উম্মাহ ভাবনা - প্রথম পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:৩৬:১১ রাত

ভূমিকা

মুসলিম খেলাফত এর শেষ সিম্বল 'অটোমান' সাম্রাজ্য ধ্বংশের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনার মাধ্যমে। আর ১৯২৩ সালের ২৪শে জুলাই মুসলিম খেলাফত এর কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে ব্রিটিশ (রূপান্তরিত ইউএস), ফ্রেঞ্চ ও রাশিয়ান ইভিল ট্রায়াংগেল মুসলিম শক্তি ও সামর্থ্য নিধন এর পাশাপাশি মুসলিম স্লেভারী নিশ্চিত করার কাজের শুভ সূচনা করেছিল। আজ প্রায় ১০০ বছর পর সচেতন প্রতিটি মুসলিম জানেন ও বুঝেন - আম-জনতার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে দূর্বলতম, ভংগুর, নির্বিচারে হত্যা করার মত জগন্য এক মানবগোষ্ঠি হল মুসলিম সম্প্রদায়, পৃথিবীর সবচেয়ে স্বস্তা দাসশ্রেনী মুসলিম, বড় পরিচ্ছন্নতা কর্মী, আয়া, বাবুর্চী, দর্জী, মূচী শ্রেনী আজ মুসলিম। স্বভাবতঃই পৃথিবীতে নিকৃষ্টতম ট্রিটমেন্ট যে মানব গোষ্ঠি পায় - তা হল 'মুসলিম' মানব গোষ্ঠি। তা সে মুসলিম এর গাত্র বর্ন সাদা, কালো, বাদামী কিংবা হলুদ যাই হোক না কেন, তার জ্ঞান বিজ্ঞান যে পর্যায়ের ই হোক না কেন, তার অর্থ সম্পদ যে স্তরের ই হোক না কেন।

আলহামদুলিল্লাহ, তারপর ও আমরা কৃতজ্ঞ

মিডিয়া, আলোচনার টেবিল ও লোকমুখে মুসলিমদের এ বিপর্যয়, তাদের উপর অবর্ননীয় অত্যাচার ও অবিচার (গাজা, বার্মা, গুয়ানতানামো, ড্রোন জাস্টিস ইত্যাদি) ইত্যাকার কথা জেনে ও বুঝেও মুসলিম মাত্রই পরিবর্তিত এ বিশ্ব পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা ও তার রাসুলের ভবিষ্যত বানীর সত্যতা দেখে স্রষ্টার সামনে আরো নতজানু হয়ে পড়েন। আরো বিনীত হন। কৃতজ্ঞচিত্তে আরো বেশী রুকু ও সেজদায় লুটিয়ে পড়েন। তারা অবাক বিস্ময়ে একে অপরের সাথে অনুরনন করেন - ১,৪০০ বছরেরও বেশী সময় আগে শিক্ষা দীক্ষায়, জ্ঞান বিজ্ঞানে পশ্চাৎপদ - লিটারেলী একটা বেদুইন সমাজে থেকে কিভাবে তাদের নেতা হজরত মোহাম্মদ সঃ এত যথার্থভাবে, এত ফ্যাক্টসচুয়ালী - আজকের এই ঘটনা প্রবাহের ভবিষ্যতবানী করেছিলেন, ঠিক আজকের সময়ের আর্থসামাজিক অবস্থার চিত্র চিত্রায়ন করেছেন, আজকের মুসলিমদের মানুষিক অবস্থা ও হাহাকার ও নির্যাতন ও নিপীড়নের এমন - গগন বিদারী আর্তনাদের রোল সৃষ্টির হুবহু বর্ননা দিলেন? তাই শেষজামানা নিয়ে ইসলামের আলোচনা যারা পড়েছেন, শুনেছেন কিংবা জানার চেষ্টা করেন, বোঝার চেষ্টা করেন - তারা আজকের মুসলমানদের অবস্থাকে যতটা সামন্জস্যপূর্ন ভাবে, যতটা ডিভাইন মেসেজ এর বাস্তবায়ন হিসাবে দেখেন - ইসলামের জ্ঞান না থাকা স্যেকুলার মানুষরা ততটাই এ বিষয়ের বিশ্লেষনে চোখে অন্ধকার দেখেন ও প্রেক্ষিতগুলোকে ততটাই অসামন্জস্যপূর্ন মনে করেন ও বিচার বিশ্লেষন করতে গিয়ে খেই হারান, হতাশ হন, রাগান্বিত হন এবং তুলনামূলক বেশী ভুল করেন।

গত সেঞ্চুরীতে মুসলিমরা কি করেছিল ও কি পেয়েছিল?

খেলাফত পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে মুসলিমরা যখন দেখলো একের পর এক ন্যাশন স্টেইট সৃষ্টির নামে তাদের অংগ-প্রত্যংগ ব্যবচ্ছেদ করা হচ্ছে, তাদেরকে মনঃস্তাত্বিতকভাবে বহুদা ভাগে ভাগ করা হচ্ছে, তাদের চলাচলের লিমিটেশান নিশ্চিত করার জন্য পাসপোর্ট ভিসার প্রচলন হচ্ছে, তাদের অর্থনীতি ও সমাজনীতিতে কাগজী মুদ্রা চাপিয়ে দিয়েছে, গোল্ড স্টান্ডার্ডের বিলোপ, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মত নজরদারী প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করেছে, ইউ এন সিকিউরিটি কাউন্সিলের নামে তাদের সিকিউরিটি ও ডিফেন্স ধারনা ধ্বংশ করে দিয়েছে, ক্যু ও কাউন্টার ক্যু এর মাধ্যমে সরকারের নিয়ন্ত্রন তাদের হাতে নিয়েছে, গণতন্ত্রের নামে সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও অলীক এক ক্ষমতায়নের সেন্স এ বুদ করে দিচ্ছে জনগোষ্ঠিকে, বিভিন্ন কর্পোরেশান এর নামে তাদের সম্পদ ও সম্পত্তি লুন্ঠন করে ঠুটো জগন্নাথে পরিনত করা হচ্ছে, বিভিন্ন কমিশন ও আইডিয়োলজীর নামে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংশ করা হচ্ছে, তাদের খনিজ ও ন্যাচারল সম্পদ কুক্ষিগত করা হচ্ছে, হিউম্যান রাইটস, চাইল্ড রাইটস, ওমেন রাইটস ইত্যাদি সব মুভমেন্ট এর আবরনে - পরিবার পরিজনকে বিভাজন ও বিভক্ত করে পতিতা বৃত্তি ও পর্নোগ্রাপীকে সমাজের অবিচ্ছিন্ন অংশে পরিনত করা হচ্ছে, তাদের নারীকে পন্য ও গার্মেন্টস এর নামে ক্রীতদাসীতে পরিনত করা হচ্ছে - তাদের কে দিনের পর দিন দাস হতে চুড়ান্ত দাসে তথা ট্রান্সবাউন্ডারী কর্পোরেট দাসে পরিনত করা হচ্ছে। তখন সৃষ্ট ঐ সব বিচ্ছিন্ন ভূখন্ড সমূহে মুসলিমরা বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হতে শুরু করলো। তারা পরিবর্তিত অবস্থার সাথে কখনো কম্প্রোমাইজ করে, তাদের মতবাদকে আপাতঃ গ্রহন করে চললো - আবার কখনো নন কম্প্রোমাইজিং স্ট্যান্ড নিয়ে নন পলিটিক্যাল সোশ্যাল অর্গানাইজেশান স্থাপন করলো এবং তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলো। কিন্তু এ সংগঠন সমূহ ভবিষ্যত ঝুঁকি বিবেচনায় ও গুরুত্বানুযায়ী স্বল্প সময় অতিবাহিত হতে না হতেই - ইসলামের শত্রু শক্তির কোপানলে পড়লো, বিভিন্নভাবে ক্ষতবিক্ষত হল, জেল জুলুম ও অত্যাচারের খড়গে নিপতিত হল। মুসলিম বিদ্বেষী এ শক্তি পর্দার অন্তরালে থেকে ও পর্দা সরিয়ে - মুসলিমদের সততা ও স্পষ্টবাদীতাকে পুঁজি করে একটি সংগঠন দিয়ে আর একটি সংগঠনকে দূর্বল করে আর তারপর এক শুভ সকালে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করে আসছিল। মূলতঃ মুসলিম রা দেখছিল একটি মুসলিম সংগঠন আর একটি মুসলিম সংগঠনকে ল্যাং মারছে এবং এক পর্যায়ে দুপক্ষের এক পক্ষ মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। এমন করে চলার পর ও কোন কোন সংগঠন নড়বড়ে হলেও টিকে থাকলো এবং ক্ষেত্র বিশেষে সাফল্যের ছিটে ফোটা গায়ে মাখলো।

২০০১ পরবর্তী বিশ্ব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়, বাধ্য হয়েই দজ্জাল রূপী এ হঠকারী শত্রুরা তাদের মুখোশ খুলে ফেলতে শুরু করল - বিশেষ করে যখন বুঝলো - মুসলিম রা মানুষিক, সামাজিক, সাংগঠনিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক ভাবে আজ পর্যদুস্থ। তাদের মধ্যে বিভাজন, কাউন্টার বিভাজন শেকড় গেড়ে অরিজিনালিটিকে হারিয়ে দিয়েছে - মরিচিকার ন্যায় কোন এক বুনো জংগলে। এই পর্যদুস্থ জনগোষ্ঠির কাছ হতে পূর্ন আনুগত্য নিশ্চিত কল্পে আজ তারা প্রকাশ্যে মুসলিম নিধন ও মুসলিম এ্যানস্লেইভমেন্টকে (বিভিন্ন চুক্তি ও প্রোটোকলের আওতায়) বাস্তবায়ন করে চলছে। আর তার ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে টিকে যাওয়া সাফল্য পাওয়া সংগঠন সমূহকে ধ্বংশ করতে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে - তাদের এক দল লোকাল এজেন্ট ও লোকাল এ্যাপারাটাসকে/সংগঠনকে। সাধারন মুসলিমদের এক বিরাট অংশ আজ অভিবাবকহীন, হতাশ, দিক নির্দেশনা হীন অথর্ব পাথরের ন্যায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় পদার্থ সম। তারা না পারছে এর কারন বুঝতে, না পারছে তাদের করনীয় ঠিক করতে।



বিশ্বময় আজকের মুসলিমরা কি করছে?


একটিভ ও সচেতন মুসলিম জনগোষ্ঠির মধ্যে বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন ভাবে মুসলিমদের এই বিপর্যয়ের কারনসমূহ নির্নয়ে কনটিনিউ আলোচনা হচ্ছে, বিতর্ক হচ্ছে এবং সমন্বিত লিস্ট হচ্ছে এবং তা মুমীন মুসলিম দের বিচার বিবেচনা বোধের জন্য ছড়িয়ে যাচ্ছে। একই সাথে কারা, কিভাবে এর জন্য দায়ী তা নির্নয় করার ক্ষেত্রেও অনুরূপ আলোচনা হচ্ছে, বিতর্ক হচ্ছে এবং সমন্বিত লিস্ট হচ্ছে এবং তা মুমীন মুসলিম দের বিচার বিবেচনা ও বোধের নিমিত্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এর পাশাপাশি সচেতন মুমিন ও মুসলিম রা কনটিনিউ কাজ করছেন, পড়া লিখা করছেন, নতুন চিন্তাধারা যোগ করছেন, নতুন সংগঠন এর জন্ম দিচ্ছেন এবং অতিরিক্ত সময় ও সামর্থ্য ব্যয় করছেন - এটা জানার বোঝার ও বোঝাবার জন্য যে - সদা পরিবর্তনীয় এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে আমাদের আর কি করনীয় আছে এবং কি করতে হবে। একের পর এক নতুন বিষয়াদি নির্নয় করা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে - দাওয়াতের নামে, একাডেমিক পেপার এর নামে।

শুধু যা নিয়ে কোন আলোচনা নেই, বিতর্ক নেই তা হল - মুসলিম মাত্রই আজ কতটা বিপর্যস্ত, কতবেশী অকারনে শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত ও কতটা শৃংখলিত - তা সে চীনের মুসলিম হোক কিংবা বার্মার হোক কিংবা আফগানিস্থান, ইরাক, সিরিয়া কিংবা লিবিয়ার হোক। অর্থাৎ যা নেই - তা হল মুসলিমদের এই বিপর্যয়ের লেভেল অব কোয়ানটিটি ও কোয়ালিটিটিভ কমপ্লাসিটিস্‌।

বিষয়: বিবিধ

১০১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File