আজকের বিশ্ব মুসলিমরা, তথাকথিত আইনপ্রেনেতাদের কি 'রব' أَرۡبَابً۬ا বানায়নি? তারা কি তাদের উপাশনা করছে না? কোরান ও হাদীস কি তা বলছে না?
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ৩০ আগস্ট, ২০১৫, ০৭:৩০:৫০ সন্ধ্যা
বিসমিল্লাহির রহমানুর রাহিম।
আসসালামুআলাইকুম!
আল্লাহ সোবহানাল্লাহু তায়ালা সূরা তা'ওবার ৩১ নং আয়াতে বলেছেন,
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَِ
যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়ঃ
তারা (ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা) আল্লাহর পাশাপাশি তাদের রা'বাই ও মন্কদের লর্ড (আরবাব) হিসাবে গ্রহন করেছে; এবং মরিয়ম পুত্র মসীহ কে ও; অথচ (শুধুমাত্র) এক আল্লাহর আনুগত্য করতেই তারা আদিষ্ট হয়েছিল। (জেনো) তিনি শিরক এর উর্দ্ধে, সমুন্নত, প্রশংসিত - তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই।
উক্ত আয়াতকে কেন্দ্র করে - খৃষ্টান হতে ধর্মান্তরিত হওয়া, হাতেম তাঈ এর ছেলে রাসুলুল্লাহ সঃ এর সাহাবী, আদি বিন হাতিম রাঃ এর সাথে হজরত মোহাম্মদ সঃ এর যে কথোপকথন হয়েছে, তা কয়েকটি চেইন এ বিবৃত হয়ে ইমাম আহমাদ আত-তিরমিজি এবং ইবনে জারির আত-তাবারিতে আমরা যে ভাবে পাইঃ
রাসুলুল্লাহ সঃ তেলাওয়াত করলেনঃ
اتَّخَذُواْ أَحْبَـرَهُمْ وَرُهْبَـنَهُمْ أَرْبَاباً مِّن دُونِ اللَّهِ
তারা (ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা) আল্লাহর পাশাপাশি তাদের রা'বাই ও মন্কদের লর্ড (আরবাব) হিসাবে গ্রহন করেছে;
আদি বিন হাতিম রাঃ বলে উঠলেন, 'ইয়া রাসুলুল্লাহ সঃ তারা (ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা) তো তাদেরকে (রাবা'ই ও মন্কদের) উপাসনা করেনা'।
রাসুলুল্লাহ সঃ প্রতি উত্তর করলেন এই বলে যে,
«بَلَى إِنَّهُمْ حَرَّمُوا عَلَيْهِمُ الْحَلَالَ وَأَحَلُّوا لَهُمُ الْحَرَامَ فَاتَّبَعُوهُمْ فَذَلِكَ عِبَادَتُهُمْ إِيَّاهُم»
হ্যাঁ (অবশ্যই) করে। তারা (রাবা'ই ও মন্করা) তাদের (ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের) জন্য আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম করে, আর যা হালাল করেছেন তা হারাম করে। তারা (ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা কোন রকমের বিরোধিতা/প্রতিরোধ/স্ট্রাগল ছাড়াই) তাদের (রাবা'ই ও মন্কদের) আদেশ মান্য করে/আনুগত্য করে/মেনে নেয়। আর এভাবেই তারা তাদের উপাসনা করে।
উক্ত আয়াত ও হাদীস দিয়ে এটা পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হয় যে,
১। আল্লাহ যা কিছু হালাল করেছেন - তাকে হারাম ঘোষনা করা ও তা বাস্তবায়ন করার কিংবা তিনি যা কিছু হারাম করেছেন - তাকে হালাল ঘোষনা করার ও তা বাস্তবায়ন করার - কোন অধিকার পৃথিবীতে তিনি কাউকেই, কোনভাবে দেননি।
২। যে কোন স্বত্তা - তা রাবাই, মন্ক, আলেম-ওলামা কিংবা তথাকথিত আইনপ্রনেতা হোক - যদি আল্লাহ প্রদত্ত কোন হালাল বিষয়কে হারাম ঘোষনা করে ও তা বাস্তবায়ন করে, কিংবা আল্লাহ যা কিছুকে হারাম করেছেন - তাকে হালাল ঘোষনা করে ও তা কোন জনপদের উপর বাস্তবায়ন করে - তবে ঐ পার্টিকুলার স্বত্তা, ব্যাক্তি/ব্যাক্তিবর্গ - ঐ পার্টিকুলার জনপদবাসীর নিকট আল্লাহর পাশাপাশি লর্ড হিসাবে পরিগনিত হবে।
৩। আর যে জনপদবাসী ঐ সমস্ত ব্যাক্তিবর্গের আদেশানুযায়ী - তা মান্য করবে; মেনে চলবে; তারা মূলতঃ আল্লাহর পাশাপাশি হালাল হারাম বিধান প্রদানকারী ঐ সমস্ত ব্যাক্তিবর্গকে উপাসনা করছে বলে বিবেচিত হবে।
৪। আর আল্লাহর পাশাপাশি অন্যকোন সত্তাকে উপাসনা করা মানেই হল শির্ক। আর আমরা জানি শির্ক আল্লাহর নিকট 'ক্ষমার অযোগ্য' পাপ।
বাংলাদেশের কনটেক্সট এ - আমরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি - আমাদের আইনপ্রনেতারা বছরের পর বছর ধরে, ধারাবাহিকভাবে হালাল (বৈধ) কে সিরিয়ালী হারাম (অবৈধ) হিসাবে ঘোষনা করছেন এবং তা বাস্তবায়ন করছেন। যেমনঃ
১। বালেগ মেয়ে/মহিলাকে (১২/১৩ বছর প্লাস) বিয়ে করা বালেগ ছেলে/পুরুষের জন্য হালাল ছিল - কিন্তু এখন তা হারাম।
২। একজন পুরুষের জন্য সর্বোচ্চ ৪টি পয্যন্ত বিয়ে করা হালাল ছিল কিন্তু এখন আইনী পরিবর্তনের মাধ্যমে টেকনিক্যালী হারাম করে রাখা হয়েছে।
৩। চোরের হাত কাটা, খুনীর গর্দান ফেলা, ব্যাভিচারকারীকে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যা করা, ধর্ষককে মৃত্যুদন্ড দেওয়া ইত্যাদি হালাল ছিল, কিন্তু তা এখন হারাম করা হয়েছে ইত্যাদি ডজনস্ উদাহরন দেওয়া যাবে।
একইভাবে
১। আল্লাহ হারাম করেছেন, সুদে লেনদেন করা, কিন্তু আইনপ্রনেতারা বানিজ্যিক, গ্রামীন, মাইক্রো, ইসলামিক ব্যাংকের বাতাবরনে সুদে লেনদেন করাকে হালাল করে দিয়েছেন।
২। আল্লাহ মদকে হারাম করেছেন কিন্তু তারা ক্লাব ও অভিজাত রেস্তোরার নামে তা হালাল করে দিয়েছেন।
৩। আল্লাহ চুরিকে হারাম করেছেন কিন্তু তারা কন্ট্রাক্ট/টেন্ডার/ঘুষ/স্পীডমানি ইত্যাদি নামে তা হালাল করে দিয়েছেন।
৪। আল্লাহ অবিচারকে হারাম করে দিয়েছেন কিন্তু তারা পলিটিক্স এর নামে অবিচারকে হালাল করে দিয়েছেন।
৫। আল্লাহ বিচারহীনভাবে হত্যাকে হারাম করেছেন কিন্তু তারা ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যাকে হালাল করে দিয়েছেন।
আর আমাদের দেশের (সমরূপ সারাবিশ্বের) আলেম, ওলামা, শায়খ, স্কলার, হুজুর সহ সমস্ত দেশের মুসলিম গনমানুষ নির্বিচারে তা মেনে নিয়েছেন। এবং উপরে আলোচিত কোরান ও হাদীসের আলোকে তারা বাংলাদেশের তথাকথিত আইনপ্রনেতাদের কে আল্লাহর পাশাপাশি উপাসনা করছেন বলে সাব্যস্থ করা যায়। এবং তাদেরকে জেনে, না জেনে শির্ক এ আবদ্ধ এটা নিশ্চিত বলা যায়। ঠিক যেমন মক্কার কোরাইশরা শির্ক এ জড়িত ছিল, ইয়াহুদী খৃষ্টানরা শির্ক এ জড়িত ছিল এবং আছে।
এ নিয়ে ওয়েবসাইটে তাফসীর সহ বিভিন্ন আধুনা স্কলারের মতামত পড়তে গিয়ে জানলাম যে কোন কোন আলেম এ জাতীয় শির্ককে মাইনর শির্ক বলছেন। আল্লাহ জানেন ওনারা এই শির্ককে 'মাইনর শির্ক' এর আওতায় এনে কি বলতে চাইছেন যে - এ জাতীয় শির্ক করলে সমস্যা নেই?
এ নিয়ে ইনটেনশেনালী আলেম ওলামাদের আরো আরো গবেষনা না করা, কিংবা করতে আগ্রহ বোধ না করা, লিখালিখি না করা, সরকারের বিভিন্ন লেভেলে - এ নিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে মতামত না দেওয়া, শুক্রবারের খোতবায় এ বিষয়ে মানুষকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সচেতন না করা, টিভি টকশোতে এ জাতীয় বিষয়কে গণমানুষের সামনে এক্সপোজ না করার জন্য - আলেম ওলামারা রাসুল সঃ এর প্রতিনিধি হিসাবে কাল কেয়ামতের দিন কি এ্যাকাউন্টেবল হবেন না?
আমরা যারা এ লিখা পড়ছি, এ বিষয়টি একটু হলেও বুঝছি, এ বিষয়ে ফারদার জানার চেষ্টা না করে এড়িয়ে যাওয়া কিংবা এটলিস্ট এ শির্ক এর জন্য অনুতপ্ত না হলে কি আসলেই আল্লাহর মার্সি প্রত্যাশা করতে পারি?
আল্লাহ ভাল জানেন।
------------------------------------------------------------
আমি জানি এবং মনে প্রানে বিশ্বাস করি, আমি ইসলামের কোন অথরিটি নই। ইসলামের কোন বিষয়ে নূন্যতম মতামত দেবার ও কোন অধিকার রাখিনা।
কিন্তু এটা বিশ্বাস করি যে - আজকের বিশ্বে ইসলামের অনুসারীদের বিরুদ্ধে যে নির্যাতন, নিপীড়ন ও মিথ্যাচারের স্টীম রোলার চালানো হচ্ছে, এর অনুসারীদের যে দমবদ্ধ অবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে - তার উপযাচক হিসাবে 'মানুষ্য সৃষ্ট ইসলামের যে ব্যাখ্যা ও থিওরী' - কোরান ও হাদীসের সাথে আপাতঃ কিংবা সরাসরি দ্বান্ধিক ও সাংঘর্ষিক - সে সব ব্যাখ্যা ও থিওরীর বিষয়ে - আলোচনা করা, এ্যাকাডেমিক্যালী প্রশ্ন উত্থাপন করা এবং তার মাধ্যমে স্টাবলিশ অথরিটি, মুসলিম স্কলার, দা'য়ী, সংগঠক ও তালেবে ইলম দের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করা, তাদের ঐ সব ব্যাখ্যা ও থিওরী রিএ্যাক্সামিন করতে উদ্ভুদ্ধ করার নৈতিক দায়িত্ব আমার আছে।
আমার এ বক্তব্যে যদি কোন ট্রান্সগেশান থাকে - আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৭ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মনে রাখতে হবে যে, একারণেই মুসলীম আজ ইুদী নাসারাদের কাছে মার খেয়ে চলেছে৷ কোন দোওয়া কবুল হয়না৷ দিন দিন অধঃপাতে চলেছে৷ ধন্যবাদ৷
ব্যাক্তিগতভাবে আমি আমল এর বাহিরে, উম্মাহ হিসাবে গত কয়েকটি বছরে ইসলামের যে বিষয়সমূহ জানছি - আমার কাছে দিনকে দিন এটা পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে - আমরা মুসলিম জাতি সামহাউ হোলিস্টিক্যালী ডিসিভড হয়েছি।
এ নিয়ে আমি লিডারশীপ, সাধারন গনমানুষকে যতটা না একাউন্টেবল দেখছি - তারচেয়ে কেন যেন বেশী একাউন্টেবল হিসাবে আলেম ওলামাদেরকে অনুভব করছি। আমি ভুল হতে পারি, অথবা ওনাদের প্রতি অতিরিক্ত আবদার জন্মেছে বলে অমনটি অনুভব করতে পারি।
কিন্তু ইসলামের স্পিরিট যেটি আমি অনুভব করছি - সেখানে গনমানুষ কিংবা ভেড়ার পাল কিংবা ছাগলের পাল কে আমি দোষারোপ করতে পারিনা। তবে আপনার সাথে একমত নিজ নিজ জায়গা হতে সচেতনতার কাজ করা উচিত এবং বোঝা উচিত কোরান ও হাদীসের বানী অনুযায়ী আজ ২০১৫ সালে আমরা ঠিক কোন সময়টাতে অবস্থান করছি এবং এ সময়টায় - এ অবস্থার উদ্ভব হলে আল্লাহ ও তার রাসুল আসলে আমাদের কি করতে বলেছেন - তা আবিষ্কার করা, তা খুঁজে বের করা।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
বারাকাল্লাহু ফিক্।
আলহামদুলিল্লাহ্। আমার অসম্ভব ভাল লাগছে এটা জেনে যে বাংলাদেশের আলেম রা অনেক আগেই আজকের পৃথিবীর বাস্তবতা বুঝেছেন এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করেছেন। এখন আমার প্রার্থনা ও চিন্তা হবে সামহাউ সে চিন্তা পাবলিকলী প্রকাশিত হোক, ডাল পালা গজাক।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি মাত্র বছর ২/৩ হল ইসলামের উপর যৎসামান্য পড়ালিখা করছি, বিভিন্ন স্কলারের বক্তব্য শুনছি। সো আমার অনেক লিমিটেশানস।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কলারের বক্তব্য হতে আমি ইসলামের ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা ও জ্ঞানের দেখা পেলেও - আজকের সময় ও আজকের মুসলিমদের সাপারিং ইত্যাদিকে ইসলামের আলোকে সেন্স তৈরীর জন্য, সাহস সৃষ্টির জন্য এবং আসছে দিনগুলোর প্রস্তুতির জন্য - ইমরান নজর হোসেন এর বই ও বক্তব্য আমার চোখ খুলতে, আমার চিন্তা সেইফ ও রিসেইফ করতে সহায়তা করছে।
আপনার সাথে একমত 'পরিত্রানের কিছু উপায় মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারি'।
ধন্যবাদ আবার ও 'আলেমরা জানেন' এই ইনফরমেশানটি শেয়ার করার জন্য। ওনারা প্রতারনাপূর্ন আজকের পৃথিবীর এক্টরদের জানেন না কিংবা ধরতে পারছেন না - এ বোধটি আমাকে অসম্ভব কষ্ট দিচ্ছিল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন