যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে নাকি একলা চলতে হয় ! আসলেই কি তাই !!!???
লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদুল ইসলাম তানিন ১৪ জুলাই, ২০১৩, ০২:৩০:৫৫ দুপুর
ঢাকা শহরের এমন এক যায়গায় থাকি যাকে কিনা মায়া-মমতা ভরা, শত শত ভালোবাসার মানুষে ঘেরা, অনিন্দ্য সুন্দর একটা ছিমছাম গ্রাম বললে ও অত্যক্তি হবে না ! চারপাশে এত্ত এত্ত এত্ত সুহৃদ মানুষের ভীড়ের মধ্যে দিনাতিপাত করি যে, অফিস শেষে সারাটাদিন পর এলাকায় ফিরলেই মনটা একেবারেই প্রফুল্ল হওয়া ওঠে । আর, পরিবেশ ? সে তো অসাধারণ ! গাছ-গাছালীতে ভরপুর, প্রান জুড়ানো দখিনা শীতল বাতাস, মুক্ত আকাশ, দিনে বৃষ্টির জল, রাতের জোসনা সবই উপভোগ্য । সুব'হানাল্লাহ !
কিন্তু, সব কিছুকেই ছাড়িয়ে একটি জিনিস বাধ সাধে; আর তা হলো ভয়াবহ ট্র্যাফিক জ্যাম । সকালে বাসা হতে আসতে প্রায় ২ থেকে ২.৫ ঘন্টা লেগে যায় ! আর, বিকেলে ? আহ ! সে তো সব কিছুকেই হার মামায় ! সাধারণত ২.৫ ঘন্টা থেকে ৩ ঘন্টা লাগলেও মাঝে মাঝে তা ৪ থেকে সাড়ে ৪.৫ ঘন্টায় গিয়ে পৌঁছায় ! এইতো, রমজানের আগের দিন অফিস থেকে রওয়ানা দিয়েছিলাম বিকাল ৪ টায় আর বাসায় গিয়ে পৌঁছানো হয় রাত ৮.৩০ এ !!! তার পরের দিন মানে প্রথম রমজানে সময় লেগেছিল ৩ ঘণ্টার, মানে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা শেষে ইফতারের আধা ঘন্টা আগে বাসায় পৌঁছা হয় আর কি ! অথচ, বাসা আর অফিসের দুরত্ব খুব বেশী না, ঠিকমত বাস চললে খুব বেশী হলে সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা লাগার কথা ।
এই ট্র্যাফিক জ্যামের হাত থেকে মুক্তি পেতে অনেক দিন ধরেই মোটর সাইকেল কিনার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু মায়ের ঘোর আপত্তির মুখে সেটা আর হয়ে ওঠেনি । এরপর চিন্তা করলাম একটা ভালোমানের বাইক (এগুলোকে সাইকেল বলিয়া লজ্জা দিবেন না !) কিনব সেখানেও ঝুঁকির কথা বলে মা বারবার নিষেধ করে যাচ্ছিলেন । (আর, এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কারন হলো, বাইকে মটরসাইকেলের চেয়ে অনেক অনেক গুন কম ঝুঁকি বিদ্যমান এবং এর স্বাস্থ্যগত অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে।) মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এতদিন একরকম চুপ করে নিত্যদিন কষ্ট করে যাছিলাম । যাই হোক, গত একমাস ধরে এই ব্যাপারটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল ! চিন্তা করলাম, এবার ইনশাআল্লাহ্ বাইক কিনবই ! তাই, একমাস ধরে আস্তে আস্তে মা কে বুঝানোর চেষ্টা করলাম । কে শুনে কার কথা ! সেই একই অজুহাতঃ "গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা যাব ! এলাকায় আর তো কেউ এভাবে অফিস করে না ! লোকে কি বলবে ! অফিসে লোকজন কি বলবে ! এত দূর কিভাবে যাব ইত্যাদি ইত্যাদি ।"
তবে আমি এসব মানতে নারাজ ! আমি বরাবরই স্রোতের বিপরীতে চলার চেষ্টা করি, চলি এবং আলহামদুলিল্লা ভালাভাবেই তা হয়ে থাকে । মানে হলো, যেখানে অন্যরা ঝুঁকি নিতে দশবার চিন্তা করে সেখানে আমার জন্য একবার চিন্তা করা যথেষ্ট ! আমি যেটাকে মংগলজনক মনে করি, সেখানে শত বাধা-বিপত্তি, ঝড়-ঝঞ্ঝা এলেও আমাকে এক চুলও টলাতে পারেনা ! কি রোদ, কি বৃষ্টি, কি দিন, কি রাত সব পরিবেশেই স্বাচ্ছন্দে ও সহজেই মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ আমাকে অগ্রগামী করেছেন । আর, তাইতো আমি আমার সিন্ধান্তে সর্বদা অটল থাকার চেষ্টা করি । তাই বাসায়, এলাকায় বা বন্ধুমহলে একটু ক্ষেপাটে বলে আমার সুনাম বা দুর্নাম আছে । তো, রমজানের আগের দিন যখন বাসায় আসতে ৪.৫ ঘন্টা লেগে যায়, তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম ইনশাআল্লাহ্ এই রমজানেই বাইক নিয়ে নিব (অবশ্যই মা কে হিকমতের সাহায্যে বুঝানোর মাধমে) ।
আসলে যে জন্য এত প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কথা বলা তা হলো, তা হলঃ আমি সবসময়ই আমার পাশে আল্লাহকে পাই (আমরা সবাই পাই, কিন্তু হয়তো বুঝতে পারিনা বা বুঝার চেষ্টা করি না) এবং আমি উপলব্দি করতে পারি ভালোভাবেই । যেমনঃ গতকাল যখন বংশাল থেকে সাইকেল কিনে শেষ করি তখন আমার এক বন্ধুর বন্ধু (আমার সাথে মোটামুটি ভালোই পরিচয় ছিল) আরেকটা বাইক নিয়ে হাজির, আমাকে বাসা পর্যন্ত একসাথে নিয়ে যাবে বলে যা কিনা আমি ঘুনাক্ষরেও আশা করিনি ! যা হোক, যেহেতু অনেক দিন পর (প্রায় ৩/৪ বছর হবে) বাইকে উঠি এবং ঢাকা শহরের একেবারে প্রানকেন্দ্রের ব্যাস্ত ও ঘিঞ্জি সড়কে তা ও আবার পুরান ঢাকার রাস্তা পেরিয়ে, সেখানে একটু সাহসে বা মানসিকভাবে প্রস্তুতের প্রয়োজন ছিল বৈকি ! এই সময় বন্ধুর বন্ধুকে পেয়ে আমিতো মহাখুশি । আলহামদুলিল্লাহ্, আমি তার সাথেই নিরাপদে বাসায় আসলাম । (ইফতারের আগে বংশাল থেকে চালিয়ে বাসায় এসেছি আযানের ঠিক পরপরই । আর, তার বাসা আগে হওয়াতে, জোর করে বাসায় নিয়ে গেল ইফতার করার জন্য । এখানে ও আল্লাহ্ কি সুন্দর করে আমার ধারনার বাইরে আমার জন্য ইফতারের ব্যাবস্থা করে রেখেছিলেন । আলহামদুলিল্লাহ্ ! অনেকেদিন পর তাও ইফতারের ঠিক আগে বাইক চালিয়েছি বলে একটু কষ্ট হয়েছে বৈকি তবে আনন্দের মাত্রা এর থেকে অনেক অনেক গুন বেশী ছিল) ।
আর, আজ সকাল ৭টায় আমি যখন ঘুমে মগ্ন ছিলাম তখন আমি বন্ধুর বন্ধুর (সে পেশায় একজন আর্কিটেক্ট, বাসা আমাদের এলাকার পাশেই আর অফিস লালমাটিয়ায়) ফোন পাই এবং আমাকে আমাকে আমার অফিসের কাছাকাছি পর্যন্ত এগিয়ে দেয়ার আমন্ত্রণ করে । ফোন রাখার পরই আমি চিন্তামগ্ন হয়ে পড়লাম । কাল পর্যন্ত যেই আমার কোন সঙ্গী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বাইক চালিয়ে অফিসে আসার ক্ষেত্রে আর আজ কিনা বন্ধুর মত ভালোবাসার পরশ নিয়ে মোটামুটি চেনা একজন হাজির ! এটি আল্লহার অশেষ দয়া, রহমত ও ভালোবাসা ছাড়া আর কি ! আমি কৃতজ্ঞতায় সেই মহান সত্বার কাছে শুকরিয়া আদায় করতে লাগলাম আর আসার সময় ঐ নতুন বন্ধুকেও আমার প্রতি আল্লাহর এই অনুগ্রহের কথা বললাম আর সে একগাল হেসে নিরব সম্মতি প্রকাশ করল । আশা করছি, ইনশাআল্লাহ্ ভবিষ্যতেও এই রহমত সহ অন্যান্য রহমত, বরকত ও ভালোবাসা ভালোভাবেই বজায় থাকবে আমার জীবনে ।
“আমি তোঁমার মত আপন করে আর কারে পাই, বলো ?
আর কারে পাই, বলো !?
হাঁটতে গেলে ছায়া হয়ে, সঙ্গে তুমি চলো ।
আর কারে পাই, বলো !?”
সত্যি কথা বলতে, "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে নাকি একলা চলতে হয় !" - এই কথার কোন ভিত্তি নেই কেননা একজন অতি আপন, সবচেয়ে ভালো বন্ধু-উত্তম সংগী, মহান সত্তা, রব্বুল 'আলামিন, আল্লাহু সুব'হানাল্লাহু তা'আলা আমার, আপনার, আমাদের সবার সাথেই সবসময়ই রয়েছেন আর অতি নিকটেই রয়েছেন এবং এই মহান বন্ধু কখনো আমাকে, আপনাকে ছেড়ে যাবে না - কি বিপদে, কি আপদে, কি সুখে, কি দুখে । শুধু আমাদের একটি কাজ করতে হবে - তা হলো তাঁকে সবসময় স্মরন করতে হবে - ভালো এবং খারাপ (আপাতঃদৃষ্টিতে আমাদের কাছে যা খারাপ বলে মনে হয় কিন্তু তা ও আমদের জন্য মঙ্গলজনক) উভয় ক্ষেত্রেই । তাহলেই, তিঁনি তার অপরিসীম ভালোবাসা নিয়ে কোন না কোন উসিলার মাধ্যমে হাজির হয়ে যাবেন আর তা কিভাবে এবং কখন হবে তা আমরা কল্পনা করতেও পারব না ! সুব'হানাল্লাহ ! সুব'হানাল্লাহ ! সুব'হানাল্লাহ ! কৃতজ্ঞতায় শির নত হয়ে আসে সেই মহান প্রেমিকের পাক দরবারে । আল'হামদুলিল্লাহ !
সবশেষে এই সম্পর্কিত কয়েকটি ক্বুর'আনের আয়াত দিয়ে শেষ করব ।
আল্লাহ্ তায়ালা ক্বুর'আনুল কারীমে বলেনঃ
1. “(হে নবী) আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চয়ই আমি অতি নিকটেই রয়েছি। কাজেই যখন কোন বান্দা আমাকে ডাকে, তখন আমি তার প্রার্থনা কবুল করি। অতএব তারা যেন যথাযথ ভাবে আমার হুকুম মেনে চলে এবং আমার প্রতি নিঃসংকোচে ঈমান আনে, তাহলে তারা সৎপথে আসতে পারবে।” (সূরা বাকারাঃ আয়াত ১৮৬)।
2. “সকাল সন্ধ্যা তোমরা রবের স্মরণ কর” (সুরা দাহার -২৫)।
3. “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর” (সুরা আহযাব – ৪১)।
4. “তারাই জ্ঞানী ব্যক্তি যারা দাড়ানো বসা এবং শোয়া অবস্থায় তথা সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে” (সুরা আল ইমরান–১৯১)।
6. “অতঃপর তোমরা যখন নামায সম্পন্ন কর তখন দন্ডায়ামান, উপবিষ্ঠ ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর” (সুরা নিসা ১৪২)।
7. “তুমি স্বীয় অন্তকরণে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর বিনয়ের সাথে এবং ভয়ের সাথে আরও স্মরণ কর প্রত্যুসে ও সন্ধ্যায় উচ্চ স্বরে ব্যতিরেকে নিম্ম স্বরে। আর গাফেলদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না” (সুরা আরাফ- ২০৫)।
8. “আল্লাহর স্মরণই (জিকির) সবচেয়ে বড়” (সুরা আনকাবুত – ৪৫)।
9. “আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণকারী এবং স্মরণকারীনি, আল্লাহ তাদের জন্য মাগফেরাত ও প্রতিদানের ব্যবস্থা রেখেছেন” (সুরা আহযাব- ৩৫)।
10. “তোমরা আমাকে স্বরন কর , আমিও তোমাদেরকে স্মরন করবো” (সুরা বাকারা-১৫২)।
[ এতগুলো ক্বুর'আনের আয়াত একত্রীকরনের ক্ষেত্রেও আল্লাহ্র সহায়তার জন্য শুকরিয়া প্রকাশের দাবি রাখে । আল'হামদুলিল্লাহ ! এই লিখায় আমি শুধুমাত্র প্রথম আয়াতটি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু একজন আল্লাহ্র বান্দার উসিলায় একইজাতীয় এতগুলো আয়াত একসাথে দেয়া সম্ভব হয়েছে । ]
____________________________________________________
রচনাকালঃ ১৪.০৭.২০১৩ ইসায়ী
বিষয়: বিবিধ
১২১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন