ঃ "রমজান আলোচনা" ঃ "আসসালাতু মিফতাহুল জান্নাতি ওয়াল ওদ্বু মিফতাহুস সালাতি " নামাজ বেহেস্তের চাবি আর ওযু নামাযের চাবি ঃ পর্ব - ৩
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২৭ জুন, ২০১৪, ০২:৫০:৪৬ দুপুর
অযু সম্পর্কিত জরুরী কয়েকটি মাসআলা
মাসআলা (১) ঃ দাড়ি খিলাল করবে এবং তিনবার মুখমন্ডল ধৌত করার পর খিলাল করবে এবং তিনবারের অধিক খিলাল করবে না।
[সূত্র ঃ শামী - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ১৪১]
মাসআলা (২) ঃ যে অংশটি গাল এবং কানের মধ্যবর্তীস্থান, উহা ধৌত করা ফরজ। চাই উহাতে দাড়ি থাকুক অথবা না থাকুক।
[সূত্র ঃ দুররে মুখতার - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ৯]
মাসআলা (৩) ঃ থুতনি ধৌত করা ফরজ, যদি উহাতে দাড়ি না থাকে। অথবা দাড়ি আছে তবে এত কম যে চামড়া দেখা যায়।
[সূত্র ঃ দুররে মুখতার - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ৯]
মাসআলা (৪) ঃ মুখ স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হওয়ার পর ঠোঁটের যে অংশটি দেখা যায় উহা ধৌত করা ফরজ।
[সূত্র ঃ দুররে মুখতার - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ৯]
মাসআলা (৫) ঃ দাড়ি, মোচ বা ভ্রু যদি এত ঘন হয় যে চামড়া দৃষ্টিগোচর হয় না তবে ঐ চামড়া যা অপ্রকাশ্য থাকে উহা ধৌত করা ফরজ নয় এবং উক্ত পশমগুলিই চামড়ার স্থলাভিষিক্ত বিধায় উহার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করাই যথেষ্ট।
[সূত্র ঃ শরহে তানবীরুল আবছার - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ১৯]
মাসআলা (৬) ঃ ভ্রু, দাড়ি অথবা মোচ যদি এত পরিমান ঘন হয় যে, উহার নিচের চামড়া ঢেকে যায় এবং উহা দেখা না যায় তবে এমতাবস্থায় এ পরিমান পশম ধৌত করা ওয়াজিব যতটুকু অংশ মুখের সীমানার মধ্যে রয়েছে। বাকি যে পশমগুলি মুখের সীমানার বাইরে তা ধৌত করা ওয়াজিব নয়।
[সূত্র ঃ আলমগীরী - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ৪]
মাসআলা (৭) ঃ কোনো ব্যক্তির মলদ্বারের কিছু অংশ বের হয়ে গেলে (তাকে আমাদের পরিভাষায় কাঁচ বের হওয়া বলা হয়) এতে অযু নষ্ট হয়ে যাবে, চাই উহা নিজে নিজেই ভেতরে চলে যাক অথবা কোনো কাঠি, কাপড় অথবা হাত ইত্যাদি দ্বারা ভেতরে প্রবেশ করানো হোক।
[সূত্র ঃ আলমগীরী - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ১০]
মাসআলা (৮) ঃ বিনা উত্তেজনায় বীর্যপাত হলেও অযু ভেঙ্গে যাবে। যেমন কোনো ব্যক্তি কোনো বোঝা উত্তোলন করল অথবা কোনো উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাবার আঘাতে বিনা উত্তেজনায় বীর্যপাত হয়ে গেল, তাহলে অযু ভেঙ্গে যাবে।
[সূত্র ঃ ফাতওয়া কাজীখান - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ১৯]
মাসআলা (৯) ঃ কারো অনুভূতির মধ্যে যদি বিঘ্ন সৃষ্টি হয় কিন্তু এ বিঘ্নতা উম্মাদনা এবং চৈতন্যহীনতার পর্যায়ে না পৌঁছে তাহলে অযু ভঙ্গ হবে না।
[সূত্র ঃ তাহতাবী - পৃষ্ঠা ৫০]
মাসআলা (১০) ঃ নামাযের মধ্যে যদি কেউ ঘুমিয়ে পড়ে এবং ঘুমন্ত অবস্থায় উচ্চস্বরে হাসি দেয় তাহলে অযু ন্ষ্ট হবে না।
[সূত্র ঃ মুনিয়া - পৃষ্ঠা ৪৭]
মাসআলা (১১) ঃ জানাযার নামায এবং তেলাওয়াতে সিজদার মধ্যে উচ্চস্বরে হাসি দেয়ার কারণে অযু নষ্ট হবে না। প্রাপ্ত বয়ষ্ক হোক অথবা অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক হোক।
[সূত্র ঃ মুনিয়া - পৃষ্ঠা ৪৭]
অযুবিহীন অবস্থার বিধান
মাসআলা (১) ঃ কুরআন মজীদ এবং পারাসমূহের যে কোনো স্থানের কাগজ অযু বিহীন অবস্থায় স্পর্শ করা মাকরূহ তাহরীমী। চাই উহা লিখিত হোক অথবা লিখাবিহীন হোক, আর যদি পূর্ণ কুরআন না হয় বরং কোনো কাগজ অথবা কাপড় বা চামড়া ইত্যাদির উপর কুরআনের একটি আয়াত লিখিত হয় এবং বাকি অংশ সাদা থাকে তবে সাদা অংশ স্পর্শ করা জায়েজ যদি আয়াতের উপর হাত না লাগে।
[সূত্র ঃ কবীরী - পৃষ্ঠা ৫৬]
মাসআলা (২) ঃ বিনা অযুতে কুরআন মজীদ লিপিবদ্ধ করা মাকরূহ নয়, যদি লিখিত স্থানে হাত না লাগে। তবে ইমাম মুহাম্মদ (রহঃ) এর মতে খালি জায়গা স্পর্শ করাও জায়েজ নয়। এ উক্তিটি অধিক সতর্কতামূলক। প্রথম উক্তিটি ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) এর। আর মতানৈক্যটি পূর্ববর্তী মাসআলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ হুকুমটি তখনই কার্যকর যখন কুরআন শরীফ এবং ছীপারা ব্যতিত কোনো কাগজ ইত্যাদির মধ্যে আয়াত লিখিত হবে এবং উহার কিছু অংশ সাদা (খালি) থাকবে।
[সূত্র ঃ কবীরী - পৃষ্ঠা ৫৬]
মাসআলা (৩) ঃ বিনা অযুতে এক আয়াত অপেক্ষা কম লিখা মাকরূহ নয়, যদি কিতাব ইত্যাদির মধ্যে লিখে। তবে কুরআন শরীফে এক আয়াতের কম লিখাও জায়েজ নেই।
[সূত্র ঃ শামী - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৬১]
মাসআলা (৪) ঃ নাবালেগ বাচ্চার হাতে ছোট হদছ (অযু বিহীন) অবস্থায়ও কুরআন মজীদ দেয়া এবং স্পর্শ করতে দেয়া মাকরূহ নয়।
[সূত্র ঃ কবীরী - পৃষ্ঠা ৫৭]
মাসআলা (৫) ঃ কুরআন মজীদ ব্যতিত অন্যান্য আসমানী কিতাব যেমন - তাওরাত, যাবুর এবং ইঞ্জীল ইত্যাদির শুধু ঐ স্থান স্পর্শ করা মাকরূহ যেখানে লিখিত আছে, সমস্ত অংশ স্পর্শ করা মাকরূহ নয়। এ বিধান কুরআন কারীমের রহিত আয়াতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
[সূত্র ঃ ফাতওয়া শামী - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৭]
মাসআলা (৬) ঃ অযুর পর যদি কোনো অঙ্গ ধৌত করার ব্যাপারে সন্দেহ জাগে কিনতু সে অঙ্গটি নির্দিষ্ট না হয় তবে এমতাবস'ায় সন্দেহ দূর করার জন্যে বাম পা ধৌত করবে। অনুরূপ ভাবে অযুর মধ্যে কোনো অঙ্গ সম্পর্কে এরূপ সন্দেহ হলে তখন শেষ অঙ্গটি ধৌত করে নিবে। যেমন. কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করার পর যদি এরূপ সন্দেহ জাগে তাহলে মুখ ধৌত করবে এবং যদি পা ধৌত করার প্রাক্কালে এরূপ সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে কনুই পর্যনত হাত ধৌত করবে। (উলেলখ্য যে) সন্দেহ মাঝে মাঝে হলে তখন এ মাসআলাটি প্রযোজ্য। আর যদি কোনো ব্যক্তির প্রায়ই এ ধরণের সন্দেহ হতে থাকে তবে তার এ সন্দেহের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে স্বীয় অযুকে পরিপূর্ণ মনে করা উচিত।
[সূত্র ঃ দুররে মুখতার - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৮]
মাসআলা (৭) ঃ মসজিদের কার্পেটের উপর অযু করা জায়েজ নয়। তবে যদি এমনভাবে অযু করে যে অযুর পানি মসজিদে না পরে তাহলে তা ভালো। এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় অসাবধানতা হয়ে থাকে আর এমন স'ানে অযু করা হয় যে, অযুর পানি মসজিদের কার্পেট (বিছানা) এর মধ্যে প্রবেশ করে।
[সূত্র ঃ ফাতওয়া আলমগীরী - ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ১১০]
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার এ লেখা যদি একজনেরও কাজে লাগে অর্থাৎ একজনও যদি আমল শুরু করে তাহলেই আমার কষ্ট সার্থক হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন