হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা ঃ পর্ব - ৩৩

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২৪ জুন, ২০১৪, ০৩:৪৭:১০ দুপুর

এখানেই শেষ নয় বরং আরও বলা হলো, নৈতিক বন্ধন মূলতঃ মানবীয় প্রতিভার উন্মেষ সাধনে বিঘ্নের সৃষ্টি করে। এ সকল বাধা-নিষেধ ছিন্ন করে মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের সাথে সাথে তাকে দৈহিক

সুখ-সম্ভোগের সুযোগ না দেয়া পর্যন্ত জ্ঞান বুদ্ধির বিকাশ এবং বৈষয়িক ও আত্মিক উন্নতি সম্ভব নয়। তৎকালীন ফ্রান্সের বিখ্যাত সাহিত্যিক Piere Loui এর নেতৃত্বে সাহিত্যিকদের একটি দল এ মতবাদ প্রচারে লিপ্ত থাকে। তারা নগ্নতা ও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার প্রচার করতে থাকে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নারী মুক্তি আন্দোলন চরম সীমায় পৌঁছে। জন্মনিরোধ আন্দোলনের ফলে ফ্রান্সে জন্মহার কমে যায়। সুতরাং, জীবন-মৃত্যু মহাসমরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ফরাসী জাতি যুদ্ধোপযোগী যুবকের সংখ্যা কম বলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় এবং তারা ভাবতে থাকে এ অল্প সংখ্যক যুবক দিয়ে জাতিকে নিরাপদ করা যাবে বটে কিন্তু শত্রুর পরবর্তী আক্রমন প্রতিহত করা নিতান্তই কঠিন হয়ে যাবে। এ চেতনা জাতিকে জন্মহার বৃদ্ধির প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। তদনুযায়ী সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও বিদ্বান ব্যক্তিগণ সমস্বরে প্রচার করতে থাকে ‘সন্তান জন্মাও’। বিয়ের প্রচলিত বন্ধনের ভয় করো না। যে সব কুমারী বালিকা ও বিধবা জন্মভূমির কল্যাণে নিজেদের গর্ভে অন্য যে কারো সন্তান ধারণ করবে, তারা সমাজে নিন্দনীয় না হয়ে সম্মানের অধিকারী হবে।

এতে করে নারী মুক্তি আন্দোলনের প্রবক্তাগণ মোক্ষম সুযোগ লাভ করে। তারা ব্যাপকভাবে প্রচার শুরু করে বলপূর্বক ব্যভিচার কোন অপরাধ নয়। ক্ষুধার্তকে যেমন বিনামূল্যে খাবার দেয়া হয়, তেমনই যৌন ক্ষধায় যারা অতিষ্ঠ, তাদের জন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা করা দরকার। এ সময়ে প্যারিসের Faculty of Medicine এর জনৈক ডাক্তারকে তার এক প্রবন্ধের জন্য ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয়। সে প্রবন্ধের এক স্থানে লেখে, আমাদের বিশ্বাস, এমন একদিন আসবে, যেদিন আমরা গর্বে ও নিঃসংকোচে বলতে পারব, বিশ বছর বয়সে আমার সিফিলিস হয়েছিল। এ ব্যাধিগুলো তো জীবনের সম্ভোগের মূল্য বিশেষ। যে ব্যক্তি তার জীবন এমনভাবে অতিবাহিত করে যে, তার দ্বারা কোন ব্যাধির উপক্রম না হয়, তার জীবন অসম্পূর্ণ। সে কাপুরুষতা বা ধর্মীয় বিভ্রান্তির কারণে তার দৈহিক চাহিদা পূরণ থেকে নিবৃত্ত থেকেছে। অথচ এটি ছিল তার স্বাভাবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে একটি নগণ্য মাত্র।

ধীরে ধীরে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়ে চলেছে। প্রথমে বিয়ে ও ব্যভিচারকে একই কাতারভুক্ত করা হয় এবং ব্যভিচারকে নৈতিকতার ক্ষেত্রে নির্দোষ মনে করার চেষ্টা চালানো হয়। এরপর আরও সামনে এগিয়ে বিয়ে প্রথাকে দূষণীয় ও পাপ এবং ব্যভিচারকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। Dr. Drysdale বলেন, প্রেমও আমাদের বাসনাসমূহের অন্যতম পরিবর্তনশীল বস্তু। এটিকে একক পন্থায় নির্ধারিত করার অর্থ প্রাকৃতিক নিয়মের সংশোধন।

যুবক-যুবতী একটা বৈশিষ্ট্যের সাথে এটি পরিবর্তনের বাসনা পোষণ করে। প্রকৃতির বিরাট সুবিচারপূর্ণ ব্যবস্থানুসারে এ বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা যেন বিভিন্ন ধরণের হয়, এটি আমাদের কামনা। নারী-পুরুষের মিলনের স্বাধীন সম্পর্ক উৎকৃষ্ট চরিত্রের অভিব্যক্তি। কারণ, এটি প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে অধিক সাদৃশ্য রাখে। অধিকন্তু, এটি ভাবপ্রবণতা, অনুভূতি ও নিঃস্বার্থ প্রেম থেকে সরাসরি প্রকাশ পায়। যে অনুপ্রেরণা ও কামনা থেকে এ সম্পর্ক জন্মায়, তার বিরাট মূল্য রয়েছে। এমন সৌভাগ্য সেই ব্যবসাসুলভ আদান-প্রদান কীভাবে সম্ভব, যা বিয়েকে বাস্তবে একটা পেশায় পরিণত করেছে?

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

৯৫০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

238362
২৪ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নারি-পুরুষ অনুপাত অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। অথচ তখন জরুরি পুরুষের একাধিক বিয়ের অনুমোদন না দিয়ে তারা অবাধ ব্যভিচারকেই বৈধ করেছিল।
২৪ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৯
184807
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : ব্যভিচারকেই তাদের প্রগতিশীলতার নামান্তর মনে হয়েছিল তাই। এখন তারা বুঝতে পারছে কত বড় ভুল হয়ে গেছে।
238366
২৪ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:২৮
আফরা লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ ভাইয়া ।
২৪ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:০১
184808
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : ধন্যাবাদ আফরামণি। সাথেই থাকো। আর ২৭ তারিখে ভিশু ভাইয়ের রমজান সম্পর্কিত পোষ্টে কিছু লেখা থাকছে আমার। টাইম পেলে পড়ো।
২৪ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:০৭
184810
আফরা লিখেছেন : ইনশা আল্লাহ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File