ঈদ মোবারক
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২৯ জুলাই, ২০১৪, ০১:৫৪:৪৮ রাত
ভিশু ভাইয়ের উৎসাহ ও পরিকল্পনায় আমরা শুরু করেছিলাম রমজান নিয়ে আলোচনা। দেখতে দেখতে মাস শেষ হয়ে গেল, আলোচনাও জমল বেশ কিন্তু আমার লেখা তো এখনও শেষ হলো না। যাক, আফসোস নেই। ভাবছি, রমজানের আগে থেকেই আমি শুরু করেছিলাম আমার লেখা, শেষ হবার পরেও না হয় চলল - মন্দ কী? রমজান মাসের ফরজ রোযার পর শাওয়াল মাসেও ৬টা নফল রোযা আছে না? চিন্তা কিসের আমার লেখা চলবে......।
তবে হ্যাঁ, একটা বিষয় আমি নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারি। সেটা হলো, আমার এবারের রমজান আমার সারাজীবনের অন্য যে কোনো রমজানের চেয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো কেটেছে। বুঝতেই পারলাম না ১টা মাস কোনদিক দিয়ে চলে গেল।
আগামী কাল ঈদ। অবশ্য অনেক দেশে আজই ঈদ পালিত হয়েছে। সকলকে ঈদ মোবারক।
ঈদ এলেই আমরা নিজেদের জন্য, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের জন্য কিছু কেনা-কাটার চেষ্টা করি। সত্যি কথা বলতে কি এবার আমার কিছু আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছিল। কাজেই অন্যান্যবারের মতো প্রাণ খুলে মানুষের জন্য কেনাকাটা করতে পারিনি। তারপরও যা কিনেছি তারমধ্যে আমাদের বাসার ২জন দারোয়ান ছিল। ১জন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং অন্যজন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ডিউটি করে। যে দিনের বেলায় থাকে তার নাম আতর আলী, আর যে রাতে থাকে তার নাম দুলাল। সকালে মার্কেটে যাবার সময় আতর আলীকে ডেকে বললাম. পাঞ্জাবী নিবেন নাকি শার্ট? সে লাজুকভাবে বলল, আপনার যেটা পছন্দ। আমি বললাম, আপনি বুঝে দেখেন কোনটা আপনার কাজে লাগবে? সব সময় তো শার্ট পরেন, পাঞ্জাবী পরার সময় কই? তখন সে বলল, হ স্যার, ঠিকই কইছেন, শার্ট হলেই ভালো হয়। দুলালকে আর জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলাম না, যেহেতু সন্ধ্যায় ডিউটিতে আসবে।
মার্কেট থেকে পছন্দ করে ২টা শার্ট কিনলাম সুন্দর কালারের যেন আমি পরতে পারি। বাসায় ফিরে গেটে আতর আলীকে বললাম, একটু পরে উপরে আসবেন। মিনটি দশেক পরে সে এলো। তাকে ২টা শার্ট দেখিয়ে বললাম, দেখেন আপনার কোনটা পছন্দ হয়। সে দেখে একটা পছন্দ করল। আমি বললাম, যদি মাপে কোনো সমস্যা হয় কিংবা রং পছন্দ না হয় তাহলে চেঞ্জ করে আনতে পারব, দোকানে বলে এসেছি। সে বলল, না স্যার, খুব সুন্দর হইছে। সে সময় তার চোখেমুখে যে খুশির আভা দেখেছিলাম তাতে খুব ভালো লাগল।
সন্ধ্যার পর বাইরে থেকে ফেরার পথে গেটে দুলালকে পেলাম। তাকেও বললাম মিনিট দশেক পরে উপরে আসতে। কিছু সময় পরে কলিং বেল বাজলে বুঝলাম সে এসেছে। দরজা খুলে শার্টের প্যাকেটটা তার হাতে দিয়ে বললাম, আপনাকে তো আর চয়েস দিতে পারলাম না। দেখেন পছন্দ হয়েছে কিনা। না হলে চেঞ্জ করে আনতে পারব। সে খুব খুশি মন নিয়ে বলল, স্যার খুব সুন্দর হইছে। কথার সাথে সাথে তার সারা চোখে মুখে যে খুশির দিপ্তী ছড়িয়ে পড়তে দেখলাম, তা দেখেই বললাম, আলহামদুলিল্লাহ। ঠিকই তো, আল্লাহ ওটুকু সামর্থ দিয়েছিল বলেই তো পারলাম একটা দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে।
আমার সারা দেহ-মন ভরে গেল অন্য রকম একটা আনন্দে। শার্টের দাম কিন্তু খুব বেশি ছিল না। আমাদের দেশের এই গরীব-অসহায় মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটাতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। অথচ আমরা সেটাই পারি না। কত অল্পেই এদেরকে সন্তুষ্ট করা যায়। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আমার এবারের রমযান সার্থক হয়েছে। অন্তত ২জন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে তো পেরেছি। চলুন, আমরাও সকলে এভাবে অসহায়, অভাবগ্রস্ত, দরিদ্র মানুষদের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য চেষ্টা করি।
বিষয়: বিবিধ
১১৩৯ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঈদ মোবারক।
Eid Mubarak Apu.
কথা হইতাছে গিয়া ভাই আমি ভাই।
ঈদের উপহার দু’টো খুব সুন্দর দিয়েছেন ...
আর আপনাকেও ঈদ-মুবারক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন