তথাকথিত আলেম ছাড়া আমি কাকে দুষবো? কাকেই বা আমি দুষতে পারি?
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ০৪ আগস্ট, ২০১৫, ০৬:১৫:৩২ সকাল
আসসালামুআলাইকুম।
একটু আগে নিচের খবরটি পড়তে গিয়ে - নিজের আহত বোধটি গিলতে পারছিলাম না। তড়িত আবেগের তাড়ায় বাধ্য হয়ে সমাজ সংসারে বাবা মায়ের পর - যে গোষ্ঠিটিকে আমি অধিকতর ভালবাসি - তাদেরকে দোষারোপ করলাম - বা করতে চাইলাম। আশা করি কোন আলেম ওলামা আমার লিখাকে ব্যাক্তিগতভাবে নিয়ে আমাকে অভিশাপ দেবেন না। বরং দয়া করে ব্রত হবেন কোন শক্তিকে ভয় না করে - আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দেবার নিমিত্তে কোরানের মধ্যস্থিত লুকায়িত প্রয়োজনীয় জ্ঞানটি উন্মোচন করার।
migrant crisis/Muslim Crisis?
বিসমিল্লাহির রহমানুর রাহিম।
নিজের চৌহদ্দী হতে শুরু করে সমাজ পাড়ি দিয়ে দেশ বিদেশ - যেখানেই চোখ দেই - যে চিত্র দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে উঠে তা হল -
পশুর চেয়েও অদম, মশা মাছির চেয়েও তুচ্ছ আজ মুসলিম জনমানুষ। অদ্ভুত রকমের সব নির্যাতন ও নিষ্পেষন আজ ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে মুসলিম নামক এই জনসমষ্টির উপর। চিড়িয়াখানার খাঁচার মধ্যে যেমন এক্সেপশনালী ডিস্টিংক্ট পশুকে তথাকথিত সুসভ্যরা ধরে এনে পুরে রাখে - একই রকমভাবে তথাকথিত সেই মানবতাবাদী, আইনের শাসনের প্রতিভূ, সুসভ্য সমাজ দাড়িটুপী ধারী মুসলমানকে আফগানিস্থান, পাকিস্থান কিংবা পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত হতে ধরে এনে গুয়ানতানামোর খাঁচায় আবদ্ধ করে রাখতে পারে বছরের পর বছর। এটা যেন মুসলমান নিধনের শুভ সূচনা।
গত এক যুগ ধরে পাকিস্থান, আফগানিস্থান, ইয়েমেন, সিরিয়া, সুদান, সোমালিয়া, ফিলিপাইন এর অসংখ্য গ্রামের অগনিত মুসলমান ২৪/৭ - আকাশ হতে ছুড়ে দেওয়া গোলার আঘাতে মরার ভয় নিয়ে দিনাতিপাত করছে। ইতোমধ্যে তারা তাদের ৩ মাস বয়সী বাচ্চা হতে শুরু করে ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধা অবধি শত শত মানুষ হারিয়েছে। অমোঘ নিয়তির ন্যায় ড্রোন এখন নিরিহ, নিষ্পাপ মুসলমানদেরকে তাড়া করে ফিরছে।
গত এক যুগ ধরে আমরা দেখছি - ১০০% ভূয়া অভিযোগ এর তুলে একের পর এক - আফগানিস্থান, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, পাকিস্থান, সুদান, সোমালিয়া সহ কয়েক ডজন দেশে কখনো সন্ত্রাস, কখনো যুদ্ধ, কখনো গণতন্ত্র, কখনো বাকস্বাধীনতা, কখনো মানবাধিকারের নামে নির্বিচারে খুন করে যাচ্ছে মুসলমানকে, ধর্ষন নির্যাতন আর নিষ্পেষনের কথা নাই বললাম। এই সবই প্রতিদিনের ক্রনিক্যাল - দিনলিপি হয়ে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে শুধু মোহাম্মদ সঃ এর উম্মাহ - এই পরিচয়ের মানুষদের কে মোস্ট কনজারভেটিভ হিসাবে বলা হয়েছে ২০ লক্ষের ও বেশী - কে হত্যা করা হয়েছে, কয়েক ডজন দেশকে বিভিন্নমাত্রার এ্যানস্লেইভমেন্টের আওতায় আনা হয়েছে এবং তার মধ্যে হাফ এ ডজনের উপর দেশকে স্থায়ী ভাবে বিশৃংখলায় নিপতিত করে রাখা হয়েছে - যা হতে উত্তোরনের জন্য শুধু মাত্র উপায় হিসাবে উপস্থাপন করা আছে ১০০% এ্যানস্লেইভমেন্ট হবার শর্ত।
শুধু মাত্র মুসলমান হওয়ায় স্রষ্টা বিদ্বেষী, ভন্ড, প্রতারক এই শক্তিস্বত্তা একদিকে লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে মারছে, অন্যদিকে কোটি কোটি মুসলমানকে বাস্তুহারা করছে আবার সেই বাস্তুহারা মুসলমানকে এক্সট্রিম কন্ডিশনে ঠেলে দিয়ে তাদেরকে মিডিয়ার সং বানিয়ে বিশ্বময় প্রচার করছে। উদ্দেশ্য যেন একটাই কষ্টে ফেলে 'ঈমান'কে ছিনিয়ে নেওয়া।
তারা তাদের কাজ কর্ম ইত্যাদি দিয়ে কনস্ট্যান্টলী চাইছে কিন্তু এক্সপ্লিসিটলী বলছে না যে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ - মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ - কে বাদ দাও। আমাদের কথা মত আমাদের জীবন ও যৌবন বোধ মেনে নাও, সকাল সন্ধ্যা দাশের ন্যায় খাঁটতে থাকো এবং কথা মত অনুপাদনশীল হওয়া মাত্র ফটাফট মাটির নীচে চলে যাও। ভাবটা এমন যে দেখা হবে নরকে (যদি তা আদৌ থাকে)'।
মুসলমানদের এই দুর্বিষহ অবস্থায় - অবশিষ্ট মুসলমানদের অবস্থা আজ যেন সুতা ছেড়া ঘুড়ির ন্যায়। যে দিকে বাতাস বইছে সে দিকে যেতে কোন আপত্তি নেই। কিংবা আফ্রিকার জংগলে সিংহ যখন একটা মোষকে ধরে তখন অবশিষ্ট মোষগুলোর মত যারা উর্ধশ্বাসে নিজের প্রান বাঁচাতে দৌড়ে পালায় এবং নিরাপদ দুরুত্বে গিয়ে আবার ঘাসে মুখ লাগায় - আজকের ট্রাবল ফ্রী মুসলমান গনমানুষের অবস্থাও সে পশুর পালের ন্যায়, ঐ মোষের পালের ন্যায়। তারা নিরাপদ দুরুত্বে গিয়ে ঘাসে মুখ লাগায়।
তারা জুলুম, নির্যাতনের শিকার অসংখ্য গণমুসলমানের দুর্বিষহ, মানবেতর জীবনে যেন স্থায়ী ভাবে আলোড়িতই হয় না, এ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার ফুরসৎ ও পায় না - তারা বাধ্য হয়ে তথাকথিত গণতন্ত্রের সংগ্রামে রত, তারা তথাকথিত সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে চিন্তিত, তারা বিভিন্ন ফেরকা ও রাজনৈতিক আলোচনায় মত্ত, তারা তথাকথিত সচেতনতা মূলক লিখায় নিজেকে রেখেছে আবদ্ধ। তারা যে যেমন বুঝছে এবং যেমন সামর্থ্য সম্পন্ন তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। কিন্তু এতে উম্মাহর নির্যাতন ও নিষ্পেষনের চিত্র কমছেতো নাই, এমনকি ইক্যুয়াল ও থাকছেনা বরং তা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। ২০০১ সালে আফগানিস্থান কোরবানী দিয়েছিল গনমুসলিমরা কিন্তু আজ একাধারে ডজনের উপর দেশকে কোরবানী দিয়ে চলেছে।
কেন গনমানুষের এই বিক্ষিপ্ত চিন্তা ও কাজ ও ক্ষেত্র বিশেষে প্রচেষ্টা সমূহ? আমার সব সময়ই মনে হয় - আমরা আমাদের স্যেকুলার আন্ডারস্ট্যান্ডিং স্যেকুলার পড়ালিখার বাতাবরন দিয়ে আমাদের সামনে উপস্থাপিত সমস্যা চিহ্নিত করছি বলেই - এক একজনের কাছে সমস্যা হিসাবে এক একটি চিহ্নিত হচ্ছে এবং সমাধান স্বরূপ এক একজন এক একটি কাজকে বেঁচে নিচ্ছি। অথচ তা হবার কথা ছিল না। আমাদের কথা ছিল সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য প্রথমতঃ কোরানকে সামনে আনা এবং সেখানে সমাধান খোঁজা। কিন্তু কোরানিক জ্ঞান না থাকায় আমরা তা করতে পারছি না।
অথচ এই জাতির জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচার ও বিশ্লেষন ইত্যাদির নেতৃত্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল আলেম ও ওলামাদের চিহ্নিত করে দিয়েছেন। তাদের মর্যাদা ও অবস্থান সার্টিফাইড আকারে গনমুসলমানের সামনে সমুজ্জল করেছেন। আর সে সাথে আল্লাহ অসম্ভব এক রহমত স্বরূপ কোরআন নাযিল করেছেন - যাকে তিনি ফোরকান তথা সত্য ও মিথ্যার প্রভেদ কারী হিসাবে সেট করেছেন। এই গ্রন্থ এমন ভাবে আলেমদের সাথে বিমূর্ত করা হয়েছে তথা খোদাই করা হয়েছে তাদের অন্তরে - যাতে গনমুসলমানের কাছ হতে উত্থাপিত - যে কোন বিষয় তা অতীত, বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের বিষয়াবলী হোক - তারা তার কোনটি কোনটি সত্য, কেন সত্য ও কোন টি মিথ্যা কেন তা মিথ্যা তা যেমন বিমূর্ত করে বলতে পারবেন তেমনি পারবেন উম্মাহকে নির্দেশনামূলক সমাধান বাঁতলে দিতে।
সে সাথে এই আলেম ও ওলামাদেরকে ঐ শিক্ষা গ্রহন, তার চর্চা ও তার ব্যবহারের বিভিন্ন পদ্ধতি, কলা কৌশল রাসুলুল্লাহ সঃ নিজ জীবনে করে দেখিয়েছেন, সাহাবী রাঃ দৃষ্টান্ত সেট করে বুঝিয়েছেন - আর সে সাথে এই আলেমদের জন্য আল্লাহ একটি উইন্ডো অব নেয়ামাহ স্বরূপ নব্যুয়তের একটি শাখা তথা ভাল স্বপ্ন / কিংবা ভাল ভিশনের ও সুযোগ রেখেছেন।
অথচ আজ এই উম্মাহ যখন কনটিনিউয়াসলী মরছে, নির্যাতিত হচ্ছে, নিপীড়িত হচ্ছে, অপমানিত হচ্ছে, অপদস্থ হচ্ছে - তখন ঐ আলেম সমাজ কোরান ও সুন্নাহকে তাদের সুখ সাচ্ছ্যন্দের নিয়ামক হিসাবে ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত উদরফূর্তি করছেন, ভোগ বিলাস ও করছেন, সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় বক্তৃতা ও বিবৃতি দিচ্ছেন - কিন্তু কোরান ও হাদীসের আলোকে বলছেন না - উম্মাহর সমস্যাটি আসলে কি এবং কিভাবেই বা সেটা একটা সমস্যা এবং এ অবস্থায় সমাধান ই বা কি?
স্বভাবতঃই ইদানিং মনে হয় আল্লাহ তায়লা কি তাহলে - আমাদের চারপাশের এই আলেমশ্রেনী হতে কোরানের ট্রু জ্ঞান কিংবা কোরান হতে উদ্ভুত যে ট্রু এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান আবিষ্কারের টেকনিক তা উঠিয়ে নিয়েছেন - সো ওনারা কোরান পড়েন, এর উপর আলোচনা করেন, আমাদেরকে আন্দোলিত ও করেন - অনেকটা গরুর জাবর কাটার মত - তথা পূর্বোক্ত আলেমদের জ্ঞানকে পুনঃপুনঃ চর্চা করছেন মাত্র।
সম্ভবতঃ তাই ওনারা কোরানের মধ্যে এ যুগের মানুষকে গাইড করার নিমিত্তে উপযুক্ত কোন জ্ঞান নতুন করে পান না, নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারেন না, জ্ঞানের গভীরে ডুকতে পারেন না।
এর পরিনতিতে হয়তো তাই আমরা - এই উম্মাহ আজ পথহারা, অসভ্য, বর্বর, বহু পথ ও মতের পেছনে ঘুরে মরছি। অবশেষে ড্রোনের এ্যাটাকে মরছি, আর্টিফিশিয়াল যুদ্ধের নামে মরছি, গনতন্ত্রের উত্তোরনের জন্য মরছি, কিংবা চিড়িয়াখানার পশুর ন্যায় - উদ্ভাস্তু শিবিরে ধুকে ধুকে মরছি, কিংবা বিশ্ব মিডিয়ার সামনে কীট পতংগের ন্যায় ট্রিটেড হচ্ছি।
ইয়া আল্লাহ আপনিই শুধু ভাল জানেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে দুষ্ট লোকেরা বলে- আসমানি ফেরাস্তার ভয় দেখিয়ে আল্লার নর্তন-দুর্দনের দিন নাকি শেষ হয়ে গেছে।
এ নিয়ে বিকল্প কিছু ভাবছেন? নাকি ব্লগ/ফেসবুকে ইসলামের ছিঁছকে কাঁন্না চলতেই থাকবে???????
অথবা অভিশপ্ত শয়তানের সাথে? - নিশ্চয়ই না।
মানবপষু অপি বাইদানকে সবাই দেখে নাও
ডারলিং
যথার্থ বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং সমরূপ চিন্তা ভাবনা পোষন করার জন্য।
আল্লাহ আমাদের আলেম ওলামাদের মধ্যে সেই অন্তর্দৃষ্টি দিক - যার মাধ্যমে ওনারা কোরান ও হাদীসকে ইন্টারপ্রেট করতে পারবেন, এর মধ্যস্থিত জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে যুগের মানুষের জন্য উপস্থাপন করতে পারবেন এবং সেই সাথে দুনিয়ার মূর্খ শাসকদের লাল চক্ষুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিয়ে মৃত্যু বরন করতে পারবেন আর অগনিত মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলের দোয়ায় ফ্লাডেড হতে পারবেন।
সত্যিই আজ আলেম ওলামাদের ভূমিকা দেখে অনেক কষ্ট পাই।
তারাও যে আজ অসহায়, কারণ কিছু আলেম মুখোশধারী অন্যায়ের পক্ষে চাটুকারিতায় ব্যস্ত। সত্যিকারের আলেমরা এইসব চাটুকারের কারণে কলঙ্কিত, সংকুচিত ও অবহেলিত।
সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর
লিমিটেশান আছেই এবং এ নিয়ে সারসংক্ষেপে যথার্থই বলেছেন।
তারপরও আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সত্যিকার আলেম ও ওলামারা কোরান ও হাদীস দিয়ে লড়বেন, নিজের ব্যাক্তিগত মত দিয়ে নয় এবং আমাদের মত আম-জনতাকে গাইড করবেন, দিক নির্দেশনা দেবেন। সমকালীন উম্মাহর কষ্ট আর ওনাদের নিঃস্তব্ধতা - ইসলামের সাথে বড় বেশী বেমানান, বড় বেশী কষ্টের।
নিশ্চয়ই এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমজনতা তো আর সে বিভক্তির কারনে আলেম ওলামাদের মূল কাজ তথা মুসলিম উম্মাহকে কোরান ও হাদীসের আলোকে গাইড করার কাজকে অবহেলা করতে পারেন না। আমরা একান্ত ভাবেই চাই আমাদের আলেম ওলামারা বিভিন্ন সভাসমাবেশ ও পদ পদবীর বাহিরে থেকে কোরান ও হাদীস নিয়ে পুনঃ পুনঃ গবেষনা করুক এবং সে গবেষনার আলোকে আজকের এই ক্রান্তিকালে - মুসলিমদের গাইড করুক, বলুক আমাদের কি করনীয়? কি বর্জনীয়। এবং তা বলতেই থাকুক - যাতে যারা গাইডেড থাকতে চায় তারা গাইডেন্স পায়। ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও নিজের ভাবনা শেয়ার করার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন