কৃত্রিম জাতিস্বত্তার মৃত্যুঘন্টাঃ মুসলিম-জাতীয়তার পুনর্জন্মের মহেন্দ্রক্ষন?
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ২২ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:২৩:৩৩ সকাল
বিস্মিল্লাহির রহমানুর রাহিম।
আস্সালামুআলাইকুম।
রাসুলুল্লাহ সঃ মদীনায় এলেন। সময়ান্তরে, খেজুরগাছ সমৃদ্ধ ঐ ছোট্ট জনপদে সর্বোচ্চ হাজার বিশেক মানুষের সামনে তিনি এক দলিল পেশ করলেন। আমরা ঐ দলিলকে ভালবেসে বলি মদীনা-সনদ।
ঐ পার্টিকুলার সনদ - শান্তি বিনির্মানের সনদ। আমরা জানি রাসুলুল্লাহ সঃ তাতে বিভিন্ন ধারা-উপধারা সাজিয়েছেন। কিন্তু এর বাহিরে ঐ সনদে রাসুলুল্লাহ সঃ যুগান্তরকারী এক জাতি স্বত্তার বীজ প্রোথিত করেছেন। সে 'বীজ' এর নাম দিয়েছেন আল্লাহ। বলেছেন মুসলিম।
তিনি এই সনদে আজন্ম দেখা গোত্র, বর্ন, ভাষাভাষি, পেশা ভিত্তিক জাতীয়তার ধারনাকে পাশ কাটিয়েছেন। অকার্যকর করেছেন। আর তার পরিবর্তে বিশ্ববাসীর জন্য উপস্থাপন করেছেন (১) অতি প্রাকৃতিক, (২) কার্যকর, (৩) ন্যায়ভিত্তিক, (৪) সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন নতুন এক জাতিস্বত্তার ধারনা এবং তা স্টাবলিশ করেছিলেন। তিনি জাতীয়তাকে আউশ-খাজরাজ মুক্ত, মোহাজের-আনসার মুক্ত, কোরায়দা-কায়নুকা-নাদির মুক্ত করে যথপোযুক্ত জাতীয়তায় তথা 'ইয়াহুদী' 'মুসলিম' ও 'মুশরিক' এ পর্যবসিত করেছিলেন।
আর ঐ শুভক্ষনে জন্ম নিল মুসলিম জাতিস্বত্তার।
এ জাতিসত্তার মূল দীক্ষা - বিশ্বের কোন বর্ডার-ভূখন্ডের বাধাঁ মানে নি, অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ-স্পেইস কিংবা অতল সমুদ্র গহ্বরের সীমাকে গুরুত্ব দেয়নি, গোত্র-বর্ন-ভাষা-সংস্কৃতির আওতাকে অবজ্ঞা করেছে, বয়স-লিংগ-আভিজাত্য-ধনদৌলতকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। এ জাতি শুধু মাত্র একটা বাক্যাংশ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ্ (সঃ ) র কাছে নিজেকে সমর্পন করেছে। হৃদয়ে ধারন করে স্পীত হয়েছে। বিমূর্ত হয়েছে। কখনো একীভূত হয়েছে আবার কখনো সম্প্রসারিত হয়েছে। স্রষ্টার শরীয়ার শৃংখলে বন্দী হয়েছে, শয়তানের শেকল হতে মুক্ত হয়েছে। কখনো আইডেন্টিফাইড হয়েছে কখনো ব্রান্ডেড আবার কখনো হয়েছে স্ট্রাগলের প্রতীক। এ এক অভিন্ন জাতিস্বত্তা। গৌরবজ্জল, বলিয়ান।
----------------------------------------------------------
আল্লাহর রাসুল সঃ এর ভবিষ্যতবানীকে সত্য প্রমানিত করতে, ষোড়শ শতাব্দীর কোন এক ক্ষনে, আটলান্টিকের কোন এক দ্বীপে, বিশ্ব প্রতারক তার শৃংখল হতে মুক্ত হয়ে - বিশ্ব প্রতারনার মিশনে নামে। স্রষ্টার শরীয়াকে অস্বীকার, ভূখন্ড ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, অর্থ-সম্পদ-বিত্তকে জীবনের ধর্ম, প্রতারনাকে ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্মার্টনেস-অলংকার, পেশীশক্তিকে বশ্যতার নিয়ামক বানিয়ে পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিনে হানা দেয়, প্রতারনায় অনভিজ্ঞ মানুষকে - প্রতারিত করে চলে।
পরবর্তী প্রায় ৪০০ বছর ধরে প্রতারনা ও পেশীশক্তিকে ব্যবহার করে - মাইলের পর মাইল, ভূখন্ডের পর ভূখন্ড জয় করে দ্যা বিশ্ব প্রতারক। আর তারপর ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ ও গোত্রে প্রতারনার জেনম ছড়িয়ে দিয়ে মানুষকে দূষিত, কনফিউজড, শেকড়বিহীন করে ফেলে। আর তারপর কখনো কলমের আচঁড়ে বর্ডার গড়ে, কখনো ধর্ম-অর্থ-বর্নের নামে নিয়ন্ত্রন রেখা একে, কখনো শিল্প-কৃষি ও অর্থনৈতিক শোষনের অভিযোগ এনে নতুন নতুন দেওয়াল তুলে - মানুষের মধ্যে আইয়ামে জাহেলিয়াতের পুরোনো সেই জাতীয়তাকে নতুন নামে, রূপে ও রসে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে।
ঐ প্রতারক স্বত্তা মানুষের অতি প্রাকৃতিক জাতীয়তাকে শোকেসে ঠাই দেবার অভিপ্রায়ে - একে একে ছিনিয়ে নেয় তাদের সংস্কৃতি, শরীয়া, সিম্পলীসিটি, অর্থনীতি, সততা ইত্যাদি। আর বিকল্প হিসাবে হাতে ধরিয়ে দেয় তথাকথিত কৃত্রিম মানচিত্র, কনস্টিটিউশান, গণতন্ত্র, সুদ, লটারী, জুয়া, পতাকা, জাতীয় সংগীত, ক্রিকেট ইত্যাদি। আর তারপর অল্প সময়েই শতভাগ কৃত্রিম এক জাতিস্বত্তার জয় জয়কারের জিকির তুলে দেয়। প্রতারিত বাংলা ভাষাভাষি মানুষ ঐ প্রতারকের খপ্পরে পড়ে অমন কৃত্রিম জাতিস্বত্তার একটা মালিকানা পেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। জিগির করতে থাকে আমরা বাংলাদেশী। আমরা বাংলাদেশী বাংগালী।
-------------------------------------------------
আজ ২১শে নভেম্বর ২০১৫ ইং রাত ১২টার পর, যে আজানের আওয়াজ - এ জানালা সে জানালা গলে - পৃথিবীর আনাচে কানাচে আছড়ে পড়েছে - সে আওয়াজ সচেতন মুসলিম জনমানুষের কানে কানে - কৃত্রিম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এর মৃত্যুর ঘন্টার ন্যায় বেজে চলছে আর সে সাথে মুসলিম জাতীয়তাবাদ এর পুনঃপ্রতিষ্ঠার চিত্র বিমূর্ত করে চলেছে যেন।
ঠিক যেমন করে প্রায় ৬ দশক আগে ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ ইং রাতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কোন এক ঘন্টা কিংবা শংখ ধ্বনী মূহুর্তেই দিল্লী-লন্ডন হয়ে ওয়াশিংটনে আছড়ে পড়ে কৃত্রিম জাতীয়তাবাদ তথা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এর চিত্র বিমূর্ত করে যা ১৯৭১ এ বাস্তবতার দেখা পায়।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঠিক বলেছেন। বাংলাদেশী নীতিনির্ধারকরা জেনে-না জেনে 'বিধাতা'র পরিবর্তে এমন এক প্রভঞ্চককে প্রভূ মেনে নিয়েছেন - যার ফল পুরো জনমানুষ ই ভোগ করছে।
স্যেকুলার সেন্স হতে 'যথার্থ একটা বানী' শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ।
কিন্তু বাংলাদেশের ইদানিংকার ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে নিয়ে ভাবলে আমার কাছে যে চিত্রটি ফুটে উঠে তা হল - ডিসটিনির রিভার্স ট্রেন এ - বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ উঠে পড়েছে - আগামীতে এ মুসলিম ভিন্ন অলীক এই জাতীয়তাবাদের অস্তিত্ব আমি অন্তত ইতিহাসে দেখছিনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন