হ্নদয় থেকে...
লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:৩৯:২৫ সন্ধ্যা
১.
=আসসালামু আলাইকুম!
sorry sorry late হয়ে গেল, রাগ করলি!
= ওয়ালাইকুম আসসালাম। জ্বিনা।
বলে উঠে দাড়ালো আনিকা। এখন আর কারো জন্য অপেক্ষা করতে করতে মন খারাপ হয়না। কিংবা অভিমানের একটুকরো মেঘ? নাহ, তাও জমেনা। বরং পুরোনো অপেক্ষাগুলোকে মনে করিয়ে দেয়। জীবনে বিচিত্র সব জিনিসের জন্য অপেক্ষা করে মানুষ... জীবনের শেষটা পর্যন্ত অন্তহীন অপেক্ষা......
=এইযে ভাবকুমারী, আপনাকে ভাবার জন্য ২০ মিনিট সময় বেশি দিলাম, তাও ভাবা শেষ হলনা!সারাদিন তোর মহৎ ব্রেইনের উপর এত অত্যাচার করিস ক্যান? তোর কি দয়া-মায়া নাই?
রসিকতার সুরে বলল রুবাইয়া।
=late এ আসছিস ভাল কথা, এখন এই অপরাধকে বিরত্ব বলে জাহির করার কোনো প্রয়োজন নেই। আসচে একজন বীর...
=আমি বীর নই, বীরাঙ্গনা। হিঃ হিঃ হিঃ
=অনেক ভাল। এজন্যেই তো late হইসে তাইনা! যুদ্ধ করতে করতে আসছিস!...
=আরে সত্যি! সকালে একটু ঘুম দিসিলাম, চোখ মেলে দেখি ১০ টা! তারপর পুরা যুদ্ধ করতে করতে এই পর্যন্ত আসলাম। খালি তুই যেন ঝাড়ি না দেস। জান বাইর হইয়া গেসেরে...
বলে বড় একটা শ্বাস নিল রুবাইয়া।
=হইসে! তোর বীরত্বের কাহিনি শুনতে শুনতে কান পঁচে গেল। সবসময় আধাঘন্টা late এ বীরাঙ্গনা বীরদর্পে ছুটে আসে।
=হেহ হেহ, তোরে wait করাইতে মজা আছে। বেশি কিছু তো আর বলবিনা...
মিষ্টি হাসি দিয়ে আনিকার মন জয় করার চেষ্টা করল রুবাইয়া।
=হ্যা, সবাই মজাটা নিল, তুই আর বাদ থাকবি ক্যান বল?
গলাটা ভারি হয়ে আসলো আনিকার।
থ মেরে চুপ হয়ে গেল রুবাইয়া। ধুর! দুদিন মেয়েটার মন একটু ভাল ছিল, দিলিতো আবার মুড খারাপ করে। নিজের উপরই রাগ হল রুবাইয়ার।
=এইযে সমস্যাগ্রস্থ তরুণী, কোন বিষয়ে অধিক দুশ্চিন্তা করা স্বাস্থের জন্য হানিকর। সমস্যা সমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করিয়া নিশ্চিন্ত হউন।
বলে আনিকার হাতটা নিজের হাতে নিল রুবাইয়া
আমি কি পেশ করিনি! ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আনিকা। মুখে কিছুই বলল না। শুধু রুবাইয়ার হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।
আনিকার না বলা সব কথাই বোঝে রুবাইয়া। নাহ, এই ভূতের ছানাটাকে এইভাবে আর থাকতে দেয়া যায়না। ভাবে রুবাইয়া।
=চল ছাদে যাই! কতদিন তোদের ছাদে যাইনা... আর আন্টি কইরে! কতদিন আন্টির হাতের রান্না খাইনা... উফ্ পরীক্ষা পুরা জেলের বন্দি বানায়া দিসিলো।
বলতে বলতে রান্নাঘরে গিয়ে আনিকার আম্মুকে সালাম দিল রুবাইয়া। ইতিমধ্যে আচারের বয়ামও দখল করা হয়ে গেছে।
=ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ? বাসার সবাই ভাল?
=জ্বি আন্টি। আলহামদুলিল্লাহ, সব্বাই ভাল। আজকে কিন্তু আপনার রান্না না খেয়ে যাচ্ছি না।
=তাই! ভাল তো। পরীক্ষার জন্য তো আসতেও পারলেনা কতদিন। তা আজ না তোমাদের কোথায় যাবার কথা!
=জ্বি আন্টি। কিন্তু এখন ভাবছি যাবোনা। কতদিন পরে আসলাম একটু জ্বালায়া না গেলে হয় বলেন?
=তোর মন এমন ঘন্টায় ঘন্টায় change হয় ক্যান?
বিরক্তি ভরে বলল আনিকা। তারপর স্কার্ফ খুলতে খুলতে ভেতরে চলে গেল।
=আচ্ছা রুবাইয়া, আনিকার হয়েছে কি আসলে? আগে তো কথা বলে ঘর গরম করে ফেলতো। আর এখন দেখি রুম থেকে বের করাই মুশকিল।
এই সেরেছে! আন্টি জেরা শুরু করলে আজকে পুরা মার্ডার। মনে মনে আঁতকে উঠলো রুবাইয়া।
=কি জানি আন্টি, H.S.C. দিয়ে মনে হয় ভবিষ্যত পরিকল্পনা শুরু করসে।
আনিকাকে একপ্রকার শুনিয়েই বলল রুবাইয়া। তারপর ফিক করে হেসে ফেলল। আন্টিও মুচকি হেসে ফেললেন।
২.
=আমি বুঝতে পারছিনা তোকে কি বলা উচিৎ।
ছাদে বসে রুবাইয়াই প্রথম বলতে শুরু করলো।
=কিছু বলার প্রয়োজন আছে কি? আর, বলার মত কিছু আছে নাকি?
নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল আনিকা।
=তুই এভাবে কতদিন থাকবি? মানে তুই আসলে কি করতে চাস?
=আমি জানিনা।
=এটা একজন মুসলিমার জবাব হতে পারেনা।
রাগান্বিত স্বরে বলল রুবাইয়া।
অনেকটা সময় নিরব থেকে হঠাৎ ই রুবাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ফেলল আনিকা। তারপর ধিরে ধিরে বলল,
=যেটা আমার নিজেরই পছন্দ না, যেটা আমি নিজেই মানতে চাইনা, সেটার ব্যাপারে আমি তোকে কি জবাব দেব? আমি নিজেই কি এটা মানতে পারছি? কিন্তু মনকে তো কিছুতেই বোঝাতে পারছিনা...
=আজ এর একটা বিহিত না করে আমি যাচ্ছিনা। মানে কি! একজন অপরিচিত মানুষ আসলো আর গেল! মাঝখানে তুই...! আরে আমিতো অন্তত জানি তুই কেমন। যেই মেয়ে লজ্জায় কোনোদিন কারো চোখের দিকেও তাকায় না সেই মেয়ে... ওই, তোর ডায়রীটা দেতো!
চমকে উঠল আনিকা। এই না, খবরদার!
=শোন! সমাধান আমিই করবো ইনশাল্লাহ। আর সেজন্যে লক্ষীসোনা, তোমার ডায়রীটা পড়া জরুরী। তুমিতো আর মুখে কিছুই বলবানা।
একপ্রকার যুদ্ধ করে, পুরো বাড়ি মাথায় তুলে অবশেষে আনিকার ডায়রী উদ্ধার করলো রুবাইয়া।
১৫।২
আজকে সকাল থেকে বই বই বই... ঘুম থেকে উঠেই উপন্যাস নিয়ে বসলাম। হঠাৎ বেল বাজল। অধৈর্য ভঙ্গিতে বাজিয়েই চলেছে। বিরক্তি নিয়ে উঠলাম। আম্মু গোসলে নির্ঘাত। ঘড়ি দেখে চমকে উঠলাম! ২ টা বাজে! বুয়াও এতক্ষণে চলে গেছে। তড়িঘড়ি করে ওড়নাটা পেচিয়ে দরজায় গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কে?
অধৈর্য ভঙ্গিতে কেউ বলল, দরজাটা একটু খুলবেন!
পরক্ষণেই আবার বলল, বাড়িতে কি পুরুষ কেউ আছেন?
কন্ঠ শুনে ভদ্রলোকই মনে হলো। মুখে আঁচল দিয়ে দরজা খুলতেই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। দীর্ঘদেহী এক যুবক, হাত বেয়ে ভয়ংকর ভাবে অঝোরে রক্ত ঝরছে!
আমার মাথাটা ঘুরে উঠল একটু। দরজা ধরে দাড়ালাম, আরপর খেয়াল হতেই জলদি মুখে আঁচল তুলে বললাম, ভেতরে আসুন।
ততক্ষণে উনিও চোখ নামিয়ে নিয়েছেন। ইতস্তত করছিলেন ভেতরে আসবেন কিনা। এমন সময় আম্মু আসলেন।
কে এসেছে? বলেই অস্ফুট একটা চিৎকার করে ছুটে আসলেন।
আগন্তুক বুঝতে পারছিলেন না কি করবেন। আম্মু দ্রুত ক্ষতস্থানটা ধরে গেস্টরুমে নিয়ে বসালেন। আমি পুরো হতভম্ব।
আম্মু বললেন, গজ, তুলা নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি! আমি এক ছুটে ফাস্টএইড বক্সটা নিয়ে আসলাম। উনি একদৃষ্টিতে কার্পেটের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাতে অবশ্য আমাদের সুবিধাই হল। আব্বু আজ জলদি ফেরার কথা। কখন যে ফিরবেন... উফ্...
=নাম কি বাবা তোমার?
ব্যান্ডেজ করতে করতে আম্মু জিজ্ঞেস করলেন।
=জ্বি, আলী আহমাদ।
আমি কিচেনে গিয়ে ঢকঢক করে আধ বোতল পান করলাম। তারপর মনে হল, ওনার জন্য ও নিয়ে যাই!
পানি সামনে রাখতেই তৃষ্ণা ফুটে উঠল ওনার চোখে। আমি ভাবলাম, পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে, তখন আমার আর এখানে না থাকাই ভাল। ফের কিচেনে গিয়ে একটা টুল টেনে বসে পড়লাম। মাথার ভেতরটা শো শো করছে। খানিক বাদেই আব্বু আসলেন, আর আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
আব্বু জলদি হস্পিটালে নিতে চাইলেন। আমি বললাম, এখন বোধহয় রাস্তায় বের হওয়াটা ঠিক হবেনা। আম্মুও চাইছিলেন এখানেই থাকুক। কেন যেন আম্মু বড্ড নরম হয়ে গেছিলেন... ভাইয়ার কথা মনে পড়ছিল হয়তো... ধুর! যখন তখন কান্না আসে!
...পরে উনি যেতে চাইলেও আব্বু যেতে দিলেন না। বললেন, আজ রাতটা এখানেই থাকো বাবা, আর কাউকে জানাতে চাইলে জানাতে পারো। বলে ল্যান্ডফোনটা দেখিয়ে দিলেন। সারাটাদিন বলা যায় এসবেই ব্যাস্ত ছিলাম সবাই। ক্লান্তি নিয়ে শুয়ে পড়লাম রাতে।
১৬।২
তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়্যাতে আযানের বেশ কিছুক্ষণ আগেই উঠলাম। অযু করতে যাচ্ছি, হঠাৎ মৃদু ফোপানির আওয়াজ শুনে চমকে উঠলাম! আব্বু-আম্মু এখনও জাগেননি। ঘরে আর কে...... হঠাৎ মনে হতেই কৌতুহলে গেস্টরুমের দরজায় গিয়ে দাড়ালাম। অবাক হয়ে দেখলাম,আহত মানুষটা অঝোরে কাঁদছে জায়নামাজে বসে। আহত হাতটা ছোট টুলটার ওপর রেখে এক হাতেই মুনাজাত ধরে আছে। হঠাৎই এই অপরিচিত মানুষটার জন্য একরাশ মায়া দলা পাকিয়ে উঠল। নিজেকে কেমন যেন তুচ্ছ মনে হল অচেনা মানুষটার কাছে...
একসময় ভাইয়া তাহাজ্জুদ পড়তে উঠলে জাগিয়ে দিতেন। ভাইয়াও এমনি করে চাইতেন... আল্লাহ তাঁকে ভাল রাখুন... হঠাৎ আযানের শব্দে হুশ হল। কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে আছি জানালায় তাকিয়ে আর কত কি যে ভাবছি,... খেয়ালই ছিলনা সময়ের। বেশ সময় নিয়ে অযু করলাম। রুমে ঢোকার আগে কি মনে করে আরেকবার উকি দিলাম। দেখলাম, একহাতে জায়নামাযটা গোছাতে প্রাণপনে চেষ্টা করছেন... হুট করে কেন যেন ভীষণ কান্না পেয়ে গেল... আল্লাহ তাঁর এ বান্দাকে বড় কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছেন... খুব ইচ্ছে হল হাত থেকে নিয়ে গুছিয়ে দিয়ে আসি...
কোনরকম নিজের ইচ্ছেটাকে দমন করে রুমে ঢুকে পড়লাম। শাসন করলাম নিজেকে, যথেষ্ট হয়েছে। রুম থেকেই আর বের হচ্ছি নাহ!
১০টার দিকে আম্মু ডাকলেন। কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, খেয়ালই নেই। কিচেনে একটু হেল্প করলাম। কিচেন থেকে বেরিয়েই দেখলাম বুয়া গেষ্ট রুম পরিষ্কার করছে। এই বুয়াটাও না! রুমে গিয়ে বললাম, বুয়া, ঘরে মেহমান আছেন, আজতো একটু ফাকিবাজি কম করো! আমার কথায় একগাল হেসে আবার কাজ করতে লাগল বুয়া। আমি বিছানাটা ঝাড়লাম তারপর খালি জগটা হাতে নিতেই দেখলাম, উনি হাত-মুখ ধুয়ে রুমে ধুকলেন। দুজনই অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। আমি দ্রুত মুখে আঁচল টেনে নিলাম। উনি কঠিন কন্ঠে বললেন, "আপনি এদিকে না আসলেই ভাল হয়।" চোখ তুলে তাকালাম। মুখটা অন্যদিকে ফেরানো। বিরক্তিতে কপালটা যেন কুঁচকে আছে।
একছুটে বেরিয়ে আসলাম আমি। রুমের দরজা বন্ধ করে মুখটা কঠিন করে দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রাণপন চেষ্টায়ও অশ্রু বাধ মানছেনা। এতটা তাচ্ছিল্য...! হেতের মুঠিটা শক্ত হয়ে আসল। কিন্তু পরক্ষণেই আবার কেন যেন নিজেকে তুচ্ছ মনে হতে লাগল। সকালের মত.........! ক'ফোটা জল একসঙ্গে হাতে এসে পড়ল।
১৮।২
আজ বিকেলে উনি চলে যাচ্ছেন। রুমের দরজা বন্ধ করে অসে আছি। কথোপকথন শুনতে পাচ্ছি,... বের হবার আগে বললেন,
"কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবো বুঝতে পারছিনা। অনেক কষ্ট করলেন আপনারা। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।"
আম্মু বললেন, "আমার ছেলেটা থাকলে ওর জন্য কি করতামনা! তুমি তো আমার ছেলেটার মতই। মাঝে মাঝে এসো বাবা।" আম্মু বোধহয় কাঁদছেন...
একটু নিরবতা... তারপর দরজা আটকানোর শব্দ। এবার আর থাকতে পারলামনা। জানালায় গিয়ে দাড়ালাম।
দীর্ঘদেহী, কোকড়া চুলের এক অপরিচিত আগন্তুক আমার জন্য একরাশ শূণ্যতা রেখে গেল...
আল্লাহ, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। তুমি ছাড়া আর কে আছে আমার...
=কিরে! এরপর গত একমাস কিছুই লিখিসনি তুই! অবিশ্বাস্য! কেনরে......
অবাক চোখে তাকিয়ে রইল রুবাইয়া।
=বাদ দে তো...!
=ওমা! এমন লজ্জা পাচ্ছিস কেন!
=হু তোকে বলসে!
আনিকা যেন আরো লাল হয়ে গেল।
=আনিকা, রুবাইয়াকে নিয়ে খেতে আয়।
ডাক দিলেন আনিকার আম্মু।
=চল, চল, ক্ষুধায় পেট চো চো করছে! মনীষী তার জীবনী দিয়ে বসিয়ে রাখল, ফাকে ফাকে যে নাস্তা-পানি কিছু দিবে তাও না! হবেনা বুঝছেন, এমনে কিন্তু হবেনা!
=তোর কিন্তু বহুতদিন কিল খাওয়া হয়না।
চোখ রাঙ্গিয়ে বলল আনিকা।
৩.
= আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
=ওয়ালাইকুম আসসালাম, এতক্ষণে আসার সময় হল সাহেবজাদীর! আজকে মেহমান আসবে, শুক্রবারের দিন কোথায় একটু হাত লাগাবি, তা না, খালি ঘুম আর বেড়ানো।
=আম্মু! আনিকাদের বাসায় সেই কবে গিয়েছি, তারপর কতদিন পর আজ গেলাম, তাও শুরু করে দিলা।
=বিচ্ছু একটা! যাস তো মানুষকে জ্বালাতে। আনিকার থেকে কিছু শিখতে পারিস না!
=না। কারণ ও হল দুনিয়ার সবচেয়ে লক্ষী মেয়ে। আর আমাকে সবাই বিচ্ছু বলে, তাতেই আমি খুশি।
বলে কার্টুন মার্কা একটা হাসি দিল রুবাইয়া।
=হ্যা, তুই আর ভদ্র হবি কেন! তাহলে তো আমরা শান্তিতে থাকতাম।
=রাইট! সব শান্তি ভাল নয়, অশান্তিতেও থাকতে হয়।
বলেই এক দৌড়ে গোসলে ঢুকে গেল রুবাইয়া।
=ফাজিল মেয়ে একটা।
ভ্রু কুচকে বললেন রুবাইয়ার আম্মু। খানিক বাদেই কপালের রেখাগুলো সরল হয়ে আসল। আর অস্পষ্ট হাসির রেখা ফুটে উঠল ঠোঁটে।
৪.
=কে আসবে তাতো বললানা।
পেয়াজ কুচি করতে করতে বলল রুবাইয়া।
=তোর ভাইয়ার বন্ধুরা।
=ও, অবশ্য আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল, এ বাড়িতে আদর-যত্ন তো শুধু ভাইয়ার সোনার টুকরা বন্ধুদেরই হয়।
অভ্যাসগত টিটকারী দিতে ভুল হয়না রুবাইয়ার।
=দিনদিন দেখি হিংসুক হয়ে যাচ্ছিস! এইগুলো শেখায় তোদের, না!
বলে রুবাইয়াকে একটা চাটি মারল রাফিদ
=আম্মু! আমি ভাইয়াকে কি বলসি!
তারপর আম্মুকে মুচকি হাসতে দেখে অসহায় ভঙ্গিতে রুবাইয়া বলল,
হে আল্লাহ! এই জালিমের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করো।
=আমিন।
বলে মুচকি হাসল রাফিদ।
সরু চোখে তাকাল রুবাইয়া। ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে!
=দেখি, তোর মত আর কোনো মজলুম পাওয়া যায় কিনা।
=হ্যা, তাতো দেখবাই। নিজের রাস্তা ক্লিয়ার করতে হবেনা! এমনিতেও আজকাল তোমার মুনাজাতের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
মায়ের সামনে এভাবে বেইজ্জতি করবে ফাজিলটা, ভাবেনি রাফিদ। টের পেল কান দুটো হালকা গরম হয়ে গেছে। শুধু বলল,
=যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর! ঠিক আছে, ঠিক আছে।
৫.
আম্মু এখন সোনার ছেলেদের বিদায় দেবেন। সোনার ছেলেরা বিনয়ে গদগদ হয়ে যাবেন এবং আমাকে খাটানোর জন্য আম্মাজান তার পেয়ারের ছেলেদের আবার আসতে দাওয়াত দিবেন। পুরান সিনেমা।
রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছে আর মুখ ভেংচাচ্ছে রুবাইয়া।
=দোয়া রাখবেন খালাম্মা।
=হ্যা বাবা, দোয়া তো থাকেই। বাবা, তোমার শরীর এখন কেমন? খোজ ও নিতে পারলামনা।
=আলহামদুলিল্লাহ! ক্ষত অনেকটা শুকিয়ে গেছে, আপনাদের দোয়ায় এখন অনেকটা ভাল।
=ঠিক আছে বাবা, নিজেদের একটু খেয়াল রেখো। কপাল ভাল যে হাতে বড় কিছু হয়নি।
হাতের কথা শুনতেই কান খাড়া করল রুবাইয়া।
=জ্বি খালাম্মা, আমরা তাহলে আসি।
= হ্যা বাবা।
৬.
রাতে রাফিদ ঘরে ফিরতেই রুবাইয়া আদুরে ভিঙ্গিতে বলল,
=চা খাবে? ভাইজাননন...
একটু অবাক হল রাফিদ। কি মতলব হাসিল করতে তোষামোদ করছে, কে জানে। তবু ঝুকি নিল। নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
=দে...
=নতুন কিছু লিখেছো ভাইয়া!
=কি মতলবে এসেছেস, সেটা বল।
=ওমা! আমি কি তোমার মত? মতলব ছাড়া কিছু করিনা আমি!!
=তাহলে তো তুই অনেক ভাল। এবার যা।
কিন্তু রুবাইয়া গেলনা। এখনি যদি জিজ্ঞেস না করি, তাহলে খানিক বাদে নির্ঘাত পেট ফেটে মারা যাবো।
=আচ্ছা ভাইয়া, তোমার এক বন্ধুর যে কি হয়েছিল বলছিল...... হাতে...
=ও, মাসখানেক আগে কিছু বীর বাঙ্গালী ছুরি মেরেছিল ওনার ডান হাতে। বড়সড় জখম হয়েছিল তাতে।
=তারপর! কি করেছিলেন তখন?
উৎকন্ঠা ঝরে পড়ল রুবাইয়ার কন্ঠে।
=উনি জলদি করে কাছেই একটা বাড়িতে সাহায্য চাইলেন।
=হসপটালে গেলেন না?
=পরে গিয়েছিলেন একবার। তেমন সমস্যা হয়নি, যে বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেটাও আল্লাহর ইচ্ছায় এক ডাক্তারের ই বাসা ছিল।
=নাম কি ওনার!!
তীব্র উত্তেজনা ঝরে পড়ল রুবাইয়ার কন্ঠে।
=আলী আহমাদ।
=আমি! আমার কোন দোয়া এত দ্রুত কবুল হতে দেখিনি ভাইয়া!
বলেই একটা জায়নামাজ নিয়ে দু'রাকাত নফল নামাজ পড়ে লম্বা মুনাজাত দিল রুবাইয়া।
=ঘটনাটা কি!?
মুনাজাত শেষে রাফিদের দিকে তাকাতেই বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল রাফিদ।
=ভাইয়া, তোমাকে সিনেমার কাহিনী পরে শুনাবো। আগে আম্মুর সাথে মিটিংটা সেরে আসি। ওকে!
রাফিদ কিছুই না বুঝে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। আপাতত সে তার সবচেয়ে অপছন্দনীয় সময়ের একটা অতিবাহিত করছে।
৭.
আমি স্বপ্নচারী মানুষ নই। দু'চোখ ভরে রাতদিন যে স্বপ্ন দেখেছি, তাই সত্যি করতে ছুটে বেড়াই। আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা ছিল সবসময়, তিনি যেন আমাকে একা ছেড়ে না দেন। তবে যে আমিও সবার মত হারিয়ে যাবো......
আমি খুবই অবাক হচ্ছি এ ঘটনাতে। এমনকি নিজের অবস্থাতেও। প্রস্তাবটা পেয়ে এর মধ্যেই বেশ ক'বার আল্লাহর সামনে লুটিয়ে পড়েছি। গত একমাস খুবই অস্বস্তিতে ছিলাম। কোন কারণ ছাড়াই যখন-তখন বড় বড় চোখ করে অবাক চাহুনিতে তাকিয়ে থাকা এক তরুনির ছবি হ্ণদয়ে ভেসে উঠছিল। নিজের এ অবস্থা নিয়ে নিজেই খুব লজ্জিত ছিলাম। বারবার নিজেকেই নিজে বুঝিয়েছি, "সম্পর্ক স্থাপন আর সম্পর্কচ্ছেদ, একমাত্র আল্লাহরই জন্য।
হে আল্লাহ! মালিক আমার, তোমার চেয়ে বান্দার দিএর অবস্থা আর কে ভাল জানে! তুমিই তো সর্বত্তম পরিকল্পনাকারী।
ডায়রীটা বন্ধ করে আরেকবার জায়নামাজে দাড়াল আহমাদ। হঠাৎই হাসির রেখা গাল জুড়ে বিস্তৃত হল।
এ অদ্ভুত চোখের অধিকারীনীর উদ্দেশ্যে আমার প্রথম কথাটা বড়ই কঠিন ছিল।
এ কাঠিন্যের উদ্ভব হয়ত হ্ণদয়ের দুর্বলতম স্থান থেকেই.........
বিষয়: সাহিত্য
১৩৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন