রমাদান ও সিয়াম

লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদুল ইসলাম তানিন ০৫ জুলাই, ২০১৩, ১১:৪৭:১৯ রাত



রমাদান গুনাহ থেকে বাঁচার মহা সুযোগ । ঈমান নিয়ে প্রতিদানের আশায় সিয়াম পালন করলে অতীতের গুনাহখাতা মাফ করে দেয়া হয় । একজন নাবিককে যেমন জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে চলাচল করতে গেলে কিছু সময় পর পর গতিপথ ঠিক করতে হয় সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য, ঠিক তেমনি একজন মুসলিম যদি জান্নাতের পথ থেকে দূরে থাকে তখন রমাদান একটি অনন্য সুযোগ নিয়ে হাজির হয় তার গতিপথ ঠিক করার নিমিত্তে ।

প্রস্তুতিঃ

- তওবা করা (আল্লাহ্‌র অবাধ্যতা ত্যাগ করে তওবাতুন নসুহাহ্‌ করে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসা)

- জিহ্বা সংযত করা

- গীবত বন্ধ করা

- মিথ্যা বলা বন্ধ করা

- গালাগালি বন্ধ করা

- সুদ খাওয়া বন্ধ করা

- ঘুষ খাওয়া বন্ধ করা ইত্যাদি

আমলের সংশোধন করনে রমাদানঃ

- সলাত (রাতের* এক তৃতীয়াংশ সলাতের ফযীলত অনেক)

- ক্বুর’আন অধ্যয়ন ও জ্ঞানার্জন (এটি সুন্নাহ)

- সাদাকা (বেশী বেশী দান করা)

- আখলাক বা চরিত্র সংশোধন (যেমনঃ দৃষ্টি সংযত করা)

- দাওয়া (পরিকল্পিতভাবে দাওয়াত দিতে হবে)

*রাতঃ মাগরিবের পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কে রাত ধরা হয়।

সাওম ভংগকারী বিষয়ঃ

- পানাহার (ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া-দাওয়া করা)

- পানাহারের বিকল্প (রক্ত গ্রহন, রক্তে স্যালাইন গ্রহন, শক্তি বর্ধনকারী ইনজেকশন গ্রহন ইত্যাদি । ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন গ্রহন করা যাবে ।)

- বৈবাহিক সম্পর্ক (এ রকম হলে কাযা রোযা রাখতে হবে এবং কাফফারা* দিতে হবে)

- ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত

- ইচ্ছাকৃত বমি করা

- হায়েয ও নিফাস

* কাফফারাঃ দাস মুক্ত করা/ টানা ২ মাস রোযা রাখা/ ৬০ জন মিসকিন** খাওয়ানো (১ম টি সম্ভব না হলে ২য় টি এবং ২য় টি ও সম্ভব না হলে ৩য় টি – অবশ্যই আলেমের সাথে পরামর্শক্রমে)

** মিসকিনঃ উপার্যন নেই বা নিঃস্ব/ উপার্জন থাকলেও জীবন ধারনের জন্য যথেষ্ট নয় ।

সাওম ভঙ্গকারী নয়ঃ

- চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ, সুরমা ইত্যাদি

- রক্তদান, রক্তপাত

- ইনসুলিন

- স্যাপোসিটরী

- ক্যাথেটার, ক্যামেরা (শরীরে প্রবেশ করানো)

- ক্রীম, তেল, মেকআপ, সুগন্ধি, ঠোঁট আদ্রকারী

- থুথু/লালা/সর্দি গেলা

- কুলি করা, সাঁতার কাটা, গোসল করা

- ইনহেলার (ক্যাপসুল সহ ইনহেলার নেয়া যাবে না)

- কিডনি ডায়ালাইসিস (রক্ত পরিস্কারক হলে ভাঙবে না কিন্তু শক্তিবর্ধক যুক্ত করলে ভাঙ্গবে)

রোযা ভাঙ্গবে নাঃ

- অনিচ্ছায় (কেউ জোর করে করালে) রোযা ভংগকারী যেকোন কাজ হলে

- ভুলে রোযা ভংগকারী যেকোন কাজ হলে

- না জেনে রোযা ভংগকারী যেকোন কাজ করলে

* টুথপেষ্ট দিয়ে দাঁত মাজলে রোযা ভাঙবে না

* অনিচ্ছায় স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙবে না

যাদের রোযা ভঙ্গের অনুমতি আছেঃ

- মুসাফির (কাযা* করবে)

- অসুস্থ্য (কাযা করবে)

- গর্ভবতী (কাযা করবে)

- স্তনদাত্রী (কাযা করবে)

- হায়েয ও নেফাস ও অবস্থায় নারী (রোযা বৈধ নয়; কাযা করবে)

- বার্ধক্যের কারনে অক্ষম (ফিদয়া** দিবে)

- দুরারোগ্য (যা ভালো হবার সম্ভাবনা নেই) ব্যাধির কারনে অক্ষম (ফিদয়া* দিবে)

[অত্যাধিক কষ্ট (ঈদের কেনাকাটার জন্য নয়) বা শারীরিক ক্ষতির আশংকা থাকলে রোযা ভংগ করা ওয়াজিব]

*কাযাঃ পরবর্তী রমাদান আসার পুর্বে আদায় করতে হবে । কাযার সংখা একান্ত মনে না থাকলে অনুমান করে আদায় করা যাবে ।

ফিদয়া** সংক্রান্ত মাসায়েলঃ

- মিসকিন ফিদয়া পাবে

- ফিদয়া অর্থ নয় খাদ্য (৩০ জনকে খাওয়ানো/ইফতারের মাধ্যমে দেয়া যাবে)

- রান্না করা খাদ্য বা ১.৫ কেজি শস্য

- রমাদানের যে কোন সময় দেয়া যাবে; পুর্বে নয়

- একজনকে একাধিক দেয়া যাবে; তবে একসাথে নয়

*দুস্থ্যদের (যে নিজেই দুস্থ্য) ফিদয়া দেয়া লাগবে না

রমাদানের কিয়াম ও শেষ দশকঃ

- রমাদানের কিয়াম (কিয়ামুল লাইল- তারাবীহ* ও তাহাজ্জুদ) গুনাহ মাফের কারন (অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে)

- শেষ দশকের বিশেষ ফযীলত (রসুল [স:] এই সময়কে অনেক গুরুত্ব দিতেন)

- লাইলাতুল ক্বদর - ৮৩ বছরের ও অধিক ইবাদতের সওয়াব (বিজোড় রাত এবং ২৭ তারিখে হওয়ার সম্ভাবনা বেশী)

- ইতিকাফ (মসজিদে অবস্থান করা সুন্নাহ, ঘরে ইতিকাফ করা যাবে না । আংশিক ইতিকাফ – ১/৩/৭/৫ দিন করা যাবে; পুরোটা করতে হলে ২০ রমজানের সুর্যাস্তের আগে মসজিদে আসতে হবে। খাবারের জন্য বাইরে যাওয়া যাবে, অন্য কোন কারনে বাইরে যাওয়া যাবে না ।)

- ফিতরা** (রোযার ভুলত্রুটি দূর করার জন্য ঈদের নামাযের আগে দিতে হবে)

* তারাবীহঃ ২ রাকাত হতে ২০ বা অধিক রাকাত পড়া যাবে (তবে ইমামের সাথে বিতর সহ শেষ পর্যন্ত নামাজ পড়লে পুরো রাত নামাজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যাবে)

ফিতরা**:

- প্রধান খাদ্য বা শশ্য অর্থ নয়

- পরিমানঃ প্রত্যেকের জন্য এক সা (প্রায় ৩ কেজি – চাল দেয়া যাবে)

- পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও বালক-নাবালকের ফিতরা দিতে হবে

- ঈদের ২ দিন আগে দেয়া যাবে; এর আগে নয়

___________________________________________________

এটি OIEP আয়োজিত সাপ্তাহিক হালাকা বা আলোচনার সারমর্ম (০৫/০৭/২০১৩)


ক্লাশে উপস্থিত থেকে Power Point Presentation ও আলোচনা থেকে নিজের জন্য সংগ্রহকৃত চুম্বক অংশ (কিছু নিজের কথা সহ) এবং এখানের ভুল-ত্রুটি একান্ত অনিচ্ছাপ্রসূত । যদি কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি কিংবা কমতির হয় তার জন্য আমি বৈ অন্য কেউ দায়ী নয় এবং এর জন্য আপনাদের কাছে ও মহান আল্লাহ্‌র কাছে বিনিতভাবে ক্ষমা আহ্বান করছি । আল্লাহ আমাদের সকলকে তার সন্তোষমূলক কাজ করার তাওফীক দান করুন এবং সকলকে হেদায়াতের উপর ইস্তেখামাত থাকার তাওফীক দান করুন । আমীন ।

বিষয়: বিবিধ

১৮৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File