন, তার চুলে তো এত ছোট ক্লিপ পরানো যায়না।

খানিকক্ষণ চুপ থেকে চিন্তিত কন্ঠে আকিব বলল,

-কিন্তু দোকানের সবচেয়ে সুন্দর ক্লিপটাতো একজনের চুলেই মানায়।

রিমি কঠিন ধরনের ফাজলামি করার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছিল। কিন্তু আকিবের কথায় থমকে গেল। প্রচ্ছন্ন এক ভাল লাগায় মনটা ভরে গেল। এত্ত ভাল কেন মানুষটা! আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ!

রিমিকে চুপ থাকতে দেখে আকিব এবার বলল,

-চলো, প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে।

-আপনি এখনো খাননি! বিস্মিত কন্ঠে বলল রিমি।

-একা একা খেতে ভাল লাগেনা। তাই......... খানিকটা লাজুক কন্ঠে বলল আকিব।

-আচ্ছা, তাই! মুচকি হাসল রিমি। আর ভাবল, এমন একটা মানুষের জন্য তো প্রতি মুহূর্তে দোয়া করতে ইচ্ছে হয়......

(যখন গল্পটা লিখছিলাম, আমার একমাত্র বড়বোন পাশে ঘুমাচ্ছিল। গল্পটা তাকেই উৎসর্গ করা হল। যদিও আমরা ঝগড়া করি বেশি, তাও। বেচারি যেকোনো সময় বিদায় হইতে পারে...... আল্লাহ যেন তারে এইরকম দুধে ধোয়া তুলসি পাতা টাইপের সাথি উপহার দেয়। :D)

বিষয়: সাহিত্য

১০৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File