দুয়াঃ মুমিনের হারানো ঐশ্বর্য
লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদুল ইসলাম তানিন ১৪ জুন, ২০১৩, ১১:০৪:১৭ রাত
দুয়াঃ
দুয়া মুমিনের অস্ত্রস্বরুপ । দুয়ায় ভাগ্য ফেরে, অভাব মোচন হয়, পাপ হতে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়, রহমত-বরকত-মাগফেরাত হাসিল হয় এবং সর্বোপরি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি মেলে । দুয়ার সঠিক নিয়ম-কানুন ও আদব কায়দা না জানার ফলে আমরা অনেকেই এবং অনেকাংশেই এইসকল ফল লাভে ব্যার্থ হই ।
দুয়ার কিছু আদব – অভ্যন্তরীণঃ
- একমাত্র আল্লাহ্ই দুয়ার জবাব দেন
- মনোযোগী অন্তর ও ইয়াকীন
- আল্লাহ্ সম্পর্কে সুধারনা
- ভয় ও আশা নিয়ে দুয়া করা
দুয়ার আদব – বাহ্যিকঃ
- অযু করা
- কিবলামুখি হওয়া
- দুই হাত তোলা
- চুপিসারে আকুতি-মিনতি করে দুয়া করা
- আল্লাহ্র প্রশংসা ও নবীর উপর দুরুদ পড়ে শুরু করা
- শুরুতে ইস্তিগফার করা (গুনাহ স্বীকার করা ও ক্ষমা চাওয়া)
- তাওয়াসসুল (আল্লাহ্র গুনবাচক নাম, কোন আমল, ঈমানের কথা এবং নবীর প্রতি ভালোবাসার কথা উল্লেখ করা)
- ক্রন্দন
- সকল মুললিমদের জন্য দুয়া করা
- সবসময়য় দুয়া করা
- একমাত্র আল্লাহ্র নিকট অভিযোগ করা (নিজের অক্ষমতা স্বীকার করে, আল্লাহ্কে দোষারোপ করে নয়)
- দুয়া কবুলের ফলাফল উল্লেখ করা
দুয়া কবুলের উপযোগী সময়ঃ
- রাত্রীর শেষ তৃতীয়াংশ
- আযানের সময়
- আযানের জবাব দেয়ার পর
- আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়
- বৃষ্টিপাতের সময়
- সালাতের সিজদায়
- সালাতের শেষ বৈঠকে
- যখন দুই বাহিনী মুখোমুখি হয় (যুদ্ধের সময়)
- জুম্আর দিন একটি নির্দিষ্ট সময় (১ম প্রসিদ্ধ মতঃ জুম্আর আযান থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত । ২য় প্রসিদ্ধ মতঃ আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত)
- রাত্রীতে ঘুম ভাঙ্গলে
- যমযমের পানি পানের সময়
- রামাদান ও লাইলাতুল ক্বদর
- হজ্জ ও ওমরাহের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় (সর্বোত্তম সময়ঃ আরাফার দিন)
যে সকল ব্যক্তির দুয়া কবুলের উপযোগীঃ
- মাযলুমের দুয়া*
- মুসাফিরের দুয়া
- সন্তানের বিরুদ্ধে বা সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দুয়া (দাঁড়ি রাখা, হিজাব করা বা ইসলামের বিপরীত দুয়া কবুল হয় না)
- পিতা-মাতার জন্য সন্তানের দুয়া
- রোযাদারের দুয়া
- হজ্জ, ওমরাহ্ ও জিহাদকারীর দুয়া
- কোন মুসলিমের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুয়া
- আল্লাহ্কে অধিক স্মরনকারীর দুয়া*
- ন্যায়পরায়ন শাসকের দুয়া*
* এই ৩ প্রকার লোকের দুয়া কবুল হয় ।
দুয়া কবুলের পথে বাঁধাঃ
- হারাম উপার্জন
- কোন কোন গুনাহ (যেমনঃ ব্যাভিচারী নারীর দুয়া, অন্যায়ভাবে ট্যাক্স সংগ্রহকারীর দুয়া)
- সৎকাজে আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ না করা
- দুয়ার জবাব না পেয়ে হাল ছেড়ে দেয়া/তাড়াহুড়া করা
- নিষিদ্ধ কিছু বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দুয়া
দুয়ার জবাব বিলম্বিত হওয়ার কারনঃ
- আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা, যা ইচ্ছা দেন
- পরীক্ষা
- হিকমত
- কাংখিত বস্তু অকল্যাণকর হতে পারে
- আল্লাহ্র নির্বাচন বান্দার নির্বাচনের চেয়ে উত্তম
- নিজের সংশোধনের সুযোগ
- আল্লাহ্ ৩ উপায়ে দুয়ার সাড়া দেন (১. সাথে সাথে দিবেন ২. আখেরাতে বিনিময় দিবেন ৩. কোন বিপদ সরিয়ে দিবেন)
পরিশেষে, বিপদাপদ বা দূর্ঘটনা ঘটলেই তাতে হাহুতাশ করার কারণ নেই । কারণ, আমাদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে যা আমরা চাই না কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে । আবার অনেক সময় এমন কিছু আশা করি যার মধ্যে হয়ত কোন অকল্যাণ ও ক্ষতি অপেক্ষা করছে । আমরা কেউই ভবিষ্যত সম্পর্কে জানি না ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমদের কাছে হয়তবা কোন একটা বিষয় পছন্দনীয় নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর । আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর । বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না ।” [সূরা বাকারা: ২১৬]
দুয়ার মানে এই নয় যে, আপনি যা পাচ্ছেন এর উসিলায় বরং এর মাধ্যমে আল্লাহ্র সাথে সম্পর্ক তৈরী হওয়া বা আরো নিবিড় হওয়াই সবচেয়ে বড় পাওয়া ।
_______________________________________________________________________________________
এটি OIEP আয়োজিত সাপ্তাহিক হালাকা বা আলোচনার সারমর্ম (১৪/০৬/২০১৩)
ক্লাশে উপস্থিত থেকে Power Point Prestation ও আলোচনা থেকে নিজের জন্য সংগ্রহকৃত চুম্বক অংশ (কিছু নিজের কথা সহ) এবং এখানের ভুল-ত্রুটি একান্ত অনিচ্ছাপ্রসূত । যদি কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি কিংবা কমতির হয় তার জন্য আমি বৈ অন্য কেউ দায়ী নয় এবং এর জন্য আপনাদের কাছে ও মহান আল্লাহ্র কাছে বিনিতভাবে ক্ষমা আহ্বান করছি । আল্লাহ আমাদের সকলকে তার সন্তোষমূলক কাজ করার তাওফীক দান করুন এবং সকলকে হেদায়াতের উপর ইস্তেখামাত থাকার তাওফীক দান করুন । আমীন ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন