যে সকল নারীরা সম্পত্তিতে সমান অংশ দাবি করেন তারা কি অন্যান্য জায়গা থেকে পাওয়া সম্পত্তির অংশ বাদ দিবে ?????

লিখেছেন লিখেছেন সাঈদ আল হক তামজিদ ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:১৮:২১ রাত

মুল কথায় আসার আগে সুরা নিসার দুটি আয়াত অ তার ব্যাখ্যা উল্লেখ করছি

সুরা নিসা ১১ :

তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেনঃ পুরুষদের অংশ দুজন মেয়ের সমান।

মীরাসের ব্যাপারে এটি প্রথম ও প্রধান মৌলিক বিধান যে, পুরুষদের অংশ হবে মেয়েদের দ্বিগুণ। যেহেতু পারিবারিক জীবন ক্ষেত্রে শরীয়াত পুরুষদের ওপর অর্থনেতিক দায়িত্বের বোঝা বেশী করে চাপিয়ে এবং অনেকগুলো অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মেয়েদেরকে মুক্তি দিয়েছে,তাই মীরাসের ব্যাপারে মেয়েদের অংশ পুরুষদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম রাখা হবে, এটিই ছিল ইনসাফের দাবী।

যদি (মৃতের ওয়ারিস) দুয়ের বেশী মেয়ে হয়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দুভাগ তাদের দাও।

দু’টি মেয়ের ব্যাপারেও এই একই বিধান কার্যকর। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির যদি কোন পুত্রসন্তান না থাকে এবং সবগুলোই থাকে কন্যা সন্তান, কন্যাদের সংখ্যা দুই বা দু’য়ের বেশী হোক না কেন, তারা সমগ্র পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ পাবে। অবশিষ্ট তিনভাগের একভাগ অন্যান্য ওয়ারিসদের মধ্য বন্টন করা হবে। কিন্তু যদি মৃত ব্যক্তির শুধুমাত্র একটি পুত্র থাকে, তাহলে এ ব্যাপারে ইজমা অনুষ্ঠিত হয়েছে অর্থাৎ ফিকাহবিদগণ সবাই এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, অন্যান্য ওয়ারিসদের অনুপস্থিতিতে সে-ই সমস্ত সম্পত্তির ওয়ারিস হবে। আর যদি অন্যান্য ওয়ারিসরাও থাকে, তাহলে তাদের অংশ দিয়ে দেবার পর বাকি সমস্ত সম্পত্তিই সে পাবে।

আর যদি একটি মেয়ে ওয়ারিস হয়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক তার। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে , তাহলে তার বাপ-মা প্রত্যেকে সম্পত্তির ছয় ভাগের একভাগ পাবে।

অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার বাবা-মা প্রত্যেকে ছয়ভাগের একভাগ পাবে। আর সন্তান যদি সবগুলোই হয় কন্যা বা সবগুলোই পুত্র অথবা পুত্র কন্যা উভয়ই হয় বা একটি পুত্র অথবা একটি কন্যা হয়, তাহলে বাকি তিনভাগের দু’ভাগে এ ওয়ারিসরা শরীক হবে।

আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং বাবা-মা তার ওয়ারিস হয়, তাহলে মাকে তিন ভাগের একভাগ দিতে হবে ।

বাবা-মা ছাড়া যদি আর কেই ওয়ারিস না থাকে তাহলে বাকি তিনভাগের দু’ভাগ বাপ পাবে। অন্যথায় তিনভাগের দু’ভাগে বাপ ও অন্যান্য ওয়ারিসরা শরীক হবে।

যদি মৃতের ভাই-বোনও থাকে, তাহলে মা ছয় ভাগের একভাগ পাবে।

ভাই-বোন থাকলে মায়ের অংশ তিনভাগের এক ভাগের পরিবর্তে ছয় ভাগের একভাগ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে মায়ের অংশ থেকে যে ছয় ভাগের এক ভাগ বের করে নেয়া হয়েছে তা বাবার অংশে দেয়া হবে। কেননা এ অবস্থায় বাপের দায়িত্ব বেড়ে যায়। মনে রাখতে হবে, মৃতের বাবা-মা জীবিত থাকলে তার ভাই-বোনরা কোন অংশ পাবে না।

(এ সমস্ত অংশ বের করতে হবে) মৃত ব্যক্তি যে অসিয়ত করে গেছে তা পূর্ণ করার এবং এ যে ঋণ রেখে গেছে তা আদায় করার পর।

অসিয়তের বিষয়টি ঋণের আগে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ঋণ রেখে মারা যাওয়া কোন জরুরী বিষয় নয়। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত করা তার জন্য একান্ত জরুরী। তবে বিধানের গুরুত্বের দিক দিয়ে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে একমত যে, ঋণের স্থান অসিয়তের চাইতে অগ্রবর্তী। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি ঋণ রেখে মারা যায়, তাহলে সর্বপ্রথম তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে তা আদায় করা হবে, তারপর অসিয়ত পূর্ণ করা হবে এবং সবশেষে মীরাস বন্টন করা হবে। কোন ব্যক্তি তার সমগ্র সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত অসিয়ত করতে পার। অসিয়তের এই নিয়ম প্রবর্তনের কারণ হচ্ছে এই যে, মীরাসী আইনের মাধ্যমে যেসব আত্মীয়-স্বজন পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন অংশ পায় না, এখান থেকে তাদের যাকে যে পরিমাণ সাহায্য দেবার প্রয়োজন উপলদ্ধি করা হয়, তা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেমন কোন এতিম নাতি বা নাতনী রয়েছে। মৃত পুত্রের কোন বিধবা স্ত্রী কষ্টে জীবন যাপন করছে। অথবা কোন ভাই, বোন, ভাবী, ভাই-পো, ভাগিনে বা কোন আত্মীয় সাহায্য-সহায়তা লাভের মুখাপেক্ষী। এ ক্ষেত্রে অসিয়তের মাধ্যমে তাদের অন্য হকদারদের জন্য বা কোন জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পত্তির অংশ অসিয়ত করা যেত পারে। সারকথা হচ্ছে এই যে, সম্পদ-সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ বা তার চাইতে কিছু বেশী অংশের ওপর ইসলামী শরীয়াত মীরাসের আইন বলবৎ করেছে। শরীয়াতের মনোনীত ওয়ারিসদের মধ্যে তা বন্টন করা হবে। আর তিন ভাগের এক ভাগ বা তার চেয়ে কিছু কম অংশের বন্টনের দায়িত্বভার নিজের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। নিজের বিশেষ পারিবারিক অবস্থার প্রেক্ষিতে (যা বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে) সে যেভাবে সংগত মনে করবে বন্টন করার জন্য অসিয়ত করে যাবে। তারপর কোন ব্যক্তি যদি তার অসিয়তে জুলুম করে অথবা অন্য কথায় নিজের ইখতিয়ারকে এমন ত্রুটিপূর্ণভাবে ব্যবহার করে যার ফলে কারো বৈধ অধিকার প্রভাবিত হয়, তাহলে এর মীমাংসার দায়িত্ব পরিবারের লোকদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। তারা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এ ত্রুটি সংশোধন করে নেবে অথবা ইসলামী আদালতের কাযীর কাছে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানাবে এবং তিনি অসিয়তের ত্রুটি দূর করে দেবেন।

তোমরা জানো না তোমাদের বাপ-মা ও তোমাদের সন্তানদের মধ্যে উপকারের দিক দিয়ে কে তোমাদের বেশী নিকটবর্তী । এসব অংশ আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন । আর আল্লাহ অবশ্যি সকল সত্য জানেন এবং সকল কল্যাণময় ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন।

মীরাসে আল্লাহ প্রদত্ত আইনের গভীর তত্ত্ব উপলব্ধি করতে যারা সক্ষম নয়, এ ব্যাপারে যাদের জ্ঞান অজ্ঞতার পর্যায়ভুক্ত এবং যারা নিজেদের অপরিপক্ক বুদ্ধির সাহায্যে (তাদের জ্ঞান অনুযায়ী) আল্লাহর এই আইনের ত্রুটি দূর করতে চায়,তাদেরকে এ জবাব দেয়া হয়েছে।

সুরা নিসা ১২ :

তোমাদের স্ত্রীরা যদি নিঃসন্তান হয়, তাহলে তারা যা কিছু ছেড়ে যায় তার অর্ধেক তোমরা পাবে। অন্যথায় তাদের সন্তান থাকলে যে অসিয়ত তারা করো গেছে তা পূর্ণ করার এবং যে ঋণ তারা রেখে গেছে তা আদায় করার পর পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে। অন্যথায় তোমাদের সন্তান থাকলে তোমাদের অসিয়ত পূর্ণ করার ও তোমাদের রেখে যাওয়া ঋণ আদায় করার পর তারা সম্পত্তির আট ভাগের একভাগ পাবে।

অর্থাৎ একজন স্ত্রী হোক বা একাধিক তাদের যদি সন্তান থাকে তাহলে তারা আট ভাগের একভাগ এবং সন্তান না থাকলে চার ভাগের এক ভাগ পাবে। আর এ চার ভাগের এক ভাগ বা আট ভাগের একভাগ সকল স্ত্রীর মধ্যে সমানভাবে বন্টিত হবে।

আর যদি পুরুষ বা স্ত্রীলোকের ( যার মীরাস বন্টন হবে) সন্তান না থাকে এবং বাপ-মাও জীবিত না থাকে কিন্তু এক ভাই বা এক বোন থাকে, তাহলে ভাই ও বোন প্রত্যেকেই ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। তবে ভাই-বোন একজনের বেশী হলে সমগ্র পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের একভাগে তারা সবাই শরীক হবে,

অবশিষ্ট ছয় ভাগের পাঁচ ভাগ বা তিন ভাগের দু’ভাগ থেকে অন্য কোন ওয়ারিস থাকলে তার অংশ পাবে। অন্যথায় অবশিষ্ট ঐ সমস্ত সম্পত্তি ঐ ব্যক্তি অসিয়ত করতে পারবে। এ আয়াতের ব্যাপারে মুফাস্‌সিরগণের ‘ইজমা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে যে, এখানে মা-শরীক ভাই-বোনর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ মৃতের সাথে তার আত্মীয়তা কেবলমাত্র মায়ের দিক থেকে এবং তাদের বাবা আলাদা। আর সহোদর এবং বৈমাত্রের ভাই-বোনের ব্যাপারে, মৃতের সাথে বাবার দিক থেকে যাদের আত্মীয়তা, তাদের সম্পর্কিত বিধান এ সূরার শেষের দিকে বিবৃত হয়েছে।

যে অসিয়ত করা হয়েছে তা পূর্ণ করার এবং যে ঋণ মৃত ব্যক্তি রেখে গেছে তা আদায় করার পর যদি তা ক্ষতিকর না হয় ।

অসিয়ত যদি এমনভাবে করা হয় যে,তার মাধ্যমে হকদার আত্মীয়দের হক নষ্ট হয়, তাহলে এ ধরনের অসিয়ত হয় ক্ষতিকর। আর নিছক হকদারদেরকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি যখন অনর্থক নিজের ওপর এমন কোন ঋণের স্বীকৃতি দেয়, যা সে প্রকৃতপক্ষে নেয়নি, অথবা হকদারকে মীরাস থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে এমনি কোন কূটচাল চালে, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ঋণও ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের ক্ষতিকারক বিষয়কে কবীরা গোনাহ গণ্য করা হয়েছে। তাই হাদীসে বলা হয়েছে, অসিয়তের ক্ষেত্রে অন্যকে ক্ষতি করার প্রবণতা বড় গোনাহের অন্তরভূক্ত। অন্য একটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ তার সারা জীবন জান্নাতবাসীদের মতো কাজ করতে থাকে কিন্তু মারার সময় অসিয়তের ক্ষেত্রে অন্যের ক্ষতি করার ব্যবস্থা করে নিজের জীবনের আমলনামাকে এমন কাজের মাধ্যমে শেষ করে যায়, যা তাকে জাহান্নামের অধিকারী করে দেয়। এ ক্ষতি করার প্রবণতা ও অন্যের অধিকার হরণ যদিও সর্বাবস্থায় গোনাহ তবুও ‘কালালাহ’-এর (যে নিসন্তান ব্যক্তির বাপ-মাও জীবিত নেই) ব্যাপারে মহান আল্লাহ বিশেষ করে এর উল্লেখ এ জন্য করেছেন যে, যে ব্যক্তির সন্তানাদি নেই আবার বাপ-মাও জীবিত নেই, তার মধ্যে সাধারণত নিজের সম্পদ-সম্পত্তি নষ্ট করার প্রবণতা কোন না কোনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এবং সে দূরবর্তী আত্মীয়দেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রচেষ্টা চালায়।

এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ, আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বদর্শী ও সহিষ্ণু।

আল্লাহর জ্ঞানের কথা উচ্চারণ করার পেছনে এখানে দু’টি কারণ রয়েছে। এক, যদি এ আইন ও বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করা হয় তাহলে মানুষ আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না। দুই, আল্লাহ যে অংশ যেভাবে নির্ধারণ করেছেন তা একেবারেই নির্ভুল। কারণ যে বিষয়ে মানুষের কল্যাণ ও সুবিধা তা মানুষের চেয়ে আল্লাহ ভালো জানেন। এই সংগে আল্লাহর ধৈয্য ও সহিষ্ণুতা গুনের কথা বলার কারণ হচ্ছে এই যে, এ আইন প্রবর্তনের ব্যাপারে আল্লাহ কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। বরং তিনি এমন নীতি-নিয়ম প্রবর্তন করেছেন যা মেনে চলা মানুষের জন্য অত্যন্ত সহজ এবং এর ফলে মানুষ কোন কষ্ট, অভাব ও সংকীর্ণতার মুখোমুখি হবে

না ।

উপরোক্ত আয়াত এর ব্যাখ্যা থেকে আমি যতটুকু বুঝি মেয়েরা বাবার সম্পত্তি ছাড়াও আর কয়েকটি যায়গা থেকে সম্পত্তির অংশ পায় । যা মিলিয়ে দেখলে সেই সম্পত্তি একজন ছেলের তুলনায় বেশি হয় । এখন প্রশ্ন হলযে সকল নারীরা সম্পত্তিতে সমান অংশ দাবি করেন তারা কি অন্যান্য জায়গা থেকে পাওয়া সম্পত্তির অংশ বাদ দিবে ?????

বিষয়: বিবিধ

১৭০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File