জন্মদিন সমাচার
লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদুল ইসলাম তানিন ০২ জুন, ২০১৪, ১০:৪৭:৪২ রাত
আমার জন্মদিন নিয়ে আপনাদের এহেন আন্তঃরিকতা, স্নেহ, ভালোবাসাকে আমি সম্মান করি। সাথে সাথে এটাও জানিয়ে দেই, আমিও আপনাদেরকে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির তরে ভালোবাসি। কিন্তু, উইশ করা? এ দিন উদযাপন করা? সেটা কতটুকু ঠিক, একটু ভেবে দেখবেন কি?
আপনি যখন ‘শুভ জন্মদিন'-এর মত একটি কথা আমাকে বলছেন তখন কি আপনি বোঝাতে চাইছেন যে আপনি বললেই আমার এ দিন ভালোমত যাবে? এত ক্ষমতা তো আপনার আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। সেটা আপনি নিজেও করেন না। দুনিয়ার সবচাইতে ক্ষমতাবান মানুষটিরও এই সাধ্য নেই। আচ্ছা! ধরে নিলাম, আমি হয়তো বাড়াবাড়ি করে ফেলছি আপনার intention নিয়ে, হয়তো আপনি বোঝাতে চেয়েছেন যে আপনি ‘মনে মনে চান' অথবা আপনি ‘আশা করেন' যে আমার এই বিশেষ দিনটি ভালো যাক। Once again, what's your point? আপনার এই আশাবাদ আমার এই ছোট্ট জীবনের অন্যান্য দিনগুলো, থুক্কু ... এই বছরের অন্যান্য দিনগুলো না হয়ে শুধুমাত্র একটি দিনের জন্য কেন সেই তর্কে নাহয় নাই গেলাম, কৃত্রিমতায় পরিপূর্ণ এই মানব সমাজের একজন সদস্য আপনি এতটুকু মুখ দিয়ে বলছেন (অন্তরের খবর কি, কে জানে), এটাই বা কম কি! কিন্তু তারপরেও, পুরো ব্যাপারটাই কি একটা লোক দেখানো নাটুকেপনা নয়? আপনি আপনার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন ভালো, কিন্তু সেটা একটি বিশেষ দিনের আগমনের জন্য হওয়াটা তো pointless। তাই না?
কথাটা শুনে যে আমার কিচ্ছু যাবে-আসবে না এটাও একটা common sense। তবে কি তাই ভালো হয় না যদি আপনি চিন্তা করা শুরু করেন যে কার কাছে এই আশাবাদ ব্যক্ত করলে তা পূরণ হবে? আপনি কি জানেন না যে আপনার আবদার, আপনার দোয়া, আপনার সকল আকুতি মিনতি শোনার জন্য আছেন এমন এক সত্তা যিনি প্রতিটি মুহূর্তে ঘটে যাওয়া সবকিছু শুনছেন এবং দেখছেন। আপনি যদি মুসলিম হন তাহলে আপনি খুব ভাল করেই জানেন যে দুনিয়ার সব মানুষ আমার ভালো চাইলেও কেউ তা করতে পারবে না যতক্ষণ না আল্লাহ তা চান আমার জন্য। তাই আপনি better আপনার আশাবাদ আপনার-আমার সকলের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছেই ব্যক্ত করুন। তাতে আমার আপনার দুজনেরই লাভ। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
"কোন মুসলিম বান্দা যখনই তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দু'আ করে ফেরেশতা সঙ্গে সঙ্গে বলেন, "তোমার জন্যও তেমন কল্যাণ হোক।" [1]
এবার একটু ‘কেক কাটা' প্রসঙ্গে আসি ... একথা বলা নিতান্তই নিষ্প্রয়োজন যে মুসলিম সংস্কৃতির সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। সেই প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে এর প্রচলন শুরু। World Book-Childcraft International কর্তৃক বাচ্চাদের জন্য প্রকাশিত ‘Childcraft – The How and Why Library’ সিরিজের ১৯৮২ সংস্করণের ‘Holidays and Birthdays’ বইটিতে বলা হয়েছেঃ
The idea of putting candles on birthday cakes goes back to ancient Greece. The Greeks worshiped many gods and goddesses. Among them was one called Artemis. Artemis was the goddess of the moon. The Greeks celebrated her birthday once each month by bringing special cakes to her temple. The cakes were round like a full moon. And, because the moon glows with light, the cakes were decorated with lighted candles.
যাই হোক, এটা আমাদের অনেক পুরনো অভ্যাস; যে যখনই আমরা নিজেদের একটু ‘জাতে’ উঠানোর চিন্তা করি, তখনই ঢালাওভাবে পশ্চিমা অথবা হিন্দি সংস্কৃতির (যেগুলোর উৎপত্তিও পশ্চিমা সংস্কৃতিতেই) অন্ধ অনুকরন শুরু করি। আমার প্রশ্ন হল, একজন মুসলিম কেন এসব উপলক্ষে নিজেকে জড়াবে যেগুলোর origin কুফর ও শির্কী সংস্কৃতিতে? একজন মুসলিম কেন একটি উৎসব পালন করবে যে উৎসবটিরও origin সরাসরি কুফর ও শির্কী বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত? কেন একজন মুসলিম এসব জঘন্য কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়াবে, এই উপলক্ষগুলো আপাতদৃষ্টিতে attractive, fun এবং ‘innocent’ লাগে বলে? এখানেই শেষ নয়, মুসলিমরা আজ এসব উৎসব পালন করছে হুবহু ইহুদী এবং খৃষ্টানদের অনুকরণে। এসব ব্যাপারেই সতর্ক করে।
"রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের আচার-আচরণকে পদে পদে অনুসরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তোমরাও তাহলে এতে তাদের অনুকরণ করবে।” আমরা (সাহাবীগণ) বললাম, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! এরা কি ইহুদী ও খ্রিষ্টান?” তিনি বললেন, “আর কারা?” [2]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেনঃ
"যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।" [3]
দুঃখের বিষয় আমরা মুসলিম হয়ে একটিবারের জন্যও চিন্তা করি না বা করতে চাই না যে ইসলাম এসব ব্যাপারে কি বলে। ইসলামিক শরীয়া অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী, বিবাহবার্ষিকী, Valentine’s Day, Friendship Day, Father’s Day, Mother’s Day এমনকি নববর্ষের উদযাপনও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ / হারাম। এসব উপলক্ষের কোনটিই একজন মুসলিমের জন্য অপসংস্কৃতি ছাড়া কিছু তো নয়ই, বরং এগুলোর প্রত্যেকটিই আধুনিকতার মোড়কে ‘western culture’-এর অন্ধ অনুকরণ এবং কুফর ও শির্কে ভরা একেকটি ঘোরতর কুসংস্কার। এসব অপসংস্কৃতির উদযাপন আমাদের জন্য চূড়ান্তভাবে ধ্বংস ও জাহান্নামের আগুন ছাড়া কিছুই এনে দিতে পারবে না। এরপরেও সামান্য ‘happy birthday'-র মত একটি phrase ব্যবহার করে আরেকজনকে শুভেচ্ছা জানানো আপনার জন্য কতখানি কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবে তা আপনিই চিন্তা করুন। কেননা শুধুমাত্র এতটুকু বলার মাধ্যমেই আপনি এই হারাম উপলক্ষটি উদযাপন করে ফেলছেন।
আল্লাহ আমাদের এই সহজ সত্যটুকু বোঝার তৌফিক দিন। আমীন।
1. সহীহ মুসলিম (কিতাব আযযিকর ওয়াদ্দু’আ ওয়াত্তাউবাহ ওয়াল ইস্তিগফার)
2. সহীহ বুখারী (কিতাবুল ই’তিসাম), সহীহ মুসলিম (কিতাব আল-ইলম)
3. আবু দাউদ (কিতাবুল লিবাস)
[ Mu'tasim Billah থেকে সংগ্রহকৃত এবং সক্ষেপিত। পুরো লিখার লিঙ্ক ১ম কমেন্টে ]
বিষয়: বিবিধ
১৪৬১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Jazakumullahu Khairan
মন্তব্য করতে লগইন করুন