লং মার্চ - অভিজ্ঞতা
লিখেছেন লিখেছেন তৌহিদুল ইসলাম তানিন ০৬ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:৪৮:৫৭ সন্ধ্যা
গতকাল রাতে, হেফাজতে ইসলামের লং মার্চে যাওয়ার নিয়ত করে বাবা-মাকে জানানোর পর প্রথমেই বাধা আসল তাদের পক্ষ থেকে কেননা তারা এতে একেবারেই রাজী না !!! এইজন্য না যে তারা এই লং মার্চকে সমর্থন করছে না বরং তারা উদগ্রীব এর বিপরীতমুখী বাধাগুলো ভেবে ! বিশেষ করে, বাবা কতক্ষন পরপর এসে বুঝাচ্ছে না যাওয়ার জন্য !! (সম্ভাব্য সমস্যা ব্যাখা করে) আর, মা ও মাঝে মাঝে স্মরন করিয়ে দিচ্ছেন । ঊল্লেখ থাকে যে, বাবা প্রায় ১ বছর আগে ব্রেইন ষ্ট্রোক করেছিলেন এবং এখন একবার যেটা মাথায় আসে সেটা বারবার বলতে থাকেন ও আমাকে নিয়ে অতিমাত্রায় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকেন (কেননা আমার ছোট ভাই চাকুরীর সুবাদে দেশের বাইরে থাকে আর একমাত্র আমিই চোখের সামনে) । সুতরাং, কি করব বুঝতে পারছিলাম না !! সাথে এ ও চিন্তা (আল্লাহ্ না করুক) যদি আবার ষ্ট্রোক করে বসেন !!!
এই অবস্থা একজন ঘনিষ্ঠবন্ধু ও সুহৃদের কাছে ব্যাখ্যা করলে জবাব এল, “আমার কাজিনদের মধ্য থেকে যারা যেতে চাইছে, তারাও বাবা-মা,দাদুর আপত্তির মুখোমুখি হচ্ছে । তবুও যাওয়ার নিয়াত করেছে । এ লড়াই সত্য আর মিথ্যার লড়াই। আজ যদি এতে মুসলিমরা হেরে যায়, তবে আর কোনদিন মুসলিমরা আমাদের প্রিয় জন্মভূমি এই বাংলার বুকে মাথা উঁচু করে হাটতে পারবেনা । আর, দুআর কথা বলতে হবেনা ! দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে প্রতিটি ভাই-বোন অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দুআ করে যাচ্ছে । আল্লাহ হেফাজাত করবেন এবং বিজয় দান করবেন, ইনশা আল্লাহ।“ সাথে এও যুক্ত করলেন, আজ বেশি রাত না জেগে এখন ঘুমিয়ে পড়ে, ফজরের আগে উঠে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য । মাশা আল্লাহ্ ! আল্লাহ্ ঐ প্রানপ্রতিম বন্ধুকে উত্তম প্রতিদান করুন । আমীন
এরপর যাওয়ার ব্যাপারটা আরো দৃঢ় হলে, আবার ও বাবা-মাকে বুঝানো হল এবং ফজরের পর খিচুড়ী খেয়ে [ প্রিয় বস্তু দিয়ে প্রিয় কাজ শুরু করা আর কি ! :-) ] সকাল ৬ টায় বিসমিল্লাহ্ বলে, মসজিদের খতিব (ইমাম) সাহেবের সাথে রওয়ানা দিলাম । প্রথমে ১৫ মিনিট হেঁটে, তারপর ছোট ম্যাক্সি (কিছুটা ট্যাম্পুর মত) করে অর্ধেক পথ পাড়ি দিলাম এবং সবশেষে রিকশায় করে বাকি অর্ধেক পথ কোন রকম বাঁধা ছাড়ায় পার করে সকাল ৭ টায় মতিঝিল পোঁছলাম । আলহামদুলিল্লাহ্ !
পোঁছানোর পর আশানুরূপ তৌহিদি জনতা না দেখে একটু হতাশ হলে ও সকাল ৮.৩০ এর আগেই সমাবেশ প্রাঙ্গন লোকে লোকারন্য এবং মনটা খুশিতে ভরে গেল । আমি ও খতিব (ইমাম) সাহেব শাপলা চত্বরের একেবারেই সামনে সারিতে ছিলাম (প্রথম দিক থেকে ৪ নং সারিতে), ষ্টেজের ডানপাশে (নটরডেম কলেজগামী রোডে) উত্তর দিকে জনতা ব্যংকের সামনে নতুন নির্মাণাধীন স্টিলের ফুট ওভার ব্রিজের নিচে । প্রায় সোয়া ৮টার দিকে মঞ্ছের কার্যক্রম শুরু হল বিভিন্ন আলেম ওলামাদের বক্ততা, ইসলামী সংগীত, কবিতা আবৃতি (জাগ্রত কবি মুহিব খান, দাবানল শিল্পীগৌষ্ঠী ও অন্যান্য) এবং ঊচ্ছ্বাস ও প্রাণজাগানো কথার মধ্য দিয়ে । একটু পরে শুরু হল খাবার বৃষ্টি (আসলে বৃষ্টি না বলে বন্যা বলাই শ্রেয় হবে !!!), বিভিন্ন ধরনের রিযিক (খাবার) আকাশে-বাতাশে উড়তে লাগল এবং অনেক সেচ্ছাসেবী ভাই সরাসরি হাতেও পোঁছে দিচ্ছিলেন তৌহিদি জনতার কাছে, অবশ্যই বিনামুল্যে । একসময় লোকজন বিরক্ত হয়ে খাবার ছুড়ে এবং সরাসরি হাতে না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন । যেই ভাইরা এত লোকের খেদমতে ব্যাতিব্যাস্ত ছিলেন খাবারের টাকা পরিশোধ ও পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে, আল্লাহ্ উনাদেরকে এর উত্তম প্রতিদান করুন । (আমীন) একসাথে, এত ঈমানদার ও পরহেজগার লোকের সমাগম ও স্রোত দেখে সত্যিই মনটা ভরে গেল এবং এটা একেবারেই আমার ধারনার বাহিরে ছিল !!! তখন মনে হচ্ছিল, ইনশা আল্লাহ্ শীঘ্রই আমরা একটি ইসালামী রাষ্ট্র পেতে যাচ্ছি যা কিনা সময়ের ব্যাপার মাত্র আর এটা হয়ত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র হাত ধরেই হবে এবং তখনই এই দেশে মুসলিমদের বহু দিনের আকাংখিত ইসলামের চুড়ান্ত বিজয় রুপে পাবে । ও আল্লাহ্ ! আপনি এই অসহায় মজলুমদের সহায় হোন । আমীন
এক ভাই গাজিপুর থেকে পুরোটা পথ হেঁটে (ফজরের আগেই রওয়ানা দিয়েছেলেন) প্রায় ১১ টার দিকে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় পৌঁছালে, আমার পাশেরজন উনাকে কিছু খাবার দিলেন এবং আমিও জমে যাওয়া খাবারের স্তুপ থেকে কিছু দিতে গেলে জবাব এল, “ভাই, আমি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহন করি তবে আমার উদ্দেশ্যে ঘাটতি হবে, আর আমি আমার ঈমানী দায়িত্ত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারব না । অতএব, আমার যতটুকু না হলেই নয় শুধু ততটুকুই গ্রহন করব” । মাশা আল্লাহ্ ! (আর একমাত্র এই বক্তব্যই আমার লেখার অনুপ্রেরণা
অবশেষে, বাসায় ফিরার পালা । প্রথমে রিকশায় অর্ধেক পথ, তারপর বাকী অর্ধেক পথের আধা সি.এন.জি ক্যাবে ও বাকী আধা আবার রিকশায় । কোনরকম,বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই বাসায় নিরাপদে ফিরে আসা । আলহামদুল্লিল্লাহ ! (তবে শুনেছি অনেক ভাই অনেক জায়গায় আসার পথে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন ।
সবশেষে একটি কথাই উচ্চারিত হচ্ছে প্রানে; অনেক অনেক ধন্যবাদ ও দোয়া হেফাজতে ইসলামকে আমাদের সবার ঈমানী জজবাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়ে এর নবপ্রান ও পুনঃজন্ম দেয়ার জন্য ।
------------------------------------------ সংযুক্তি ------------------------------------------
রিযিকের তালিকাঃ
পানি (বোতলজাত ও খোলা), শরবত (কমপক্ষে ২ ধরনের), বিস্কিট (কমপক্ষে ৬ ধরনের), মুড়ি, কেক (কমপক্ষে ৩ ধরনের), চকলেট (কমপক্ষে ২ ধরনের), খেজুর (শুকনো ও সাধারন), রুটি, বনরুটি, পাউরুটি, পরোটা, হালুয়া, আইস্ক্রীম, খাবার স্যালাইন, কলা (কমপক্ষে ২ ধরনের), আপেল, কমলা, কচি শশা, গাজর ইত্যাদি । [ শুনেছি অন্য যায়গায় ৩ ধরনের খিচুড়ী - গরু, খাসি, মুরগী ও ছিল ]
(এসব রিযিকের ৯৭% ই আমার কাছে পৌঁছেছে, উড়ে ও সরাসরি । আলহামদুলিল্লাহ্ ! আর, বাসায় আসার সময় অবশিষ্ট খাবার রিকশাওয়ালা ভাইকে দিয়ে দিয়েছি)
বিষয়: বিবিধ
১২৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন