ইখলাসঃ ইবাদতের প্রাণ

লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদুল ইসলাম তানিন ২৪ আগস্ট, ২০১৩, ১২:১১:১৬ দুপুর



বর্তমান সময়ে যথাযথভাবে ইসলামের উপর চলতে গেলে, বিভিন্নভাবে বাঁধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়/হবে এবং এই সকল সমস্যাসমূহকে তুচ্ছজ্ঞান করা বা এর থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে একমাত্র ইখলাস। সমাজের মানুষ আমার/আমাদের ব্যাপারে কি ভাবলো না ভাবলো এই ধরনের চিন্তা থেকে নিজেকে/নিজেদেরকে সবসময় মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে এবং একইসাথে নিজের আমলগুলো যেন অন্য কেউ না জানুক এই চেষ্টাও করতে হবে।

ইখলাসের অর্থঃ

- ভাষাগত অর্থঃ খাঁটি করা, বিশুদ্ধ করা

- শরীয়তের পরিভাষাঃ নিয়তকে খাঁটি করা

- একনিষ্ঠতা

- আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য ইবাদত করা

- নিয়তকে আল্লাহ্‌র জন্য বিশুদ্ধ করা

- অন্তরকে জাগতিক উদ্দেশ্য থেকে পরিচ্ছন্ন করা

- আল্লাহ্‌ ব্যাতীত কারো কাছ থেকে প্রতিদান আশা না করা

- আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কোন সাক্ষীর আশা না করা

গুরুত্বঃ

- আমল কবুল হওয়া

- আমলের সাওয়াব নিশ্চিত করা (নিজ পরিবার এবং স্ত্রীকে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য ভরণপোষণ দেওয়াও ইবাদত।)

- অল্প আমলে অধিক সাওয়াব লাভ (নিয়তের কারনে অনেক বড় কাজ ছোট হয়ে যায় আবার অনেক ছোট কাজ বড় হিসেবে আবির্ভুত হয়।)

- গুনাহ মাফ হওয়া (আমরা অনেকেই এই ঘটনাটি জানি যে, তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারনে একজন ব্যাভিচারিনীর গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।)

- আমল না করেও সাওয়াব লাভ (নিয়তের কারনে)

- বৈধ ও জাগতিক কর্মকান্ড ইবাদতে রুপান্তরিত হওয়া (বিবাহ, পানাহার ইত্যাদি)

- শয়তানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া (নিয়তের কারনে ইউসুফ [আঃ] রক্ষা পেয়েছিলেন)

- বিপদ থেকে রক্ষ পাওয়া (হাদীসে পাওয়া যায়ঃ তিনজন গুহায় আটকা পড়লে, সৎ কাজের উসিলা দিয়ে দুয়া করার কারনে মুক্তি পায়)

- মানুষের বিরুদ্বে আল্লাহ্‌ তা’আলার আশ্রয় লাভ (আল্লাহকে সন্তুষ্ট* করতে গিয়ে মানুষ অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহ্‌ই তাদের হাত থেকে রক্ষা করবেন। অপরদিকে, মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহ্‌কে অসন্তুষ্ট করলে, তিঁনি লাঞ্ছনা ও অপমানের জন্য মানুষের হাতে ছেড়ে দিবেন।)

- ভুল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রতিদান (কোন আলেম দ্বীনি এলেম শিখার জন্য যথাযথভাবে ও ইসলাম নির্দেশিত পথে গবেষনা করে কোন মাস’য়ালা দিতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভুল করলেও একটি সওয়াব পাবে তার নিয়ত ও সত্যজ্ঞান লাভের কারনে। অপরদিকে, কেউ কোন গবেষণা/যোগ্যতা/জ্ঞান ছাড়া কোন কিছু বললে সেই কথা সঠিক হলেও গুনাহগার হবে)

* [সুন্নাহ মোতাবেক, নরম হয়ে এবং হিকমত সহকারে দাওয়াত দিতে হবে; তবেই তা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির কারন হবে।]

ইখলাস না থাকার ক্ষতিঃ

- আশা না করা সত্ত্বেও মানুষ কর্তৃক প্রশংসা (আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে সুসংবাদ)

- দা’ঈ/আলেম হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ (নিয়ত বিশুদ্ধ ছিল এবং এই খ্যাতি By Product হিসেবে এসেছে)

- অন্যকে দেখে আমলে উৎসাহী হওয়া

- সুন্দর, পরিচ্ছন্ন পোষাক ও সুগন্ধীর ব্যাবহার – শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য

- গুনাহের প্রচার না করা (নিজের অতীতের গুনাহ গোপন করা উচিত যেহেতু আল্লাহ্‌ গোপন করে সম্মানীত করেছেন)

ইখলাসের লক্ষনঃ

- খ্যাতি ভালোবাসেনা

- ধৈর্যশীল

- কাজ গোপন করতে চেষ্টা করা

- গোপনে আমলকে বিশুদ্ধ করা

- বেশী বেশী গোপন আমল করা

“যে তার ইখলাসের মধ্যে ইখলাস দেখতে না পায়, তার ইখলাসের মধ্যে ইখলাস প্রয়োজন।“


কাজ তিনভাবে করতে হবেঃ

- প্রকাশ্য কাজ প্রকাশ্যে করতে হবে (যেমনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত মসজিদে গিয়ে জামাতবদ্ধ হয়ে আদায়)

- গোপন কাজ গোপনে করতে হবে (যেমনঃ তাহাজ্জুদের সলাত, গোপন দান ইত্যাদি)

- গোপন কাজ অন্যকে উৎসাহিত করার নিয়তে করতে হবে (যেমনঃ দান করা)

নিয়তের সংমিশ্রনঃ

মুখ্য উদ্দেশ্য__________গৌণ উদ্দেশ্য__________আমলের বিধান

আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি__________-----------_____________ সর্বোত্তম

আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি__________বৈধ উদ্দেশ্য_____________ যায়েজ

আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি__________অবৈধ উদ্দেশ্য^____ মুজাহাদা*/আমল বাতিল

বৈধ উদ্দেশ্য ___________ ------------_____________আমল বাতিল

অবৈধ উদ্দেশ্য __________ ------------_____________আমল বাতিল

*মুজাহাদা = সংগ্রাম করা

^ অবৈধ উদ্দেশ্য = লোক দেখানো, মানুষের প্রশংসার লোভ ইত্যাদি

ইখলাস পরিপন্থী নয়ঃ

- আশা না করা সত্ত্বেও মানুষ কর্তৃক প্রশংসা (আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে সুসংবাদ)

- দা’ঈ/আলেম হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ (নিয়ত বিশুদ্ধ ছিল এবং এই খ্যাতি By Product হিসেবে এসেছে)

- অন্যকে দেখে আমলে উৎসাহী হওয়া

- সুন্দর, পরিচ্ছন্ন পোষাক, সুগন্ধীর ব্যাবহার – শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য

- গুনাহের প্রচার না করা (নিজের অতীতের গুনাহ গোপন করা উচিত যেহেতু আল্লাহ্‌ গোপন করে সম্মানীত করেছেন)

রিয়া থেকে বাঁচার দুয়াঃ

বাংলা অর্থঃ “হে আল্লাহ্‌, আমরা জেনে বুঝে কোন কিছুকে আপনার সাথে শরীক করা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর যা জানিনা তার ব্যাপারেও আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।“

বাংলায় উচ্চারনের নিয়মাবলীঃ

দুয়া যেকোন ভাষাই করা যায়। তারপরেও যারা আরবীতেই করতে চান তাদের জন্য বাংলা উচ্চারণ লিখার জন্য(আরবী লিখাতে না পারার কারনে), একটু চেষ্টা করলাম । হাজার চেষ্টা করেও আরবী ভাষার সহিহ উচ্চারন কোনভাবেই বাংলা বা অন্য ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না ! কারণ, আরবীর ব্যাকরনসহ খুঁটিনাটি অনেক বিষয় আছে যা না জানলে সহিহ ও শুদ্ধভাবে উচ্চারন করা সম্ভব না এবং এই বিষয়গুলো অন্য ভাষাতেও যথাযথভাবে প্রকাশ করা সম্ভব না। তবুও, আমরা অনেকেই বাধ্য হয়ে বাংলা উচ্চারনে পড়ি আর কি ! সুতরাং, বাংলা উচ্চারন করতে গেলে বা লিখতে গেলে ভুল-ত্রুটি থাকাটাই স্বাভাবিক । আল্লাহ্‌ যেন ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন।

(ল্ল) = লামের উচ্চারন “ল”/“ল্ল” হবে, “লা’/”ল্লা” হবে না।

(-) = চিহ্নটি দ্বারা টান হবে (যেখানে ১ টা, সেখানে ১ আলিফ সমান)

(গুন্নাহ) = যেখানে “ন্ন”,এবং আছে, সেখানে নাকের বাঁশিসহ ১ আলিফ টেনে পড়তে হবে।

(ঊ’’)/ (অ’’)= আঈ”ন এর উচ্চারন গলা চিপে মোটাভাবে উচ্চারন করতে হবে।

(যু) = যাল এর উচ্চারন পাতলাভাবে পড়তে হবে।

(শ)/(শা) = শীন এর উচ্চারন মোটাভাবে উচ্চারন করতে হবে।

(স) = সিন এর উচ্চারন শিসসহ পাতলা ভাবে পড়তে হবে।

উচ্চারনঃ আল্ল-হুম্মা(গুন্নাহ) ইন্না(গুন্নাহ)- নাঊ’’যুবিকা মিন আন নুশরিকা বিকা শাইয়া- নাঅ’’লামুহু ওয়া নাসতাগফিরুকা লিমা- লা- নাঅ’’লামু।

____________________________________________________

এটি OIEP আয়োজিত সাপ্তাহিক হালাকা বা আলোচনার সারমর্ম (২৩/০৮/২০১৩ ঈসায়ী)

ক্লাশে উপস্থিত থেকে Power Point Presentation ও আলোচনা থেকে নিজের জন্য সংগ্রহকৃত চুম্বক অংশ (কিছু নিজের কথা সহ) এবং এখানের ভুল-ত্রুটি একান্ত অনিচ্ছাপ্রসূতঃ । যদি কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি কিংবা কমতির হয় তার জন্য আমি বৈ অন্য কেউ দায়ী নয় এবং এর জন্য আপনাদের কাছে ও মহান আল্লাহ্‌র কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা আহ্বান করছি । আল্লাহ আমাদের সকলকে তার সন্তোষমূলক কাজ করার তাওফীক দান করুন এবং সকলকে হেদায়াতের উপর ইস্তেখামাত থাকার তাওফীক দান করুন । আমীন ।

[ ফেসবুকের বড় স্ট্যাটাসগুলো ও নোটসমূহ (ইসলামিক কবিতা ও অন্যান্য) আমার ব্যাক্তিগত ব্লগ http://www.tanin87.blog.com এ ইনশাআল্লাহ্‌ যেকোন সময় পাবেন ]

বিষয়: বিবিধ

২৮৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File