ঃ রমজান আলোচনা ঃ পর্দা (পর্ব - ২)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ০৭ জুলাই, ২০১৪, ১২:৩৬:৫৫ রাত
[পর্দা সম্পর্কে চলমান আলোচনা যা ইভটিজিং - কারণ ও প্রতিকার বই থেকে নেয়া হয়েছে। আজ আমরা দেখব পর্দা সম্পর্কে হাদীসে রাসুল (সঃ) এ কী আছে।]
রাসুল (সঃ) এর হাদীস থেকে ঃ
১। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সঃ) বলেছেন, মহিলারা হলো পর্দায় থাকার বস্তু। সুতরাং, তারা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে) বাইরে আসে তখন শয়তান তাদেরকে (অন্য পুরুষের দৃষ্টিতে) সুসজ্জিত করে দেখায়। (তিরমিযী, মেশকাত)
২। বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আলী কোন অপরিচিত মহিলার উপর হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে তা ফিরিয়ে নেবে এবং দ্বিতীয়বার তার প্রতি আর দৃষ্টিপাত করবে না। কেননা, প্রথম দৃষ্টি তোমার আর দ্বিতীয় দৃষ্টি তোমার নয় (বরং তা শয়তানের)। (আবু দাউদ, আহমদ, তিরমিযী, দারেমী, মেশকাত)
৩। দৃষ্টি তো ইবলিসের বিষাক্ত তীরগুলোর মধ্যে একটি। যে ব্যক্তি আমাকে ভয় করে এ দৃষ্টি ত্যাগ করবে, তার বিনিময়ে আমি তাকে এমন ঈমান দান করব, যার স্বাদ সে অন্তরে অনুভব করতে পারবে। (তিরমিযী)
৪। রাসুল করীম (সঃ) ইরশাদ করেন, হে আসমা! কোন মহিলা বালিগ হলে তখন তার এই এই অর্থাৎ, মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ব্যতীত অন্য কোন অঙ্গ দেখা জায়েজ নাই। (মিশকাত শরীফ)
৫। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) নারীদের পোশাক পরিধানকারী পুরুষদের এবং পুরুষদের পোশাক পরিধানকারিনী নারীদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী, বুখারী, তিরমিযী)
৬। আবু মুলায়কা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার জনৈক ব্যক্তি আয়েশা (রাঃ) কে পুরুষের জুতা পরিধানকারিনী এক নারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ (সঃ) পুরুষদের বেশ ধারণকারিনী নারীদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
৭। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার তিনি আনসার নারীদের প্রশংসা করে বলেন, যখন সুরা নূর এ পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়, তখন তারা তাদের লুঙ্গি বা পর্দার কাপড় ছিঁড়ে চাদর তৈরি করেন। (আবু দাউদ, বুখারী)
৮। উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় - “নারীরা যেন তাদের শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে রাখে” তখন আনসার নারীরা কালো কাপড়ে শরীর আবৃত করে এমনভাবে বের হতো যে, মনে হতো যেন তাদের মাথার উপর কাক বসে আছে। (আবু দাউদ)
৯। উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি ও মায়মুনা (রাঃ) মহানবী (সঃ) এর কাছে ছিলাম। তখন সেখানে আব্দুল্লাহ ইবনে মাকতুম (রাঃ) আসেন। আর এটি ছিল পর্দার আয়াত অবতীর্ণের পর। তখন তিনি বলেন ঃ তোমরা দু‘জন তার থেকে পর্দা করো। তখন আমরা বলি ঃ হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে পায় না, চিনতেও পারে না। তখন নবী করীম (সঃ) ফরমান ঃ তোমরাও কী অন্ধ? তোমরা দু‘জন কি তাকে দেখছ না? (আবু দাউদ, আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মেশকাত)
১০। উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ঃ একবার নবী করীম (সঃ) তার কাছে এমন সময় আসেন, যখন তার মাথায় দো-পাট্টা (ওড়না) বাঁধা ছিল। তিনি বলেন, একবার পেঁচানোই যথেষ্ট, দু‘বারের দরকার নেই। (আবু দাউদ)
১১। দেহিয়া ইবনে খালিফা কালবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ঃ একবার রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে (মিসর থেকে) কিছু পাতলা কাপড় আসলে, তিনি তা থেকে আমাকে একটি প্রদান করেন এবং বলেন, তুমি একে দু‘টুকরা করো। এক টুকরা দিয়ে জামা বানাও এবং অন্য টুকরাটি তোমার স্ত্রীকে দিয়ে দাও, যা দিয়ে সে ওড়না বানাবে। দেহিয়া (রাঃ) যখন পেছনে যায় তখন তিনি বলেন, তোমার স্ত্রীকে এর নীচে অন্য কাপড় লাগিয়ে নিতে বলবে, যাতে তার দেহ দেখা না যায়। (আবু দাউদ)
১২। হযরত জারহাদ ইবনে খুওলাইলিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) একদা আমাকে বললেন, জারহাদ, তুমি কি জানো না যে, রান সতরের অন্তর্ভুক্ত? (অর্থাৎ, ঢেকে রাখার অঙ্গ) (তিরমিযী, আবু দাউদ, মেশকাত)
১৩। হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেন, হে আলী! তোমার রান উন্মুক্ত করবে না এবং জীবিত কি মৃত কারো রানের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে না। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্, মেশকাত)
১৪। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন, কোন নারী যেন অপর কোন নারীর সাথে অত্যধিক অন্তরঙ্গতা স্থাপন করতঃ পরে নিজ স্বামীর নিকট এমনভাবে তার রূপ বর্ণনা না করে, যেন তার স্বামী নিজের চোখেই তাকে অবলোকন করছে। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত)
১৫। হযরত আবু সাঈদ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন ঃ এক পুরুষ যেন অপর পুরুষের সতরের দিকে না তাকায়, এভাবে এক নারীও যেন অপর নারীর সতরের দিকে তাকাবে না। এক পুরুষ যেন অন্য পুরুষের সাথে এক চাদরের নীচে শয়ন না করে অনুরূপভাবে দু‘জন নারীও যেন এক কাপড়ের নীচে না ঘুমায়। (মুসলিম, তিরমিযী, মেশকাত)
১৬। হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন ঃ সাবধান! কোন পুরুষ যেন কোন বিবাহিতা নারীর সাথে একস্থানে রাত্রি যাপন না করে - স্বামী বা কোন মাহ্রাম ব্যক্তি ছাড়া। (মুসলিম, মেশকাত)
১৭। হযরত ওকবাহ ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন ঃ তোমরা নারীর নিকটে যাবে না। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার কী অভিমত? (সে কি ভাইয়ের স্ত্রীর নিকট যেতে পারে?) রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, সে তো মৃত্যুতূল্য। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত)
১৮। হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যদি হঠাৎ কোন মহিলার উপর দৃষ্টি পরে তাহলে কী করতে হবে? তিনি আমাকে (সাথে সাথে) চক্ষু ফিরায়ে নিতে নির্দেশ দিলেন। (মুসলিম, মেশকাত, আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী)
১৯। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) পুরুষদের অনুসরণকারী নারীদের এবং নারীদের অনুসরণকারী পুরুষদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (আবু দাউদ)
২০। নবী করীম (সঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো নারীর প্রতি যৌন লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, কিয়ামতের দিনে তার চোখে উত্তপ্ত গলিত লোহা ঢেলে দেয়া হবে। (ফাতহুল কাদীর)
২১। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আদম সন্তানের জন্যে ব্যভিচারের একটি অংশ নির্দিষ্ট করা আছে। এটা সে নিঃসন্দেহে পাবেই; দু‘চোখের যেনা হলো পর স্ত্রীর প্রতি নজর করা, দু‘কানের যেনা হলো যৌন উত্তেজক কথাবার্তা শ্রবণ করা, মুখের যেনা হলো আলোচনা করা, হাতের যেনা হলো স্পর্শ করা, পায়ের যেনা হলো ঐ উদ্দেশ্যে যাতায়াত করা। অন্তর ঐ কাজের প্রতি কুপ্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে এবং তার আকাঙ্খা সৃষ্টি করে। আর যৌনাঙ্গ এমন অবস্থা সত্যায়িত বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। (বুখারী, মুসলিম)
২২। হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সঃ) ঘুম থেকে জেগে উঠেই বললেন, সুবহানাল্লাহ! কত ধনভান্ডার এবং কি কি ফিৎনা নাযিল করা হয়েছে! কে এই হুজরাবাসিনীদেরকে জাগিয়ে দেবে যেন তারা নামায পড়ে? দুনিয়ায় কাপড় পরিহিতা অনেক নারীই হবে, যারা আখেরাতে বিবস্ত্র থাকবে। (বুখারী)
২৩। হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সঃ) বলেছেন, তোমরা কখনো বিবস্ত্র হবে না। কেননা তোমাদের সাথে (কিরামান কাতিবীন) ফেরেশতাগণ রয়েছেন, যাঁরা তোমার নিকট হতে পৃথক হন না; শুধু তোমাদের প্রস্রাব, পায়খানা ও স্ত্রী-সহবাসের সময় ছাড়া। সুতরাং, তাদের সাথে লজ্জা করবে ও তাঁদেরকে সম্মান করবে। (তিরমিযী, মেশকাত)
২৪। বাহয ইবনে হাকীম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সঃ) একবার বললেন, হে মুয়াবিয়া! তোমার স্ত্রী ও তোমার দাসী ব্যতীত অন্যান্যের নিকট হতে তোমার সতরকে (অর্থাৎ, ঢেকে রাখার অঙ্গ) রক্ষা করবে। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! বলুন, কেউ কখনো একা থাকলে (তখনকার বিধান কি)? তিনি বললেন, তাহলে আল্লাহকেই লজ্জা করবে। (তিরমিযী, মেশকাত, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্ )
২৫। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর কসম, কোন পুরুষ কোন স্ত্রীলোকের সাথে একা হলেই শয়তান এসে তাদের মধ্যে তৃতীয়জন হয় (এবং তাদেরকে কুপথে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালায়)। (তিরমিযী, মেশকাত)
২৬। হযরত জাবের (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, যাদের স্বামী কাছে নেই, তাদের কাছে যাবে না। কেননা শয়তান তোমাদের সকলের মধ্যেই রক্তের ন্যায় আনাগোনা করে। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তা কী আপনার মধ্যেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে আল্লাহ তা‘য়ালা আমাকে তার প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখেন, তাই আমি বেঁচে থাকি। (তিরমিযী, মেশকাত)
২৭। হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি একটি ভারী পাথর উঠিয়ে নিয়ে চললাম। এমন সময় আমার পরিধানের কাপড় খুলে পরে গেল এবং আমি তা ধরতে পারলাম না। এ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাকে দেখে বললেন, কাপড় পড়ে নাও, উলঙ্গ চলো না। (মুসলিম, মেশকাত)
২৮। হযরত আবু উমামা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, যে কোন মুসলমানের যদি কোন স্ত্রীলোকের সৌন্দর্যের প্রতি সহসা প্রথম দৃষ্টি পড়ে যায়, তারপর সে তার চোখের দৃষ্টি অবনত করে, আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্য একটি ইবাদতের সুযোগ সৃষ্টি করে দেন, যাতে সে তার স্বাদ উপভোগ করে। (আহমদ, মেশকাত)
২৯। হযরত হাসান বসরী (রঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, (সাহাবীদের মধ্য থেকে) নির্ভরযোগ্য সূত্রে আমার নিকট খবর পৌঁছেছে যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ইচ্ছাকৃত ভাবে দৃষ্টিপাত করে ও যে ইচ্ছাকৃত ভাবে দৃষ্টিতে পড়ে, তাদের (উভয়ের) প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (বায়হাকী শোয়াবুল ঈমানে, মেশকাত)
৩০। হযরত আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সঃ) বলেছেন, প্রতিটি চোখই ব্যভিচারী। কোন নারী খোশবু লাগিয়ে কোনো মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলে সে অনুরূপ অর্থাৎ, ব্যভিচারিণী। (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী)
৩১। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, পুরুষ এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে যার সুগন্ধ প্রকাশ পায় কিন্তু রং গোপন থাকে এবং নারী এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে যার রং প্রকাশ পায় কিন্তু সুগন্ধি গোপন থাকে। (নাসাঈ, মেশকাত, তিরমিযী)
৩২। হযরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বলেছেন, পুরুষের জন্য উত্তম খুশবু হচ্ছে যার গন্ধ আছে কিন্তু রং নেই এবং নারীর জন্য উত্তম খুশবু হচ্ছে যার রং আছে কিন্তু গন্ধ নেই। আর তিনি লাল রেশমের নির্মিত আসনে আসীন হতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত, তিরমিযী)
৩৩। হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এমন সব নারীর উপর অভিশাপ করেছেন, যারা অঙ্গে উলকি উৎকীর্ণ করে ও করায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রূর চুল উপড়িয়ে মহান আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমদ, তিরমিযী)
৩৪। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে পাতলা কাপড় পরে আসলে তিনি তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং বলেন ঃ হে আসমা! যখন মেয়েরা বালেগা হয়, তখন তাদের এমন পাতলা কাপড় পরিধান করা উচিত নয়, যাতে তাদের শরীর দেখা যায়। তবে তিনি ইঙ্গিত করে মুখমন্ডল ও দু‘হাতের কব্জি পর্যন্তু খোলা রাখার নির্দেশ দেন। (আবু দাউদ)
৩৫। হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (রঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ তোমাদের কেউ যখন তার গোলামের বিয়ে দাসীর সাথে দেবে, তখন ঐ দাসীর সতরের দিকে দৃষ্টিপাত করবে না। (আবু দাউদ, মেশকাত)
৩৬। আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযুর (সঃ) বলেছেন, কোন মহিলার অন্য মহিলার দিকে তাকিয়ে অথবা তার দেহ স্পর্শ করে নিজের স্বামীর নিকট এমনভাবে বর্ণনা করা উচিৎ নয় যেন সে ঐ মহিলার দিকে তাকিয়ে আছে। (বুখারী)
৩৭। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি হুযুর (সঃ) কে বলতে শুনেছেন, কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে যেন নির্জনে না বসে এবং মাহরাম ছাড়া কোন নারী যেন সফর না করে। এ সময় এক ব্যক্তি উঠে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম সেনা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে অথচ আমার স্ত্রী হজ্জ আদায়ের জন্য যাচ্ছে। (এমতাবস্থায় আমার কী করা উচিৎ?) তিনি বলেন, তোমার স্ত্রীর সাথে তুমি হজ্জে গমন কর। (বুখারী)
৩৮। হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ যে মহিলা সুগন্ধি লাগিয়ে এ উদ্দেশ্যে লোকের মধ্যে গমন করে যে, তারা যেন তার সুগন্ধির ঘ্রাণ পায়, সে মহিলা ব্যভিচারিণী। (নাসাঈ)
৩৯। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ যখন কোন নারী মসজিদে যাবার জন্য বের হয়, তখন যদি তার শরীরে সুগন্ধি লাগানো থাকে, তবে সে এমনভাবে তা ধুয়ে ফেলবে, যেন সে জানাবাতের নাপাকি থেকে পবিত্রতার গোসল করছে। (নাসাঈ)
৪০। হযরত উকাবা ইবনে আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁর ঘরের নারীদেরকে অলঙ্কার এবং রেশম পরিধান করতে নিষেধ করতেন। তিনি বলতেন, যদি তোমরা জান্নাতের অলঙ্কার এবং রেশম পছন্দ করো, তবে পৃথিবীতে তা পরিধান করো না। (নাসাঈ)
৪১। হযরত হুযায়ফা (রাঃ) এর বোন থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে খুৎবা দেয়ার সময় বললেন ঃ হে নারী সমাজ! তোমরা কি রৌপ্য দ্বারা অলঙ্কার বানাতে পার না? দেখো, তোমাদের মধ্যে যে নারী সোনার অলঙ্কার বানিয়ে তা পরে তা পর পুরুষকে দেখায়, এ জন্য তাকে শাস্তি দেয়া হবে। (নাসাঈ)
৪২। হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ যে মহিলা স্বর্ণের হার ব্যবহার করে পর পুরুষকে দেখাবার জন্য তার গলায় কিয়ামতের দিন ঐরূপ আগুনের হার পরিয়ে দেয়া হবে। আর যে নারী এভাবে কানে সোনার রিং পরে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘য়ালা তার কানে ঐরূপ আগুনের রিং পরাবেন। (নাসাঈ)
৪৩। রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর মুক্ত ক্রীতদাস আওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট উপস্থিত হলেন, তখন তার হাতে ছিল মোটা চওড়া আংটি। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তার হাতে আঘাত করতে আরম্ভ করলেন। এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কন্যা হযরত ফাতিমা যোহ্রার (রাঃ) নিকট উপস্থিত হলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সঃ) তার সাথে যে ব্যবহার করেন, তার উল্লেখ করলেন। তা শুনে হযরত ফাতিমা (রাঃ) তাঁর গলা থেকে স্বর্ণের হার খুলে বললেন, হাসানের পিতা (আলী) ইহা আমাকে দিয়াছেন। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সঃ) সেখানে আসলেন। তখন ফাতিমা (রাঃ) এর হার তাঁর হাতে ছিল। তিনি বললেন, ফাতিমা! তুমি কী পছন্দ করো যে, লোক বলাবলি করবে যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কন্যা, তাঁর হাতে আগুনের হার রয়েছে? এ কথা বলে তিনি বের হয়ে গেলেন। ফাতিমা (রাঃ) তখনই হারখানা খুলে বাজারে পাঠিয়ে তা বিক্রি করালেন এবং তা দ্বারা একজন ক্রীতদাসকে ক্রয় করে তাকে আযাদ করে দিলেন। এ খবর শুনে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, আল্লাহর শোকর, যিনি ফাতিমাকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করলেন। (নাসাঈ)
৪৪। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে সোনার নুপুর পায়ে পরা অবস্থায় দেখে বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম জিনিসের খবর দেব না? তুমি ইহা খুলে ফেল এবং রূপার নুপুর বানিয়ে নাও এবং তাতে জাফরান দ্বারা রং করে নাও, তা হলে এই দু‘টি ঐ দু‘টি অপেক্ষা উত্তম হবে। আল্লাহ সম্যক অবগত। (নাসাঈ)
৪৫। হযরত মুহাম্মদ ইবনে জাহশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সঃ) মা‘মার ইবনে আবদুল্লাহ এর নিকট দিয়ে যাবার কালে দেখলেন তার উভয় রান উন্মুক্ত রয়েছে। তিনি বললেন, মা‘মার! তোমার রান ঢেকে নাও। কেননা রান ঢেকে রাখার অঙ্গ। (শরহে সুন্নাহ, মেশকাত)
৪৬। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) যখন ফজরের নামায আদায়ের জন্য যেতেন তখন তাঁর সাথে কিছু ঈমানদার মহিলারাও যথাযথভাবে পর্দা করেই নামাজ আদায়ের জন্য যেতেন। নামাজ শেষে আবার বাড়িতে ফিরে আসতেন কিন্তু কেউ তাঁদেরকে চিনতে পারতো না। শাইখ ইবনে উসমান (রঃ) এ হাদীসের তাফসীরে বলেন, এ হাদীসের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে মহিলাদের জন্য ইসলামী পোশাকের বিধান হলো সম্পূর্ণ শরীর এমনভাবে ঢাকতে হবে যেন হাত ও মুখমন্ডল খোলা না থাকে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও পবিত্র জামাত হলো সাহাবায়ে কেরামের জামাত, তাঁদের বুঝ এবং চর্চাই তাঁদেরকে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দিয়েছে। (বুখারী)
৪৭। সাবিত ইবনে কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন উম্মে খাল্লাদ নামে এক মহিলা বোরকা পড়া অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট এলেন। তিনি তাঁর ছেলের খোঁজ করতে এসেছিলেন যে যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সঙ্গীদের মধ্যে থেকে একজন ঐ মহিলাকে বলল, তুমি তোমার মুখমন্ডল ঢেকে রেখে তোমার ছেলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ? তখন ঐ মহিলা জবাব দিলেন, যদি আমি ছেলে হারানোর যন্ত্রণায় ছট্ফট্ও করতে থাকি তবু আমি আমার শালীনতাকে নষ্ট হতে দিব না। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেন, তুমি তোমার ছেলের জন্য দু‘জন শহীদের সওয়াব পাবে। (আবু দাউদ)
৪৮। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ যদি বেহেশত্ থেকে একজন নারী পৃথিবীর দিকে তাকায়, তাহলে বেহেশত্ এবং পৃথিবীর মাঝখানের এ বিশাল স্থান আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে ও সুগন্ধিতে ভরে যাবে এবং তার পরনে যে বোরকা থাকবে তা সমস্ত পৃথিবী এবং এর ভেতরে যা কিছু আছে তারচেয়ে সুন্দর ও উন্নত হবে। (বুখারী)
৪৯। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক অনুষ্ঠানে একজন মুসলিম নারী রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে একটি চিঠি দিলেন এবং সেটা তিনি দিলেন পর্দার আড়াল থেকে। (আবু দাউদ, মেশকাত, নাসাঈ)
৫০। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ আল্লাহ তা‘আলা কোন সাবালিকা মেয়ের নামাজ কবুল করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে পর্দা করবে। (আবু দাউদ)
৫১। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুজুর পাক (সঃ) বলেছেন ঃ তোমাদের কেউ যদি গোপনে দেখার উদ্দেশ্যে তোমার ঘরে উঁকি মারে, তবে পাথর নিক্ষেপ করে তুমি তার চোখ নষ্ট করে দাও। এতে তোমার কোন অপরাধ হবে না। (বুখারী)
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৩ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিছু জানতে পারলাম
লিখে যান আপনার
মতো
||
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন