মৌন এবং বিশাল এক হাতি - ৩
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ১১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:২৫:২৭ রাত
এ দাঁতগুলোকে আমরা শত্র“দের হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করি। তখন এগুলি আমাদের কাছে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগে। আবার প্রয়োজনে মাটি খুঁড়ে পানি খোঁজার জন্যও আমরা এগুলি ব্যবহার করি। এভাবে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় আমাদের দাঁত পড়ে যায়। এ কারণে সর্ব শক্তিমান আল্লাহ আমাদেরকে বিশেষ একটা ক্ষমতা দিয়েছেন। আর তা হলো, আমাদের পুরানো দাঁত পড়ে যাবার আগেই তার পেছনে একটা নতুন দাঁত গজায়। কারণ আল্লাহ আমাদেরকে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। তাই একটা দাঁত পড়ে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে সেখানে নতুন গজানো দাঁতটি দ্রুত বড় হয়ে আমাদের কাজকে সহজ করে দেয়।
এক মুহুর্ত চিন্তা করেই মৌন বলল, তোমার নিশ্চয়ই খুব ক্ষুধা পেয়েছে। তোমার পেটটা কেমন খালি দেখাচ্ছে।
মা হাতি মৌনর কথা শুনে হেসে ফেলল। বলল, এই তো তোমার সাথে কথা শেষ হলেই আবার গিয়ে খেতে শুরু করব।
আচ্ছা, তুমি অন্য হাতিদের সাথে কথা বলো কীভাবে?
বোকা মেয়ে! তুমি কী মনে করেছ যে, তোমরা মানুষরাই শুধু কথা বলতে পারো? শোনো, আমরাও নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারি। আমরা একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগের জন্য এক ধরণের শব্দ তৈরি করি। আমরা ২.৫ মাইল (৪ কিমি) দূরের হাতির সঙ্গে পর্যন্ত কথা বলতে পারি।
কী বলছ তুমি? মৌনর কাছে বিরাট বড় এক বিষ্ময় মনে হ্েচ্ছ। এটা কীভাবে সম্ভব? কীভাবে এতদূরে কথা বলো? আমরা তো কখনো শুনতে পাই না তোমাদের কথা।
শোনো, তুমি তো অনেক ছোট্ট একটা মেয়ে। তোমাদের বড় বড় বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত এখনো অনেক রহস্য বের করতে পারেনি। যে মহান আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাদেরকেও সৃষ্টি করেছেন। তোমরা মানুষরা বোকার মতো অনেক গর্ব করো। তোমরা সৃষ্টির সেরা মানুষ। আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে অনেক বেশি জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন, চিন্তা করার শক্তি দিয়েছেন, ভালো-মন্দ যা ইচ্ছা করার ক্ষমতা দিয়েছেন। এগুলো তিনি দিয়েছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। অথচ তোমরা মানুষরা অনেকেই সেই ক্ষমতা পেয়ে নিজেকে যা খুশি তাই ভাবতে শুরু করলে। এমনকি লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই স্রষ্টাকেই অস্বীকার করে বসল। আমরা কিন্তু কখনো তা করি না। আমরা সব সময় স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করি এবং তাঁর কাছে শুকরিয়া জানাই। তাহলে বলো দেখি, তোমরা শ্রেষ্ঠ না কি আমরা?
শোনো, আল্লাহ তায়ালা আমাদের মাথার ভেতরে কপালের কাছে একটা বিশেষ অঙ্গ দান করেছেন। এটা দিয়ে আমরা একটা বিশেষ ধরণের শব্দ তৈরি করতে পারি যা মানুষ শুনতে পায় না। তবে তোমাদের এক নবী হযরত সোলায়মান (আঃ)কে আল্লাহ এক বিশেষ নেয়ামত বা ক্ষমতা দান করেছিলেন, যার জন্য তিনি আমাদের সব কথা শুনতে পেতেন এবং বুঝতে পারতেন।
আমরা আমাদের এ অঙ্গ দিয়ে বিশেষ এক ধরণের শব্দ তৈরি করে কথা বলি। এটা এক রকম কোডের মতো। এজন্য অন্য কোনো প্রাণী তা বুঝতে পারে না। কিন্তু আমরা বহু দূর থেকেও সুন্দরভাবে শুনতে পাই ও বুঝতে পারি। তোমরা মানুষরা যদি খুব ভালো ভাবে আমাদেরকে দেখো এবং চিন্তা করো তাহলে আমাদের মধ্যে আল্লাহর সৃষ্টি অসংখ্য সূক্ষ্ম নিদর্শন দেখতে পাবে। ভুলে যেও না, আমাদেরকে সব সময় এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে এবং এসব নেয়ামতের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাতে হবে।
মৌন মাথা নেড়ে বলল, ধন্যবাদ। তোমার কাছে আজকে অনেক সুন্দর বিষয় জানতে পারলাম। আমার চিড়িয়াখানায় আসা সার্থক হয়েছে। আবার একদিন এসে তোমার সাথে কথা বলব। দেখি, বাবার কতগুলো ছবি তোলা হলো। আজ তাহলে আসি।
ফি আমানিল্লাহ। সব সময় সেই মহান আল্লাহর কথা স্মরণ রেখো।
ফিরে আসার পথে মৌন তার বাবার সাথে সব ঘটনা শেয়ার করল এবং অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, না জানি অন্যান্য প্রাণীদের মাঝেও আল্লাহর কত কত বিষ্ময়কর নেয়ামত রয়েছে!
[তাঁরই সমীপে প্রার্থনা করে আসমান ও জমীনে যারা আছে সকলেই। তিনি সর্বদা মহান কাজে রত আছেন। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ কোন্ নেয়ামত অস্বীকার করবে?
সুরা আর-রহমান ঃ আয়াত - ২৯,৩০]
সমাপ্ত
*** [আগামী একুশে বইমেলায় (২০১৫) ছোট্ট সোনামনিদের জন্য প্রকাশিতব্য আমার বইয়ের একটি গল্প আপনাদের মূল্যায়ন ও মতামতের জন্য উপস্থাপন করলাম। ধারাবাহিকভাবে সবগুলিই উপস্থাপনের ইচ্ছা আছে। আশা করি, আপনাদের মূল্যবান মতামত আমার কাজে লাগবে।]
বিষয়: সাহিত্য
১২৪৫ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বোকা মেয়ে! তুমি কী মনে করেছ যে, তোমরা মানুষরাই শুধু কথা বলতে পারো?
যদি এমন হয়-
বুদ্ধিমতি মেয়ে! আমরা যে নিজেদের মাঝে কথা বলি তা তুমি বুঝলে কি করে?
আচ্ছা, তুমি কী মনে কর যে, কেবল তোমাদের মানুষেরই ভাষা আছে, আমাদের ভাষা নেই?
ভালই লাগলো, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
আবু সাইফ বড্ড বিপদে আছেন, আপনাদের নেকনজর প্রয়োজন
সহমত
মন্তব্য করতে লগইন করুন