শাহ আবদুল হান্নান স্যারের আজকের লিখাঃ পড়ে মনে হল - নারীবাদী 'প্রমিতা'দের দ্বারা - সামহাউ উনি প্রতারিত হন নি তো?
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ০৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০৫:৩৮:০৭ সকাল
বিসমিল্লাহির রহমানুর রাহীম।
আস্সালামুআলাইকুম।
বছর দু'য়েক আগে মিজবাহ ভাই আমাকে শাহ আবদুল হান্নান স্যার এর লিখার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সাথে ওনার নির্মোহ ধর্মীয় জীবনাচার সম্পর্কে দু চার কথা বলেন। স্বভাবতঃই আমার আত্মা অমন নির্মোহ মনের আল্লাহর বান্দাহ্ কে ভালবাসতে শুরু করে। ওনার লিখা বিশেষ মনোযোগ সহকারে পড়ি, বোঝার চেষ্টা করি।
আর তার ধারাবাহিকতায় ওনার লিখা রিভিউ - 'দি মেসেজ অব দি কুরআন এ যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাফসির' পড়লাম Link Here।
বরাবরের মত উদ্দীপনাযুক্ত, বিশ্লেষনধর্মী, চমৎকার রিভিউ/লিখা।
লিখাটির একজায়গায় দেখলাম স্যার ওনার ব্যাক্তিগত 'আন্ডারস্ট্যান্ডিং/রিয়ালাইজেশান প্রসুত একটি স্টেইটমেন্ট' ব্যাক্ত করেছেন। যেখানে তিনি বলতে চেয়েছেন - মোহাম্মদ আসাদ (রঃ) তার কোরআন এর তাফসীরে - ''অধুনা, তথাকথিত 'নারী পুরুষ বৈষম্য' দুর করেছেন'' - তথা অনুবাদক তার তাফসীরিয় অনুবাদে 'নারী পুরুষ সাম্যতা' নিশ্চিত করেছেন বা করতে সচেষ্ট ছিলেন। (নারী-পুরুষ বৈষম্য - এই টার্মটিকে আমি 'তথাকথিত' বললাম, কারন এ সেক্টরে আমার কাজ ও অভিজ্ঞতা আমাকে তা বলতে বাধ্য করেছে। মূলতঃ 'নারী পুরুষ বৈষম্য' এই টার্মটি - মানুষের ধর্মের আল্টিমেইট ডিসিপটিভ শত্রু র তৈরী করা আরোপিত, বায়বীয়, কাল্পনিক ও ফ্যান্টাসীসুলভ 'টার্ম'সমূহের একটি - যা সে মানুষের মনে প্রতিস্থাপন করার নিমিত্তে তৈরী করেছে এবং ব্রান্ডিং করে চলেছে।)
চলুন দেখি স্যার ওনার লিখায় কি লিখেছেন - যা এ লিখার মূল উপজীব্যঃ
তার (মোহাম্মদ আসাদ) তাফসিরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি নারী পুরুষ বৈষম্য (gender bias) মুক্ত। এটি তার সাফল্য। অনেক তাফসিরে এটি দেখা যায় না।
উদাহরণ : সূরা নিসার প্রথম আয়াতের অনুবাদ ও তার নোট দ্রষ্টব্য। তিনি আয়াতের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন এভাবে-
O mankind! Be conscious of your Sustainer, Who has created you out of one living entity, and out of it created its mate and out of the two spread abroad a multitude of men and women.
।
আমার ধারনা, স্যার এর করা এই মতামতটি একজন সাধারন বাংলাদেশী পাঠককে এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং দেবে যে, 'ইতোমধ্যে করা আর সব কোরআনের অনুবাদ ও তাফসীর - মূলতঃ নারী পুরুষ বৈষম্য নিশ্চিত করেছিল'। মোহাম্মদ আসাদ রঃ এ ক্ষেত্রে কোরআনের এমন এক অনুবাদ ও তাফসীর করেছেন - যাতে 'নারী পুরুষ বৈষম্য' দুর করা হয়েছে অন্যভাবে বললে এতে 'নারী পুরুষ সাম্যতা' নিশ্চিত করা হয়েছে।
আমার মনে হয় স্যারের এ মতামতের জন্য - আগামী দিনে অনাহুদ আমরা ইসলামে/কোরান এ 'নারী পুরুষ বৈষম্য কিংবা সাম্যতা' এমন একটি মানুষ্য সৃষ্ট, হঠকারী টার্মস্ নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হব, এ নিয়ে বিতর্ক হবে কিংবা বিতর্ক উসকে দেওয়া হবে। অসুস্থ মানুষিকতার নারীবাদীরা - ঐশ্বরিক কিতাব কোরআন'কে 'মানিক টাইপ' এর বিচারকের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। আর স্যারের এই লিখা, এই সার্টিফিকেশান - ঐ নারীবাদীদের জন্য অন্যতম দলিল হিসাবে কাজ করবে। তাদের মিডিয়া কনসালটেন্ট এ্যাড ফার্মগুলো এ সার্টিফিকেট কে এমন ভাবে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হবে - যাতে সাধারন মানুষ কনফিউজড হয়, সন্দেহে পতিত হয়। ঠিক যেমন আমরা আজ ইসলামী গনতন্ত্র, মানবাধিকার, মেজরিটির শাসন কিংবা ইসলামী অধুনা ব্যাংকিং, বীমা নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত।
-----------------------------------------------------------------
গত ১৪০০ বছর ধরে মেইন স্ট্রীম ইসলামে - ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম ওলামা ও স্কলারগন আজকের কথিত 'নারী পুরুষ এর সাম্যতা কিংবা বৈষম্য' এমন কোন কনসেপ্ট এর মুখোমুখি হন নি। কারন এটা মূলতঃ কোন কনসেপ্ট নয় - যা ইসলামিক্যালী এ্যাড্রেস করার মত কিংবা মুসলমানের কনসার্ন হবার যোগ্য। নারী ও পুরুষের মধ্যস্থিত পরিষ্কার পার্থক্যসমূহ - যা সাধারন চোখে দৃশ্যমান, যা ফ্যাক্টস্, যা শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই অনুভব করতে পারে, বুঝতে পারে - তার মধ্যে সমতা আনায়নের চেষ্টা করা কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির চেষ্টা করা - সুস্থ্য কোন মানুষের কাজ হতে পারে না। এটা মানুষকে কনফিউজড করার জন্য সিম্পলী শয়তানের আর একটি কাজ। স্বভাবতঃই স্কলারগন শয়তানকে এবং শয়তানের এ জাতীয় আহেতুক বিষয় ও সংশ্লিষ্ট কাজকর্মকে এ্যাভয়েড করে চলেছেন, আমলে নেন নি।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি নারী পুরুষের সাম্য ও বৈষম্য রাত ও দিনের মধ্যে সাম্য ও বৈষম্য করার মত একটা বিষয়। সূর্য ও চাঁদের মধ্যে সাম্য আনায়ন এর প্রচেষ্টা কিংবা তাদের মধ্যস্থিত বৈষম্য নিয়ে হৈ হুল্লোড় করার মত একটা ব্যাপার মাত্র।
মুসলিমের কাছে নারী ও পুরুষ পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। তারা একে অপরের সাথে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত নয়। তারা তাদের স্ব স্ব ভূবনে রাজা কিংবা রানী। কিন্তু পাশাপাশি হলে সুনির্দিষ্ট দায় দায়িত্বের আওতায় - পুরুষের আলোয় উভয়ে আলোকিত হয়, আলোড়িত হয়, পুলকিত হয় এবং পরিতৃপ্ত হয়। দুনিয়াবী বিষয়াদিতে নারীর উপর পুরুষের প্রাধান্য স্রষ্টা নিশ্চিত করে দিয়েছেন। কেন? কিজন্যে? কিভাবে? ইত্যাদি প্রশ্ন অবান্তর। অপদার্থের প্রশ্ন।
সামান্য এক নারী বা নারীবাদী - তার স্রষ্টাকে এ প্রশ্ন করার কোন অধিকার যেমন রাখেনা, তেমনি সামান্য পুরুষ স্রষ্টার হয়ে সে প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করার কোন অধিকার রাখে না। মূলতঃ নারী ও পুরুষ উভয়েই স্রষ্টার চোখে সো ইনসিগনিফিকেন্ট যে - তারা স্রষ্টা কর্তৃক এ বিষয়ে পুরোপুরিই ইগনোরড্। ইটস্ দ্যাট সিম্পল।
সুতরাং মানুন কিংবা না মানুন, এ্যাগ্রেসিভ হোন কিংবা ডিফেন্সিভ হোন ফলাফল অপরিবর্তনীয়। এটা ছাড়া যে, এর মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদের মধ্যে ও আমাদের আশে পাশের মানুষের মধ্যে এ থেকে উদ্ভুত গোমরাহী, অহংকার ও গুনাহর উত্তোরোত্তর প্রসার ঘটাতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৪ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরান-সুন্নাহর উপর অটল থাকার তৌফিক দান করুন।
মাশাআল্লাহ আপনি অল্পকথায় মোহাম্মদ আসাদ রঃ এর বই গুলোর উপর চমৎকার রিভিউ করলেন, বিচার বিশ্লেষন করলেন। বইয়ের উপর আপনার মতামতের সাথে আমার মতামতের অনেকটাই মিল পেয়েছি - সোবহানাল্লাহ্।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি মোহাম্মদ আসাদ এর গায়ে স্পেশাল কোন ট্যাগ লাগাতে ইচ্ছুক নই। আল্লাহ ওনাকে ক্ষমা করুন, আপনাকে আমাকে সহ সকল মুমিন, মুসলিমকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের সবাইকে বেহেস্ত নসীব করুন। এটাই প্রার্থনা।
আসলে কি জানেন, সরকারের দমন নিপিড়ন তীব্র হওয়ার পর অনেক স্কলার যতটুকু সম্ভব সুর বদলে ফেলেছেন। নিজেদের মডারেট প্রমাণের চেষ্টার অংশ হিসেবে।
যখন ইসলাম নাকানি চুবানি খেয়ে ধংসের দ্বার প্রান্তে, তখনও উনারা বলেন, ইসলাম মানেই শান্তি, তাই আমাদের শান্তই থাকতে হবে। অস্ত্র হাতে নেওয়া যাবেনা।
এটা চরম ও পরম সত্য কথা যে, উনার লেখা পড়ে এখন অনেকেই বিভ্রান্ত হয়!
পাওয়ারফুল, ব্লান্ট স্টেইটমেন্ট।
আল্লাহ আমাদের সকল স্কলারকে সত্য কথা অকপটে বলার শক্তি দিন।
আল্লাহ আমাদের আলেম ওলামা ও নেতৃবৃন্দের মন হতে শহীদি মৃত্যুর ভয় দুর করে দিন, তাদের মধ্যে এ রিয়ালাইজেশান তৈরী করে দিন - ক্ষনস্থায়ী এই পৃথিবীতে ইদুর এর মত বেঁচে থাকার চেষ্টার চেয়ে - শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য, আল্লাহর পথে স্ট্রাগল করে মৃত্যু আলিংগন অনেক অনেক বেশী সন্মানের, গৌরবের ও নাজাতের উছিলা। আলেম ওলামাদের জন্য তা যেমন সত্য - তাদের ফলোয়ারদের জন্য ও তা সত্য।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি ভাবতে চাইছিনা যে - নির্লোভী স্কলাররা দমন পীড়নে সুর বদলে ফেলছেন - র্যাদার প্রতারিত হচ্ছেন বলে বেশী মনে হয়।
আল্লাহ ভাল জানেন। ধন্যবাদ।
মন্তব্যে নেতিবাচক শব্দ থাকায় বলতে হচ্ছে-
আমি তাঁকে কয়েক যুগ ধরে জানি ও চিনি, কোন কারণেই সুর বদল করা উনার স্বভাবে ছিলনা, এখনো নেই! তিনি নিজে গবেষক, নিজের অভিমত অকপটেই বলেন, তাতে সবার একমত হওয়া জরুরী নয়! আল্লামা ইউসুফ কারদাভির গবেষণা ও অভিমতের যে নীতি তার প্রভাব তাঁর মাঝে দেখা যায়!
সমকালীন সমস্যা ও সঙ্কট এর ইসলামী বিশ্লেষণ তাঁর অন্যতম প্রধান আগ্রহের বিষয়!
ব্যাক্তিগতভাবে আমি ভাবতে চাইছিনা যে - নির্লোভী স্কলাররা দমন পীড়নে সুর বদলে ফেলছেন - র্যাদার প্রতারিত হচ্ছেন বলে বেশী মনে হয়। আল্লাহ ভাল জানেন।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি প্রত্যাশা করি স্যার যেন তার ফোকাস (সমকালীন সমস্যা ও সঙ্কট এর ইসলামী বিশ্লেষণ তাঁর অন্যতম প্রধান আগ্রহের বিষয়!) এরিয়ায় সাফল্য পান এবং উম্মাহ ওনার গবেষনা হতে উপকৃত হন।
ধন্যবাদ।
কিছুদিন আগে এক ভাই এর দেওয়া একটা লিন্ক এ, মুফতি ইব্রাহীম এর একটি বক্তব্য শোনার সুযোগ হয়েছে। ঐ বক্তৃতায় ওনার একটা স্টেইটমেন্ট ছিল অনেকটা এমন (আমার ভাষায়), 'জীবনে অসংখ্য মোটামোটা কিতাব পড়েছি, মুখস্থ করেছি। কিন্তু এখন বুঝছি আসলে বারবার কোরআন ও হাদীস পড়লেই হত। কারন এর মধ্যেই সব জ্ঞান আছে'।
প্রাকটিক্যালী আজকে যখন আলেম ওলামা ও স্কলারদের লিখা পড়ি, বক্তৃতা শুনি কেন যেন এটা ক্লিয়ারলী প্রতিভাত হয় যে - ওনারা যতটা না কোরান ও হাদীসকে ভিত্তি ধরে কথা বলছেন, তার চেয়ে বুঝিবা বেশী অক্সফোর্ড ক্যামব্রিজ আর হার্ভাড এর রিসার্চকে অধিকতর শক্তিশালী মনে করছেন, ভিত্তি ধরছেন।
স্বভাবতঃই ওনাদের ভাবনা ও চিন্তা সামহাউ কোরান ও হাদীসের সাথে কন্ট্রাডিক্ট করছে। ওনারা ডিভাইন নলেজ কে র্যাশানালাইজ করতে গিয়ে এক্সিট রুট খুজতে বাধ্য হন। আর এক্সিট রুট সম্পন্ন লিখা কিংবা বক্তৃতাকে পশ্চিমা বিশ্ব মোডারেট বলছে আর আমরা ও তা মেনে নিয়ে - নিজেদের ভূবনকে আরো নিরাপদ, আরো সমৃদ্ধ ও সুখকর করে চলেছি। আখেরাতকে ভুলে বসে আছি।
ধন্যবাদ।
লিঙ্কতো দেয়াই আছে এখানে। ঢুঁ মেরে আসুন না সবাই একবার।
আপনি লিখেছেন, 'যার লেখা নিয়ে এই লেখা তার লেখায় (অর্থাৎ শাহ আবদুল হান্নান সাহেবের) লেখায় কমেন্ট করা হতো তাহলে তিনি বিষয়গুলো জানতে পারতেন। তার কোন যুক্তিযুক্ত জবাব থাকলে তা আমরা জানতে পারতাম। অথবা তিনি তার চিন্তাকে রিফ্রেশ করার সুযোগ পেতেন'। আমি একমত।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি স্যারের পুরো লিখার সাথে একমত - পারটিকুলার অত্র লিখার প্রতিপাদ্য অংশটুকু বাদে। ব্যাক্তিগতভাবে আমি তা স্যারের দৃষ্টিতে আনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।
এখানে ঐ রেফারেন্স টেনে এনে এ লিখার অবতারনা করেছি শুধুমাত্র এই নিয়তে যে - উম্মাহ নিয়ে ভাবনাচিন্তা রত ভাইবোনদের দৃষ্টি ও ভাবনার বিকাশ এর সুবিধার্থে। এ নিয়ে যদি ফারদার কোন চিন্তা-ভাবনা ও ক্লু পাওয়া যায়। কোন অসৎ উদ্দেশ্যে নয়।
আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর পরামর্শ পেশ করার জন্য।
No Gender Equity or Disparity. (It's) Gender Specialty.
কেউ একজন দরকার এ স্লোগানকে স্টীকার বানিয়ে তথাকথিত নারীবাদীদের দরবারে পৌছে দেওয়া - যদি তাদের একজনের সেন্স ফিরে আসে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন