টেলিফোনে বিয়ে কি বৈধ? ইসলামের কি বলে?

লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদুল ইসলাম তানিন ২৪ মে, ২০১৪, ১২:০৩:৩০ রাত



আমাদের একজন প্রতিবেশী, কাকা নামেই ডাকি। ছোট বেলা থেকেই, আমাদের দুই ভাইকে অনেক আদর করতেন। গত প্রায় ৬ বছর ধরে, প্রবাসে অবস্থান করছেন। আজ শুনলাম, উনি নাকি "টেলিফোনে বিয়ে" করছেন, কিছুদিনের মধ্যে। এই ধরনের বিয়ে বৈধ কিনা? এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে, তা দেখে নেয়া যাক। [মুফতী মুতীউর রাহমান এর জবানীতে]

আমাদের দেশের অনেকেই প্রবাসে থাকেন বিভিন্ন তাগিদে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাইকেই স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে ভিনদেশে পাড়ি জমাতে হয় বিভিন্ন কারণে। স্বজন ছেড়ে পরবাসী হতে হয় বহু প্রয়োজনে। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও উচ্চ শিক্ষার মানসে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা প্রবাস যাপনের কারণগুলোর অন্যতম। এসব প্রবাসীর সমস্যার অন্ত নেই। ঝক্কি-ঝামেলার শেষ নেই। প্রবাসের অসংখ্য সমস্যার পাহাড়ের মধ্যে বিয়ের বিষয়টি অন্যতম। কারণ, যেকোনো প্রবাসী পাত্র-পাত্রীর পক্ষে বিয়ের জন্য যেকোনো মুহূর্তে দেশে ছুটে আসা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। নিজের কর্মব্যস্ততা, পড়ালেখা, বিমানের টিকিট সহজলভ্য না হওয়া, আসা-যাওয়ার ব্যয়ভার ইত্যাদি কারণে প্রবাসী পাত্র-পাত্রীর পক্ষে বিয়ে ঠিক হলেই তাৎক্ষণিক দেশে এসে বাড়ি বা কাজী অফিসে হাজির হয়ে বিয়ে সম্পন্ন করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। অথচ বিয়ে তাদের করতেই হবে। পছন্দমতো পাত্র-পাত্রী তো আর সব সময় চাইলেই পাওয়া যায় না। প্রবাসীদের এসব সমস্যা বিবেচনা করেই অতি সম্প্রতি টেলিফোনে বিয়ের প্রবর্তন হয়েছে।

ছেলে-মেয়ে বিদেশে থাকলে তাদের অভিভাবকরা পাত্র-পাত্রী পছন্দ করেন। পছন্দ হলে প্রবাসী ছেলে বা মেয়েকে জানান। ছবি বিনিময় হয়। টেলিফোন, চিঠিপত্র, ফ্যাক্স, ই-মেইল ইত্যাদি মিডিয়ার কল্যাণে বিস্তারিত তথ্য আদান-প্রদান হয়। সব ঠিকঠাক হলে, বিয়ের দিন-তারিখ নির্ধারিত হলে টেলিফোনে বিয়ের আয়োজন করা হয়। নির্ধারিত দিনে নিজ নিজ দেশে উভয় পক্ষের অভিভাবক, বর-কনে, উকিল-সাক্ষীরা দুটি ফোনের পাশে জড়ো হন। ফোনেই ইজাব-বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। অপর পক্ষ কবুল-প্রস্তাব গ্রহণ করে। উভয় দিকের সাক্ষীরা তা শোনেন। এভাবে সহজে সম্পন্ন হয় দুই দূরদেশের পাত্র-পাত্রীর কষ্টসাধ্য বিয়ে। আপাতদৃষ্টিতে এই টেলিফোনে বিয়েতে অনেক সুবিধা মনে হয়। বিদেশ থেকে আসা-যাওয়ার খরচ বাঁচে, সময়ও বাঁচে। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা এড়ানো যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে টেলিফোনে বিয়েতে কিছু সুবিধার পাশাপাশি অনেক অসুবিধা ও সমস্যাও রয়েছে। যেমনঃ আইনানুসারে সঙ্গে সঙ্গে বিয়েটারেজিস্ট্রি করা যায় না। কারণ, আইনানুযায়ী রিজিস্ট্রির জন্য বর- কনে উভয়কে রেজিস্ট্রি বইয়ে স্বাক্ষর করতে হয়। অপর পক্ষের অনুপস্থিতিতে স্বাক্ষরের অভাবে দ্রুত রেজিস্ট্রি অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে বহুমুখী সমস্যার আশঙ্কা তীব্র হয়ে ওঠে। কারণে-অকারণে অপর পক্ষের বিয়ে অস্বীকার, দেনমোহর, সাক্ষীদের পক্ষে অপর পক্ষকে শনাক্ত করতে না পারা, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর দীর্ঘদিন দেখা-সাক্ষাৎ না হওয়ায় দাম্পত্যকলহসহ আরো বহুবিধ সমস্যার আশঙ্কা দেখা দেয়। তবে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে এসব সুবিধা-অসুবিধার চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এই টেলিফোনে বিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে আদৌ জায়েজ কি না? তাই বিভিন্ন সময় অনেকেই আমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন। জানতে চেয়েছেনঃ টেলিফোনে বিয়ে ইসলামে বিধিসম্মত কি না? তাই এই প্রশ্নের সমাধানে আসা যাক।

ইসলামের দৃষ্টিতে অধুনা প্রচলিত টেলিফোনে বিয়ে কোনোক্রমেই জায়েজ নয়। কারণ ইসলামী শরিয়তের বিধানানুযায়ী বিয়ে সঠিক হওয়ার জন্য সাক্ষী শর্ত। সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হয় না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “সাক্ষী ছাড়া কোনো বিয়ে হয় না।“ (জামে তিরমিজি, বিয়ে অধ্যায়, অনুচ্ছেদঃ সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হয় না)।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রয়েছে, “যেসব মহিলা সাক্ষী ছাড়া বিয়ে করে তারা ব্যভিচারিণী।“ ইমাম তিরমিজির উপরোক্ত হাদিস দুটি বর্ণনা করার পর লিখেন, এ ধরনের হাদিসের ভিত্তিতেই সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন তাবে-তাবেঈন ও চার মাজহাবের ইমামরা বলেছেন, সাক্ষী ছাড়া কোনো বিয়ে হয় না। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের মতবিরোধ নেই। সবাই এ ব্যাপারে একমত। ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “কোনো দুজন মুসলমান নর-নারীর বিয়ে দুজন স্বাধীন, সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা সাক্ষীর উপস্থিতি ছাড়া সংঘটিত হবে না।“ (হিদায়া-দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২৭৬, শামি চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ৮৬-৮৭, আলমগীরি-প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৬৭ ইত্যাদি)।

সব ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে এ কথাও উল্লেখ রয়েছে যে বিয়ে অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিল একই বৈঠকে একই স্থানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এবং সে অনুষ্ঠানে সাক্ষীরাও সশরীরে উপস্থিত থেকে বর বা বরের উকিল ও কনে বা কনের উকিলের ইজাব-কবুল সরাসরি ও সামনাসামনি শুনতে হবে। তবেই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় নয়। (ফতোয়ায়ে আলমগীরি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৬৯)।

সাক্ষীরা যদি বিয়ের অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনের উকিলকে সশরীরে সামনাসামনি না দেখেন, তাহলে বিয়ে হবে না। তদ্রূপ একই বৈঠকে বিয়ে অনুষ্ঠান হতে হবে। বৈঠক দুই হলে বিয়ে হবে না। টেলিফোনে বিয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু বর এক দেশে এবং কনে বা কনের উকিল অন্য দেশে পৃথক দুটি স্থানে অবস্থান করেন, উপরন্তু সাক্ষীরা ইজাব-কবুল ফোনের মাধ্যমে শুনে থাকেন, সরাসরি বর বা বরের উকিল, কনে বা কনের উকিলকে দেখেন না এবং তাদের কথাও শোনেন না; সেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে এমন বিয়ে জায়েজ নয়। প্রাচীনকালে ফোন ছিল না, তাই ফোনে বিয়ের বিষয়টি সেকালের কিতাবাদিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে পূর্বোক্ত বিষয়গুলো সেকাল ও একালের সব কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। যা দ্বারা সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে ফোনে বিয়ে কোনোক্রমেই জাযেজ নয়। তদুপরি ফোনে বিয়ে প্রবর্তনের পর অনেক বিশ্ববরেণ্য মুফতিই নিজ নিজ কিতাবে পরিষ্কার ভাষায়ই উল্লেখ করেছেন যে টেলিফোনে বিয়ে আদৌ জায়েজ নয়। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১১শ খণ্ড, পৃ. ১৬২-১৬৩, ফতোয়ায়ে নিজামিয়া, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০৬, জাদিদ ফিকহি মাসাইল)।

এসব মহান ব্যক্তির কেউ কেউ তো কিছুকাল আগেই এ ধূলির ধরা থেকে পরপারে যাত্রা করেছেন। আর কেউ কেউ এখনো বেঁচে আছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী পত্র-পত্রিকায়ও পাঠকদের প্রশ্নের উত্তরে ফোনে বিয়ে নাজায়েজ হওয়ার কথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ফোনে বিয়ে প্রবর্তনের পর থেকে আজ অবধি ফোনে বিয়ে নাজায়েজ হওয়ার ব্যাপারে সব সময়ই মুফতিদের ঐকমত্য লক্ষ করা গেছে। তাই এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই। আমি বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও এ কালের বিশ্বনন্দিত মুফতিদের সঙ্গে ফোনে ও ই-মেইলে যোগাযোগ করলে তাঁরা সবাই এ বিষয়ে আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন।

তবে ইসলাম ‘ফিতরাত’ তথা স্বভাব- প্রকৃতির ধর্ম। সহজ-সরল পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করা বা বিষিয়ে তোলা ইসলামের কাম্য নয়। তাই প্রবাসীদের বিয়ে-শাদীর বাস্তব সমস্যাকে ইসলাম জিইয়ে রাখেনি। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে ফোনে বিয়ের একটি বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। জানা থাকলে ফোনে বিয়ের প্রয়োজনই পড়ে না। তা হচ্ছে, প্রবাসী পাত্র বা পাত্রী কোনো আপনজন বা যে কাউকে চিঠি, ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের উকিল বানাবেন। উকিল অপর পক্ষের সামনে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করবেন। এতে উভয় পক্ষ ও সাক্ষীরা একই বৈঠকে বিয়ে সম্পন্ন করতে সমর্থ হবেন। তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে আর কোনো আপত্তি থাকবে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১১শ খণ্ড, পৃ. ১৬৩, ফতোয়ায়ে নিজামিয়া দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০৭)।

দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ অনেকেই মনে করেন, টেলিফোনে বিয়ে ইসলামসম্মত। তাই, অধুনা প্রায়ই ফোনে বিয়ে হচ্ছে। আমি এই লেখাটি লেখার সময় আমাকে অনেকেই জানিয়েছেন যে তাঁদের অনেক প্রবাসী স্বজনের বিয়ে এভাবে হয়েছে। কারণ, তাঁরা জানতেনই না যে এটা ইসলামসম্মত বা জায়েজ নয়। এ জন্য আমি অনুরোধ করব, যাঁদের বিয়ে টেলিফোনে হয়েছে তাঁরা যেন আবারও যথারীতি বিয়ে সম্পন্ন করে নেন এবং অতীতের এত বড় মারাত্মক পাপের জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ইসলামের প্রকৃত বিধান সম্পর্কে জানার পরও যদি কেউ সংশোধন না হন, তাহলে তিনি সর্বদা গুনাহগারই থেকে যাবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে টেলিফোনে বিয়ে হওয়া দম্পতির দাম্পত্য জীবন(?) হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

[[ লেখকঃ মুফতী মুতীউর রাহমান, মুহাদ্দিস ও মুফতি, চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসা, ঢাকা। ]]

বিষয়: বিবিধ

১৭৭৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

225223
২৪ মে ২০১৪ রাত ১২:১২
ভিশু লিখেছেন : ভালো ... Happy Good Luck
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৯:১২
173581
তৌহিদুল ইসলাম তানিন লিখেছেন : ধন্যবাদ ... Happy Good Luck Good Luck
225249
২৪ মে ২০১৪ রাত ০২:২০
মাটিরলাঠি লিখেছেন : ভালো লাগলো। Rose Rose Rose Rose
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৯:১২
173582
তৌহিদুল ইসলাম তানিন লিখেছেন : Happy Happy Happy Love Struck Love Struck Love Struck
225251
২৪ মে ২০১৪ রাত ০২:২১
চোথাবাজ লিখেছেন : মুফিতীরে জিগান। এখানে কেন?
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৯:১২
173583
তৌহিদুল ইসলাম তানিন লিখেছেন : Surprised Surprised Surprised
225705
২৪ মে ২০১৪ রাত ১০:২২
যুমার৫৩ লিখেছেন : টেলিফোনে বিয়ে জায়েয যদি প্রস্তাব, কবুল, ওয়ালী, সাক্ষী ইত্যাদি শর্তগুলো পূর্ণ হ্য় এবং কোন প্রতারণা না থাকে।
শেখ আব্দুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন বায -এর ফতোয়া টি দেখুন:

http://islamqa.info/en/2201

২৬ মে ২০১৪ রাত ০৯:২৭
173594
তৌহিদুল ইসলাম তানিন লিখেছেন : মুফতি সাহেব এই লেখাতে, নিজেই কিন্তু এর সমাধান দিয়েছেন।

ইসলাম ‘ফিতরাত’ তথা স্বভাব- প্রকৃতির ধর্ম। সহজ-সরল পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করা বা বিষিয়ে তোলা ইসলামের কাম্য নয়। তাই প্রবাসীদের বিয়ে-শাদীর বাস্তব সমস্যাকে ইসলাম জিইয়ে রাখেনি। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে ফোনে বিয়ের একটি বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। জানা থাকলে ফোনে বিয়ের প্রয়োজনই পড়ে না। তা হচ্ছে, প্রবাসী পাত্র বা পাত্রী কোনো আপনজন বা যে কাউকে চিঠি, ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের উকিল বানাবেন। উকিল অপর পক্ষের সামনে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করবেন। এতে উভয় পক্ষ ও সাক্ষীরা একই বৈঠকে বিয়ে সম্পন্ন করতে সমর্থ হবেন। তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে আর কোনো আপত্তি থাকবে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১১শ খণ্ড, পৃ. ১৬৩, ফতোয়ায়ে নিজামিয়া দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০৭)।

ফতোয়াটির জন্য, যাজাকুমুল্লাহু খাইরান
225801
২৫ মে ২০১৪ রাত ০৩:১৭
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আপনি যেভাবে তুলে ধরেছেন বিষয়টা আরো কঠিন করে ফেলেছেন।

ইসলামের দৃষ্টিতে অধুনা প্রচলিত টেলিফোনে বিয়ে কোনোক্রমেই জায়েজ নয়। কারণ ইসলামী শরিয়তের বিধানানুযায়ী বিয়ে সঠিক হওয়ার জন্য সাক্ষী শর্ত। সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হয় না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “সাক্ষী ছাড়া কোনো বিয়ে হয় না।“ (জামে তিরমিজি, বিয়ে অধ্যায়, অনুচ্ছেদঃ সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হয় না)। টেলিফোনে বিয়ে করলে কি স্বাক্ষিদের উপস্হিতি থাকেনা ?

সব ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে এ কথাও উল্লেখ রয়েছে যে বিয়ে অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিল একই বৈঠকে একই স্থানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এবং সে অনুষ্ঠানে সাক্ষীরাও সশরীরে উপস্থিত থেকে বর বা বরের উকিল ও কনে বা কনের উকিলের ইজাব-কবুল সরাসরি ও সামনাসামনি শুনতে হবে। তবেই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় নয়।

এখানেও একই উত্তর যে বর বা বরের উকিল,কনে বা কনে উকিল।তার মানে হলো বর বা কনেই যে থাকতে হবে তা না, তাদের উকিল থাকলেও হয়ে যাবে। বিয়ে তো এরকমই হচ্ছে যে বর বা কনে দুরে থাকলেও তাদের পক্ষে উকিল থাকতেছেন এবং তারা একই স্হানে থেকে স্বাক্ষিদের সামনে বিয়ে সম্পন্ন করছেন। তাহলে নাজায়েজ হয় কিভাবে ?

তা হচ্ছে, প্রবাসী পাত্র বা পাত্রী কোনো আপনজন বা যে কাউকে চিঠি, ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের উকিল বানাবেন। উকিল অপর পক্ষের সামনে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করবেন।
আমার মনে হয় এ শর্তগুলো পুরন করেই বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৯:৪২
173602
তৌহিদুল ইসলাম তানিন লিখেছেন : ভাইয়া, আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর মুফতি সাহেবের লেখাতেই আছে। মুফতি সাহেব বলেছেনঃ

১ম ফতোয়াঃ
সব ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে এ কথাও উল্লেখ রয়েছে, **যে বিয়ে অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিল একই বৈঠকে একই স্থানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এবং সে অনুষ্ঠানে সাক্ষীরাও সশরীরে উপস্থিত থেকে বর বা বরের উকিল ও কনে বা কনের উকিলের ইজাব-কবুল সরাসরি ও সামনাসামনি শুনতে হবে। তবেই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় নয়।** (ফতোয়ায়ে আলমগীরি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৬৯)।

২য় ফতোয়াঃ
**সাক্ষীরা যদি বিয়ের অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনের উকিলকে সশরীরে সামনাসামনি না দেখেন, তাহলে বিয়ে হবে না।** তদ্রূপ একই বৈঠকে বিয়ে অনুষ্ঠান হতে হবে। বৈঠক দুই হলে বিয়ে হবে না। টেলিফোনে (স্কাইপের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য বলে মনে হয়) বিয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু বর এক দেশে এবং কনে বা কনের উকিল অন্য দেশে পৃথক দুটি স্থানে অবস্থান করেন, উপরন্তু সাক্ষীরা ইজাব-কবুল ফোনের মাধ্যমে শুনে থাকেন, **সরাসরি** বর বা বরের উকিল, কনে বা কনের উকিলকে দেখেন না (এখানে সরাসরি দেখার কথা বলা হয়েছে) এবং তাদের কথাও শোনেন না; সেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে এমন বিয়ে জায়েজ নয়। প্রাচীনকালে ফোন ছিল না, তাই ফোনে বিয়ের বিষয়টি সেকালের কিতাবাদিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে পূর্বোক্ত বিষয়গুলো সেকাল ও একালের সব কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। যা দ্বারা সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে ফোনে বিয়ে কোনোক্রমেই জাযেজ নয়। তদুপরি ফোনে বিয়ে প্রবর্তনের পর অনেক বিশ্ববরেণ্য মুফতিই নিজ নিজ কিতাবে পরিষ্কার ভাষায়ই উল্লেখ করেছেন যে টেলিফোনে বিয়ে আদৌ জায়েজ নয়। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১১শ খণ্ড, পৃ. ১৬২-১৬৩, ফতোয়ায়ে নিজামিয়া, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০৬, জাদিদ ফিকহি মাসাইল)।

৩য় ফতোয়াঃ
ইসলাম ‘ফিতরাত’ তথা স্বভাব- প্রকৃতির ধর্ম। সহজ-সরল পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করা বা বিষিয়ে তোলা ইসলামের কাম্য নয়। তাই প্রবাসীদের বিয়ে-শাদীর বাস্তব সমস্যাকে ইসলাম জিইয়ে রাখেনি। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে ফোনে বিয়ের একটি বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। জানা থাকলে ফোনে বিয়ের প্রয়োজনই পড়ে না। তা হচ্ছে, প্রবাসী পাত্র বা পাত্রী কোনো আপনজন বা যে কাউকে চিঠি, ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের উকিল বানাবেন। উকিল অপর পক্ষের সামনে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করবেন। এতে উভয় পক্ষ ও সাক্ষীরা একই বৈঠকে বিয়ে সম্পন্ন করতে সমর্থ হবেন। তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে আর কোনো আপত্তি থাকবে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১১শ খণ্ড, পৃ. ১৬৩, ফতোয়ায়ে নিজামিয়া দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০৭)।

৩ টি ফতোয়ার সারাংশঃ
সাধারন/গতানুগতিক টেলিফোনে বিয়েতে (স্কাইপেও), বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিল একই বৈঠকে, একই স্থানে **সশরীরে উপস্থিত থাকা** সম্ভব হয়না এবং সে অনুষ্ঠানে সাক্ষীরাও সশরীরে উপস্থিত থেকে বর বা বরের উকিল ও কনে বা কনের উকিলের ইজাব-কবুল **সরাসরি ও সামনাসামনি** শুনা সম্ভব হয়না।

আবার খেয়াল করুনঃ এখানে, বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিল **সশরীরে** উপস্থিত থাকা এবং ইজাব-কবুলের সময় বর বা বরের উকিল, কনে বা কনের উকিলকে সাক্ষীরা **সরাসরি দেখতে পাওয়া** কে শর্ত করা হয়েছে। আর, কেউ যদি এগুলো মানে তাহলে, বিয়ের ক্ষেত্রে আর কোন সমস্যা থাকবে না, ইনশা আল্লাহ্‌! Happy
225814
২৫ মে ২০১৪ রাত ০৪:৪০
পাহারা লিখেছেন : সব ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে এ কথাও উল্লেখ রয়েছে যে বিয়ে অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিল একই বৈঠকে একই স্থানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এবং সে অনুষ্ঠানে সাক্ষীরাও সশরীরে উপস্থিত থেকে বর বা বরের উকিল ও কনে বা কনের উকিলের ইজাব-কবুল সরাসরি ও সামনাসামনি শুনতে হবে। তবেই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় [/b]নয়।[/b] (ফতোয়ায়ে আলমগীরি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৬৯)।এখানে আনসার আছে। বরের পক্কের উকিল এবং সাক্কি বিয়ের ওনুষ্টানে তাকলে বিয়ে হয় সমস্যা নেই ।
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৯:২৪
173590
তৌহিদুল ইসলাম তানিন লিখেছেন : মুফতি সাহেবের লেখাতেই এর উত্তর আছে।

ইসলাম ‘ফিতরাত’ তথা স্বভাব- প্রকৃতির ধর্ম। সহজ-সরল পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করা বা বিষিয়ে তোলা ইসলামের কাম্য নয়। তাই প্রবাসীদের বিয়ে-শাদীর বাস্তব সমস্যাকে ইসলাম জিইয়ে রাখেনি। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে ফোনে বিয়ের একটি বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। জানা থাকলে ফোনে বিয়ের প্রয়োজনই পড়ে না। তা হচ্ছে, প্রবাসী পাত্র বা পাত্রী কোনো আপনজন বা যে কাউকে চিঠি, ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের উকিল বানাবেন। উকিল অপর পক্ষের সামনে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করবেন। এতে উভয় পক্ষ ও সাক্ষীরা একই বৈঠকে বিয়ে সম্পন্ন করতে সমর্থ হবেন। তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে আর কোনো আপত্তি থাকবে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১১শ খণ্ড, পৃ. ১৬৩, ফতোয়ায়ে নিজামিয়া দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০৭)।
226202
২৫ মে ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আমি একটা জিনিস বুঝিনে যে, এই বিয়েগুলো পড়ায় কোন বেকুবরা, কোন হুজুররা?
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৯:২২
173589
তৌহিদুল ইসলাম তানিন লিখেছেন : আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File