ফল এবং ফলাফল
লিখেছেন লিখেছেন আলিমুল রাজি ২৩ মে, ২০১৩, ১০:৫৯:৩৩ সকাল
ফলের আকাল এ বঙ্গদেশে কোনোকালেই অবশ্য ছিল না। আজকাল আরও কত ফলই না যোগ হয়েছে। সেসব যোগ করলেও তো দাঁড়ায় যোগফল। পরীক্ষা দিয়েছেন? হয়তো ঘোড়ার ডিম পেয়েছেন। সেটাও কিন্তু ফল। ফলাফল আর কি। কেউ অবশ্য এতে সফলও হয়, কেউ বা বিফল। ভূতভবিষ্যৎ জানতে চান? হাত বাড়ান রাশিফলের দিকে। অবশ্য কেউ কেউ বলে ‘মাকাল ফল’। বিশ্বাস করে লাভ হবে না, ভেতরে কিচ্ছুটি নেই।
জানেনই তো ডুমুরের ফুল দেখাই যায় না। এমন একটা ফলও তো থাকা চাই, যা কখনো প্রকাশিত হয় না, দেখা যায় না। এ রকম ফলও আছে এই দেশে, এর নাম ‘তদন্ত ফল’। আছে কর্মফল, সুফল, কুফল। ফলময় এই বঙ্গে ফল বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা চালানো কোনো বিষয় না। বিষয় হচ্ছে এসবের ফলে তেমন কোনো ফল লাভ হবে কি না।
অবশ্য ‘বিফলে মূল্য ফেরত’ কথাটি প্রায়ই শোনা যায়। এটি শুনে একজন তো বলেই বসলেন, কী বললেন, বিফলে মূল্য ফেরত? আমারে ১০০ টাকার বিফলই দেন। (বিফলের যে মূল্যটা ফিরিয়ে দেবেন! সুতরাং ফাও পাওয়া যাবে বিফল; ফ্রি পেলে বাঙালি আলকাতরাও নেয়।)
ছোট্ট ছেলেটিকে আদর করে ‘কচি’ বলি, আবার তার পরিণত বুদ্ধি দেখে বলি, ‘পাকনা’। সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে বলে, কমলার কোয়ার মতো ঠোঁট। এই যে দেখুন না, জনতা সব সময়ই হয় আম-‘আমজনতা’। সেই আমজনতার মাথায় নেতারা আবার কাঁঠাল ভেঙে খেতেই বেশি ভালোবাসেন। তা ছাড়া সব ঋতুতেই রাজপথে পাবেন জাম (পড়ুন জ্যাম), সংস্কৃতির সঙ্গে চর্চা করতে হবে কলা, কাউকে এগিয়ে নিতে ঝোলান মুলা, এত কিছুর পরও রক্ষা করতে হবে ‘কুল’। ওই যে বলেন, ‘কুল রাখি না শ্যাম রাখি?’ এত কিছু করেও কথায় রাখতে হয় তাল। গানেও মেলাতে হয় তাল। আজকাল আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার নজির অনেক।
আছে গুরুজনের কথা, ভুলে বারবার বেলতলায় যাওয়ারও নজির। আমাদের নেতাদের অতীত-বর্তমান দেখে অবলীলায় এ কথা বলা যায়। তবু আশা করি, আমাদের নেতারা বদলে যাবেন। সুফল লাভের আশায় এখনই তাই গোঁফে তেল দিয়ে বসে আছি। বাঙালি গাছে কাঁঠাল দেখলে গোঁফে তেল দেবেই···।
যাই হোক, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কে হবে জাতীয় ফল এই নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। শেষমেশ ৩ নমিনি লিচু, কাঁঠাল আর আম। লিচু নিয়ে সাহিত্তে নজরুলের 'লিচু - চোর' ছাড়া তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। জাজ রা গুনে না নিয়ে বাসায় যাওয়ার পর ১০০'র জায়গায় ৭০/৭৫ টির তিক্ত অভিজ্ঞতার কারনে আধা মিনিটের আলোচনায় বাদ পড়ে যায় লিচু।
এরপর আম আর কাঁঠালের মধ্যে কোন সুরাহা না হওয়ায় তাদের মধ্যে শক্তি প্রদর্শনের আহবান জানান হয়। জিতে যায় কাঁঠাল। কাঁঠালকে জাতীয় ফলের মর্যাদা দেওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন ফল হচ্ছে আম। নিজেদের জাতীয় ফল দাবি করে তারা আন্দোলনেও নামে, কিন্তু কাঁঠালের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। সেই সব আন্দোলনকারী আহত আমদের আমরা ‘ল্যাংড়া’ আম নামে চিনি।
মাত্র আধা মিনিটের আলোচনায় বাদ পড়ে যাওয়ার কারনে তৃতীয় স্থান অধিকারি লিচু কে নিয়ে কোথা সাহিত্তিক আনিসুল হক লিখেন 'লিচু, যৌবন আর ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী'।
[সংগৃহীত এবং সম্পাদিত]
আমার ফেসবুক
বিষয়: সাহিত্য
১২৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন