২১শে ফেব্রুয়ারী - যে দেবতার জন্ম ও বেড়ে উঠা আমাদের চোখের সামনে

লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৪:২৮:২৩ রাত

১। ১৯৫২ সালের পাকিস্থানে অর্ধশতকের ও বেশী ভাষাভাষী লোকের বসবাস। তার মানে অর্ধশতকের ও বেশী মাতৃভাষা। নব্য পাকিস্থানকে যথাযথ কাঠামো দিতে অফিস-আদালতের জন্য একটা ভাষা চাই। আর সে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট 'উর্দু'কে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রস্তাব করেছে। চেয়েছে উর্দুই হোক পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা। এতে অন্যায় হয়েছে এই যে ভদ্রলোক দেশের অর্ধেক মানুষের ভাষাকে অবজ্ঞা করেছে কিংবা তাদের মতামত নেয় নি কিংবা নেবার প্রয়োজন মনে করেনি।

২। প্রেসিডেন্ট সাহেবের নির্ভেজাল ভুল, অহমিকা ও অদূরদর্শীতা - এ দেশের স্যেকুলার রাজনীতির কান্ডারী, স্যেকুলার সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদদের কল্যানে সেই ভুল - এ দেশকে দিয়েছে নতুন এক দেবতা, এক মূর্তি, এক পূজনীয়কে 'একুশে'। সময়ের পরিক্রমায় তারা এ দেবতাকে মহিমান্বিত করেছে জাতির 'জাতীয়তার বন্ধন/মৈত্রী' ইত্যাদি উপাধী দিয়ে, এর সাথে আবেগ ও অনুভূতিকে একীভূত করতে গান গেয়েছে, কবিতা আবৃতি করেছে, নাটক লিখেছে আর সে সাথে হাজারে হাজারে নিবন্ধ। পরিপূর্ন মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে বলেছে এবং বলতে চাইছে 'তারা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়' ইত্যাদি অভিব্যাক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে। এর দৃশ্যমান আকৃতি দেবার জন্য তারা দেশের টাকা ব্যয় করে নকশা করেছে। এর ভাবগম্ভীর্যতা বৃদ্ধির জন্য রাত ১২:০১ মিনিটের অবতারনা, খালি পায়ে পুষ্পার্পন সহ হাজারো উপাসনাবোধ জাগ্রত করেছে। যে মানুষ জীবনে কোনদিন স্রষ্টাকে মনে করে মাটিতে মাথা লাগায় নি - সে ও ঘন্টার পর ঘন্টা ঐ বেদীতে খালি পায়ে একটু পুষ্প দেবে বলে সন্ধ্যা রাত হতে তাহাজ্জুতের সময় পয্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এই দেবতার এমন ভক্ত আজ অগনিত।

৩। মানব ইতিহাস বলে নূহ আঃ মরে যাবার পর ওনার ৫ জন শ্রেষ্ঠ অনুসারী, নেককার বান্দাহ - মানুষের জন্য আল্লাহ কিংবা স্রষ্টার উপাসনা করতে ইনস্পায়ারড করতো। আর ঐ পাঁচজন মরে গেলে - শয়তান শহরবাসীকে অনুপ্রানিত করে ওনাদের অবয়বকে বানিয়ে শহরের চৌরাস্তায় রাখতে - এ জন্য যে মানুষ জন ওনাদের দেখে - স্রষ্টার উপাসনা করতে অনুপ্রানিত হবে। কিন্তু কালের প্রবাহে সেই অবয়ব হতে মানুষ উপাসনা করার শক্তি চাইতে থাকে, অসুখ বিশুখ ও বিপদে আপদে সাহায্য চাইতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে সরাসরি উপাশনা করতে শুরু করে। একই কান্ড আমারা আমাদের চোখের সামনে দেখি আমাদের হিন্দুভাইয়েরা করছেন, আমাদের খৃষ্টানভাইরা করছেন। আজ আমরা বাংলাদেশে অনুরূপ ভাবে ত্যাগ স্বীকার করছি শহীদমিনারে খালি পায়ে পদধূলি দেবার জন্য, পুষ্প অর্পন করার জন্য। এখানে না গেলে রাজনৈতিক পদ পদবী যেমন পাওয়া যায় না, তেমনি সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বও হওয়া যায়না। মানুষ এখন ভাবতে পারছে - তার প্রগ্রেস ইত্যাদির জন্য মুজিবজিয়ার কবর ও ফোট্রেট এর পাশাপাশি এ সব বেদীমূলে যেতে হবে - নয়তো ভাগ্য ফিরবে না। সে সাথে তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করছে ঠিক যেমন কোরাইশরা বিশ্বাস করতো।

৪। আমরা এখন এই পূজ্যকে আন্তর্জাতিকীকরন করেছি। এখন টোকিও হতে নিউইয়র্ক পয্যন্ত এই বেদীমূল স্থাপিত হয়েছে। এর সাথে আমরা জড়িয়ে পড়ছি, পড়তে বাধ্য হচ্ছি। ইসলাম কে ভালবাসে এমন একটি সংগঠনের আহ্বানের কারনে আগামীকাল আমাকে অনুরূপ একটি আয়োজনে যেতে হবে, অনিচ্ছা স্বত্তেও। তার মানে এ শিরক ও এর আচার সর্বগ্রাসীর মত ছড়িয়ে পড়ছে - মুসলিম দেরকে আষ্ট্রেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে। আজকের জাতীয়তাবোধ নামক শিরকতুল্য বিষয়টি মানুষকে কুফুরীতে জড়িয়ে ফেলছে বা ফেলতে বাধ্য করছে।

আল্লাহ আমাদেরকে ঐ শক্তি ও প্রজ্ঞা ও বোঝার শক্তি দাও - যার বদৌলতে আমরা এ সকল ফেতনা হতে নিজেকে, নিজের পরিবারকে ও সমাজকে ও উম্মাহকে বাঁচাতে পারি কিংবা এ্যাটলিস্ট বাঁচাবার চেষ্টা করতে পারি।

বিষয়: বিবিধ

১২৪০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

305401
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:০৩
ব্যাসদেব লিখেছেন : এই ভাষা দিবসে এই দেশ কি আওয়ামী(উর্দূ) লীগ(ইংরেজী) ব্‌হাল রেখে বাংলা ভাষার পিন্ডি উদ্ধার করবে? শেখ মুজিব উর্দূ প্রেমিক ছিলেন। তাই তিনি গভীর ভালবাসায় এর কোন পরি্বর্তন করেন নাই। তার কন্যাওকি তাই? হায় রাম!!!!
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৫:৪৪
247179
সাদাচোখে লিখেছেন : হত্যা, গুম ও পুংগু করার জন্য গোপালী আছে - কিন্তু নামের শুদ্ধতা নিশ্চিত করার ঘিলু যে দিল্লীতে বিকিয়ে দেয়া হয়েছে - তো কি করে অমন রিফর্ম হবে?
ধন্যবাদ।
305406
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:৪৩
শেখের পোলা লিখেছেন : এ গুলো লোহায় লাগা জং এর মত৷ লোহা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা ছাড়বে না৷ এ থেকে বেরোতে না পারলে, জাতিকে বার করার চেষ্টা না করলে আমাদেরও জবাব দিতে হবে৷
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৫:৪৭
247180
সাদাচোখে লিখেছেন : নিশ্চয়ই জবাব দিতে হবে। ভাল উপমা দিলেন। এ জাতীয় জং একটা জাতিকে শেষ না করে ছাড়তেই পারে না। আপনি কি এ হাদীসটি শুনেছেন যেখানে আদম আঃ কে বলা হবে প্রতি ১০০০ এ ৯৯৯ জনকে দোযখে নিয়ে ফেলতে। এ জামানার বাংলাদেশী টাইপ মানুষ ছাড়া রহমানুর রাহীম অন্য কোন যুগে ৯৯৯ কে জাহান্নামে বলতেই পারেন না বলে আমার মনে হয় - কারন শিরক, কুফরী ও পাপ এ আমরা আকন্ঠ নিমজ্জিত। ধন্যবাদ।
305419
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৮:২৬

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7228

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : মানুষ শহীদ মিনারে কখনো পূজা করেনা, বরং ভাষার জন্য প্রান দান কারীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

তারপরও যখন বলছেন এটি পূজা, তো কি করার। এটা ঠিক শহীদ মিনার পূজা করে মানুষের বিপদ, আপদ, বালা, মসিবদ দুর না হলেও অনন্ত ভাষার প্রতি মানুষের মমত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। এটা হলপ করে বলা যায়। সে তুলনায়, আল্লাপূজা করা শতভাগ পন্ডশ্রম। আউটপুট শুন্য/জিরো।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:০০
247181
সাদাচোখে লিখেছেন : ১। দয়া করে আপনি পূজার ধরন সমূহ দেখুন এবং তার পারপাস দেখুন।

২। মানুষ কবে আবার তার প্রানের মালিকানা পেল যে - সে সেই প্রান দান করতে পারে?

৩। আপনি আপনার সম্পদ দান করলেন না - অথচ মানুষ আপনাকে দানশীল বলে বিনম্র শ্রদ্ধা কিংবা সন্মান করবে - এমন প্রত্যাশা বোকামী নয় কি? আর যদি করে তা কি আহম্মকি নয়? তা কি অন্ধ ভক্তি নয়? তা কি মিথ্যা ও জালিয়াতিকে ভক্তি করা নয়?

৪। না। স্ট্যাটিস্টিক্স বলছে বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন যে হারে বাংলিশ এ কথা বলা হয়, যে ভাবে ভাষাকে নাটক সিনেমা ও সাহিত্যে বিকৃত করা হয়, যে ভাবে বাংলাকে ইংলিশের পেছনে ঠেলে দিয়ে নতুন স্ট্যাটাস নির্নিত হয়, চাকুরি বাকুরি কিংবা রেল বাস ফুটপাত কিংবা রেস্টুরেন্ট এ দেওয়া হয় - ইতিহাসের কোন কালেই অমন টা আর দেখা যায় নি। প্রমান করে ভাষার প্রতি মানুষের মমত্ববোধ বৃদ্ধি পায়নি - বরং ভাষা নিয়ে প্রতারনার পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে।

৫। আল্লাহকে পূজা করা কতটা শান্তির, কতটা সুখের ও কতটা আরামদায়ক - তা বুঝার জন্য একজন পূজাকারীর অভিজ্ঞতা বেশী গ্রহনযোগ্য। ঠিক যেমন একজন গাঁজাখোর জানবে গাঁজায় টানা কততা স্বস্তির - তাই না। যে তার স্রষ্টাকে পূজা করলোনা - তার সার্টিফিকেট দান হয় ভুল হবে - নয়তো আহম্মকি হবে - যা আমজনতা গ্রহন করতে পারেনা। ধন্যবাদ।
305425
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ইস্তেহার অনুযায়ি যে শহিদ মিনার নির্মান এর কথা ছিল সেটা কখনই এই শহিদ মিনার নয়। এই শহিদ মিনার নির্মিত হয়েছিল আইয়ুব খানের সময়। আর তথাকথিত সেকুলার নির্মাতারা এর যে অবস্থা করেছেন শহিদ মিনারের অন্যতম উদ্যোক্তা আবুল মনসুর আহমদ একে বলেছেন এটা শহিদ মিনার নয় চাতাল হয়েছে!
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:০৫
247182
সাদাচোখে লিখেছেন : স্যেকুলার দৃষ্টিভংগীতে আবুল মনসুর আহমদ যথার্থই বলেছেন।

কিন্তু স্প্রীচুয়াল দৃষ্টিভংগীতে এই মিনার ও দিন কেন্দ্রিক টোটাল বিষয়টিকে দেখলে লিটারেলী এটিকে ভিন্ন ফরমের আর একটি মূর্তি বলেই সাব্যস্থ হয়। এর পূজা দেবার দিন, ক্ষন ও ধরন এবং তীর্থ যাত্রীদের কলেবর ও ভাবগাম্ভীর্য বাংলাদেশের যে কোন রিলিজিয়াস দিনকে হার মানায়, এর পেছনের রাষ্ট্রীয় ব্যায় এবং এর বিশ্ব বিস্তৃতি চিন্তা করলে একে বিংশ শতাব্দীর নবতম দেবতা ও পূজা যজ্ঞ বলা যায়।
ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File