ভিশণ--টুয়েন্টি ওয়ান এবং ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিনত হবে,,,,,,,তার পর! তার পর পঞ্চাশ টাকা অথবা পয়ত্রিশ টাকা কেজি মূল্যের চাউলে রান্না এক প্লেট ভাতের কাছে, ক্ষুধার কাছেই হেরে গেল আমাদের সমস্ত লজ্জা………
লিখেছেন লিখেছেন শারদ শিশির ০৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৩৬:১৯ সকাল
সন্ধ্যার আকাশে অন্ধকার আজ একটু আগেই নেমেছিল।আমি আমার শহরের একটি এলাকায় গিয়েছিলাম।এলাকাটি অভিজাতদের আবাসিক এলাকা।অভিজাত আবাসিকের পেঁছনেই গড়ে উঠেছে শ্রমিক শ্রেণিদের জণ্য স্বল্প মূল্যের আর এক আবাসিক এলাকা।এই এলাকার এক ভাড়ার ঘরে থাকে আমার এক আত্মীয়।তাদের বাড়িতে আমার যাওয়া পড়ে মাসে দুইদিন।আমার কিছু কাপড় আমি দিয়ে আসি মাসের শুরুতে।এবং মাসের মাঝা মাঝি সময় কাপড়গুলো নিয়ে আসি এবং আরও কিছু কাপড় দিয়ে আসি পরিস্কার করতে।আমি আজও গিয়েছিলাম।সন্ধার আকাশে কিছুটা মেঘ জমেছে।আলো আধারিতে আনমনা হাটছি গলির ভিতর দিয়ে।হাতে আমার ময়লা কাপড়ের ব্যাগ।আমার চোখ ছিল আকাশের দিকে,মেঘের আনাগোনা দেখতে তাই খেয়াল করতে পারিনি যে আমি কিংবা আমার পা ঠিক কতটা অপরাধ করে ফেলেছে মুহূর্তের জণ্য আমার আজন্ম উদাসীনতার কারণে।পায়ে যেন কিছু একটার বাধা পেলাম।থমকে দাঁড়ালাম।ওরে মা ! এই আর্তচিৎকারে সন্ধ্যার আকাশ নয়, আমার মনের আকাশই ভেঙ্গে পড়ল আমার বুকের পাঁজড়ের উপর।নিচে তাকিয়ে দেখি একটা মানুষ এর শরীর আমি পাড়িয়ে ধরেছি।আমার পা টা পড়েছে ঠিক তার বুকের কাছে দলা বেধে গুজে থাকা হাত দুইটার উপর।ছেঁড়া নেকড়া যেমন অনাদরে পড়ে থাকে মাটির উপর ঠিক তেমন করেই দলা হয়ে পড়ে আছে আনুমানিক ৩৫-৩৮ বছরের একটি লোক।আমি তাকে ধরে বসাতে চেষ্টা করলাম।কিন্তু সে যেন জলের অভাবে শুকিয়ে লতিয়ে পড়া লতানো বৃক্ষের মত লতিয়ে পড়ছে।আমি আমার আত্মীয়ের বাচ্চার নাম ধরে ডাকলাম।ও বের হল ওর মাকে নিয়ে।ওর মা বলল আপনার জামাইকে ডেকে আনছি দাঁড়ান।আমার ঐ আত্মীয় সরে গেল কারণ লোকটার পরনের লুঙ্গিখানা এতটাই ছেঁড়া ছিল যে তার লজ্জাঙ্গ সব দেখা যাচ্ছিল।আমি আর আমার ঐ জামাই আত্মীয় তাকে ধরে নিয়ে রাস্তা হতে আমার আত্মীয়ের ঘরের বারান্দায় নিয়ে বসালাম।মাথা মুখে জলের ছিটা দিলাম তেল দিলাম।সে নীরব তবু।শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে আমাদের দুইজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে।আমার আত্মীয় মেয়েটিকিছু না জেনেই লোকটির জণ্য এক প্লেট ভাত আর তরকারী নিয়ে এল সাথে এক গ্লাস জল।আমি আমার ব্যাগ খুলে আন্দাজে একটা গেঞ্জি টেনে বের করে তার লজ্জাস্থান ঢেকে দিলাম।লোকটি মুহূর্তের ভিতর ভাতের প্লেট খালি করে ফেলল।তাকে আরও কিছু ভাত আর তরকারী দেওয়া হল।সে গুলোও গো গ্রাসে সে খেয়ে নিল।সে এমন ভাবে খাচ্ছিল যে নড়া চড়ার কারণে তার লজ্জাস্থান হতে বারবার আমার রাখা গেঞ্জি সরে যাচ্ছিল অথচ সেদিকে তার একদমই খেয়াল ছিলনা।এর পর তার সামনে রাখা এক গ্লাস আর জগের পানির পুরোটাই সে খেয়ে নিল।এর ভিতর আমার আত্মীয় তার একটি লুঙ্গি এনে তাকে দিতেই লোকটি বারান্দা হতে টলটে টলটে গলির দিকে ফিরতে লাগল।আমি আর আমার আত্মীয়টি পিছনে পিছনে গেলাম।দেখি সে কি যেন খুঁজছে।জানতে চাইলাম কি খোঁজো ভাই।তার উত্তর আমার কোঁদাল।(মাটি কাটার অস্ত্র) আমি গলির যেখানে সে পড়েছিল সেখান থেকেই তার কোঁদাল আর মাটি টানা বাঁশের ঝুড়ি খুঁজে আনলাম।তাকে ঐ খানেই বসিয়ে জানতে চাইলাম ভাই তোমার এ অবস্থা কেন? কোথায় তোমার বাড়ি।লোকটি জানালো তার বাড়ি সাতক্ষীরা ।তারা বেশ কয়েক জনের একটি দল এই শহরে এসেছিল নিচু জমি ভরাটের জণ্য মাটি কাটা শ্রমিক হয়ে।দুই দিন মাটি কাটার পর বৃষ্টি হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে তাই কন্ডাকটার তাদের কাউকেই ঐ দুই দিনের পয়সা দেয়নি।বলেছে পনের দিনের চুক্তি তাই পনের দিন কাটা শেষ হলেই একত্রে তাদের বেতন দেওয়া হবে।তার দলের সবাই কোঁদাল বিক্রি করে সেই টাকায় দেশে ফিরে গেছে।কিন্তু সে তার কোঁদাল বিক্রি করেনি।কারণ এই কোঁদাল বিক্রি করলে সে আর নতুন কোঁদাল কিনতেও পারবেনা এবং মাটিও কাটতে পারবেনা।তাই সে ফিরে না গিয়ে কাজের আশায় আজ চারদিন এই শহরের গলিতে গলিতে ঘুরছে।আমি জানতে চাইলাম কাজ পাচ্ছনা আর তোমার কাছে ফেরার মত পয়সাও নেই খাবার খাওয়ার পয়সাও নেই তবে তুমি মানুষের দরজায় গিয়ে দিনে অনন্ত একবার ভাত চেয়ে খেতে পারতে! এমন কি সাতক্ষীরা যাবার মত সামান্য ২০০ টাকা এটা তুমি ভিক্ষা করতেও পারতে।সে বলল আমি লজ্জায় কারো কাছে ভিক্ষা চাইনি আর খেতেও চাইনি কারণ আমার পরিবার আর দুইডা ছাওয়াল মাইয়া তো বাড়িতে এত দিনে না খেয়ে বা ধার দেনা করেই খাচ্ছে।আমি আর কিছু বললামনা।মনে মনে ভাবলাম ভাইরে তুই লজ্জায় তোর বড়ি ফেরার সামান্য দেড়শ হতে দুইশ টাকা জোগাড় করতে মানুষের কাছে হাত পেতে মুখ খুলে ভিক্ষা চাসনি আর আমরা প্রতি নিয়ত আমাদের লজ্জা গুলোকে মানবতা গুলোকে নিলাম করছি।ভিক্ষা দিচ্ছি আমাদের ভিতরকার আমাত্ব গুলোকে।আমি আমার আত্মীয় এর হাতে দুইশ টাকা দিয়ে বললাম আমার ব্যাগ হতে উনারে দুইটা গেঞ্জি আর তোর একটা পুরনো লুঙ্গি দিয়ে আর ঐ দুইশ টাকা দিয়ে উনারে কাল যে করে হোক সাতক্ষীরার গাড়িতে তুলে দিস।আর আজ রাতে উনারে তোর ঘরের বারান্দায় শুইতে দিস।এর ভিতর এক এ্যাডভোকেট ভদ্রলোক লোকটার হাতে একশ টাকাও দিয়েছে।কারণ ঐ স্থানে তখন বেশ লোক জড়ো হয়ে গেছিল। আমার আত্মীয় জানাল কাল ও তো হরতাল তাই পাঠাব কি করে।তার চেয়ে এই দুই দিন আমার বাড়ি থাকুক আর সুস্থ হোক তারপর পশুদিন সকালে গাড়িতে তুলে দিবানি।আমার আত্মীয়ের ৬ বছরের বাচ্চা মেয়েটি কখন যেন আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।আমাকে কইলো নানু আমাকে পাঁচ টাকা দেন। তার পিতা তাকে ধমক দিল চুপ অসভ্য মেয়ে! তোর নানুর কাছে আর টাকা নাই।৬ বছরের মায়শা চোখ ডলতে ডলতে/কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যাচ্ছিল। আমার পকেটে থাকা বারো টাকার দশ টাকা তার হাতে দিয়ে কান্দিস না বলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে আমি আমার পনের দিন আগের দেওয়া পরিস্কার কাপড়গুলো না নিয়েই বাড়ির পথে পা বাড়ালাম।পকেটে আমার কড়কড়ে দুই টাকার নোট। জামাই পিছু ডাকছে –
‘ দাঁড়ান আপনার ভাগনীর কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকা এনে দিচ্ছি ওটা নিয়ে যান রিক্সা ভাড়া না হলে যাবেন কি করে,আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বোধ হয় ঝড় বর্ষা হবে’ ।
আমি মনে মনে ভাবলাম - তাদের বেঁচে থাকার যুদ্ধে এই পঞ্চাশ টাকার বড্ড বেশি প্রয়োজণ হবে কাল সকালের বাজার করতে।আমি জানালাম ভাড়ার টাকা আছে।তুই কাল আমার বাসায় গিয়ে দুইশ নিয়ে আসিস।হরতাল যাচ্ছে।গাড়ীতো তোর চলবেনা।খাবি কি কাল পশু? আমি পা বাড়ালাম সন্ধ্যাকে ভারি করে নেমে আসা রাতের পথে।অন্য সময় হলে আসার পথে চোখে পড়া রঙ্গিন শহরের রঙ্গিন বাতি গুলো,সন্ধ্যার মায়াবী বহমান উতালা বাতাস,মাথার উপরের আকাশ আমাকে আমন্ত্রন জানাতো কোন নাটকের পটভূমি ভাবাতে।কিন্তু আজ আমাকে কিছুই টানলোনা। আমার মাথায় আজ একটা সহজ হিসেবের জটিল অংক-
“ ভিশণ--টুয়েন্টি ওয়ান এবং ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিনত হবে,,,,,,,তার পর! তার পর পঞ্চাশ টাকা অথবা পয়ত্রিশ টাকা কেজি মূল্যের চাউলে রান্না এক প্লেট ভাতের কাছে, ক্ষুধার কাছেই হেরে গেল আমাদের লজ্জাঙ্গের সমস্ত লজ্জা ” ।
আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম! আমরা কি দৈনিক এক কেজি চাউলের পয়সা জোগাড়ের মত শক্তিও অর্জণ করার ক্ষমতা অর্জণ করতে পারলামনা এই ৪২ বছরে! ভিশণ-টুয়েন্টি ওয়ান আর কত দূর!!!! ২০৫০ সাল ঠিক আর কত কোটি আলোক বর্ষ দূরে আমাদের থেকে!!!!
পথের দূরত্ব অর্ধেকেই আকাশ গর্জিয়ে শহর কাঁপিয়ে ঝড়ো হাওয়া আর শীলা বৃষ্টি শুরু হল।আমি হেলে দুলে হাঁটছি।নো টেনশাণ।ঘড়ি চশমা কিংবা সেল ফোন টাকা কিছুই আমার কাছে নাই। তাই ভিজে নষ্ট হওয়ারও কোন ভয় বা সম্ভবনা একদমই নেই।
কন্টাক নার্ভ নষ্ট হয়ে আমার ভালই হয়েছে আজ।ঘড়ি চশমা চোখের সামনে আজ বের হওয়ার টাইমে পড়ে নাই তাই ঘড়ি পরিনি।ঘড়ি চশমা থাকে কম্পিউটার টেবিলে।সেল ফোনও থাকে ঐ একই জায়গা ।আমি আজ বিকেলে একখান পুরনো লেখা কপি পেষ্ট কইরা ব্লগটাকে ডাস্টবিন বানিয়ে রেখেই ঘুমিয়ে পড়ার অভিনয় করতে ছিলাম অনতি দুরে পাতানো খাটে শুয়ে শুয়ে।খাট হতে নেমে কাপড় চেজ্ঞ করেই বের হয়ে গেছিলাম ময়লা কাপড়ে ভরা ব্যাগ নিয়ে ।তাই সেলফোন ঘড়ি চশমা সবই আজ রেস্টে ছিল।অবশ্য এরা প্রায়ই তিনজন মিলে ঘরে থাকে আমাকে ছাড়াই।কারণ আমার তিন সেকেন্ড হতে তিনদিন পর্যন্ত ভুলে যাওয়ার অসুখ আছে।
তবে ফোনটার আজ দরকার ছিল , ভিষণ-21 এর ফটো তুলে আনার জণ্য।যদিও ঐ আলো অন্ধকারে ফটো হতোনা সম্ভাবত ।কারণ আমার একটা কমদামী নকিয়া -৫২৩৩ মডেল এর ফোন।যার ক্যামেরায় ফ্লাস লাইট নাই।
ভিজে চুপসে ঘরে ফিরলাম।কাপড় বদলাতেই ফোন কথা কইয়া উঠল ‘নেভার সে ইউ আর হ্যাপি হোয়েন ইউ আর স্যাড, নেভার সে ইউ আর ফাইন হোয়েন ইউ আর নট ওকে, নেভার সে ইঊ আর আ্যালোন হোয়েন আই আ্যাম স্টিল এলাইভ………… পরিচিত তিন জনের কন্ঠ একত্রে।অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে-
/আমি ইদানিং যে ছাই ভষ্ম দিয়ে ব্লগের পাতা নষ্ট করছি তা আমার সাথে একদম মানায় না ।কি সব লিখছ আমি ইদানিং !!! /
কি করে বুঝাই তাদের যে আজ আর আমি লিখতে পারিনা! লিখিনা!
যা পোষ্ট দেই তার অধিকাংশই পুরনো লেখা।
তবে মাঝে মধ্যে লিখতে বাধ্য হই বিবেকের তাড়নায়।এই যেমন আজ লিখতে হল।কারণ ভিষণ-21 আর ২০৫০ লালের মধ্য আয়ের বাংলাদেশের স্বপ্ন আমায় আজ রাতের খাবার খাইতে দেয়নি।পুরনো পা-রুটির টুকরো জল দিয়ে গিলে তারপর আমাকে ওষুধ গিলতে হয়েছে।
( আজ ০১-০৪-২০১৩।
বোধ হয় আজ আর এই পোষ্ট দিতে পারবো না।কারণ ঝড় বৃষ্টি আর মেঘলা আকাশের কারণে আজ বোধ হয় ইন্টার নেটের নাট বল্টুতে ঝং ধরেছে।এখন রাত ১১ টা ২৫ মিনিট আর আমি নেটে কানেক্ট হতে ট্রাই করে যাচ্ছি ঘরে ফিরে সেই রাত নয়টা হতেই)
---------------------------------------------ডন্ট কপিপেষ্ট।স্বত্ত্ব সংরক্ষিত
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৬২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন