রামাদান আলোচনাঃ সূরা আল বাক্কারা ১৫২-১৫৭
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ০৮ জুলাই, ২০১৪, ১০:৫৫:৪৯ রাত
ব্লগার ভিশুর পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা 'রামাদান আলোচনা' চমৎকার একটি উদ্দ্যোগ। ঐ উদ্দ্যোগ ও আইডিয়া সংবলিত ব্লগে ব্লগারদের স্বতোস্ফুর্ত মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্যসমূহ প্রমান করে - মুসলিম হিসাবে আমাদের আত্মা মরে যায়নি, বরং তা যথাযথ যত্নের অভাবে কারো বা সুপ্ত, কারো বা ঘুমন্ত অবস্থায় বিরাজ করছে। কোন কোন ভাই/বোন যারা আল্লাহর দিদার প্রাপ্ত তাদের কথা আলাদা। আল্লাহ ওনাদের ঈমান ও আমল কে আরো শানিত করুন।
ব্যক্তিগতভাবে আমি কম বেশী অনুবাদ ও তাফসীর সহ কোরআন পড়ি ও শুনি। কখনো কখনো বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে অভিব্যাক্তি ও প্রকাশ করি। কিন্তু তা বড়ই ক্ষনজন্মা। উদ্ভুত জ্ঞানকে কিংবা আল্লাহর কথাকে ধারন করে এ্যাকশানে রূপান্তর করা হয়না। এ নিয়ে আলোচনাকালে অস্থস্তিবোধ যেমন করি, তেমনি অপরাধবোধেও ভুগি।
রামাদান আলোচনার অবকাশে অনেকটা লটারীর মত আমার 'নিক' এর বিপরীতে 'সূরা আল বাক্কারা' র ১৫২ - ১৫৭ নং আয়াত দেখে চমৎকৃত হই। স্বভাবতঃই আমরা স্যেকুলার ভূবনে লালিত পালিত ও বয়োঃপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই কোরআন ও হাদীস কে এক্সক্লুসিভলী আলেম ও ওলামাদের সম্পদ ও সম্পত্তি জ্ঞান করে বড় হয়েছি। আমরা ইসলাম নিয়ে ডিবেট করতে পারি, আলোচনা করতে পারি - কিন্তু তাই বলে কোরআন ও হাদীস!
যাইহোক, উদ্দ্যমী ব্লগার ভিশু ও ওনার লিখার মন্তব্যদাতাদের তোড় জোড় দেখে সাহসী হয়ে খোলা মন নিয়ে আয়াত কয়েকটি পড়লাম, লিখলাম এবং তারপর পুনঃ পুনঃ পড়লাম, শ্রেনীবদ্ধ করলাম। শানে নযূল দেখলাম, তাফসীর শুনলাম। বিভিন্ন অনুবাদকের অনুবাদ সমূহ পড়লাম। তারপর ভাবার চেষ্টা করলাম, আল্লাহ আসলে এই লাইন কয়টির মাধ্যমে আমাকে কি ম্যাসেজ দিচ্ছেন, কি বলতে চাইছেন। এ এক চমৎকার, মিষ্টি এক আবেশময় অনুভূতি। লিখে কিংবা বলে আমার মত মানুষ তা বোঝাতে পারবোনা।
একবার মনে হল, আমি বুঝিবা হালকা কোন তুলার মত ভেসে বেড়াচ্ছি উপত্যাকা ও প্রান্তর ছাড়িয়ে দুর বহুদুরে। আর বিশাল এক এ্যালবাম এর পৃষ্ঠা একটার পর একটা আমার দৃষ্টি সীমায় উল্টাচ্ছে। যাতে সব চলমান জীবন্ত ছবি যেন। অসংখ্য চুল,দাঁড়ি ও গোঁপে আবৃত্ত মানুষ দেখেছি, তাদের চোখ, মুখ ও শরীর হতে কি যে এক দীপ্তি বেরুচ্ছে, কখনো বড় বেশী কোমল মনে হয় তো পরমূহুর্তেই প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী, অকুতোভয়। প্রায় সবাইর মাথায় পাগড়ী, লম্বা লম্বা হাত পা, মেদ হীন একহারা শরীরে রক্তাভ আভায় আলোকিত এক একটা মুখ মন্ডল, প্রশান্তি, নির্ভাবনা, নিরহংকার।
আমাদের স্যেকুলার ধ্যান ধারনায় আর সব দুনিয়াবী (পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়) কাজের পর আমরা ইসলামকে (কোরান ও হাদীস) নিজেদের মধ্যে ধারন করার চেষ্টা করি। আবার ইসলাম প্রয়োগের সময় - পারিপাশ্বিকতাকে, প্রতিপক্ষের শৌর্য-বির্যকে বিবেচনায় নিয়ে ইসলাম প্রয়োগ করি কিংবা বলা ভাল ইসলামের নির্যাস প্রয়োগ করি। মনে ও বিবেকে যখন ঐ 'প্রয়োগ' কাঁটার মত বিঁধে তখন 'হেকমাহ' নামক অমূল্য এক 'ক্যামিকেল' প্রয়োগ করে আমাদের দূর্বল চিত্তকে সেই মনোঃকষ্ট হতে মুক্তি দেই। নিজের আমল নিয়ে গর্বিত হই।
অথচ অদ্ভুত ব্যাপার হল এই স্যেকুলার মনে যখন কোরানের উল্লেখিত আয়াতসমূহ পড়ি, তখন আমাদের কারো চেহারা ঐ এ্যালবামে দেখিনি, মনে হল দেখেছি বুঝিবা 'তালেবান' কিংবা 'আফগান যোদ্ধার' মুখ - যাদেরকে আমরা প্রতারনায় পরিপূর্ন পশ্চিমা মিডিয়ার বদৌলতে পৃথিবীর মোস্ট ব্যাকওয়ার্ড, মোস্ট আনসিভিলাইজড, ইনহিউম্যান কিছু একটা বানিয়ে পেলেছি। কোনদিন চেষ্টা করিনি ব্রিটিশরা, রাশিয়ানরা, আমেরিকান আর ন্যাটোর তথাকথিত 'লিবারেটর'রা তাদের ঐ ভূখন্ডটিকে কতবার দলিত মথিত করেছে, কত লক্ষ লক্ষ ভূখন্ডবাসীকে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষন, ইয়াতীম, বিধবা, গৃহহারা, সম্পদ হারা করেছে। কখনো খোঁজ নিয়ে দেখিনি আপাতঃ শক্তিসামর্থ্যহীন এই মানুষগুলো কিসের জোরে 'কখনোই সারেন্ডার এ্যাগ্রিমেন্ট এ সাইন না করে' বৃটিশদের পরাজিত করেছে, কিভাবে রাশিয়ানদের দেশ ছাড়া করেছে, কিভাবে আমেরিকা ও ন্যাটোর হৃদয় নিংড়ে রক্ত জরাচ্ছে, কিভাবে বুশ হয়ে বারাক ওবামার হাসি মিইয়ে দিয়ে - নিজেরা হাসছে এই পৃথিবীতে আর পৃথিবীর ওপারে। এই মুজাহিদীন রাই কিনা কোন রকমের লিখালিখি, অডিও ভিডিও, ট্রেনিং সেমিনার ছাড়া 'ইয়োভনী রিডলী'র মত সাংবাদিককে এমন এক মুসলিম উম্মাহর উদাহরন দেখিয়েছে - যাতে সে শুধু মুসলিম ধর্মই গ্রহন করেনি - রীতিমত ইসলামিক এ্যাক্টিভিস্ট তথা দায়ী হতে বাধ্য হয়েছে।
মনে হয় কোরানের আয়াত সমূহ ওরা সামহাউ অধুনা সৌদী ওলামায়ে কেরাম হতে শুরু করে মিশরের স্কলারদের ছাড়িয়ে বাংলাদেশের হুজুরদের পেছনে ফেলে - এগিয়েই শুধু নেয়নি - দিন দিন হয়তো পরিবর্তিত এ বিশ্বব্যবস্থায় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে, নক্ষত্র হয়ে জ্বলে উঠবে। মনে হয় ওরাই সেই দৃঢ়চেতা, অবিচল মানুষ, যারা আল্লাহর পরীক্ষার ধরন বুঝে এবং ফেইস করে, সাহায্য চায় কোরআনে দেখিয়ে দেওয়া পথে, দূর্ভাগ্যের মুখোমুখি হলে হাসিমুখে বলে 'আমরা তো আল্লাহর জন্যেই আর তার কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন' - স্বভাবতঃ আল্লাহ তাদের পুরুষ্কার দিচ্ছেন, দিবেন এবং তারাই অমরত্ব পাচ্ছে।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৩ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
আল্লাহ মুসলিমের ঈমানের শক্তি আরো বাড়িয়ে দিন এবং আরো বেশী আমল করার সুযোগ করে দিন - এটাই প্রার্থনা।
May Allah reward believing brothers and sisters and accept them as His servants/Abad and allow them Jannah.
Ramjanul Mubarak.
আল্লাহ আমাদের অন্তরকে এ্যানলাইটেন্ড করুন, যাতে আমরা সত্য ও মিথ্যার প্রভেদ করতে পারি এবং সত্যের পথে অবিচল থাকতে পারি।
কোরআনে কনটেম্প্লেট করার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহ আপনাকে উপযুক্ত জাজা প্রদান করুন।
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন