২৮শে অক্টোবরের ভিডিও দৃশ্যসমূহ ও 'এ মূহুর্তের অনুভব'।
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:৪০:০১ রাত
১। আমার কখনো জামায়াত শিবিরের রাজনীতি করার সুযোগ হয়নি। সিদ্ধান্ত নেবার মত, বিচার বিশ্লেষন করার মত যৎসামান্য জ্ঞান হবার পর - বাংলাদেশের কোন দলের প্রতিই কোন দিন, কোন ধরনের মোহ সৃষ্টি হয়নি। মনে হয়নি নিজেকে স্কয়ারলী এই দল কিংবা ঐ দলের অনুসারী কিংবা সাপোর্টার। ব্যাক্তিগত আলাপচারিতায়, পারিবারিক পরিমন্ডলে, বন্ধুমহলে কিংবা অফিসে কলিগদের সাথে - আমার বক্তব্য হত 'পলিটিক্যাল ইস্যু' ভিত্তিক। যে কোন ইস্যুতে আমি বলতাম - হ্যা এটা বিএনপি কিংবা আওয়ামীলীগ কিংবা জামায়াত কিংবা জাতীয় পার্টি ভাল করেছে কিংবা বলেছে অথবা না এটা ভাল করেনি। আমার এই অবস্থানটি আমাকে মানুষিকভাবে এক ধরনের স্বাধীনতা দিয়েছে। মানুষ হিসাবে আমাকে পরাধীনতা তথা শেকলবাধাঁ এমন বোধ - অনুভব করতে হয়নি।
২। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর নিউজ বুলেটিন এ জামায়াত শিবির হত্যায় লগি বৈঠার ব্যবহার, লাশের হেলে দুলে পড়ে যাওয়া ও তার উপর বিশাল সব মোটা লাঠি দিয়ে নির্মম পিটুনী, দুর থেকে দৌড়ে গিয়ে সে লাশের উপর লম্পজম্প, সংবাদ সন্মেলনে আওয়ামী লিডারশীপের শরীর ও মুখের ভাষা - সব মিলিয়ে এক দুঃস্বপ্নের সৃষ্টি করেছিল। আমার মাথার ভিতর দপ দপ করে যেন বেতালে ঢোলের বাড়ি পড়তে থাকে, আমার ঘাড় ব্যাথ্যা করতে থাকে, আমার প্রচন্ড প্রচন্ড রাগ তৈরী হতে থাকে। যেন বা নাম না জানা ঐ সব মানুষ আমার অতি আপনজন, অতি কাছের হয়ে যায়। যেন বা চোখের সামনে দেখছি 'অসহায় এক ভাইকে, অসহায় এক মানুষকে - এক দল নেকড়ে কোন কারন ছাড়াই, কোন প্রয়োজন ছাড়াই - খাবলে খুবলে নিস্তেজ করে দিচ্ছে। প্রতিশোধ স্পৃহায় আমার হাত পা মুখ চোখ স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে অস্বাভাবিকত্বে পৌছে দেয়। আমি ঐ ভিডিও ক্লিপগুলো কোনভাবেই দেখা শুরু করলেও শেষ করে দেখতে পারি না। কেমন যেন এক অব্যক্ত কান্নায় কষ্ট পেতে থাকি। মানুষ হিসাবে নিজেকে বড় বেশী অপাংক্তেয়, অপ্রয়োজনীয়, মূল্যহীন মনে হয়।
৩। একটু আগে বিডিমনিটরে ঐ ঘটনার আর একটি ভিডিও দেখছিলাম। একটুক্ষনের মধ্যেই মাথার ভিতরে চিরচেনা সেই ধপধপ আওয়াজ, ঘাড়ের ব্যাথ্যা। যখন প্রায় অসহ্যবোধ করছিলাম - তখন বন্ধ করে ভাবছিলাম - কেন এর কোন বিহিত হল না। কেন এর কোন বিহিত হবে না। কেন এর বিচার এতটা দেরী করে করতে হবে। মনে এলো আসাদুজ্জামান নুরের মত মানুষ যদি তার উপর আক্রমনকারীদের - কোন বিচার বিবেচনা, স্বাক্ষ্য সাবুদ, কোর্ট কাচারী ছাড়াই - ধরে ধরে পরপারে পাঠাতে পারে - তখন জামায়াত শিবিরের মত একটি অর্গানাইজড ন্যায়ের পক্ষে থাকা শক্তি কেন নূন্যতমপক্ষে - মানুষরূপী ঐ খুনি গুলোর, তাদের আদেশ দাতার, এই ইভেন্ট এর পরিকল্পনাকারীদের ছবি সহ একটা ডাটা ব্যাংক জনমানুষের জন্য প্রস্তুত করে দিতে পারবে না?
৪। সাধারন মুসলিম ও মানুষ হিসাবে জামায়াত শিবিরের কাছে আবেদন করছি, দয়া করে আপনারা সামহাউ ঐ মানুষগুলোর ছবি, নাম পরিচয় সহ একটা প্রতিবেদন তৈরী করে জনমানুষের জন্য তা উন্মুক্ত করে দিন। আমরা দ্বিপায়ী ঐ সব পিচাশগুলোকে দেখি, তাদের পেছনের আদেশদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের চিনি - এতে করে আমাদের মানুষিক ও শারীরিক অস্থিরতাকে আমরা সংবরন করতে পারবো, আগামী দিনে বিচারের আশায় স্বস্তি বোধ করবো আর ইতোমধ্যে আল্লাহর কাছে তাদের যথাযথ বিচারের প্রার্থনা করতে পারবো এবং নির্যাতিত ভাইদের জন্য দোয়া করতে পারবো।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মূলতঃ আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ´ট´রীয় পরিবেশটাই কেমন যেন টাকা ও ক্যারিয়ার - কেন´দ´রিক একধরনের এডিকশানের মধ্য দিয়ে যাচ´ছে।
এর বাহিরে যে আর কিছু আছে - মানুষ যেন সামহাউ তা অস´বীকার করছে।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন