কে আমাদের শত্রু?

লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ১৩ মে, ২০১৩, ০৫:০৯:২০ সকাল

দেশের ৪-৫% মানুষ, সরকার ও বিরোধীদলের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে, শাসক শ্রেনীর বলয়ে দেশের প্রশাসন, বিজনেস ও মিডিয়ার লাইম লাইটে বিভিন্ন সাইজ ও কালার এ গত ১৫/২০ বছর ধরে জ্বলছেন। এরা একাধারে কখনো বিদেশী অনুঘটক ও চর, কখনো অকর্মন্য, অপদার্থ, দুর্বৃত্ত, ব্যক্তি পূজারী রাজনীতিবিদ এবং কখনো সামাজিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ববেশী নব্য এ্যারোস্ট্রোক্র্যাট।

গত বিশ বছর ধরে নব্য এই এ্যারোস্ট্রোক্র্যাটরা রাজনীতির নামে তথাকথিত গনতন্ত্র, প্রগতি ও আধুনিকতার নাম ভাংগিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে যাচ্ছেতাই করছেন, বলছেন ও প্রফাগেট করছেন এবং সম্পদের পাহাড় পর্বত গড়ছেন। তাদের এই কথা, কাজ ও আচরন এর রেজাল্ট হিসাবে সাধারন বাংলাদেশীরা শতধা ভাগে বিভক্ত হয়েছে, রক্তারক্তি করেছে, আইন আদালতে দৌড়িয়েছে, ব্যবসা বানিজ্য হারিয়েছে এবং দিন কে দিন দূর্বল হতে দূর্বলতর জাতি গোষ্ঠিতে পরিনত হয়েছে।

দুর্বৃত্ত এই শাসক শ্রেনী নিজেদের সম্পদের প্রাচুর্য বাড়াতে ও ক্ষমতার শৌর্য বীর্য বজায় রাখতে ইন্টারমিডিয়ারী একটা এজেন্ট শ্রেণী তৈরী করতে সচেষ্ট হয় এবং গত ১০ বছরে ফ্রান্সাইজি আকারে সরকারী চাকুরীজীবি হতে শুরু করে, পেশাজীবি হয়ে ব্যবসায়ী এবং তারপর আদালতপাড়া হয়ে পাড়ায়- মহল্লায় উঠতি বয়সী বখাটে মাস্তান আর শিল্প কারখানা ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে দূর্বৃত্তপনার এজেন্সীশিপ ছড়িয়ে দেয়। এই ইন্টারমিডিয়ারী এজেন্সীগুলো অর্থ ও প্রতিপত্তির জন্য প্রয়োজনানুযায়ী শত শত ফিল্ড স্টাফ যেমন নিয়োগ দিয়েছে, তেমনি প্রাইমারী লেভেল এর দূর্বৃত্তদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।

মাফিয়া রূপি এ শক্তির উত্তরোত্তর দূর্নীতি, নির্যাতন, নিষ্পেষন এর প্রতিকারে শতধা বিভক্ত জাতির বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সময় ক্ষোভে ফুসে উঠেছে, প্রতিবাদে লাঠি সোটা ও ঢিল দিয়ে বিদ্রোহ করেছে। বিভক্ত জাতি মূলতঃ তাদের বিভক্তির জন্য, গোষ্ঠি স্বার্থের জন্য, তাদের সীমিত অসংগঠিত শক্তির জন্য মাফিয়া রূপী এ দূর্বৃত্তের হাতে পরাভূত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে এবং নিষ্পেষিত হয়ে প্রান হারিয়েছে, পুংগ হয়ে ভিক্ষুকে পরিনত হয়েছে।

প্রতিটি বিদ্রোহের পরিনামে এ্যারোস্ট্রোক্রেট এই শ্রেনী শান্তি শৃংখলার কথা বলে, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের কথা বলে, রাজনীতির দোহাই দিয়ে উত্তোরত্তর নিবর্তনমূলক নতুন আইনের অবতারনা করেছে, নতুন ডিটারেন্স এর উদ্ভব করেছে, নতুন অস্ত্রের আমদানী করেছে, নতুন বক্তব্য বিবৃতির ফুলঝুরি ফুটিয়েছে এবং সে সাথে প্রকৃত দূর্বৃত্তের জন্য ক্ষমার নীতির প্রচলন করেছে।

আজ এতটা বছর পর মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, ফরহাদ মজহার এর মত কিছু মানুষের চেষ্টায় - বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাধারন মানুষ তাদের আবিষ্কার করছে রাজনৈতিক মাফিয়াদের করুনার পাত্র হিসাবে। তারা অনুভব করতে পারছে পলিটিক্যাল এই মাফিয়া তাদেরকে বিল্ডিং এর নিচে যেমন পিশে ফেলতে পারে, তেমনি অবলীলায় গুলি করে, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও মেরে ফেলতে পারে। তাদের কোন রাইট্‌স নাই। তাদের কথা বলার কোন জায়গা নাই। তারা কি শুনবে, কি দেখবে তাতেও কোন স্বাধীনতা নাই। তাদের কোন প্রতিনিধি নাই এবং তাদের জন্য ভাবার ও কেউ নাই।

বাংলাদেশী এই নিপীড়িত মানুষেরা বাংলাদেশের ভূখন্ডে থেকে ও যেন আজ নিজেদের আবিষ্কার করছে দক্ষিণ গোলার্ধের কোন কালো স্লেভ কিংবা ক্রীতদাশ শ্রেণীর মানুষ হিসাবে। দিন দিন তারা শেখ হাসিনা গং ও খালেদা জিয়া গং এন্ড তাদের এক্সটেনশান এজেন্ট শ্রেনীকে অপরিচিত কোন বিছিন্ন ভূখন্ডের সাদা চামড়ার চাবুক হাতের মানুষ বলে আইডেন্টিফাই করতে পারছে।

এতে করে শতধা বিভক্ত সাধারন মানুষ আজ ধীরে ধীরে এক কাতারে আসতে শুরু করেছে। বিশেষ করে সারাদেশ ব্যাপী গনহত্যা, সাভারের শ্রমিক হত্যা ও সর্বশেষ রাতের অন্ধকারে আলেম হত্যা সাধারন মানুষকে যেন বেত্রঘাত করে জাগিয়ে তুলছে। তারা হতবিহ্বল হয়ে দেখছে কিভাবে শাসকশ্রেনীর এজেন্ট গন মানুষকে রাস্তাঘাটে গুলি করে মারছে। কিভাবে গুলিবিদ্ধ মানুষ - জবাই করা গরুর ন্যায় দাপড়ায় এবং কিভাবে গল গল করে বুকের রক্ত ঝরায় এবং কিভাবে সে সময়গুলোতে পুলিশ নামক বেজন্মা বেনজিরীয় পিচাশ বাহিনী গজারী লাঠি দিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ পিটায়।

সাধারন মানুষ এখন খাবার টেবিলে খাবারের প্লেট দেখেনা - দেখে পুলিশ পিটাচ্ছে তার দেহকে, সাধারন মানুষ এখন ঘুমায় না - বন্ধ করা চোখে দিব্য দেখে পুলিশ তাকে গুলি করে মারছে।

এ মানুষগুলো তাদের ইনফ্লুয়েন্স ছড়াতে সত্য ও মিথ্যার ডামাঢোল বাজিয়ে, ন্যায় ও অন্যায়ের উপমা দিয়ে, ধাঁ ধাঁ ও গোঁজামিল সৃষ্টি করে দেশের আরো ১৫ - ২০ - ৩০ পারসেন্ট মানুষকে সাদা চামড়া রূপী এই শেতাংগদের দলে ভিড়িয়ে উত্তর মেরুবাসীতে পরিনত করেছেন। এ মানুষগুলো আজ যা না পাওয়ার - তা পাচ্ছে, যা না দেখার - তা দেখছে। ফলাফল হিসাবে তারা আরো পেতে চাইছে, আরো দেখতে চাইছে এবং সে জন্য সীমিত সম্পদ ও সীমিত সুযোগ সুবিধার দেশে তারা দূর্বলের উপর খড়গ হস্ত হয়ে - সেই না পাওয়া জিনিস হস্তগত করছে, এবং না দেখা জিনিস দেখে নিচ্ছে।

অন্যদিকে, দেশের খেটে খাওয়া, নিরহংকারী, সাধারন মানুষ আজ নিপীড়িত ও নির্যাতিত হয়ে দিশেহারা অবস্থায় পৌছেছে। তাদের অভাব, অভিযোগ, ভাবাবেগ ও চিন্তা - ক্ষমতার বলয় থাকা লোকদের, সমাজপতিদের, শাসক চক্রের এন্টেনায় কোন ভাবেই ধরাতে পারছেনা এবং সমাজপতিরা তা ধরতে ও চাইছেন না। তারা লিটারেলী ওদেরকে বাদ দিয়ে কিংবা মাইনাস করে রাজনীতি কপচাচ্ছেন, সমাজ তত্ত্ব দাঁড় করাচ্ছেন এবং ভবিষ্যত বিনির্মানের স্বপ্নে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

ফলাফল স্বরূপ, দেশের এই বিরাট জনগোষ্ঠি আজ নেতৃত্বহীন, লক্ষ্যহীন, হতাশ এক জনসমষ্টিতে পরিনত হয়ে লিটারেলী দক্ষিন মেরুতে গিয়ে অবস্থান করছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে দিন কে দিন সাধারন্যে ক্রুদ্ধতা বাড়ছে, পৈচাশিকতার সমাবেশ ঘটছে। আমরা তার নজির যেমন দেখি ফটিকছড়িতে তেমনি দেখি গুলি খাওয়া মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের শরীরে সাধারন পুলিশের লাঠিপেটায়।

সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠি যেমন এ ৬০ - ৭০ পারসেন্ট মানুষকে দেশ ধ্বংশের কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে গোল্লায় নিতে পারেন - তেমনি কোন দেশপ্রেমিক পলিটিশিয়ান চাইলে দেশকে আবর্জনামুক্ত ও করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে একজন পলিটিশিয়ান কিংবা টক শো হোস্ট কিংবা কলামিস্ট তার ভূমিকা ও লক্ষ্য ৫% শাসক চক্রের কাছে বন্ধক রেখে দেশের সর্বনাশের অনুঘটক হতে পারে। আবার চাইলে দেশের ৭০% সাধারন মানুষের হয়েও ভূমিকা রাখতে পারে।

বিষয়: রাজনীতি

১১৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File