বাংলাদেশে নারীমুক্তি আন্দোলনঃ ডেনিস কেইস স্টাডির আলোকে সতর্কবার্তা
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ২০ মে, ২০১৩, ০৯:১৪:৪০ রাত
দেশের মধ্যে মিডিয়ায় আসা নারীদের কথাবার্তা, শব্দচয়ন, হুমকি ধামকি, আচার আচরন ও পোষাক - ইদানিং কালের উঠতি বয়সী মেয়েদের মধ্যে নারী স্বাধীনতা, নারী অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন রকম জটিলতা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কিংবা পাশ করা মেয়েদের মধ্যে যাদের ধর্ম, বর্ন, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জাতীয়তা বোধ সম্পর্কে ধারনা নেই কিংবা থাকলে ও সে জ্ঞান সীমিত কিংবা বিকৃত - তাদের মধ্যে এটা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে করে আজকের পরিবারসমূহে যেমন বিপর্যয় ঘটছে, তেমনই সমাজ, রাষ্ট্র ও নতুন সমস্যার সন্মুখীন হচ্ছে।
নারী নেতৃত্ব বিশেষ করে যারা নারী আন্দোলনকে, নারী মুক্তিকে, নারীর রাইটস কে সমুন্নত রাখতে চান, তাদের সচেতনতার জন্য, তাদের ভাবনার জন্য - ডেনমার্কে বসবাসরত ৭০ উর্দ্ধ এক একাডেমিশিয়ান এর বক্তব্যের কিছু অংশ, ওনার মতামত না নিয়েই নিজের মত করে শেয়ার করছি।
ভদ্রলোক কিছুদিন আগে 'সিমবিয়ন সায়েন্স পার্কে' অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে গ্রাফিক্স, ডাটা ও ছবির মধ্যমে উপস্থাপন করে শ্রোতা দর্শককে বলছিলেন, গত শতাব্ধির ৬০ ও ৭০ এর দশকে আমেরিকায় যখন নারী অধিকার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছিল এবং তার খবরা খবর ডেনমার্কের পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছিল - কোন এক অদ্ভুত কারনে ডেনিশ নারীরা সে আন্দোলনে এতটাই প্রভাবিত হয়ে উঠেছিল যে, লিটারেলী হঠাৎ করেই কনজারভেটিব ডেনিস সমাজের সবকিছুতে ডেনিস নারীরা সমানাধিকারের নামে পুরুষকে অনুকরন করতে শুরু করলো এবং বাচ্চা ছেলেদেরকে মায়েরা ধরে ধরে গৃহস্থালী কাজে উত্তোরত্তর বেশী বেশী জড়িয়ে ফেলে।
অল্প সময়েই মেয়েরা পুরুষদের মত হাটতে লাগলো, চুল ছাটতে লাগলো, জামাকাপড় পরতে লাগলো, সিগারেট, মদ ও নেশা করতে শুরু করলো, ঘরকন্নার কাজ ছেড়ে ঘরের বাহিরের কাজে বেশী মনোনিবেশ করলো, ঘরের কাজ ও শিশু দেখাশোনার ভার পুরুষের উপর চাপিয়ে দিতে লাগলো, এককথায় যা কিছু নারীকে সিমবলাইজ করে - তার সবই এড়িয়ে যেতে লাগলো এমনকি প্রসাধনী পর্য্যন্ত।
এককথায় ডেনিস নারী মাত্রই পুরুষের মত আচার আচরন করতে লাগলো এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্মক্ষেত্রে যেমন করে পুরুষ পুরুষের সাথে আচার আচরন করে, কথা বার্তা ও আড্ডা দেয় - অনুরূপ ভাবে নারীরাও তা করতে লাগলো, অনুরূপ বিষয়াদি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহ দেখাতে লাগলো। এবং ঘর কন্নায় মায়েরা ছেলেসন্তানদের বাচ্চাকাল হতে এতটাই ব্যবহার করতে লাগলো যে, পুরুষ রা ঘর কন্নার কাজে রপ্ত হতে থাকলো এবং তাতে করে পরবর্তীতে তাদের মধ্যে অনেক বেশী মেয়েলী আচরনের প্রভাব পড়তে লাগলো।
এক দশক যেতে না যেতেই দেখা গেল, নারী রা ডেনিশ পুরুষ দের মধ্যে কোন আকর্ষন খুজে পাচ্ছিল না, তাদের কাছে ডেনিশ পুরুষদেরকে মেয়েলী মেয়েলী মনে হতে লাগলো। আর পুরুষরাও মেয়েদের মধ্যে কোন আকর্ষন বোধ করছিল না, তাদেরকে আর দশটা পুরুষ বন্ধুর মত ই মনে হতে লাগলো।
এতে করে এর প্রভাব বিয়ের বাজারে পড়লো, চার্চে পড়লো, বিয়ের মত সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে পড়লো এবং রাষ্ট্রীয় ভাবে নতুন পরিবার সৃষ্টিতেও সন্কট দেখা গেল।
সে সাথে একজিস্টিং পরিবার গুলোতেও এর প্রভাব পড়লো। রোমান্টিক, উত্তেজক মুভি দেখে কিংবা দেখিয়ে ও বিবাহিত মেয়েরা একান্তে স্বামীকে পেতে চাইলে - না পারছিল স্বামীকে নিজের দিকে আকর্ষন করাতে, না পারছিল সিংহ রূপে স্বামীকে পেতে বরং অন্তঃজ্বালা অনুভব করতে শুরু করলো যে তার স্বামী লিটারেলী একটা মেষ শাবক কিংবা বুঝি খরগোশ হয়ে গেছে। অন্যদিকে স্বামীরা প্রায় পুরুষ রূপী বউকে আর দশটা ছেলে বন্ধুর মত দেখতে লাগলো এবং সমরূপ সমীহ ও বন্ধুত্বপূর্ন ব্যবহার করতে লাগলো। এবং সফট টিউনে মিন মিন করে গৃহস্থালী বিষয়ে কিংবা হালকা বিষয়ে কথা বলতে লাগলো। এতে পরিবারে পরিবারে ঐ সময়ে অবোধগম্য কারনে অশান্তির জন্ম হতে লাগলো - যার ব্যাখ্যা সমাজ চিন্তক, সমাজ কর্মী, মনো চিকিৎসক, সেক্স বিশেষজ্ঞ সহ কারো বোধগম্য হচ্ছিল না।
ফলাফল স্বরূপ ব্যাপক হারে পরিবারে ভাংগন বাড়লো। নতুন পরিবার সৃষ্টি রেডিক্যালী কমে গেল। ফলাফল স্বরূপ ড্রাস্টিক্যেলী জন্মহার কমে গেল। যা সরকারের মাথাব্যাথ্যার কারন যেমন হল - তেমনি সামাজিক অসংগতি বৃদ্ধি করলো। রাস্তায়, অফিস আদালতে, শপিং মলে ও পাবলিক পরিবহনে ডিভোর্সী মন মেজাজ খারাপ, বিরক্ত এমন চেহারার একা মহিলার সংখ্যা বাড়তেই থাকলো। অন্যদিকে রেস্টুরেন্ট, ড্রাগ ও নিষিদ্ধ পল্লীতে মন মেজাজ খারাপ, খিট খিটে মেজাজের পুরুষের সংখ্যাও বাড়তেই থাকলো।
অন্যদিকে কনজারভেটিব ডেনিস স্যোসাইটি - যারা শুধু নিজ রাজত্বকে জার্মান, সুইডেন, আইসল্যান্ড ইত্যাদি দেশের কাছে নিবেদন করে করে সংকুচিত হতে দেখেছে এবং সে কারনে ভিন্নদেশী মানুষজনকে ভীতি ও সন্দেহের চোখে দেখে আসছিলো এবং সে কারনে অভিবাসীদের জন্য একধরনের অলিখিত ড্রাকোনিয়ান বিধিবিধান বজায় রেখেছিল - তাতে ও প্রভাব পড়তে দেখলো।
কিভাবে?
ট্রেডিং নেশন হওয়াতে ডেনিশরা বিদেশ বিভূইয়ে তুলনামূলক বেশী ভ্রমন করতে বাধ্য। এতে করে দেখা গেলে ডেনিশ নারী পুরুষদের প্রতি ৩ জন ডিভোর্সী নারী পুরুষের মধ্যে ২ জনই কর্মোদ্যোসে বিদেশ সফরে গিয়ে ছেলেরা এশিয়ান ও দক্ষিন আমেরিকান নারীদের মধ্যে হাহাকার করা নারীত্বের আকর্ষন এতটাই সিরিয়াসলী অনুভব করতে লাগলো যে, তারা সেখানকার মেয়েদের বিয়ে করে সাথে নিয়ে ডেনমার্কে ফিরতে শুরু করে। অন্যদিকে মেয়েরা আফ্রিকান ছেলেদের পৌরষের আকর্ষনকে এড়াতে না পেরে তাদের বিয়ে করে সাথে নিয়ে ডেনমার্কে ফিরতে শুরু করে।
এর প্রভাব শিক্ষিত হোয়াইট কলার জব হোল্ডারদের মধ্যে বাড়ার পাশাপাশি কম শিক্ষিত ব্লুকলার জব হোল্ডারদের মধ্যে ও ছড়িয়ে পড়ে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। বিশেষ করে ব্লুকলার জব হোল্ডার রা যখন বাৎসরিক ছুটিভাতা বা 'ফেরী ফিংগি' হাতে পেয়ে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চায়না, তাইওয়ান, এমনকি ইন্ডিয়ায় অবকাশে যায় - তখন ঐ সব দেশের নারীদের নারীত্বের আকর্ষনের কাছে কুপোকাত হয়ে বিয়ে করে সাথে নিয়ে আসতে শুরু করে একইভাবে মোজাম্বিক, কেনিয়া, জ্যামাইকা, ঘানা, ক্যামেরুন এর ছেলেরা ও ডেনিশ মেয়েদের স্বামী হিসাবে ডেনমার্কে আসতে থাকে।
এ ট্রেন্ড লিটারেলী ডেনমার্কের ডেমোগ্রাফীতে বড়ধরনের ধাক্কা দেয়। অবশেষে রাসমুসেন সরকারের জাতীয়তাবাদী নারী নেত্রী পিয়ার প্রেশার ও বুদ্ধি পরামর্শে সরকার বিদেশী বিয়ে করে ডেনমার্কে আনার ক্ষেত্রে কঠিন কন্ডিশন সেট করে। সেই সাথে ডেনিশ নারীদের কে নারী সুলভ, মোহনীয় ইত্যাদি সব বিষয়ে উদ্ভুদ্ধ করার জন্য প্রকল্প হাতে নেয়। বড় চুল রাখাকে উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে এসব প্রজেক্ট এর মাধ্যমে, কমনীয়তার উপর প্রশিক্ষন দেয়া হয় ইত্যাদি। (অবশ্য চ্যলেন্জ করার হলে বছর খানেক আগে ইউরোপিয়ান আদালত স্ত্রী আনার ক্ষেত্রে - ডেনিশ সেই বিধি নিষেধকে বে আইনী ঘোষনা করে)।
যাই হোক আমার আলোচনার বিষয় আইন ও আদালত নয়। আমি বাংলাদেশের সত্যিকার নারী অধিকার নিয়ে যে সকল মহিয়সী কাজ করছেন - তাদের কে বলবো - ডেনিশ এই এক্সপেরিয়েন্সকে মাথায় রাখতে। যাতে করে তারা বাংলাদেশী মহিলাদের অধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে দেশের মহিলা ও পুরুষদের ক্ষতি না করেন, দেশ কিংবা সমাজকে আস্তাকুড় না বানিয়ে ফেলেন। ধন্যবাদ।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন