আজকের বিশ্ব-বাস্তবতা বুঝতে ---- কোরান এর কয়েকটি আয়াত নিয়ে ভাবতে চাইলে - খুব কি অন্যায় হবে? - ২
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ২১ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:৫৩:৫৬ রাত
বিসমিল্লাহির রহমানুর রাহীম
আস্সালামুআলাইকুম।
Part - 1
ভূমিকার কলেবর বাদ দিয়ে চলুন কোরানের ঐ সব আয়াতে যাই - যেখানে আমরা আমাদের চিন্তাভাবনাকে একীভুত করে এবং ভাবতে চেষ্টা করি আল্লাহ ঐ সব আয়াতে আমাদেরকে - আজকের বিশ্বের বাস্তবতা বুঝতে - কি কোন হিন্টস দিয়েছেন? দয়া করে নেগেটিভলী রিএ্যাক্ট না করে - আজকের বিশ্ব বাস্তবতাকে কোরানের আয়াত ও হাদীস দিয়ে কনস্ট্রাকটিভলী বিল্ড আপ করার চেষ্টা করি। কে জানে, আপনার আমার উদ্দেশ্য যদি সৎ হয় - আমরা গাইডেড হব, সত্য আমাদের সামনে উন্মোচিত হবে এবং আল্লাহ আমাদের ভাবনা ও লিখাকে সঠিক পথের দিকে নিশ্চয়ই ধাবিত করবেন। ইনশাল্লাহ্।
আসুন দেখি সূরা বনী ইসরাইল (ইসরা) আয়াত ৪ - ৮ এ আল্লাহ কি বলেছেন,
'বনী ইসরাইলের বইতে (তাওরাতে) আমরা জানিয়েছিলাম যে, '''নিশ্চিতভাবেই তোমরা (ইয়াহুদীরা) পৃথিবীতে দুইবার অরাজকতার (খুন রাহাজানি দূর্বিচার ইত্যাদি) বিস্তার করবে এবং তার পাশাপাশি নিশ্চিতভাবেই অসম্ভব-রকমের দাম্ভিকতা (অবশিষ্ট আদম সন্তানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা) দেখাবে'''।
অতঃপর যখন দু'টির প্রথমটি সংগঠনের সময় হল, আমরা তাদের বিরুদ্ধে, আমাদের কিছু দাস যারা বিধ্বংশী শক্তি সহযোগে তাদের বাড়ীসমূহকে চূর্ন-বিচূর্ন করে দিয়েছিল; আর এটা এমন ভবিতব্য - যা কার্যকর হওয়াই স্বাভাবিক ছিল।
অতঃপর তাদের (ইতোপূর্বেকার আগ্রাসী শক্তির) উপর আমরা এদের (ইয়াহুদী) কে বিজয়ী করলাম এবং সম্পদ ও ছেলেতে (উত্তোরাধিকারী) আমরা এদের (ইয়াহুদী) সামর্থ্য বৃদ্ধি করলাম এবং অগনিত সংখ্যায় করেছিলাম স্ফিত।
(আর বলা ছিল) 'যদি তোমরা সৎকর্ম কর, তবে তা তোমাদের নিজেদের জন্যই কল্যানকর; আর যদি অসৎকর্মে লিপ্ত হও, তা তোমাদেরই কর্মফল (হিসাবে সাব্যস্থ) হবে'। (পরবর্তীতে) যখন শেষেরটি সংগঠনের সময় পূর্ন হল, (আমরা অন্যদের পাঠালাম) এই জন্য যে তারা তাদের (ইয়াহুদী) মর্যাদা (চেহারা) ভুলন্ঠিত করে, আর ইতোপূর্বেকার বিধ্বংশী শক্তিটির ন্যায় মসজিদে প্রবেশ পূর্বক অবশিষ্ট যা কিছু তারা আকঁড়ে ছিল - তা পরিপূর্নভাবে ধ্বংশ করে।
হয়তো রব তাদের ক্ষমা করবেন। কিন্তু যদি তারা আবারো তা (অরাজকতার বিস্তার ও দাম্ভিকতা) করে, অবশ্যই আমরা পুনরায় তাই করবো এবং (জেনো) আমরা দোযখকে অবিশ্বাসীদের জন্য কারাগার বানিয়েছি।
(মুফতি তাকি ওসমানীর ইংরেজী অনুবাদ ও শব্দে শব্দে কোরানের ইংরেজী অনুবাদকে ভিত্তি ধরে বাংলায় অনুদিত। এক্সেক্ট শব্দে শব্দে অনুবাদ নয় - ফ্যাক্টচ্যুয়াল কোন ভুল থাকলে আরবি জানা ভাইবোনদেরকে দয়া করে সংশোধন করে দেবার অনুরোধ রইল। Word to word translation)
এবার দেখার চেষ্টা করি আলোচ্য আয়াতসমূহ হতে আমরা (মুসলিম উম্মাহ) আমাদের আজকের দম বন্ধ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করার জন্য কি কি পয়েন্টস্ - পিক করতে পারি এবং কনক্লুশান ড্র করায় সমর্থ হতে পারি।
১। ৬১০ খৃষ্টাব্দের পরে কোন এক সময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে ইতোপূর্বে সংগঠিত হয়ে যাওয়া - ধর্মীয় ইতিহাসের দুটি বিরাট ঘটনা জানাচ্ছেন।
২। ইন্টারেস্টিংলী তিনি সার্টিফাই করে বলছেন যে ঐ দুটো ঘটনার ব্যাপারে সে সময় হতে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে পাঠানো তাওরাতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
৩। সে সাথে তিনি ঐ দুটি ঘটনা সংগঠনের কারন কিংবা জাস্টিফিকেশান হিসাবে আমাদের জানাচ্ছেন যে, ইয়াহুদীরা এই পৃথিবীতে - দুই বার নিশ্চিতভাবেই (ক) অরাজকতার বিস্তার করবে এবং (খ) প্যারালালী দাম্ভিকতা দেখাবে।
৪। তিনি আমাদেরকে উপরোক্ত আয়াতসমূহে আরো কনফার্ম করছেন যে দুটি ঘটনাই সংগঠিত হয়ে গেছে। এবং তিনি বলছেন সে ঘটনা সমূহ সংগঠিত হয়েছে বিধ্বংশী, নিশৃংস শক্তিশালী বাহিনীদের দ্বারা, যারা ঘরের অন্দর অবধি চূর্ন বিচূর্ন করে দিয়েছিল, মসজিদকেও ধ্বংশ করেছিল।
৫। সবার শেষে তিনি আমাদেরকে আরো জানাচ্ছেন যে, এত কিছুর পর ও আল্লাহ তাদের ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু গ্যারান্টি দিয়ে বলছেন যে ইয়াহুদীরা যদি আবার ও সেই একই অন্যায় তথা 'অরাজকতার বিস্তার করে এবং প্যারালালী অন্যদের সাথে দাম্ভিকতাপূর্ন আচার আচরন করে - তবে তিনি তাদেরকে পুনরায় একই ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। সম্ভাব্য এই তৃতীয় হতে পারা ঘটনাটি সংগঠিত হয় নি - এটা হতে পারে বলে কোরান আমাদের জানাচ্ছে।
৬। কোরানের এই সার্টিফিকেশান, এই ইতিহাসের ঘটনা এবং সম্ভাব্য ইতিহাস সৃষ্টির হুমকি - হতে, আমরা কি এই শিক্ষার নির্দেশ পাই না?
ক) তৌরাতে খুঁজে দেখা - আল্লাহ ঐ দুটি ঘটনা সম্পর্কে অতিরিক্ত আর কোন ডিটেইল ইনফরমেশান দিয়ে রেখেছেন কিনা? এবং থাকলে তা হতে আমাদের জন্য কোন শিক্ষা, আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও প্রিপারেশান এর কিছু দিক নির্দেশনা বের করা যায় কিনা?
খ) স্যেকুলার ইতিহাসে ঐ দুটো ঘটনার উল্লেখ আছে কিনা? থাকলে তা কিভাবে বিবৃত হয়েছে? এবং সে ঘটনা সমূহ হতে আমাদের জন্য কোন শিক্ষা, আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও প্রিপারেশান এর কিছু দিক নির্দেশনা বের করা যায় কিনা?
৭। কোরান কি আমাদেরকে এটা কনফারম করছে না - আসমানী কিতাবে আগামীতে যা ঘটবে বলেছে - তা ঠিকই ঘটবে। যেমনটা তাওরাতে বলা ভবিতব্যের দুটি ঘটনাই ঘটেছে।
৮। কোরান কি আমাদেরকে কনফারম করছে না - ওনার প্রিয় মাইটি এক নবী মুসা আঃ এর উম্মত ইয়াহুদীকে আল্লাহ পৃথিবীর বুকে নাজেহাল করেছেন, তাদের সন্মানের শির, মুখ তথা মর্যাদাকে আল্লাহ ভুলুন্ঠিতই শুধু করেন নি - সে সাথে তাদের ধর্মীয় সিম্বল মসজিদ (স্পেসিফিক একটা) কে ও ধ্বংশ করেছেন। এটা কি আমাদেরকে জানায় না নবী মোহাম্মদ সঃ এর উম্মত রাও পৃথিবীর বুকে (অবাধ্যতার জন্য) সমানভাবে নাজেহাল হতে পারে, তাদের সন্মানের শির, মুখ তথা মর্যাদা ভুলুন্ঠিত হতে পারে - সে সাথে তাদের ধর্মীয় সিম্বল মসজিদ (স্পেসিফিক ঐ একটা) কে ও ধ্বংশ হতে পারে।
৯। এটা আয়াত সমূহ আরো প্রমান করে, ইয়াহুদীরা ঘটনা দুটি ঘটবে, সংগঠিত হবে এমনটা জানা স্বত্তেও - তা আমলে নেয় নি (অবশ্যই সবাই নয়, কেউ কেউ হয়তো আমলে নিয়েছিল কিন্তু কিছু করতে পারে নি)। ঠিক তেমনি আমরাও আমাদের কোরান এ সংগঠিত হবে এমন অনেক বিষয়াদি জানা স্বত্তেও - তা আমলে নেই না (অবশ্যই সবাই নয়)। ফলাফল হিসাবে আমাদের সামনে ও প্রায় অনুরূপ বাহিনীর দ্বারা আজকের অপমান, অপদস্থতার স্রোত ছড়িয়ে পড়েছে, সেনসিটিভ মনে হল পড়ুন 'দেখি ছড়িয়ে পড়েছে কিনা'।
Go to Part - 3
বিষয়: বিবিধ
১৩০০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার লিখা পড়ে আমি আবার তাফসীর টা পড়ে নিলাম। সুবহান আল্লাহ! আগেও পড়েছি কিন্তু এতো স্পেসিফিকলি বুঝতে পারি নি। কোরআনের এই আয়ত যেনো শ্বাশত , অতীত, বর্তমান -ভবিষ্যত সম্স্ত পূর্ববর্তী জাতির দ্বারা ঘটিত ঘটনা দিয়ে আমাদের উপদেশ দেয়া হচ্ছে! তবু আমরা অন্ধ কখনো বা রাতকানা !
আল্লাহ কোরআনকে বোঝার জন্য আমাদের অন্তরকে প্রসারিত করে দিন, চোখের পর্দা সরিয়ে দিন। আমিন।
আশাকরি ধারিবাহিক লিখবেন। জাযাকাল্লাহ খাইর।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি অনুভব করছি, বিশ্বাস করি - আমরা মুসলিম রা যদি আজকের বিশ্বকে বুঝতে, আজকের বিশ্বে সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনাকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করতে - আল্লাহর কোরান ও রাসুলুল্লাহ সঃ এর হাদীসকে প্রাইমারিলী মানদন্ডের ন্যায় ব্যবহার করে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য করতে পারি ও তার আলোকে বুঝতে চেষ্টা করি - তবে অনেক কিছুই আমাদের সামনে দিনের আলোর ন্যায় পরিষ্কার হয়ে উঠবে।
আর একবার সেই সত্য উদ্ভাসিত হলে আমরা কোরান ও হাদীস অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা ও নির্নয় করতে সক্ষম হব। ইনশাল্লাহ্।
সো দয়া করে যদি আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এই পৃথিবীকে বুঝতে কোরান ও হাদীসের আলোকে এ লিখায় কন্সট্রাকটিভলী কন্ট্রিবিউট করি, সংশোধন করি, যৌক্তিক প্রশ্ন তুলি - নিঃসন্দেহে তা আমাদের সবার জন্য একটা সুখকর আউটকাম দিবে বলে আমার বিশ্বাস এবং সে সাথে আহ্বান ও থাকলো।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনাকেও
মন্তব্য করতে লগইন করুন