চিন্তাশীল মুসলিম ভাই ও বোনদের কাছে একটি প্রস্তাবনা।
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ০৮ মে, ২০১৫, ১১:৩৫:১০ রাত
বিসমিল্লাহির রহমানুর রাহিম।
যে সকল মুসলিম ভাই ও বোন - মিডিয়া ও অলটারনেটিভ মিডিয়ার চোখে পৃথিবী দেখেন, পৃথিবীর কথা শুনেন ও নিজে বোঝার চেষ্টা করেন এবং পর্যাপ্ত সময় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পান - তারা নিশ্চিত জানেন ও বুঝেন যে - পৃথিবীর মুসলিমরা আজ শৃংখলিত বন্দীর ন্যায়, তাদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার ও নির্যাতন হচ্ছে, নির্বিচারে তাদের ধর্ম, সন্মান ও সম্পদ লুন্ঠন হচ্ছে, এবং অন্যায়ভাবে তাদের উপর অভিযোগ আরোপ করে তাদেরকে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জীব হিসাবে প্রতিভাত করা হচ্ছে।
মুসলিমদের আজকের এই দমবন্ধকর অবস্থা নিয়ে কোরআন ও হাদীসে পূর্বাভাস থাকবেনা, সতর্কবার্তা থাকবেনা তা হতেই পারেনা। আবার ঐ পূর্বাভাস কিংবা সতর্কবার্তাই নয় - তার সাথে সমাধান ও থাকবেনা - তা হতে পারেনা - কারন আল্লাহ সত্য ও ন্যায় নিশ্চিত করবেন বলে তার সৃষ্টিকে নিশ্চিত করেছেন।
একটু আগে সন্মানিত সালাম আজাদী ভাই য়ের একটা লিখায় 'অনেকটা দ্বিমত করতে গিয়ে' নিচের লিখাটি লিখেছিলাম। লিখাটি বড় হয়ে যাওয়ায় ভাবলাম পোষ্ট আকারে তা দেই। আর পোষ্ট দিতে গিয়ে মনে হল - কেন এমন একটি প্রস্তাবনা দেই না ঐ সব ভাইদের কাছে - যারা দ্বীন ইসলামের খেদমত করছেন এবং আরো করতে চান এবং ইসলামের উপর অনেক পড়া শোনা করেছেন এবং আরো করতে চান।
প্রস্তাবনাটা হলঃ
১। টপিকঃ কোরআন ও হাদীসের আলোকে আজকের পৃথিবীকে বিচার ও বিশ্লেষন।
২। সহায়ক হিসাবে আমরা আলেম ওলামাদের বই পত্রের পাশাপাশি স্যেকুলার জ্ঞান ও বিজ্ঞান তথা রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, মুদ্রাব্যবস্থা, জাদুবিদ্যা, ডিপ্লোমেসী, সমরবিদ্যা, ইতিহাস ইত্যাদিকে আলোচনা ও বোঝার সুবিধার জন্য হাজির করতে পারি।
৩। এর উপর আলোচনারত ভাই ও বোনরা নির্দিষ্ট লিন্ক এর আন্ডারে প্রথম প্রতিমন্তব্যের রিপ্লাই হিসাবে তাদের আলোচনা পেশ করবেন। এতে করে আগ্রহী ভাইবোন রা নিরবিচ্ছিন্নভাবে আলোচনার আপডেট পাবেন।
আমার ধারনা যদি আমরা তা করতে পারি - তবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন এ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের নলেজ একজায়গায় আসবে এবং আলেম ভাই ও বোন রা তা কোরান ও হাদীসের সাথে লিন্ক করতে পারবেন এবং আমরা সবাই তা হতে উপকৃত হব এই ভাবে যে আমরা আসলে আমাদের চারপাশের পৃথিবীকে ইসলামিক্যালী চিনতে পারবো, সমস্যা গুলো চিহ্নিত হবে এবং কোরানিক সমাধান সমূহ বিমূর্ত হবে, ইন্শাল্লাহ্।
সম্ভবতঃ এ জন্য - ঘুম ভাংগাতে চাই, রিদোয়ান সবুজ, সন্ধ্যাতারা র মত কোন একজন এ্যকটিভ ব্লগার ভলান্টিয়ার হলে উদ্যোগটি সাফল্য পেতে পারে।
-------------------------------
------------------------------
ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি, উপরোক্ত কথা, চিন্তা ও কাজ - এ সময়ের জন্য যথাযথ ঔষধ হিসাবে কাজ করবে না, তথা রোগ সারাবে না, স্বস্তি ও নিশ্চিত করতে পারবেনা, উদ্দেশ্য ফুলফিল হবে না।
কেন আমি তা বলছি?
কারন আমি বিশ্বাস করি, অনুভব করি এবং দু একটি ক্ষেত্রে কিছু প্রমান ও পেয়েছি - যাতে আমি কনভিন্সড যে, কোরআন একটি জীবন্ত গ্রন্থ। যা ফারদার এক্সপ্লোরেবল। জীবন্ত বলতে আমি বুঝাচ্ছি - এ গ্রন্থ নিরবিচ্ছিন্নভাবে উম্মাহর সামনে উদ্ভুত সমস্যার - নিত্য নতুন সমাধান, পাথেয় ও দিকনির্দেশনা দিতেই থাকবে।
দিক নির্দেশনা পাবার কন্ডিশান হল একটি। আর তা হল - কোন ট্রু মুমিন বান্দাহ - ট্রুলি কোরান এ সমাধান খুঁজবেন এবং প্রয়োজনে অন্যান্য জ্ঞানের শাখা প্রশাখার সাহায্য নেবেন কিন্তু মূল থাকবে কোরআন। যদি মুমিন বান্দাহ কোরান ছেড়ে কোরানের তাফসীর কিংবা কোরানের অনুবাদে কিংবা কোন পূর্বতন আলেমের লিখা কোন বই এ আজকের সমস্যার সমাধান খোঁজেন - তবে নিশ্চিত তিনি তা পাবেন না।
লম্বা হয়ে যাচ্ছে, তারপর ও আমি একটি উদাহরন দিতে চাই। বিশেষ করে আপনারা যারা আরবী বোঝেন তারা কি সুরা আম্বিয়ার ৯৫ ও ৯৬ নং আয়াত দুটো পড়ে তার অনুবাদ করে একটু চিন্তা করবেন? চিন্তা করলে কি এটা পরিষ্কার হবে না যে -
ক) প্রথম আয়াতে আল্লাহ ক্লিয়ারলী বলেছেন - তিনি একটি শহর ধ্বংশ করে দিয়েছেন এবং (সে শহরবাসীর জন্য) সে শহরে ফিরে আসা হারাম করে দিয়েছেন। আর দ্বিতীয় আয়াতে, তিনি ঐ শহরবাসীর ফিরে আসার কন্ডিশান হিসাবে এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, শহরবাসী শুধু তখন ই ঐ শহরে ফিরে আসতে পারবে যখন ইয়াজুজ ও মাজুজ সারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়বে - ট্যাকনিক্যালি মিন করে ইয়াজুজ ও মাজুজ এর কন্ট্রোল এ সারা পৃথিবী চলে আসবে।
এবার আপনারা যারা আরবী জানেন তারা যদি - ৫টা ভিন্ন কোরান নেন তবে দেখবেন ৫টা ভিন্ন ভিন্ন অনুবাদ - যা আল্লাহর মূল বক্তব্য হতে অনেক দুরের। আবার যদি ৫ টা ভিন্ন তাফসীর পড়েন এই দুটো লাইন এর উপর - তা আরো কন্ট্রাডিক্টরী মতামত দেবে - এবং তার কোন কোনটি শুধু লজ্যিকাল কন্ট্রাডিকশান ই দিবে না - একই সাথে কোরানের সাথেও কন্ট্রাডিকশান দেবে। শহরবাসীর ফিরে আসা নিয়ে এটলিস্ট ৪টা ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া যায় - যা মূল বিষয়কে তথা আল্লাহর মূল বক্তব্যকেই চিন্তার জগত হতে সরিয়ে ফেলে।
যদি কোন আরবী জানা ভাই উক্তি লাইনদ্বয়ের থিম হিসাবে ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে কৌতুহলের বশঃবর্তী হন এবং আজকের সময়ে করা অনুবাদ ও পূর্ববর্তী সময়ে করা তাফসীর দ্বারা বায়াসড না হন - তবে তিনি যদি সুরা কাহাফ এর ইয়াজুজ মাজুজ সংশ্লিষ্ট আয়াত কয়টি ও সংশ্লিষ্ট হাদীস গুলোর উপর চোখ বুলিয়ে নেন - তাহলে তিনি নূন্যতমভাবে জানবেন যেঃ
১। ইয়াজুজ ও মাজুজ এর বৈশিষ্ট্য সমূহ কি? কি? এবং নিঃসন্দেহে তিনি আজকের পৃথিবীর মানুষের মধ্যে, সমাজের মধ্যে, রাষ্ট্রের মধ্যে ইনক্লুডিং মুসলিমদের মধ্যে ঐ বৈশিষ্ট্য সমূহের প্রকটতার লেভেল পরিষ্কার দিনের আলোর ন্যায় দেখতে পাবেন। বিশেষ করে দুনিয়াব্যাপী ফ্যাসাদ, করাপশান, ফুড কন্টামিনেশান, কনককশান, ধর্মদ্রোহীতা, আল্লাহকে চ্যালেন্জ করার প্রবনতা ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
সে সাথে তিনি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করবেন কিংবা আবিষ্কার করবেন - কয়েক ডজন ইয়াজুজ ও মাজুজ সংশ্লিষ্ট হাদীস এ শুধু মাত্র একটি শহরের নাম উল্লেখ আছে - ঠিক যেন কোরান এই শহরটিকে ধ্বংশ করেছে বলে বলছে। অদ্ভুত ব্যাপার হল - তা বায়তুল মাকদিস্ - জেরুজালেম।
তিনি যদি তার চিন্তা কনটিনিউ করেন এবং বায়তুল মাখদিস এর হিস্টরী পড়েন মানে কারা কখন কবে কিভাবে বায়তুল মাখদিস এ ছিল, তাদের কখন কি হয়েছিল এবং এ নিয়ে কোরান ও হাদীস ই বা কি বলছে। উদাহরন স্বরূপ - কাদেরকে আল্লাহ ঐ শহর দিয়েছেন বলে বলছেন, কি কন্ডিশান ছিল ঐ শহরে থাকার, কারা ঐ শহরে প্রবেশ করতে চায় নি, আবার পরে গেলেও কারা তাদের বের করে দিয়েছে, কারা তাদের ফিরিয়ে এনেছে এবং কারা আবার ও তাদের বের করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে এবং কেন তারা ফেরাউনের লাশ (কোরানে বলা হয়েছে এটা সাইন হিসাবে প্রিজার্ভ করা থাকবে) আবিষ্কারের পরে এমন একটি মুভমেন্ট করার সুযোগ ফেলো যে তারা বায়তুল মাখদিসে ফিরতে পারলো? কারা তাদেরকে সে সুযোগ করে দিল? যারা করে দিল তারা কি আদৌ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে পেরেছিল কিনা? (যা ৯৬ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন) তারা কি ইয়াজুজ ও মাজুজ এর বৈশিষ্ট্য সমূহ হোল্ড করে কিনা, তারা কি ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে কিনা?
যদি উত্তর পাওয়া যায় তখন তো ঐ আলেম ভাই হাদীসে কুদসী হতে জানতে পারেন যে, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, তিনি এমন একটি জাতির সৃষ্টি করেছেন - যা তিনি স্বয়ং ছাড়া আর কেউ ধ্বংশ করতে পারবেনা। তাহলে ঐ আলেম ভাই কি এই সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না যে - ইয়াজুজ ও মাজুজ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছে এবং শহরবাসী ১৯৪৮ এ তাদের শহর এ ফিরে আসতে শুরু করেছে তথা আল্লাহ যে শহর একদিন হারাম করেছিলেন তা তিনি উঠিয়ে নিয়েছেন?
এবং এই কনক্লুশান এর আলোকে আমার মনে হয়না ঐ আরবী জানা চিন্তাশীল আলেম ভাই, শায়খ আবদুর রহমান মাদানীর সাথে একমত হবেন। বরং তিনি আহ্বান জানাবেন ওনার মত আর যারা বড় বড় আলেম আছেন - তারা যেন দয়া করে কোরান ও হাদীস এ আজকের যুগের সমস্যার কথা মাথায় রেখে কষ্ট করে আর একবার চোখ বুলান এবং তার আলোকে আজকের দুনিয়াকে বিশ্লেষন করেন এবং সে বিশ্লেষনের আলোকে যে রেজাল্ট পাবেন তার আলোকে আমাদের কর্মপন্থা বাতলে দিন।
আমাদের আলেম ও ওলামারা দয়া করে ভবিষ্যত কেন্দ্রিক বিষয় সমূহের ক্ষেত্রে আর্লি লিটারেচার, আর্লি এ্যানালাইসিস এর উপর নির্ভর না করে পুনরায় কোরান ও হাদীসে চোখ বুলান - তাতে আমার বিশ্বাস আমরা অনেক বেশী উপকৃত হব - এবং ১০০০ এর মধ্যে ঐ ১ জন হবার সুযোগ পাব - যে কিনা মোহাম্মদ সঃ এর উম্মত ও জান্নাতি।
বিষয়: বিবিধ
৩৫৯৫ বার পঠিত, ৪৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি - শায়খ ইমরান হোসেন এর আলোচনা ও বিচার বিশ্লেষন - মুসলিম মাত্রই শোনা উচিত, বোঝার চেষ্টা করা উচিত। কোথাও দ্বিমত হলে তা নিয়ে যুক্তিসংগত আলোচনা ও সমালোচনা হওয়া উচিত।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে ওনার এ্যানালাইসিস ও কনক্লুশান এ অনেক বেশী যৌক্তিকতা দেখতে পাই।
প্রথমেই আপনাকে শুকরিয়া জানাই চমৎকার প্রস্তাবনা এবং কাজের পদ্ধতি নিয়ে আজকের এই অতি গুরুত্বপূর্ন পোস্টটির জন্য!
আপনি ডিরেকশন দিন আমাদের ব্লগের এই বিষয়ে যারা পড়াশোনা করছেন, করেছেন উনারা এগিয়ে আসবেন! আমরা সবাই সাথেই আছি ইনশা আল্লাহ!
জ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে সাথে বিভ্রান্তি দূর হবে ইনশা আল্লাহ!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
সমর্থনসূচক বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আশা করি কোন একজন ভাই যারা ব্লগ বুঝেন - তাদের কেউ দায়িত্ব নিয়ে অমন একটি আলোচনার পেইজ ওপেন করবেন। ইনশাল্লাহ্।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি এখনকার এই সময়টায় আখেরী জামানার উপর আমাদের আলোকপাত করা উচিত - এতে করে আমরা মুসলিম প্রধান দেশ সহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভাবে আগামী দিনে মুসলিমদের উপর কি আসতে যাচ্ছে তার যেমন একটি স্বরূপ পাব - তেমনি নিজেদের ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য মানুষিকভাবে প্রস্তুত পাব।
আমি দুঃখিত যে, আমি যা বোঝাতে চেয়েছি তা বোঝাতে ব্যার্থ হয়েছি।
তবে যদি বলতেন কোন অংশটুকু বুঝতে সমস্যা হয়েছে - তখন না হয় আমার বক্তব্যটি অন্যভাবে লিখার চেষ্টা করতে পারতাম - যাতে আমার কোন ভুল থাকলে তা আমি সংশোধন করে নিতে পারতাম।
ধন্যবাদ আবার ও।
আলোচ্য বিষয়ের আলোচনায় যে সেনসিটিভিটি - তা নিয়ে আপনার অভিমত ও ল এ্যানফোর্সমেন্ট এজেন্সি সংশ্লিষ্ট ফাইন্ডিংস এর সাথে আমি একমত পোষন করে বলছি - একজন দায়ী হিসাবে আপনার কাজ কোরান ও হাদীস হতে আমাদের বলা (যা আপনি নেয়ামত হিসাবে পেয়েছেন)- এবং এ বলার কারনে যদি একজন মানুষ - নেগেটিভ হতে পজেটিভ ডাইরেকশান এ আসে বা আসার সুযোগ পায় - নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরুষ্কারের পুরুষ্কৃত করবেন - আর আমার বিশ্বাস মুসলিম মাত্রই এ পৃথিবীতে সময় গুজরান করছে শুধু মাত্র ঐ একটি পুরুষ্কারে পুরুষ্কৃত হবার প্রত্যাশায়।
আর আপনি যদি কোরান ও হাদীসের ভিত্তিতে গবেষনা করেন এবং সেখান হতে রেমিডি তালাশ করেন এবং তা পাবলিকলী করেন - তবে জানবেন ঐ খৃষ্টান ও ইয়াহুদী এজেন্ট এর জন্যও এ নলেজ টুকু দরকার তাকে সংশোধন করার জন্য। কিন্তু আলোচনা না করলে গন-মুসলিম বুঝতেই পারছেনা কেন তাকে কিংবা তার ভাইকে ড্রোন দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, যে হত্যা করছে সে জানেই না - তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সঃ ১৪০০ বছর আগে প্রফেসী করে গিয়েছেন। এমনি অসংখ্য না জানা তথ্য - যা রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন কিন্তু আমরা লিন্ক করতে পারছি না - তাই নিয়ে আমরা অমন একটি আলোচনার পেইজ সত্যিই করতে পারি। মানুষের প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন আংগিকে দিতে পারি, আপনার মত আলেম রা কোরান ও হাদীসের তাৎক্ষনিক রেফারেন্স উপস্থাপন করতে পারেন - তাতে অপকার এর চাইতে উপকার বেশী। আর প্রতিটি প্রাকটিসিং ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও মুসলমান যে সৎ জীবন যাপন করতে চায় - তার জন্য আজকের বিশ্বটি লিটারেলী নরকে এমনিতেই পরিনত হয়েছে - সো তাদের জন্য গাইডেন্স হিসাবে এ আলোচনা দরকার - যেহেতু মেইন স্ট্রীম মিডিয়ায় আল্লাহ ও আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে কথা বলা আমাদের গণতন্ত্র এখন হারাম করে ছেড়েছে।
আমি হাদীস টি পড়েছি। আপাতঃ আপনার বিশ্লেষনটি যথার্থ মনে হয়। কিন্তু আলোচনা করলে পর আপনার বিশ্লেষনটি ভিন্নতর হতে পারে - যদি আপনি খোলা মনে আলোচনা করেন। আপনি কি কখনো ভেবেছেন - ইবলিশ কিংবা জীন এর বাহিরে মানুষ কিভাবে শয়তান এ রূপান্তরিত হয়? কোন মানুষ শয়তানী গুনাবলী ধারন করলে লিটারেলী সে যেমন শয়তান এ রূপান্তরিত হয় তেমনি মানুষ যদি ইয়াজুজ ও মাজুজ এর গুনাবলী আত্মস্থ করে এই যেমন ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে, খাবার (ফরমালিন) কনটামিনেট করে, দূর্নীতি দূর্বিনীতিকে সমাজে ছড়িয়ে দেয়, অন্যায় নিজে করে সে অন্যায়ের দায় ও দায়িত্ব মজলুমের উপর ছাফিয়ে দেয় তবে তাকে ইয়াজুজ ও মাজুজ বলতে দোষ কোথায়? কোথাও কি কোন হাদীস আছে - যা অমন করতে বাধাঁ দেয়?
তবে আপনার এ বিষয়টিতে দ্বিমত থাকবে - যদি না আপনি ইয়াজুজ মাজুজ এর উপর টিপিক্যাল লিখা লিখির বাহিরে এসে কোরান এর আয়াত দুটি এবং হাদীস গুলোকে আবার রিভিউ না করেন।
দজ্জাল বিষয়টি ও ইন্টারেস্টিং। আমরা ছোটবেলা হতে যা পড়েছি, শুনেছি ও বুঝেছি - কোরান বিশেষ করে সূরা কাহাফের যুবকদের পলায়নের রেশানাল নিয়ে ভাবলে, তাদের ঘুমানোর টাইম ও প্রশ্ন ইত্যাদি ও হাদীসে এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নতুন করে পড়লে আপনার মনে যে প্রশ্ন গুলো আসবে যেমন ৪০ দিন, দ্বীপ, বছরের সমান ইত্যাদি আবার ইবনে সায়াদ এর ঘটনা - সে প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুজলে এবং দজ্জালের কারেকটারস্টিক্স পড়লে - আপনার কাছে পরিষ্কার হবে যে দজ্জাল ৭০,০০০ ইয়াহুদি নিয়ে ঘিরে ফেলবে না - বরং মসীহ উদ দজ্জাল তা করবে।
এ্যানীওয়ে আমার বিশ্বাস আপনার মত কেউ একজন যদি এবিষয়টিকে মডারেট করেন - তবে নিঃসন্দেহে আমাদের অনেক প্রশ্ন যেমন উত্থিত হবে তেমনি তার সমাধান ও আসবে - কে জানে এতে করে আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর পরিধি হয়তো এতটাই খুলে যাবে যে আমরা দজ্জাল, ইয়াজুজ মাজুজ, দাব্বাতুল আরদ, পশ্চিমের সূর্য উঠা ইত্যাদি নিয়ে নতুন এক সত্যের মুখোমুখি হব।
ধন্যবাদ।
মানুষ যখন মঙ্গল গ্রহে নতুন আবাসন গড়ে তুলার দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন য়াল্লার মুমিনরা তখন কোরাণ-হাদীসের ভুত পেত্নি দৈত্য দানবের দিকে চাতক পাখির মত হাঁ করে আছে।
বিঃদ্র- ইহুদী-নাসারার ভয়ে য়াল্লর মুমিনরাও তল্পিতল্পা গুটাতে ব্যাস্ত।
সময় পেলেই লিখা কনটিনিউ করবেন। এতে করে বহু মত এর সমাবেশ আলটিমেইট ট্রুথকে এক্সপোজ করবে।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে আজকের দুনিয়াকে কোরান ও হাদীসের আলোকে যে সব বিশ্লেষন তার যৎসামান্য কিছু পড়েছি এবং কিছু শুনছি এবং নিজের সামর্থ্যানুযায়ী ভ্যারীফাই করেছি - তাতে আমি কনফিডেন্টলী বলতে পারি - কোরান ও হাদীস জানেন এমন কোন ভাই তথা আলেম যদি খোলা মনে এ নিয়ে গবেষনা করেন - তবে আমরা আজকের বিশ্বকে যেমন বুঝতে পারবো তেমনি আমরা পথের দিশা ও পাবো - কারন আল্লাহ আমাদের জন্য সূরা কাহাফ যেমন নাযিল করেছেন তেমনি মোহাম্মদ সঃ এর অসংখ্য হাদীস আমাদের জন্য সংরক্ষন করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
আমাদের শুধু দরকার আজকের দুনিয়া বোঝার জন্য, আজকের নির্যাতন ও নিপীড়ন বোঝার জন্য, আজকের সমস্যার সমাধান বোঝার জন্য - ১০০০/১২০০ বছর আগে বলা কোন আলেম কিংবা ওলামার অভিমতকে কিংবা ব্যাখ্যাকে কোরান ও হাদীসের উপর স্থান না দেওয়া, কিংবা রেডিমেইড অবস্থায় না নেওয়া। বরং ঐ মতামতটি বিচার বিশ্লেষন করে গ্রহন কিংবা বর্জন করা।
ধন্যবাদ আপনার আগ্রহ প্রকাশ করার জন্য।
তাফসীরের ব্যাপারে তো ১০০০/১২০০ বছরের পুর্বের কোন আলেমের মত ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহনযোগ্য নয়, যতক্ষণ কুরআন ও সহীহ হাদিসে স্পষ্ট ব্যাখ্যা বিদ্যমান থাকে। আপনি জানেন আল্লামা ইবনে কাসীর (রহঃ) তাফসীরে ইবনে কাসীরের মধ্যে নিজের পক্ষথেকে কোন মতামত দেননি বরং সম্পূর্ণ তাফসীর বিল কুরআন ও তাফসীর বিল হাদীস ও আক্বওয়াল এবং আফআলে সাহাবাহ ও তাবেয়ীদের আক্বওয়াল দ্বারা তাফসীর করেছেন। সর্বশেষ মুহাদ্দিসীনদের মতামতের উপর তাফসীর বা ব্যাখ্যা করেছেন।
সহীহ হাদীস দ্বারা তাফসীর কে আপনি কি বলেবেন? ১০০০/১২০০ বছর পূর্বের আলেমদের কথা না হয় বাদই দিলাম। তাছাড়া মনগড়া ব্যাখ্যায় তো আর তাফসীর হয় না। আশা করি ব্যখ্যা করবেন।
আমি যা বিশ্বাস করি, অনুভব করি তা হলঃ (ভুল হলে শুধরে দিবেন দয়া করে)
১। তাফসীর কারক কিংবা যে কোন ট্রু আলেম কিংবা ওলামা তা তিনি পূর্ববর্তী কিংবা এখনকার হোক - তারা সবাই আমার কাছে অত্যন্ত সন্মানের ও শ্রদ্ধাভাজন। এবং আমি বিশ্বাস করি তারা কোরান ও হাদীসকে বেইজ ধরেই তাফসীর করেছেন, মতামত দিয়েছেন এবং সব শেষে নিজের কোন মতামত এর জন্য এটাই বলেছেন, 'আল্লাহ ভাল জানেন'।
২। এর পর আমি অনুভব করি - ওনারা মানুষ এবং ওনাদের কাছে ঐহী আসেনা বলে - ওনাদের কথা, ওনাদের ব্যাখ্যা, ওনাদের মতামত, ওনাদের বিচার ও বিশ্লেষন সব সময়ই ১০০% সঠিক হবে এবং তা সব সময়ের জন্য সত্য হবে - এটা বিশ্বাস করার দরকার নেই, বিশেষ করে যে সব বিষয় আগামীর, যে সব বিষয় বিজ্ঞানের - যা এখনো আবিষ্কার হয় নি, যে সব বিষয় আপাতঃ ক্লিয়ার নয় বা সে সময়ে ক্লিয়ার ছিল না।
৩। অন্যদিকে যেহেতু কোরান একটি জীবন্ত গ্রন্থ। স্বভাবতঃই সবসময়ই আমরা মুসলিমরা এটা নিয়ে গবেষনা করতে পারি এবং গবেষনা চালাতে পারি উম্মাহর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে কিংবা নিত্য নতুন প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার নিমিত্তে। এবং গবেষনা করার সময় অবশ্যই আমরা হাদীস ও আলেম ওলামাদের মতামত পড়বো, জানবো।
৪। কিন্তু যদি কোন কারনে রিয়ালিটি তথা বাস্তবতার সাথে কোরানের কমপাটিবিলিটি পাই তথা সামন্জস্যতা পাই কিংবা আবিষ্কার করি এবং তাতে কোরানের অন্য আয়াত ও হাদীসের সমর্থন পাই - কিন্তু দেখতে পাই যে কোন পূর্বতন আলেম কিংবা ওলামাদের মতামত ঐ নতুন বাস্তবতা ও কোরানের আয়াতের সাথে কন্ট্রাডিকশান কিংবা বিরোধপূর্ন। তখন যেন কোরানের উপর আলেম ও ওলামাদের মতামতকে আকঁড়ে না ধরি - বিশেষ করে এই বলে যে ওনারা ভুল করতে পারেন না, ওনারা সলফে সালেহীন কিংবা অন্য কোন যুক্তিতে ইত্যাদি।
৫। কারন কোরান হল সঠিক ও বেঠিক নিরূপনের একমাত্র অথেনটিক মাপকাঠি এবং হাদিস তারপরের মাপকাঠি।
৬। আমিও মনে করি - মনগড়া ব্যাখ্যায় তাফসীর কখনো হয়না - হতে পারে না। তাফসীর হবার জন্য কোরানের রিলিভেন্ট রেফারেন্স ও সাপোর্ট লাগবে। হাদীসের সাপোর্ট লাগবে এবং সব শেষে তা পাঠক কিংবা অডিয়েন্স এর কাছে এ্যাক্সেপটেবল হতে হবে। কারন তাফসীর মানুষের বোঝার জন্য। যেই অংশ যে মানুষের কাছে এ্যাক্সেপ্টেবল হবেনা সে মানুষ চাইলে তাফসীরকারকের ঐ অংশটুকু নিজের আমলে কিংবা শিক্ষায় কিংবা বিশ্বাসে না ও নিতে পারে। কিন্তু চাইলে সে ঐ অংশটুকুর তাফসীর অন্য কোন তাফসীর কারকের কাছ হতে নিতে চাইলে নিতে পারে। ব্যাক্তিগতভাবে আমি জানিনা - এতে কোন বাধাঁ আছে কিনা।
৭। সহীহ হাদীস দ্বারা করা যে কোন তাফসীরকে আমি অবশ্যই গ্রহন করবো। এর পর বলবো - যে কোন আর একজন আলেম যদি ঐ সহী হাদীস দ্বারা করা তাফসীর এর মতামত এর বাহিরে এসে কোরানের অন্য কোন আয়াত এবং অন্য আরো পাওয়ারফুল কিংবা অথেনটিক হাদীসের আলোকে ঐ সেইম আয়াতের ভিন্ন কোন তাফসীর করেন এবং তা যদি আমার কাছে অধিক গ্রহনযোগ্য ও বাস্তব এবং ফ্যাক্টসচুয়াল মনে হয় - তবে আমি গ্রহন করতে দ্বিধা করবো না।
মূলতঃ আমি বলতে চাইছি কোরান চলমান ও জীবন্ত গ্রহ্ন ঠিক যেমন আমাদের চারপাশের ন্যাচারাল বিষয়াবলী চলমান ও জীবন্ত। সো চারপাশের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন নিত্য নতুন বিষয় আবিষ্কার হয় - কোরানের প্রতিটি আয়াত ও নিত্য নতুন বিষয় আবিষ্কার করতে সক্ষম - এবং সো আমাদের কোরান নিয়ে রিসার্চ কনটিনিউ করা উচিত - এটাই আমার বক্তব্য।
আশা করি আমার ভাবনাটি আমি এক্সপ্রেস করতে পেরেছি। আল্লাহ আমাদের সকলকে গাইড করুন এবং বেপথে যাওয়া থেকে মুক্ত রাখুন, রক্ষা করুন এবং কাল কেয়ামতের কঠিন দিনে আমাদেরকে বিনা বিচারে বেহস্ত নসীব করেন।
এভাবেই সমাধান আসতে পারে। যারা কোরআন- হাদীসে বিজ্ঞ তাদের এগিয়ে আসা উচিত!
যারা কোরআন- হাদীসে বিজ্ঞ তাদের এগিয়ে আসা উচিত!
আশা করি এ নিয়ে একটি আর্কাইভ হবে - যদি নিয়মিত ব্লগে আসেন অমন কোন ভাই উদ্যোগ নেন।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি অনলাইন ও ব্লগ টুলস এ যেমন দূর্বল - তার চাইতে আরো বেশী দূর্বল কোরান ও হাদীস এ। স্বভাবতঃই আমার প্রত্যাশা এ দুটো বিষয়ের সাথে যদি কোন ভাই যিনি নিয়মিত ব্লগে আসেন তিনি অমন একটি উদ্যোগ নেন - তবে আমরা সবাই উপকৃত হব। যেহেতু আপা আপনার নাম প্রস্তাব করেছেন - নিশ্চয়ই আপনি যোগ্য বলেই করেছেন। সো দয়া করে যদি ইনিশিয়েটিভ নেন - তবে উম্মাহর নিশ্চয়ই উপকার হবে এ্যাটলিস্ট আমরা একটা প্রানবন্ত অলটারনেটিভ থটস্ পাব বিশেষ করে আজকের জামানা নিয়ে টিপিক্যাল থিংকিং এর বাহিরে।
ধন্যবাদ।
মানুষ যখন মঙ্গল গ্রহে নতুন আবাসন গড়ে তুলার দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন য়াল্লার মুমিনরা তখন কোরাণ-হাদীসের ভুত পেত্নি দৈত্য দানবের দিকে চাতক পাখির মত হাঁ করে আছে।
আপনার মতামত এর সাথে আমি পুরোপুরি একমত। ইসলামের আলেম সমাজ ও স্কলারদের প্রতি যথাযথ সন্মান রেখেই বলছি - আমার দেখা ও কথা বলা অনুযায়ী কোরানের শব্দ, বাক্য ও আয়াতের মধ্যে এর যে অর্ন্তনিহিত অর্থ, এর যে ভাববোধ, এর যে মাল্টিলেভেল ও মাল্টিলেয়ার ধরনের প্রকাশ ও রিডারের সাথে যে কথোপকথন, যে প্রশ্ন ও কৌতুহলের উদ্রেক করন ও যে অর্থ ও সেন্স এর সৃষ্টি ও ভাংগা এবং সর্বোতভাবে আমাদের আশে পাশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সাথে পরিবর্তিত সেন্স উদ্রেক করার ক্যাপাসিটি - তা আমাদের মেজরিটি আলেম সমাজ মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও - কেন যেন বাস্তবে তারা তা এগ্রি করতে পারেন না। কেন যেন তারা কোরান এর অর্থ ও তাফসীরকে এমন ভাবে ধারন করতে চান - যা লিটারেলী কোরানিক সেন্স ও এ্যাক্সপ্রেশানকে স্থবির করে ফেলার নামান্তর।
আজ সকালে ঘুম হতে উঠলে পর আমার মনে হয়েছিল, আমাদের আলেম তৈরীর প্রতিষ্ঠানসমূহ কি সামহাউ আমাদের আলেম সমাজের চিন্তা করার ক্যাপাসিটিতে তথা ইডুকেশানকে নলেজ এ রূপান্তরে বাঁধা দিচ্ছে কিংবা বাঁধার মত কিছু দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে? সো আলেম সমাজ চিন্তা করা হতে বিরত থাকছে?
আমার মনে আসছিল, আমাদের মেইনস্ট্রীম আলেম সমাজ ইবনে ত্যাইমিয়ার সময়ে ওনার রিভ্যুলুশানারী থিংকিং গুলোকে লিটারেলী রিজেক্ট করেছিলেন অথচ এখন মোটাদাগে এ্যাক্সেপ্ট করছেন। তার মানে কি আজকের সময়ের যে ট্রু থিংকিং গুলো এ্যাকসেপ্ট করা দরকার তা আগামীর কোন একসময়ে এ্যাকসেপ্ট করবেন?
কিন্তু আজকের সময়ে আমাদের ঈমান, আকিদা ইত্যাদি মৌলিক কোন বিষয়ের বিতর্কের চাইতে বড় বিতর্কের ক্ষেত্র হচ্ছে - কে, কেন, কিভাবে আমাদের ঈমান হারা করছে, কে, কেন কিভাবে আমাদের ফোর্স করছে শিরক করতে, কুফুরী করতে, কে কেন কিভাবে আমাদেরকে স্লেইভ বানিয়ে ফেলেছে, আমাদের ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিচ্ছে, কে কেন কিভাবে আমাদের অর্থ সম্পদ ও শ্রম লুট করে নিচ্ছে আর আমাদেরকে হত দরিদ্রে দাঁড় করিয়ে তার প্রতি মুখাপেক্ষি করছে? এ সব প্রশ্নের উত্তর ডেফিনিটলী কোরান এ আছে, হাদীসে আছে। অথচ আলেম সমাজ কেন যেন পুরোনো কোন আলেম ও ওলামার করা কোন অর্থ ও এক্সপ্লেনেশানকে - আকঁড়ে ধরে রাখছেন - কিন্তু কোরান ও হাদীসকে সেভাবে আকঁড়ে ধরছেন না।
আমি খুব আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছি যদি কেউ এগিয়ে আসে। আশা করি আসবেন ইনশাল্লাহ্।
ভাই সঠিক ইসলাম - অনুরোধ রইল - যদি সময় থাকে - এ বিষয়সমূহে অর্গানাইজড ওয়েতে কিছু করার জন্য কিছু একটা স্টেপ নিন।
আর এটা ঠিক বর্তমান সময়ে কেউ কেউ ইহুদি-খৃষ্টান সভ্যতাকেই দাজ্জাল বলে অবিহিত করছে কিন্তু তাকে পুরোপুরি সঠিক বলা যায়না। হেজবুত তাওহেদ নামের ভন্ড সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নন-আলেম বায়েজিদ খান পন্নী নিজেও ইহুদি-খৃষ্টান সভ্যতাকেই দাজ্জাল বলেছে। অথচ এসব বিষয়ে অগণিত সহীহ হাদিস আছে সেখানে আমরা উল্টো চিন্তা কেন করছি?ইয়েমেনী বংশোদ্ভূত আমেরিকান আনোয়ার আওলাকি(আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসীব করুক) যিনি একাধারে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ও একজন বড় মাপের আলেম তিনি কোরান-হাদিস ও বর্তমান সময়ের পেক্ষাপটে আল মাহদি (আঃ), দাজ্জাল ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট একাধিক বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি প্রমাণ করেছেন যে এসব বানোয়াট নয় বরং সত্য। আপাতত এই ডকুমেন্টারীগুলো দেখতে পারেন যারা এসবের পেছনে সময় ব্যায় করেছেন প্রত্যেকেই আলেম এবং বর্তমান সময় সম্পর্কে পুরোপুরী তারা সচেতন। পরবর্তীতে যদি আলোচনার দরকার হয় তখন নাহয় বিস্তারিত তেই যাব।
https://www.youtube.com/watch?v=u_rLqfB0P40&index=21&list=PL5CD79DA0103AF447
https://www.youtube.com/watch?v=isz6-yPFYNc&index=30&list=PL5CD79DA0103AF447
https://www.youtube.com/watch?v=J-Ij9j989TI&index=42&list=PL5CD79DA0103AF447
https://www.youtube.com/watch?v=gi_n8MAvuVw&index=19&list=PL5CD79DA0103AF447
https://www.youtube.com/watch?v=Q0iAD_UX2Vo&index=20&list=PL5CD79DA0103AF447
আপনার থিংকিং এর জন্য একটা ইস্যু বলি। মুসলিম শরীফের তামীম আদ দারীর হাদীসে যে দজ্জাল - সে মাইটি, ওয়েল বিল্ড (এক চোখ কানা বলা হয়নি, বেটে বলা হয়নি) অন্যদিকে মসীহ উদ দজ্জাল সম্পর্কে বলা হয়েছে সে বেঁটে, চুল কোকড়া, এক চোখা ইত্যাদি। কেন এক জায়গায় যে বর্ননা তা অন্য জায়গার বর্ননার সাথে কমপাটিবল নয়? আবার কেন তামিম আদ দারী যেখানে দজ্জালকে বাঁধা অবস্থায় পায় সেখানে কেন মোহাম্মদ সঃ ইবনে সাইয়িদ দজ্জাল কিনা তা চেক করতে ওমর রাঃ কে নিয়ে একবার নয় দুইবার ভ্যারিফাই করতে যায়? এমনি বেশ কিছু হাদীসের বিষয়ের ব্যাখ্যা আমাদের পেতে হবে এবং পেলে দেখবেন - আজকের টোটাল পৃথিবী, আজকের মুসলমানদের উপর যে নির্যাতন নিপীড়ন, যে আগ্রাসন - সব কিছু দিনের আলোর মত পরিষ্কার হবে। আমি মনে করি যদি সামহাউ আমাদের মধ্যস্থিত কেউ ইকোনোমিস্ট হন, কেউ হিস্টরিয়ান হন, কেউ মনিটরী ইস্যু বুঝেন, কেউ ডিপ্লোমেসী ও পলিটিক্স জানেন ও বুঝেন এবং সব থেকে ইমপর্টেন্ট কোরান ও হাদীসের রিলিভেন্ট আয়াত ও হাদীস প্লেইস করে আলোচনা করে - ইট উইল বি ইজি - ইট উইল ওপেন আপ - ইনফ্রন্ট আওয়ার আইজ - লাইক আমাদের হাতের তালুর আঁকগুলোর ন্যায়।
সঠিক ইসলাম ভাই ও আপনি অন্য যে বিষয়ের অবতারনা করেছেন - ওটা সম্পর্কে আমার কোন মতামত নেই - কারন সত্যিই আমি তা সম্পর্কে লিটারেলী কিছুই জানিনা।
প্রথমে আমি মনে করি যারা শেষ যামানা (Eschatology)নিয়ে study করছেন তাদের উচিত বিতর্কিত বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা। যাতে মানুষেরা সহজে যুক্তি গুলো মেনে নিতে পারে।
দাজ্জাল নিয়ে প্রশ্নের হয়তো ভুল বুঝবুঝি হয়েছে-
আমার মনে হয় সঠিক ইসলাম(সম্ভবত নিক নেম আশরাফ ভাই), ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান সভ্যতাকে দাজ্জাল বলছেন না উনি বর্তমান সভ্যতা কে দাজ্জালের প্ল্যান বলছেন যা সে ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান ও ইবলিসের মদদে তৈরি করেছে। আমরা যারা শাইখ ইমরান সাহেবের Phase 3 কে যুক্তিযুক্ত মনে করি তারাও এটাই মানি যে দাজ্জাল সর্বশেষে মানুষের মত আত্নপ্রকাশ (খুরুজ) করবে।
আর আমি শাইখ ইমরানের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে চাই আমিও মানি যে ইমাম মেহেদী (শেষ যামানায় মুসলমানের নেতা হয়ে)আসবেন।
সাদাচোখে ভাই খুব সুন্দর প্রস্তাবনা-আমাদের অবশ্যই কুরআন ও হাদিসের অর্থ বর্তমানের আলোকে বুঝা প্রয়োজন। নাহলে দাজ্জাল আসলেও আমরা বলবো না হাদীসে আছে দাজ্জাল তো গাধাই উড়ে বেরাবে আর এই লোক তো প্লেনে উড়ে বেরাচ্ছে।
সকল কে জাযাকাল্লাহ খাইর
আমার মনে হয় - ভিন্নতা থাকলে ও লিখাটা জরুরী - কারন এ ভাবে আলোচনা চলতে থাকলে সত্য দিন দিন প্রস্ফুটিত হবে - মিথ্যা আপনা আপনি অস্তমিত হবে।
আপনার লিখা নিচের লাইনটি আসলেই ভাবনার - বিশেষ করে নিজেকে যারা মুসলিম মনে করে কিন্তু ওয়াকিব হাল নন।
নাহলে দাজ্জাল আসলেও আমরা বলবো না হাদীসে আছে দাজ্জাল তো গাধাই উড়ে বেরাবে আর এই লোক তো প্লেনে উড়ে বেরাচ্ছে।
হুসাইন বিন আলী (রা.) কেও মাহদী বিন মাহদী উপাধি দান করা হয়েছে। উমাইয়া খলীফাদের দুএকজনও কবিদের হাতে মাহদী উপাধী পেয়েছেন। তবে এসব ক্ষেত্রে মাহদী শব্দটি অাভিধানিক অর্থই শুধু বহন করত। অর্থাৎ অল্লাহ তাকে হিদায়েত দান করেছেন। ফলে তিনি হিদায়েত প্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখতে পাই শব্দটি নতুন একটি পারিভাষিক অর্থ গ্রহণ করেছে। যার সারমর্ম হলো প্রতীক্ষিত একজন ইমাম, যিনি পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে পাপাচার অনাচারের স্থানে ন্যায় ও ইনসাফের রাজত্ব কায়েম করবেন। এই অর্থবোধক শব্দটির প্রথম প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই আলীর (রা.) আযাদকৃত গোলাম কায়সান কর্তৃক মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়া এর ক্ষেত্রে। কায়সানের আকীদা ছিল যে, মুহাম্মদ ইমামত গ্রহণ করে মাদীনা থেকে সাত মঞ্জিল দুরের রাযওয়া পর্বতে অন্তর্হিত হেয়ছেন। কায়সানী কবি কুসসায়র ইযযত ও মুখতার বিন আবী উবায়দা সাকাফী অনুরুপ ধারনা প্রচার করতেন। তাদের দাবী মুহাম্মদই হচ্ছেন প্রতীক্ষিত আল-মাহদী।
মুসলমানদের মধ্যে বিশেষত: শীয়া সমপ্রদায়ের মধ্যে মাহদী সম্পর্কিত বিশ্বাস ব্যাপক আকার ধারণ করে। ফলে মাহদী সংক্রান্ত অনেক হাদীসও তৈরী হয়ে যায়। ইমাম বুখারী ও মুসলিম মাহদী সম্পর্কিত কোন হদীস গ্রহণ করেননি। তাতে মনে হয় তাদের দৃষ্টিতে হাদীসগুলো বিশুদ্ধ ও মানোত্তীর্ণ ছিল না। তিরমিযী, আবু দাুদ ও ইবনে মাজা অবশ্য মাহদী সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ ধরনের হাদীসগুলোর মূল বক্তব্য হচ্ছে শেষ যুগে আহলে বায়তভুক্ত এমন এক মহা পুরুষের আবির্ভাব অবশ্যই ঘটবে যিনি দ্বীনের পুনরুজ্জীবন ঘটাবেন। ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন, আর মুসলমানরা তাকে অনুসরণ করবে। তখন গোটা ইসলামী জাহান তার অধিকারে চলে আসবে। মাহদী হবে তার উপাধি। খোদ মুহাদ্দীসগণই প্রচুর শ্রম স্বীকার করে আলোচ্য হাদীসগুলোর সনদের চুলচেরা বিচার বিশ্লেষন করেছেন এবং বর্ণিত রিজালদের ত্রুটি-বিচ্যুতি সর্ব সমক্ষ্যে তুলে ধরেছেন।
মোটকথা উমাইয়া সালতানাতের পরিবেশে প্রতীক্ষিত মাহদী ধারণা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। এবং উক্ত আকীদার প্রবক্তাদের অধিকাংশই ছিল শীয়া। সে সময় উমাইয়া পরিবারেও একজন মাহদীর অভ্যুদয় ঘটেছিল। তবে তার নাম আল-মাহদী ছিলনা, বরং ছিল আসসুফইয়ানী। বিভিন্ন মহলে বিশেষত উমাইয়অ পরিমন্ডলে সুফইয়ানী সমাচার বেশ প্রচার লাভ করেছিল। প্রতীক্ষিত সুফইয়ানী ছিলেন প্রতিক্ষিত মাহদীরই অনুরুপ। মুসআব এর সুত্রে আগানীতে বলা হয়েছে - খালিদ বিন ইয়যিদ বিন মুআবিয়া জ্ঞানসেবী রুপে পরিচিত ছিলেন। তিনি কবিতাও রচনা করতেন। ধরনা করা হয় যে, সুফইয়ানী সমাচার তিনিই লিখেছিলেন। মারওয়ান যখন তাকে পরাস্ত করে ক্ষমতা দখল করেন এবং তার মা উম্মে হাশীমকে বিয়ে করেন তখন তিনি এই কৌশলের মাধ্যমে জনসাধারনের মধ্যে নিজের একটি ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আগানী গ্রন্থকার অতপর মন্তব্য করেছেন : "এটা মূলত মুসআবের কল্পনা প্রসূত। কেননা সুফইয়ানী সংক্রান্ত বর্ণনা অন্যদের থেকেও পাওয়া যায়।
তার যুক্তি এই যে, আহলে বায়তের কোন কোন সদস্য সুফইয়ানী বিষয়ক হাদীস বর্ণনা করেছেন। কেননা উমাইয়া পরিবারের মর্যাদা ক্ষুন্নকারী এবং ভাঙ্গন সৃষ্টিকারী যে কোন বর্ণনার প্রতি আহলে বায়তের অনেকের বিশেষ আগ্রহ ছিল। এই যুক্তি সত্বেও আমি কিন্তু মুসআবের মতামতের প্রতিই আকৃষ্ট হয়েছি। কেননা দৃশ্যত খালিদ বিন ইয়াযিদের উল্যেখযোগ্য সংখক অনুচর ও সমর্থক ছিল। যাদের কাছে মারওয়ান ইবনুল হাকামের ক্ষমতা দখলের ঘটনা ছিল অসহনীয়। আর খলিদও ছিলেন অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী। আগেি বলে এসেছি যে, তিনি কিমিয়া চর্চা করেছিলেন। উদ্যেশ্য পদার্থকে স্বর্নে রপান্তর করার রহস্য আয়ত্ব করে সদলবলে সম্পদশালী হওয়া। পরবর্তিতে তিনি মাহদী বিষয়ক জাল হাদীস প্রচারে আত্ম নিয়োগ করেন। এবং মাহদীর পরিবর্তে সুফইয়ানী নাম গ্রহণ করেন। এটি হচ্ছে উমাইয়া ধাচের একটি নাম যা প্রপিতা আবু সুফইয়ানের নাম অনুসারে চয়না করা হয়েছিল। আন-নুজুম আঝঝাহিরাহ এর বক্তব্য হলো - জ্ঞানে-বুদ্ধিতে ও বিরত্বে খালিদ বিন ইয়াযিদের খ্যতি ছিল। কিমিয়া শাস্ত্রের প্রতি তার অনুরাগ ছিল। কথিত আছে যে, অল-মাহদী বিষয়ক হাদীস শ্রবণের পর তিনি এই মর্মে হাদীস জ্বাল করেছিলেন যে, শেষ যমানায় সুফইয়ানী আগমন করবেন।
সবচেয়ে চকমপ্রদ ঘটনা এই যে, শীয়াদের মাহদী বিষয়ক হাদীসের জবাবে একদল উমায়িা যখন সুফইয়ানী বিষয়ক হাদীস আবিষ্কার করলো তখন তাদেরকে টেক্কা দিয়ে শীয়ারাও এই মর্মে পাল্টা হাদীস তৈরী করলো যে, মাহদী আবির্ভূত হয়ে সুফইয়ানীর মুকাবেলা করবেন। ১৩২হিজরীতে আব্বাসী-উমাইয়া সংঘর্ষ যখন তুংগে তখনকার ঘটনা বর্ণনা প্রসংগে তাবারী লিখেছেন - কিনসিরীন, হিমস ও তাদমুর এর অধিবাসীদের একটি বিরাট দল জড়ো হল আবু মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে। অতপর আরো কয়েক হাজার লোক তাদের সাথে যোগ দিল। এবার অন্যান্ন লোকেরাও তার নেতৃত্ব মেনে নিল। কেননা তাদের বুঝানো হলো যে, ইনিই সেই প্রতীক্ষিত সুফইয়ানী। কিন্তু এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তিনি শোচনীয় ভাবে পরাজিত ও নিহত হন। এবং তার ছিন্ন মস্তক আবু জাফর আল-মানসুরের কাছে উপহার স্বরুপ পাঠানো হয়।
আব্বাসীরা যখন দেখল যে, শীয়াদের একজন মাহদী রয়েছেন উমাইয়াদেরও রয়েছেন একজন সুফিয়ানী, তখন তারাও নিজেদের জন্য একজন মাহদী জোগাড় করার কাজে মনোনিবেশ করল। ফলে এই সুবাদেও নতুন কিছু জ্বাল হাদীস আমদানী করা হলো। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, ইবনে উমর এর সুত্রে তাবরানী রেওয়ায়েত করেছেন, আলীকে বাম পাশে এবং আব্বাসকে ডান পাশে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) আনসার ও মুহাজীরদের একটি সমাবেশে বসে ছিলেন। এক পর্যায়ে কতিপয় আনসারের সাথে আব্বাসের বদানুবাদ শুরু হলো। আনসাররা আব্বাসকে কিছুৃ কঠিন কথা শুনিয়ে দিল। তখন নবী করিম (স.) আব্বাস ও আলীর হাত ধরে বললেন, এর ওরসে এক যুবক জন্ম নেবে, যে পৃথিবীকে অনাচার অবিচারে ভরে দেবে। এর এর ওরসে জন্ম নেবে এক যুবক, যে ইনসাফ ও সুবিচারে পৃথিবীকে ভরে দেবে। সে পরিস্থিতি তোমাদের সামনে দেখা দিলে তামীমী যুবককে তোমরা অনুসরন করবে। পুর্বদিক থেকে তার আগমন ঘটবে। সেই হবে মাহদীর পতাকাবাহি।
দৃশ্যত হাদীস জালকারী লোকটি বেশ সমজদার ছিলো। সুস্পষ্ট ভবে সময় নির্বাচনের ঝুকি সে এড়িয়ে গিয়েছিল, যাতে আলাভী আব্বাসী যারাি বিজয়ী হবে, হাদীসটা যেন তাদের কাজে লাগতে পারে। ফলে বিজয়ী আব্বাসীরা হাদীসটির লক্ষ্যস্থল নিজেদেরকে দাবী করতে পেরেছিল। কেননা তারা পুর্ব দগন্ত থেকে আগমনকারী পতাকাবাহি ছিল।
হাকীম ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন আমাদের আহলে বায়তের মধ্যে চারজন কীর্তিমান পুরুষ আসবেন। তারা হলেন, সাফফাহ, মুনযির, মানসুর ও মাহদী। মুজাহিদ বলেন, সাফফাহ সম্ভবত সাহায্যকারীদের হত্যা এবং শত্রুদের ক্ষমা করবেন। আর মাহদী অনাচারেপূর্ন পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে ভরে দেবেন। তখন নিরীহ প্রানীরা হিংস্র পশুদের থেকে নিরাপদ থাকবে। আর ভুগর্ভ তার সম্পদ উদগীরণ করে দেবে।
সম্ভবত : মাহদী সমাচারের ব্যাপক প্রসারে প্রলুব্ধ হয়েই মনসুর তার ছেলের নাম আল-মাহদী রেখেছিলেন। এবং মানুষকে এ ধাঁধাঁয় দেখতে চেয়েছিলেন যে, ইনিই হয়ত সেই প্রতীক্ষিত মাহদী। আগানীর বর্ণনা মতে, মানসূর মাহদীর অনুকুলে বয়াআত গ্রহণের উদ্যোগ নিলে পুত্র জাফর তার প্রতিবাদ করেন, তখন মানসুর এক সভার আয়োজন করেন এবং সেখানে বাগ্নী বক্তা ও কবিদেরকে তাদের বক্তব্য পেশ করতে বলা হয়। সকলেই তখন আল-মাহদীর গুণকীর্তন করেন। মুতী বিন ইয়াস ছিলেন তাদের অন্যতম। বক্তব্য শেষ করে তিনি বললেন, অমুক, অমুকের সুত্রে আমাকে হদীস শুনিয়েছেন যে, নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল-মাহদী হবে আমাদের পরিবারভুক্ত। তার নাম হবে মুহাম্মদ এবং সে হবে আব্দুল্লাহর পুত্র। তবে তার মা হবে আমাদের পরিবার বহির্ভূত। তখন পৃথিবী যেমন অনাচারে পূর্ণ হয়ে উঠবে তেমনি সে তা ন্যায় বিচারে ভরে দেবে। অতপর তিনিই আব্বাসের দিকে তাকিয়ে বলেন, আল্লাহর দোহাই, সত্য করে বলতো, এ হাদীসকি তুমি শুনেছো ? মনসুরের ভয়ে তখন তিনি বলে উঠলেন, হ্যাঁ।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের নামেও একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (স.) বলেছেন, এ দুনিয়া ধ্বংস হবে না, যতক্ষণ না আমার উম্মতের শাসনভার আমার পরিবারেরই একজন গ্রহণ করবে। আমার নামেই হবে তার নাম। আল-বিদা ওয়াত তারিখ গ্রন্থে আল-বালখী লিখেছেন, : "আল-মাহদী মুহাম্মদ বিন আবু জাফরই হচ্ছে সেই ব্যাক্তি। কেননা তার উপাধি আল-মাহদী, নাম মুহাম্মদ এবং তিনি আহলে বায়াতভুক্ত। তাছাড়া অবিচার নির্মূলে ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তিনি চেষ্টায় কোনই ত্রুটি করেননি"।
উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার বুঝা গেল যে, আলাভী উমাইয়া, আব্বাসী সর্ব মহলেই মাহদী সমাচার প্রসার লাভ করেছিল এবং তা তাদের প্রত্যেকের কাছেই নিজস্ব ছাপ পরিগ্রহ করেছিল।
এই মাহদী পটভুমি ছিলো রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয়। আমার মতে, শীয়া সম্প্রদায় থেকেই এর প্রথম উৎপত্তি হয়েছিল। শীয়া নেতারাই ছিল এই আকীদার প্রথম রুপকার, যখন খিলাফত তাদের হাত থেকে ফসকে মুআবিয়ার হাতে চলে গেল, আলী নিহত হলেন, হাসান মুআবিয়ার হাতে খিলাফতের দায়িত্বভার ছেড়ে দিলেন, তখনকার সেই ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল বছরকে 'ঐক্যের বছর' নামে অভিহিত করা হলো। সব শেষে হুসাইন নিহত হলেন। তখনই শীয়া নেতারা মাহদী আকীদা সমাজে বিস্তারের কৌশল অবলম্বন করলেন। কেননা তারা অনুভব করলেন যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের অনুসারীদের মধ্যে নৈরাশ্যের সৃষ্টি করেছে এবং তাতে তাদের সংগঠন বিলুপ্ত হওয়ারও আশংকা দেখা দিয়েছে। তখন তাদের দুরদর্শী ব্যাক্তিরা মানুষকে এই মর্মে সান্ত্বনামূলক ভবিষ্যদ্বানী শুনাতে লাগল যে, খিলাফত আবার তাদের হাতে ফিরে আসবে এবং বনী উমাইয়া অচিরেই পরাজিত হবে। এজন্য তারা সুপরিকল্পিত কর্মসুচিও গ্রহণ করলেন। যেমন শীয়াদের প্রচারের জন্য গোপন আন্দলন গড়ে তুললো এবং উমাইয়া শাসনকে উৎখাত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালালো। তবে অল্প পরেই তারা বুঝতে পারলেন, এ কাজে সাফল্য অর্জন করতে হলে সম্প্রদায়ের জন্য এমন একজন সর্বমান্য নেতার উপস্থিতি অপরিহার্য যাকে কেন্দ্র করে গোপনে হলেও মানুষ সংঘবদ্ধ হবে এবং তিনিই সত্য ও বৈধ খলিফা, এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে তার প্রতিটি নির্দেশ চোখ বুজে মেনে নিবে। কিন্তু ধর্মীয় রুপ দান ছাড়া সেটা সম্ভব ছিলনা। এ চিন্তা থেকেই মূলত: মাসুম ও অপাপবিদ্ধ ইমামের ধারনা জন্মলাভ করেছে। এ ভাবেই হতোদ্যম অনুসারীদের হৃদয়ে নতুন আশা সঞ্চারের মাধ্যমে আন্দলনকে তারা মজবুত বুনিয়াদের উপর দাড় করানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। তারা গোটা সম্প্রদায়কে এ আশাবাদে উজ্জীবিত করে তুলেছিল যে, শীঘ্রই তারা চুড়ান্ত বিজয়ের অধিকারী হবে এবং উমাইয়াদের সাময়িক বিজয় যতই চোখ ধাধিয়ে দিক, শীঘ্রই তারা পরাজিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
কিন্তু আদি শীয়াদের 'প্রতিক্ষীত শাসন' এর ভিবিষ্যদ্বানী বর্ণনাগুলোকেই একদল লোক অবশেষে প্রতীক্ষিত শাসক- এর ভবিষ্যদ্বানীতে রুপান্তরিত করল। কেননা সাধারন লোকদের চিন্তায় এটাই ছিল অধিক বোধগম। পূর্ববর্তীরা প্রতীক্ষিত মাহদীকে প্রতীক্ষিত শীয়া খিলাফতের প্রতীক রুপে ব্যাবহার করেছিল। কিন্তু তাদের উত্তরসূরীরা সেটাকে বস্তবতা ও স্থুল অর্থেই গ্রহণ করলো। তারা প্রচার করেছিল যে, সত্যি সতি রক্ত মাংসের একজন মাহদী আসছেন। বিষয়টিকে অধিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদানের জন্য তারা তার বিভিন্ন ঘটনা বিষয়ক বর্ণনাও পরিবেশন করতে লাগল প্রচুর পরিমানে। আল-আলূসী তার তাফসীর গ্রন্থে লিখেছেন : ইমামিয়া সম্প্রদায়ের একটা অংশ পুনরাবির্ভাব বিষয়ক রিওয়ায়েতগুলোকে শীয়া সালতানাতের পুনরাবির্ভাব অর্থে ব্যাবহার করেছিল। এভাবে ব্যাক্তির পুনরাবির্ভাব এবং মৃতের পুনর্জীবন লাভের ধারনাকে তারা নাকচ করে দিয়েছিল"।
কিন্তু সাধারন মানুষের মনে এই ভাবধর্মী ভবিষ্যদ্বানী তেমন আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি। কেননা বিষয়টিকে তারা ভালভাবে বুঝতে সক্ষম হয়নি। পক্ষান্তরে জড় ব্যাক্তির পুনরাবির্ভাব তথা স্থুল ভবিষ্যদ্বানী তাদের মনে অনায়াসেই আবেদন সৃষ্টি করতে পারত। কেননা, এটা তারা খুব সহজেই হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম ছিল। এই বাস্তব সত্য উপলব্ধি করেই সুনির্দিষ্ট গুণাবলীর অধিকারী রক্তমাংসের একজন আল-মাহদী পুনরাবির্ভারে বর্ণনা তৈরীও করা হয়েছিল।
ইতিহাসে যেমন আমরা দেখি, রোমানদের হাতে পরাস্ত হয়ে গ্রীকরা যখন শাসন ক্ষমতা হারালো তখন তারা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিলাসমুখি জীবনে আনন্দ লাভের উদ্দেশ্যে প্রয়োগিক দর্শনকে তাত্ত্বিক দর্শনে রুপান্তরিত করেছিল। তেমনি শীয়াদের হাত থেকে যখন ক্ষমতা ফসকে গেলো তখন তারাও তাদের জীবনের ব্যার্থতা ও যন্ত্রনাকে ধৈর্য ও স্থৈর্যের সাথে মুকাবেলা করার আহবান জানালো। তারা অত্যন্ত নৈপুন্যের সাথে আশাবাদী চিন্তা রুপায়ণও ঘটালো এবং আল-মাহদীর মধ্যে সেটাকে মূর্তিমান করে তুললো।
এ ক্ষেত্রে শীয়ারাই ছিল পথিকৃত। অতপর শাসন ক্ষমতা মারওয়ান পরিবারে কুক্ষিত হওয়ার পর ব্যর্থ ও পরাস্ত খালিদ বিন ইয়াযিদ ও তার উমাইয়া সমর্থকরা তাদের পদাংক অনুসরন করল। তদ্রুপ আব্বাসীরাও একটু ভিন্ন পথে একই গন্তব্যের দিকে পা বাড়ালো। মাহদীর অস্তিত্বকে তারা স্বীকার করে নিল এবং তার পুনরাবির্ভাব চিন্তাকে নিজেদের অনুকূলে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করল যে, আলী পরিবারে নয়, বরং আব্বাসী পরিবারেই আবির্ভূত হবেন প্রতীক্ষিত আল-মাহদী। তাহলে দেখা যাচ্ছে, শীয়া সম্প্রদায় ও সুফইয়ান পরিবারের হতাশা ও নৈরাশ্যই ছিল মাহদী চিন্তা উদ্ভাবনের মনস্তাত্বিক কারণ। পক্ষান্তরে আব্বাসী মাহদীর জন্মলাভের মনস্তাত্বিক কারন ছিল অভিন্ন অস্ত্রে পাল্টা আঘাত হানার প্রবণতা।
এই সুচতুর নেতৃবর্গ সেই সরলপ্রাণ ও ধর্মভীরু জনসাধারণের অগভীর চিন্তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন, যারা ধর্মের নামে এবং ইসলামী দাওয়াতের ছদ্মাবরণে পরিবেশিত যে কোন বক্তব্যকে অবলীলাক্রমে এবং চুড়ান্ত আবেগ ও ভক্তির সাথে গ্রহণ করতে অভ্যস্ত। তাই এই সুকোমল ও মাহান পথেই তারা তাদের চিন্তার অংগনে প্রবেশ করলো। তারা রাসূলুল্লাহ (স.) নামে বিভিন্ন জাল হাদীস আপাত মজবুত সনদ সহ বর্ণনা করতে লাগল আর সরলপ্রাণ জনসাধারনও ভক্তিভরে সেগুলো বিশ্বাস করে বসল। এভাবে আল মাহদীর পুনরাবির্ভাব এক স্বীকৃত ধর্মীয় সত্যে পরিণত হল। শীয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা নীরবতা অবলম্বন করেছিল। কেননা বিষয়টি ছিল তাদের স্বার্থের অনুকুলে। উমাইয়ারা এর কোন প্রতিবাদ করলনা। কেননা একই পথে তারাও সুফইয়ানী চিন্তার জন্ম দিয়েছিল আর আব্বাসীদের উচ্চবাচ্য না করার কারন এই ছিল যে, গোটা বিষয়টাকেই তারা আব্বাসী স্বার্থের খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছিল। এভাবে এমন এক ন্যাক্কারজনক ষডযন্ত্র সাফল্য লাভ করল, যা মানুষের চিন্তা-বুদ্ধি ও আকীদা-বিশ্বাসকে পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনষ্ট করে দিয়েছিল।
মুতাযিলাদের পক্ষ থেকে এই সর্বনাশা গুমরাহীর মুখোশ উন্মচনের একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ আমি প্রত্যাশা করছিলাম। কিন্তু দু:খের বিষয় এ প্রসঙ্গে তাদের উল্যেখযোগ্য কোন কীর্তি ও প্রচেষ্টা আমার চোখে পড়েনি। তবে যদ্দুর জানি যায়দীয়া (শীয়া সম্প্রদায়ের আরেকটি শাখা, যারা মুতাযিলী দর্শন দ্বারা বেশ প্রভাবিত হয়েছিল। কেননা তাদের পুরোধা পুরুষ যায়দ ছিলেন শীর্ষস্থানীয় মুতাযিলী নেতা ওয়াসিল বিন আতার শিষ্য) আল-মাহদী ও তার পুনরাবির্ভাব আকীদার তীব্র বিরোধিতা করেছিল। এবং বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত সংশ্লিষ্ট হাদীস ও বর্ণনাগুলোর স্বরুপ উদঘাটন করে আহলে বায়াতের ইমামদের এমন সব বক্তব্য ও মতামত উদ্বৃত করেছিল, যা ছিল ইসনা আশারিয়া ইমামদের বর্ণনা ও বক্তব্যের সাথে সরাসরি বিরোধপূর্ণ।
বস্তুত : আল-মাহদী বিষয়ক এই হাদীসগুলো এক একটি আজগুবি কাহিনী ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু মুসলিম জীবন এবং ইসলামী আকীদা ও বিশ্বাসের জগতে তার ফলাফল ছিল ভয়াবহ। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা তুলে ধরছি।
১. ভবিষ্যদ্বানী গায়েবী খবর এবং আগত কালের ঘটনাবলীর আগাম সংবাদের এক রহস্যময় আবহ মাহদী চরিত্রকে সৃষ্টি করেছিল। শীয়াদের দাবী মতে তারা ছিল আহলে বায়তের কাছে গচ্ছিত ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত কিয়ামত অবধি বিভিন্ন কালের ঘটনাবলীর পূর্ণজ্ঞানের অধিকারী। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, জাফর চর্মখন্ডে আহলে বায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় ঘটনার বৃত্তান্ত লিখেছিলেন, যা তাদের দাবী মতে, জাফর ছাদিকের কাছ থেকে সূত্র পরস্পরায় প্রাপ্ত। তাছাড়া এমনও কথিত আছে যে, ইহুদীবংশীয় ও মুসলিমরা (কাআব আল-আহবার, ওয়াহ্হাব বিন মুনাব্বিহ প্রমুখ) তাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে এ সম্পর্কিত ভবিষ্যত ঘটনাবলীর বহু বিবরণ পেয়েছেন। এভাবে আজগুবী হাদীস এবং গল্প ও কাহিনীতে মানুষের মগজ ভার করে তোলা হল। মুসলমানদের গ্রন্থসমূহে মালাহিম নামে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় যুক্ত করা হলো। তাতে হরেক রকমের ভাবী ঘটনাবলীর তথ্যাদী বর্ণিত হয়েছে। যেমন আরব-রোমান যুদ্ধের ঘটনাবলী, সিরিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব সংক্রান্ত ঘটনাবলী, বসরা বাগদাদ ও আলেকজান্দ্রিয়া সংক্রান্ত ঘটনাবলী, মাহদী কর্তৃক জাবালে দায়লাম, কনস্টান্টিপোল, রোম, আন্তাকিয়া ও স্বর্ণগির্জা অধিকারের ঘটনাবলি, স্পেন বিজয় ও বিজয় পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ ইত্যাদি। এগুলোকে আগাগোড়া হাদীস রুপে চালানো হয়েছে। হয় সরাসরি রাসূলুল্লাহ (স.) এর নামে নতুবা আহলে বায়াতের ইমামদের নামে। আর অংশ বিশেষ কাব আল-আহবাব ও ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ এর নামে কিংবা অন্যকোন সূত্রে।
মানুষের চিন্তা ও বুদ্ধিকে বিভ্রান্ত এবং আকীদা ও বিশ্বাসকে কুসংস্কার বিলাসী করার ক্ষেত্রে এগলো মারাত্নক ভুমিকা পালন করেছে। শুধু তাই নয়, মুসলিম ইতিহাসের লাগাতার বিদ্রোহ ও গোলযোগের অন্যতম উৎস ছিল এই মাহদী সমাচার। প্রিতিটি যুগে এক বা একাধিক উচ্চাবিলাসী ধর্ম প্রচারকের আবির্ভাব ঘটতো এবং সে নিজেকে প্রতীক্ষিত আল-মাহদী বলে দাবী করত। তাতে স্বভাবতই তার চারপাশে জড়ো হয়ে যেত গোড়া প্রকৃতির ধর্মপাগল মানুষেরা, যেমনটি আমরা দেখতে পাই ফাতিমিয়া সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ মুহাম্মদ আল-মাহদীর ক্ষেত্রে। মাগরিব (মরক্কো) এর ইতিহাস পড়ে দেখুন, তাতে কোন না কোন মাহদীর আবির্ভাবের তথ্যাদি আপনি অবশ্যই পাবেন। এই সুদীর্ঘ তালিকায় আমাদের জানা শেষ মাহদী হলেন মাহদী সুদানী। পারস্যের বাবিয়া সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশও নিকট ইতিহাসের একটি ঘটনা। এ সম্প্রদায়ের প্রথম পুরুষ মির্য আলী মুহাম্মদ (জন্ম ১২৩৫ হি" তিনি হুসাইন বংশধর ছিলেন) পচিশ বছর বয়সে দাবী করে বসলেন যে তিনি 'বাব'। যার অর্থ প্রতীক্ষিত মাহদীর সহযোগী বা নায়েব। ইসলামের ইতিহাসে এ পর্যন্ত যত মাহদীর আবির্ভাব হয়েছে তাদের তালিকা প্রকাশ করলে এবং তাদের সৃষ্ট বিদ্রোহ, গোলযোগ ও রক্তপাতের ফলে ইসলামী সালতানাতের যে পরিণতি হয়েছে তা তুলে ধরলে, সে ইতিহাস হবে বড় দীর্ঘ, বড় করুন।
এ সবই ছিল মাহদীবাদ নামে এক আজগুবী মতবাদের বিষময় ফল। সৃষ্টির ক্ষেত্রে আল্লাহর শাশ্বত যে বিধান তার সাথে যেমন এ মতবাদ বিন্দুমাত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তেমনি আকল ও বুদ্ধির সাথে কিংবা বিশুদ্ধ হাদীসের সাথেও এর কোন সম্পর্ক নেই।
এ কুসংস্কার সমূলে উৎপাটন করে মানুষকে ইসলাম নির্দেশিত ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্রতী করতে হলে বুদ্ধি ও যুক্তির পথে অগ্রসর হতে হবে এবং ইসলামী ব্যাবস্থা রুপায়নের বাস্তব কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। কেননা কল্পনার চেয়ে বাস্তব জগতে ন্যায় ও ইনসাফের অন্বেষন করা এবং কুসংস্কারের অন্ধকার দুনিয়া ত্যাগ করে বুদ্ধি ও বাস্তবতার সবুজ ভুমিতে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়াই উত্তম ও ফলপ্রদ
২। প্রতীক্ষিত মাহদী চিন্তার আরেকটি কুফল এই যে, এই সূত্রে শীয়াদের সাথে সূফীদের সুনিবীড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আর সুফীবাদও মাহদী, কুতুব নাম ধারণ করে নতুন রুপে ও নতুন আঙ্গিকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছিল। এভাবে স্থুল জগতের পাশাপাশি সুফিবাদীরা এক অশরীরী ও আত্মিক জগত গড়ে তুলেছিল। সে জগতের কর্ণধার হলেন আল-কুতুব, যিনি শীয়া সম্প্রদায়ের ইমাম বা আল-মাহদী জাতীয় একটা কিছু। আল-কুতুবই হলেন প্রত্যেক যুগের যাবতীয় কর্মকান্ডের ব্যবস্থাপক ও পরিচালক। আকাশের স্তম্ভ। আল-কুতুব না হলে তা যমীনে ভেঙ্গে পড়তো। আল-কুতুবের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন নকীব (প্রতিনিধি) রা। আল-ফুতুহাতুল মালাকিয়া গ্রন্থে ইবনুল আরাবী লিখেছেন :
"প্রতিযুগে নকীবদের সংখ্যা হচ্ছে বার। আকাশের বারটি রাশির সাথে এ সংখ্যার যোগ-সম্পর্ক রয়েছে বলে তাতে কখনো হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেনা। প্রত্যেক নকীব একটি করে রাশির প্রভাব, বৈশিষ্ট, রহস্য ও গতি-প্রকৃতির পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী- এই নকীকদের হাতেই আল্লাহ অর্পন করেছেন অবতীর্ন সকল শরীয়তের জ্ঞান। মানুষের মনের গোপনতম ইচ্ছ-অনুভুতি এবং কপটতা-কুটিলতা সম্পর্কেও তারা অবহিত থাকেন। ইবলীসের রুপ তাদের কাছে সম্পূর্ণ উন্মোচিত। তারা ইবলীসের হাকীকত যতটুকু জানেন ততটুকু খোদ ইবলীস জানেনা। জ্ঞানের এমন স্তরে তাদের অবস্থান যে, মাটিতে অংকিত কোন পদচিহৃ দেখেই তারা বলে দিতে পারেন, লোকটি নেককার না বদকার -------------"
ইবনে তাইমিয়া লিখেছেন, দরবেশ ও সাধারণ লোকদের মুখে গাওস, কুতুব, আবদাল জাতীয় যে সব শব্দ চালু রয়েছে, সেগুলোর কোন অস্তিত্ব কিতাবুল্লায় যেমন নেই, তেমনি বিশুদ্ধ কিংবা গ্রহণযোগ্য দূর্বল সনদেও নবী করীম (স.) থেকে তা বর্ণিত নয়। আবদাল শব্দটি শুধু আলী (রা.) এর সূত্রে নবী করিম (স.) থেকে সিরিয়া বিষয়ক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু তারা সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। পূর্বজদের বক্তব্যেও এগুলোর কোন অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় না।
এভাবে সুফিবদীরা দৃশ্য সম্রাজ্যের প্রেক্ষাপটে এক অদৃশ্য সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন, যার মূল প্রেরণা এসেছে মাহদীবাদ থেকে। বলাবাহুল্য এগুলো হচ্ছে, তাদের উর্বর মস্তিস্কের কল্পনা বিলাস, যা মুসলমানদের আমল-আকীদা বিনষ্ট করেছে, জীবনের কর্মমঞ্চে তাদেরকে যুক্তি নির্ভর পদক্ষেপ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও শাসন সংশোধনের আন্দোলন থেকে তাদেরকে রেখেছে বিরত। ফলে মানুষের বিচরণ তখন ছিল কল্পনার স্বর্গে, আর শাসকদের বিচরণ ছিল অবিচার-অনাচারের নরকে। যেন এক অলিখিত সমঝোতায় উপনীত হয়েছিল উভয় পক্ষ। শাসক অনাচারে গা ভাসিয়ে দেবে এবং জনসাধারণ বিভোর থাকবে তাদের তাদের স্বপ্ন নিয়ে। আর এর ফলশ্রুতিতে দুর্দশা বৃদ্ধি পেতে থাকবে আপামর গণমানুষের।
আমি ডঃ ইয়াসীর কাদির এ নিয়ে একটি ইউটিউব এর বক্তব্য শুনেছিলাম - আমার কাছে মনে হয়েছে ঐ বক্তব্যটি আপনি শুনে, ঐখানে কোট করা হাদীস এর উপর আপনার মতামত জানালে কিংবা কাউন্টার আর্গুমেন্ট লিখলে আমরা উপকৃত হতাম।
ধন্যবাদ।
আমি একজন সাধারণ কমেন্ট ব্লগার। সবার সাথে থাকতেও আইডি বানিয়েছি!
আপনার সুন্দর প্রস্তাবনার সাথে স হমত পোষণ করছি এবং এ ব্যাপরে বিদগ্ধজনদের সুমর্জি কামনা করছি!
আল্লাহ সবার ভালো কর্মগুলো কে কবুল করুন!আমিন!!
আমিও হনেস্টলী - এ ব্যাপরে বিদগ্ধজনদের সুমর্জি কামনা করছি!
এবং সবসময়ই প্রার্থনা করি
আল্লাহ সবার ভালো কর্মগুলো কে কবুল করুন!আমিন!!
অপেক্ষায় থাকবো। আমাদেরকে শেয়ার করবেন।
একটা কঠিন কথা বলেছেন ভাই, 'এই ক্ষেত্রে যিনি এই কাজ করবেন তাকে অবশ্যই শুধু এই গবেষনায় ই থাকতে হবে'।
আমরা সবাই দুনিয়া নিয়ে এত ব্যস্ত যে - ডেডিকেশান টা যেন হারিয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে আমি বুড়া মিয়া ভাই নামে একজন ভাইকে পেয়েছিলাম এই ব্লগে - আমি খুব চাইছিলাম ওনার মত কেউ একজন আমাদের আশে পাশে থাকলে খুব ভাল হত। ইনশাল্লাহ আল্লাহ নিশ্চয়ই কোন ভাইকে এ জন্য কবুল করবেন এবং কেউ না কেউ কোন না কোন দিন এগিয়ে আসবেন এবং আমাদের চোখ খুলে দিবেন। ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও মতামত দেবার জন্য।
মৃত্যুর পূর্বে মাহদী (আঃ) এর আবির্ভাব হলে মাহদী (আঃ) এর বাহিনীতে শরীক হওয়ার তাওফীক দান করুন।
এ হোক আমাদের সকলের একান্ত প্রার্থনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন