ঃ রমজান আলোচনা ঃ পর্দা (পর্ব - ৬)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ১৮ জুলাই, ২০১৪, ১২:৩৬:৪৪ রাত
পর্দা পালনের শর্ত
পর্দা পালনের জন্য কুরআন হাদীসে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত জ্ঞানলাভের জন্য মা'রেফুল কুরআন এর সুরা আন্ নূর ও সুরা আহ্যাবের পর্দা সংক্রান্ত আলোচনা দেখা যেতে পারে। এ ছাড়াও বাজারে এখন বিভিন্ন অনুবাদকের বাংলায় অনুবাদ করা কুরআনুল কারীম এবং পর্দা সংক্রান্ত বই পাওয়া যায়। যাঁরা আরবী একদমই পড়তে পারেন না তাঁদের জন্য এ বাংলা কুরআনুল কারীম খুব সহায়ক হতে পারে।
পর্দা বা হিজাবের শর্ত প্রধানত ৬টি। প্রথম শর্তটি পুরুষ ও নারীর জন্য পৃথক এবং পরবর্তী পাঁচটি শর্ত উভয়ের জন্য একই রকম।
(১) হুদুদ সীমারেখা - শরীরের নির্দিষ্ট স্থান অবশ্যই আবৃত রাখতে হবে। পুরুষ এবং নারীর জন্য এর সীমা ভিন্ন। পুরুষের জন্য নাভীর উপর থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত এবং নারীর জন্য মাথাসহ সারা শরীর আবৃত রাখতে হবে। নারীর মুখমন্ডল ও কব্জি পর্যন্ত হাত ছাড়া সমস্ত শরীর পর্দার সীমার অন্তর্ভুক্ত। যদি সে চায় তাহলে ঐ স্থানগুলিও ঢেকে রাখতে পারে। তবে অনেক আলেমের মতে ঐ স্থানগুলিও অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। এ অভিমতই শ্রেয়।
(২) পরিহিত পোশাক ঢিলে ঢালা হবে - পোশাক এমন আঁট সাঁট হওয়া যাবে না যাতে শরীরের কাঠামো দেখা যায় বা বুঝা যায়। যেমন ঃ পুরুষদের স্কীন টাইট জিনস্ পরার অনুমতি নেই। নারীদের তো প্রশ্নই আসে না।
(৩) পরিহিত পোশাক স্বচ্ছ বা পাতলা না হওয়া - পোশাক এমন স্বচ্ছ বা পাতলা হওয়া যাবে না যাতে শরীরের ভেতরের অংশ দেখা যায়। যেমন ঃ অনেক পুরুষ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে পাতলা সুতী কাপড়ের পাঞ্জাবী পরেন। ভেতরে কোন গেঞ্জীও পরেন না যার ফলে ভেতরে শরীর দেখা যায়। আবার অনেক নারী জর্জেট বা এ ধরণের কোন কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক পরেন যাতে শরীরের অনেকখানি অংশ অনাবৃত থাকে। এটা সর্বতো ভাবেই হারাম।
(৪) পোশাক দৃষ্টি আকর্ষণকারী না হওয়া - এমন পোশাক পরা যাবে না যা বিপরীত লিঙ্গের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। অর্থাৎ, পোশাকের রং বা ডিজাইন এমন চাকচিক্যময় হওয়া যাবে না যা সহজেই অপর লিঙ্গকে আকৃষ্ট করে। যেমন ঃ অনেক নারী পর্দার নামে চক্চকে রংয়ের বোরকা পরেন যা এ শর্তকে ভঙ্গ করে। কাজেই উভয়ের জন্যই সাধারণ পোশাকই উত্তম।
(৫) স্বজাতীয় পোশাক হওয়া বাঞ্ছনীয় - এমন পোশাক পরা যাবে না যা বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের মত। অর্থাৎ, পুরুষেরা পুরুষালী পোশাক এবং নারী নারীর পোশাক পরিধান করবে। যেমন ঃ বর্তমানে অনেক নারীকে জিন্সের প্যান্ট, শার্ট কিংবা গেঞ্জী পরতে দেখা যায়। আবার অনেক পুরুষও ফ্যাশনের নামে মেয়েদের মত লম্বা চুল রাখে, মাথায় ব্যান্ড লাগায়, কানে দুল পরে কিংবা বাহারী পাঞ্জাবীর সাথে বাহারী ওড়না পরে। এ সবের কোনটাই ইসলামী শরীয়া সমর্থন করে না বরং তা রীতিমত হারাম।
(৬) পরিহিত পোশাক যেন ইসলামী পোশাক হয় - ভিন্ন জাতি সম্প্রদায়ের পোশাকের সাথে যেন সাদৃশ্য না থাকে। পোশাক দেখে যেন ভিন্ন সম্প্রদায়ের বলে মনে না হয়।
পোশাকের জন্য উপরিউক্ত ছয়টি শর্ত ছাড়াও পোশাক পরিধানকারীর সমগ্র আবরণের চারিত্রিক কর্ম এবং ধারাও দৃষ্ট হবে। কাজেই এরূপ নিয়তেই পোশাক তৈরি ও পরিধান করতে হবে। যদি কেউ পোশাকের মাধ্যমে শুধু পর্দার শর্ত পূরণ করে, তাহলে সে শুধু সীমারেখার মধ্যেই আমল করল। পোশাকের পর্দার সঙ্গে চোখের পর্দা, মনের পর্দা, চিন্তার পর্দা, নিয়ত এবং আমলের পর্দাও প্রয়োজন। পোশাকের সঙ্গে পরিধানকারীর চলা, বলা কিংবা যে কোন কাজ করা সহ সমগ্র বিষয়ই সংযুক্ত থাকে।
উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রঃ) পর্দাকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা ঃ
১। সর্বনিম্ন পর্দা - মুখমন্ডল এবং হাতের কব্জি ব্যতীত নারীর সমুদয় দেহ পর্দাবৃত রাখা। ভিন্ন মতে টাখ্নুর গিরা পর্যন্ত পায়ের পাতা ব্যতীত গোটা দেহ আবৃত রাখা ফরয।
২। মাধ্যমিক স্তর - মুখমন্ডল, হাত এবং পা সহ সবকিছুই বোরকা দ্বারা আবৃত রাখা।
৩। মহিলার শরীর পর্দায় আবৃত করার সাথে সাথে তার পরিধেয় বস্ত্রও আবৃত রাখা। এটা হলো পর্দার সর্বোচ্চ স্তর।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৯ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি উত্তরে তাকে প্রশ্ন করলাম "তোমার কাছে যদি কোন মহামূল্যবাদ হিরক বা তদ্রুপ জিনিস থাকে তাহলে তুমি সেটা কিভাবে রাখবে? কোন আলমারী বা সিন্ধুকের ভিতর বাক্সে ভরে রাখবে নাকি উন্মুত অবস্থায় রেখে দিবে?"
সে উত্তর দিলো "অবশ্যই কোন সিন্ধুকের ভিতর সংরক্ষিত রাখবো।"
আমি তখন বললাম, "আমাদের কাছে নারীরা অর্থাৎ আমাদের মা, বোন, স্ত্রী, কণ্যারা এরূপ মহামূল্যবান। তাই আমরা তাদের সুযোগসন্ধানীদের দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে রাখি, যাতে তাদের সম্ভ্রমের কোন ক্ষতি না হয়।"
খুবই ভালো লেখা। জাযাকাল্লাহু খইর।
খ্রীষ্ট ধর্ম ঃ
১। আমি ইহাও চাই, যেন স্ত্রীলোকগণ ভদ্র ভাবে ও ভাল বিচার বুদ্ধি ব্যবহার করে উপযুক্ত কাপড়-চোপড় দিয়া শালীনতার সাথে নিজেদের সাজায় এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন নানা রকমে চুলের বেণী বাঁধিয়া, সোনা ও মুক্তার গহনা পরিয়া আর দামী দামী কাপড়-চোপড় দিয়ে নিজেদের না সাজায়। তাহার বদলে যেন তাহারা ভাল ভাল কাজ দিয়া নিজেদের সাজায়। (১ টিমোথী - অধ্যায় ২ - অনুচ্ছেদ ৯-১০)
২। যে স্ত্রীলোক মাথা না ঢাকিয়া মুনাজাত করে বা নবী হিসেবে কথা বলে, সে তাহার মাথাকে অসম্মান করে, কারণ তাহাতে সে মাথা কামানো স্ত্রীলোকের মতই হইয়া পড়ে। (১ করিন্থীয় - অধ্যায় ১১ - অনুচ্ছেদ ৫)
৩। যদি কোন স্ত্রীলোক মাথা না ঢাকে তবে সে তাহার চুলও কাটিয়া ফেলুক। কিন্তু স্ত্রীলোকের পক্ষে চুল কাটিয়া ফেলা বা মাথা কামাইয়া ফেলা লজ্জার বিষয় বলিয়া সে তাহার মাথা ঢাকিয়া রাখুক। (১ করিন্থীয় - অধ্যায় ১১ - অনুচ্ছেদ ৬)
৪। অধীনতার চিহ্ন হিসেবে স্ত্রীলোকের মাথা ঢাকা উচিত। (১ করিন্থীয় - অধ্যায় ১১ - অনুচ্ছেদ ১০)
৫। স্বাভাবিক বুদ্ধি দিয়া ইহা কি বুঝা যায় না যে, পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে তবে তাহাতে তাহার অসম্মান হয়, কিন্তু স্ত্রীলোক যদি লম্বা চুল রাখে তবে তাহাতে তাহার গৌরব হয়। (১ করিন্থীয় - অধ্যায় ১১ - অনুচ্ছেদ ১৪)
৬। নিজেকে ঢাকিবার জন্যই তো স্ত্রীলোককে লম্বা চুল দেওয়া হইয়াছে। (ফাষ্ট করিন্থীয় - অধ্যায় ১১ - অনুচ্ছেদ ১৫)
৭। যদি কেহ ইহা লইয়া তর্ক করিতে চায় তবে ইহা বলিব যে, অন্য কোন নিয়ম আমাদের মধ্যেও নাই বা খোদার চার্চসমূহের মধ্যেও নাই। (১ করিন্থীয় - অধ্যায় ১১ - অনুচ্ছেদ ১৬)
৮। চার্চে স্ত্রীলোকদের নিশ্চুপ থাকা উচিত। কারণ কথা বলিবার অনুমতি তাহাদের দেওয়া হয় নাই। (১ করিন্থীয় - অধ্যায় ১৪ - অনুচ্ছেদ ৩৪)
৯। তেমন ভাবে বয়স্কা স্ত্রীলোকদের বলিবে, তাঁহাদের চাল-চলনে যেন খোদার প্রতি ভক্তি থাকে এবং তাঁহারা যেন ভালো শিক্ষা দেন। পরের নিন্দা করা বা মাতাল হওয়া তাঁহাদের উচিত নয়। তাহা হইলে তাঁহারা যুবতী মেয়েদের শিখাইতে পারিবেন, যেন তাহারা স্বামী ও ছেলেমেয়েদের মহব্বত করে, নিজেদের দমনে রাখে, সতী থাকে, সংসারের দিকে খেয়াল করে, দয়ালু হয় এবং স্বামীর অধীনে থাকে, যাহাতে কেহ খোদার কালামের অসম্মান করিতে না পারে। (তীত - অধ্যায় ২ - অনুচ্ছেদ ৩-৫)
১০। তোমরা শুনিয়াছ, এই কথা বলা হইয়াছে, ‘ব্যভিচার করিও না।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলিতেছি, যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের দিকে কু-নজরে তাকায়, সে তখনই মনে মনে তাহার সঙ্গে ব্যভিচার করিল। (গ্রজবেল অব মথি - অধ্যায় ৫ - অনুচ্ছেদ ২৭-২৮)
১১। স্ত্রীলোকগণ এমন কোন পোশাক পরিধান করিবে না যা পুরুষরা পরে। আর পুরুষরা এমন কোন পোশাক পরিধান করিবে না যা স্ত্রীলোকেরা পরিয়া থাকে। যাহারা এমনটি করিবে তাহারা প্রভুর ঘৃণার পাত্র হইবে। (বুক অব ডিওটারনমি - অধ্যায় ২২ - অনুচ্ছেদ ৫)
১১। তোমার সৌন্দর্য তোমার পরিপাটি চুল, দামী গহনা, উন্নত সাজ-সজ্জা কিংবা পোশাক-আশাক থেকে প্রকাশ পাওয়া উচিত নয়। তারচেয়ে বরং এটা হওয়া উচিত তোমার অন্তরস্থিত বিষয়, যা তোমার শান্ত আত্মা ও অমলিন সৌন্দর্যকে বুঝায়। আর এটাই খোদার দৃষ্টিতে বেশি মূল্যবান। এজন্যই অতীতের পূণ্যবতী নারীদের থেকে আমরা জানতে পারি যে, তাঁরা নিজেদেরকে আরো বেশি সুন্দর করার জন্য খোদার কাছে সঁপে দিতেন। (১ পিটার - অধ্যায় ৩ - অনুচ্ছেদ ২ - ৫)
১২। অনেক রোমান ক্যাথলিকদের মতে, Linus ই প্রথম নারীদের পর্দা প্রথার কথা উল্লেখ করেন। তাঁরা এ সম্পর্কে বলেন, ..... তিনি নারীদের জন্য পবিত্র স্থানসমূহ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের মাথা ঢেকে যাবার ব্যবস্থা করলেন ....। (Lopes A. The Popes: The lives of the pontiffs through 2000 years of history. Futura Edizoni, Roma, 1997, p-1) (২ সেন্ট লিনাস ঃ ৬৭-৭৬)
পেয়েছেন জন্য ধন্যবাদ আতিক ভাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন