গনতন্ত্রের পোষ্টমর্টেমঃ ৩ - সংবাদ পাঠান্তে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ২৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:০৫:৫৮ রাত
সংবাদ পড়া ও দেখা - দুটো ই দিনকে দিন কষ্ট আর বেদনার বিষয় হয়ে উঠছিল। অনেক বার ই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম - সংবাদ পড়া ও দেখা ছেড়ে দেব। কিন্তু পারছিলাম না। সংবাদ ছাড়া মনে হয় বড় বেশী আত্মকেন্দ্রিক। বুঝিবা বড় বেশী সার্থপর।
গত বছর গুলোতে সংবাদ নামক জিনিসটা যেন - তার পাঠক ও দর্শক কে রীতিমত আক্রমন করতে শুরু করেছে। কখনো মনে হয় মানুষিকভাবে নির্যাতনের ভূমিকায় নেমেছে আবার কখনো মনে হয় কোন কারন ছাড়াই গালাগালি করছে।
স্বভাবতঃই অনাহুত এই সব আক্রমন, নির্যাতন ও গালাগালির কারনে আপনার হাত কিংবা পা নিয়ন্ত্রনহীন হয়, নিদেনপক্ষে মুখের শালীনতার ব্যাঘাত হয়। সম্ভবতঃ এই একই কারনে আমরা সংবাদে পড়ি অমুকে অমুক জায়গায় টিভি ভেংগে ফেলেছে কিংবা পেপার ছিড়ে ফেলেছে।
যাই হোক আজকে বাসায় ফিরে বিডি ম্যাগাজিনে চোখ বুলাতে গিয়ে নিচের ছবিটা আমার মাথায় অনুরূপ মারাত্মক রকমের আগুনের ছ্যাকা দিয়ে দিয়েছিল। ঠিক জানিনা কেন?
Click this link
হয়তো তার আগে গাজার নিউজ পড়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে ছিলাম। আর সংবাদটা পড়া মাত্রই কিবোর্ডে আমার ক্ষুদ্ধতা বিচ্ছুরিত হয়ে পড়ছিল অনেকটা এমন করে।
এই জাতীয় সংবাদ আমার মধ্যে প্রচন্ড কষ্ট ও রাগ এর কারন হয়। সরকারের মধ্যস্থিত জামায়াত বিদ্বেষী ও জাত ক্রিমিনাল টাইপের কিছু লোক পলিটিক্স এর দোহাই দিয়ে নিরাপরাধ এ সকল মানুষকে (মুসলিমকে) চোখের সামনে কোন কারন ছাড়াই দিনের পর দিন ম্যানিয়াকের মত টর্চার করছে, মেরে ফেলছে, পুংগু করছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিচারকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে, বিচারের নামে ফাঁসির রায় দিচ্ছে, আবার ক্ষেত্র বিশেষে ফাসিঁ দিচ্ছে, আবার ক্ষেত্র বিশেষে ফাঁসির রায় ঝুলিয়ে রেখে নেগোশিয়েশানের নামে দর কষাকষি করছে।
আর মুসলিমদের দূর্ভাগ্য এই যে - জামায়াত যেন বা কোরান ও হাদীসের ক্লিয়ার কাট আদেশ নয়, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল নয় (যেখানে পরিষ্কার আদেশ আছে ব্যাক্তির উপরে, রাষ্ট্রের নয় - অন্যায় কারীর বিরুদ্ধে কি করতে হবে, বেআইনীভাবে নিরীহ লোককে হত্যা করলে কিংবা এমন নির্যাতন করলে কি করতে হবে ইত্যাদি) - বরং 'হেকমাহ' এর নামে কোরআন ও হাদীসের অংশবিশেষ কে আকড়ে ধরে মূলতঃ নিচের বিষয়সমূহকে - মিটিং এর বেশীর ভাগ সময় জুড়ে প্রাধান্য দিয়ে পলিসি প্রনয়ন করছেঃ
১। এই সব খুন ও নির্যাতন জামায়াতকে বাংলাদেশের পলিটিক্যাল হিসাব নিকাশে কি রেজাল্ট দিচ্ছে, কি পরিমান সহানুভূতি বাড়ছে।
২। পলিটিক্যাল এ্যালায়েন্স কে কি ভাবে কাজে লাগানো উচিত কিংবা না উচিত এ বিষয় সমূহে।
৩। জনপ্রিয়তা - তথা আগামী ভোটে এর কি প্রভাব পড়বে।
৪। গণতন্ত্রের সন্মান ও মর্যাদায় এর প্রভাব - যে গণতন্ত্রের পক্ষে দেশের মানুষ - ঠিক যেমন ইয়াবায় দেশের ইয়াং জেনারেশান।
৫। আইনের শাসনের প্রতি অংগীকার (যেখানে সুখরন্জন বালী ইত্যাদি ঘটনা দিবালোকের মত পরিষ্কার - সেখানে কিভাবে কোরান ও হাদীস আমাকে বিচার ব্যবস্থার প্রতি অংগীকারাবদ্ধ বা আস্থাশীল থাকতে বলে - আল্লাহ ই জানেন)।
৬। হিউম্যান রাইটস - আপনি এ সংবাদেই দেখুন (লিটারেলী এ আহ্বান যেন কোরাইশদের লাত ও ওজ্জাকে ডাকার মত - যেখানে কোরাইশরা জানতো যে লাত ও ওজ্জা কিছু করতে পারে না আল্লাহ ই সব - এখানেও সমরূপে হিউম্যান রাইটস ওয়ালাদের ডাকা হয়েছে - যেখানে আমরা দেখছি গাজা, দেখছি সিরিয়া, দেখছি ড্রোন হামলা)
৭। বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রের চাওয়া পাওয়া ও প্রত্যাশা ইত্যাদি - (কিন্তু তারা নয় - যারা কর্মী, সমর্থক, মুসলমান কিংবা এই সব নির্যাতিত মানুষের বাবা মা কিংবা স্বজন)
৮। ব্যবসা বানিজ্য ইকোনমি ও মানুষের কষ্ট ইত্যাদি (যেখানে শয়তান ফোকাসড মানব সভ্যতাকে ডেসট্রয় করতে - সেখানে আপনি সাইডলাইনে থেকে কিভাবে তা রক্ষা করবেন।)
আর বাদ পড়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে বিচার বিবেচনায় না নেওয়া এ সব নিরাপরাধ মানুষ। যাদেরকে কুকুর বিড়াল আর শিয়ালের মত হাসিনা-শাহরিয়ার-বেনজির রা হত্যা করছে, পুংগু করছে, ফাসি দিচ্ছে এবং তাদের হাত পাকাচ্ছে, সাহস বাড়াচ্ছে - যাতে এর পরিমান ও পরিধি আরো বাড়াতে পারে।
সারা জীবন শুনেছিলাম ধর্ম শেখায় জালিম ও জুলুম এর বিরুদ্ধে ফাইট করতে। আর সংঘবদ্ধ শক্তি হল সেই ফাইটের ভিত্তি।
কয়েক প্যারাগ্রাপ লিখার পর ই বুঝলাম, বুঝতে শুরু করলাম - মুসলমানরা আসলেই বড় বেশী রকমের বন্দী - চিড়িয়াখানার বাঘ, সিংহ ইত্যাদি প্রাণীগুলোর চেয়ে ও বেশী রকমের বন্দী। কারন বাঘ সিংহরা শারীরিকভাবে বন্দী কিন্তু মানুষিকভাবে বন্দী নয়। তারা তাদের চরিত্রানুযায়ী কামড়ায়, চিৎকার করে ইত্যাদি।
কিন্তু আমরা মুসলিমরা আজ শারীরিকভাবে যেমন বন্দী, মানুষিকভাবে ও সমানভাবে বন্দী। আমরা এখন আর চাইলে ও আমাদের মন থেকে কথা বলতে পারিনা। চিন্তা করতে পারিনা। আমাদের ঈমান, আমাদের প্রভু, আমাদের নেতা, আমাদের বই - সব কিছুতেই বুঝিবা আমরা ভেজাল ডুকিয়ে বসে আছি। আমরা সত্য ও মিথ্যাকে এমন ভাবে মিশিয়েছি এখন সত্য ও মিথ্যাকে বিভাজন করতেও যেন অলসতা অনুভব করি।
এতে আজ বিক্ষুদ্ধ - এক পক্ষ ভেজাল মুক্ত করার সংগ্রামে ঝুঁকে পড়েছে এবং বাধ্য হয়ে অন্যপক্ষকে দোষারোপ করছে - সংগ্রামে না ঝুঁকার জন্য। অন্যদিকে যে পক্ষ সংগ্রামে ঝুঁকছে না - সে পক্ষ সংগ্রামীদের দোষারোপ করছে - সহ্য শক্তি হারাবার জন্য, নির্যাতন আরো না সইবার জন্য।
মধ্য থেকে আমরা যারা সিদ্ধান্ত নেবার পজিশানে নেই - অতি সাধারন আল্লাহর বান্দা - তারা যেন ধুমড়ে মুষড়ে চিপসে যাচ্ছি। অব্যক্ত গলায় বলতে বাধ্য হচ্ছি, 'ওহ আল্লাহ, দয়া করে আমাদের জন্য একজন লিডার দাও - এবং আমাদেরকে যথাযথ ফলোয়ার বানাও - যার রুজ্জু ধরে আমরা এমন অবিচার অত্যাচার এর গ্লানি হতে সাধারন মানুষকে মুক্ত করতে পারি'।
পরিশিষ্টঃ
ইদানিং আমার মনে হয় - জামায়াত লিডারশীপ বুঝিবা - কখনো মনেই করে না, বোঝার চেষ্টা করে না - পৃথিবী আসলেই পচে গেছে। এটা কোন রীতি নীতি সম্পন্ন বিশ্ব নয়। এটা লাস্ট অব দ্যা লাস্ট সময় - যা দিনকে দিন আরো খারাপ হবে - হতেই থাকবে।
আমার ইচ্ছা করে জামায়াত নেতৃত্বকে বলি, লম্বা সময়ের পরিকল্পনা ছেড়ে - স্বল্প সময়ের পরিকল্পনা নিন। জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মীর কথা ভুলে মুসলিম উম্মাহর জন্য পরিকল্পনা নিন। এবং তা কোরান হাদীস অনুসারে। সো দয়া করে কোরান হাদীস কে রিভিউ করুন আজকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৪৫ এর প্রেক্ষাপটে নয়।
একটি সংঘবদ্ধ শক্তি হিসাবে আপনাদের যথার্থ সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে - দজ্জাল, যায়োনিস্ট জিয়ুশ ও খৃষ্টান ইত্যাকার যাবতীয় সুন্দর সুন্দর কথা, তাদের পাওয়ার ও তাদের উপর ডিফেন্ডেন্সী ইত্যাদি ছেড়ে পুরোপুরি আল্লাহর বান্দা হবার সময় এসেছে। ন্যাশানাল বাউন্ডারীর বাহিরে বিশ্ব নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে।
আমাদের মৃত্যু সন্নিকটে এবং হামাস তা চোখের সামনে দেখছে। আমরা বাংলাদেশে বসে তা দেখছি না। সো আমরা লম্বা সময়ের পরিকল্পনা করি। অথচ চোখ বন্ধ করে কয়েক মিনিট ভাবলে - পরিষ্কার ইক্যুয়েশান সমূহ দেখা যায়।
আমি এক্সট্রিম কিছু করতে বলছি না - আমি সম্পলী জামায়াতকে বিশ্ব পরিস্থিতি বুঝে - কোরান হাদীসে এর আলোকে সমাধান খুজতে আহ্বান জানাচ্ছি - ট্যিপিক্যাল রাজনীতি করতে না করছি তথা আহ্বান জানাচ্ছি। এবং তাতে যদি পুরো জামায়াত মরে, পুরো জামায়াতের ইকোনমি জিরো হয়, জামায়াত যদি ফেরারি হয় তাও ভাল - কারন তা আল্লাহর হুকুম মত জামায়াত করলো, মুসলিম এর মত কাজ করলো এবং মুসলিমদের সন্মান রক্ষা করলো।
এ লিখাটি আমি কোন দল বা গোষ্ঠির পক্ষে বা বিপক্ষে - মিন করে লিখিনি - একজন মুসলিম হিসাবে নিজস্ব রিয়ালাইজেশান হতে একান্তই ব্যক্তিগত লিখা।
বিষয়: বিবিধ
১০৫৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বৈশ্বিক অবস্থার বিচারে মনে হয় সহসাই এ থেকে মুক্তি নাই মুসলিমদের; এখনতো আর দেশ কিছু না – প্রত্যেকটা মুসলিম দেশের কন্ট্রোল হয় কুফুফার-এ্যালাইয়ান্স এর হাতে নয়তো সাধারণ মুসলিমরা সেখানে থেকে ষ্ট্রাগল করে যাচ্ছে। কি হবে আল্লাহই জানেন!
আলহামদুলিল্লাহ্।
বুড়ামিয়া ভাইয়ের একটা লিখায় বিষয়টা চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে - বলতে পারেন সিস্টেমেটিক ধ্বংশযজ্ঞ চালানো হয়েছে মুসলিম বিলিফ সিস্টেম হতে শুরু করে শিক্ষা-দিক্ষা হয়ে পারিবারিক, আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের বিরুদ্ধে।
আধুনিক শিক্ষার নিরিখে আমাকে 'হতাশাবাদী' মনে হতে পারে - কিন্তু প্যারালাল বিশ্ব ব্যবস্থাপনার দিকে তাকালে মনে হয় না মুসলিমরা 'প্রমিজড লিডার' শীপ না আসা পয্যন্ত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
ধন্যবাদ।
May our creator allows us
to be a total submitter
to His divine orders. And
allows us to be
disassociated from those
worldly issues - that
deceive and transgress.
Regards
মন্তব্য করতে লগইন করুন