মৃত্যু ম্যানেজমেন্টঃ অনুশীলন - ১

লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:৪৭:১৪ রাত

বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী (তথাকথিত স্মার্ট সেকুলার) রা কেউ ই মৃত্যুকে অস্বীকার করেনা। কিন্তু বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী মানুষেরা মৃত্যুকে ম্যানেজ করছে ভিন্ন ভিন্নভাবে। আসুন দেখি কিভাবে তারা মৃত্যুকে ম্যানেজ করছে।

এবং সাধ্যমত চেষ্টা করি তাদের এ ম্যানেজমেন্ট মেকানিজম হতে আমরা নিজেরা আমাদের জন্য কোন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান করতে পারি কিনা।

অবিশ্বাসী সেক্যুলার তথাকথিত স্মার্ট মানুষেরা মৃত্যুকে যেভাবে ম্যানেজ করছেনঃ

১। কথা বার্তায়, আলাপ আলোচনায় শরীর কেমন যাচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা করেন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের বায়োডাটা সহ তাদের সাফল্য ও ব্যর্থতার গল্প শুনেন, কি খান এবং কি খান না, কখন খান আর কখন খান না - তা আশে পাশের মানুষকে মুখস্থ করান, সুপারমার্কেটের প্রতিটা খাবারের সুগার ও কোলেস্টরল লেভেল প্রায় মুখস্থ করেন এবং অপরকে করান।

২। দেশ বিদেশের ডাক্তার এর কাছে গিয়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

৩। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পয্যন্ত হাঁটছেন অথবা দৌড়াচ্ছেন, অথবা ব্যায়াম করছেন। ঐ নির্দিষ্ট সময়ে অফিস, বন্ধু বান্ধব, ব্যবসা, আত্মীয় স্বজন কিংবা খানাপিনা কোন কিছুই 'এক্সারসাইজ করছেন' কে এদিক ওদিক করাতে পারেনা।

৪। বড় ধরনের কোন অপারেশান কিংবা চিকিৎসা খরচ নিশ্চিত করতে 'স্বাস্থ্য বীমা' করছেন এবং নির্দিষ্ট সময়ান্তে এক কাড়ি টাকা বীমা কোম্পানীর হাতে তুলে দিচ্ছেন।

৫। মৃত্যুপরবর্তী সময়ে পুত্রকন্যার দুর্ভোগ লাঘবের জন্য জীবন বীমা করছেন।

৬। দেশভেদে স্মার্ট লোকেরা সতকার করার জন্য 'ফিউনারেল বীমা' করেন আবার কেউ কেউ নিজের শরীর দান করেন। আর যুক্তি প্রমান ছাড়াই বলতে থাকেন ১। আর দশজনের যা হবে হবে আরকি, শরীর মাটিতে মিশে গেলে আবার কিসের শাস্তি, ঐ সব মিথ, গল্প, পাবলিককে কন্ট্রোল করার জন্য ঐ সব, আসলে ওসব আফিম উন্নতি অগ্রগতির অন্তরায়।

অন্যদিকে বিশ্বাসী মধ্যযুগীয় মানুষেরা মৃত্যুকে যেভাবে ম্যানেজ করছেনঃ

১। কথা বার্তায়, আলাপ আলোচনায় কবর আযাব, আখেরাত, পুলসেরাত, বেহেস্ত দোযখ নিয়ে আলোচনা করেন। নবী রসুল, সাহাবাদের বায়োডাটা সহ তাদের সাফল্য ও ব্যর্থতার গল্প করেন, শুনেন ও ক্ষেত্রবিশেষে অনুকরন করার চেষ্টা করেন। হালাল ও হারাম মেনে অর্ধ পেট কিংবা পেটের এক তৃতীয়াংশ খান আর তৃপ্তি সহকারে আলহামদুলিল্লাহ বলেন। আর কোরান হাদীস ও অন্যান্য ফ্যাক্টস ফিগারের রেফারেন্স দিয়ে বলতে থাকেন, অন্যায় অত্যাচারের বিচার শাসক কিংবা বিচারক দিয়ে না হতে পারে স্রষ্টা নিশ্চিত করেই ছাড়ে, মরা জমি কিংবা গোলায় থাকা কোন একটা শস্য দানা কে যেমন জীবিত করেন স্রষ্টা আমাদেরকে ঐ ভাবে ই জীবিত করবেন, রাষ্ট্রপতি কিংবা সরকার অন্যের আত্মীয়ের খুনীকে ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু যে স্রষ্টা হত্যার শিকার ও হত্যাকারী কে সৃষ্টি করেছে - তার কাছে তো দুজন ই সমান - তাহলে বিচার না করে কিভাবে তিনি থাকবেন, আহ বিশ্বাস টা কি চমৎকার, কোন রকম খরচ ছাড়া ইনজেকশান ছাড়া - শান্তি ও স্বস্তি।

২। সময় সুযোগ মত দেশ বিদেশের আলেম ওলামার বক্তব্য শুনেন ও লিখা পড়েন এবং সাধ্যমত একটু আধটু আমল করার চেষ্টায় থাকেন।

৩। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন ও বছরে এক মাস রোজা রাখেন।

৪। বছরে একবার গরীব মিসকিন কে সঞ্চিত টাকার উপর মাত্র ২,৫% হিসাব করে জাকাত দেন আর এখানে ওখানে কেউ হাত পাতলে পকেট হতে কিছু একটা বের করে দেন।

৫। নামাজ শেষে হাত তুলে মিনিট খানেক সন্তান সন্ততির জন্য দোয়া করেন ও স্রষ্টার অনুগ্রহ ভিক্ষা করেন এবং সময় সুযোগ মত একটু আধটু গল্প করেন, হাসি ঠাট্টা করেন, করনীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেন ও নেন।

৬। আন্জুমানে মফিদুল ইসলাম কে সামর্থ্যানুযায়ী সমর্থন দিয়ে যান।

আমরা মোটামুটি মৃত্যু ম্যানেজমেন্ট করতে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের প্রয়াস ও কৌশল দেখলাম। এতে দেখা যায় দুটি গ্রুপের আলোচনা, আলোচনার ফোকাস, আলোচনার রেজাল্ট, সময়ানুবর্তিতা, অধ্যাবসায়/রেগুলারিটি র ধরন, সময়ের বিনিয়োগ পরিমান, অর্থ সম্পদের ব্যবহার ও ব্যয় এর পরিমান, অর্থ সম্পদ হস্তান্তরে সমাজের শ্রেনী বিবেচনা, কষ্ট স্বীকার করার ধরন, পরনির্ভরশীলতা ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পার্থক্য আছে।

আপনি প্রতিটি বিষয়ের বিপরীতে - আপনার বিবেচনা মত যেটি যৌক্তিক তাতে যুক্তি সংগত স্কোর দিন এবং রেজাল্ট দেখুন। এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নিন আপনি কিভাবে মৃত্যুকে ম্যানেজ করবেন।

আসুন একবিংশ শতাব্দীর এই দিনে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ঠকে যাওয়া মানুষের মত নয় - বরং নিজস্ব বিচার বিবেচনার ভিত্তিতে বিষয়াদিকে মূল্যায়ন করি ও সিদ্ধান্ত নিই।

বিষয়: বিবিধ

১২০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File