হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা ঃ পর্ব - ৩২
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২২ জুন, ২০১৪, ০৩:২৭:৫২ দুপুর
এত সব বিপ্লব ও আন্দোলনের ফলে লজ্জা, শরম, শালীনতা, সতীত্ব ইত্যাদি মূল্যবোধ যথেষ্ট রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু তখনো ধর্ম ও নৈতিকতা সক্রিয় ছিল এবং ব্যভিচারের সয়লাব রোধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছিল। এমন সময় খোদাহীনতার দর্শন মানুষের ধর্ম বিশ্বাসের উপর হানল চরম আঘাত। ইংরেজ প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইনের যুগান্তকারী ‘দি অরিজিন অব স্পেসিস বাই মিনস্ অব ন্যাচারাল সিলেকশন’ হলো সেই আঘাতের হাতিয়ার। এ মতাদর্শ বলে, স্রষ্টার মহা পরিকল্পনায় নয় বরং আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করে। পৃথিবী এবং তাতে প্রাণের উদ্ভবও হয় আকস্মিকভাবে। তারপর অতিক্ষুদ্র এক কোষী অ্যামিবা নামক প্রাণীর লক্ষ কোটি বছর ধরে বিবর্তন হতে হতে রূপান্তরিত হয়ে আজকের মানুষ নামক প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে। কমিউনিষ্ট আন্দোলন আপন স্বার্থে এ মতবাদকে ব্যাপকভাবে প্রচারের মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তোলে। উল্লেখ্য, অসংখ্য বিজ্ঞানী এ মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে অনেক যুক্তি প্রমাণ পেশ করেছেন (এদের মধ্যে অনেক নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীও আছেন)। যাহোক, বিবর্তনবাদ স্রষ্টার অস্তিত্বকে অপ্রয়োজনীয় করে তোলে। ফলে স্রষ্টার প্রত্যাদেশ তথা ধর্মও অর্থহীন হয়ে পড়ে। এ মতবাদ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীবের মহিমান্বিত আসন থেকে নামিয়ে অন্যান্য জন্তু-জানোয়ারের মতো এক জানোয়ার হিসেবে উপস্থাপন করে। অতএব, জীবন প্রণালীকেও পশুর অনুকরণে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা চলতে থাকে। জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা বেবেল বলেন, নারী ও পুরুষ তো পশুই। পশু দম্পতির মধ্যে কি কখনো বিয়ের প্রশ্ন ওঠে? এই যে, ধর্মকে অর্থহীন এবং মানুষকে পশুতূল্য ভাবার প্রক্রিয়া শুরু হলো, যৌন জীবনেও পড়ল এর অনিবার্য প্রভাব। বিশিষ্ট পন্ডিত উইল ডিউরান্ট বলেন, স্পষ্ট ধারণা করা যাচ্ছে, ধর্ম বিশ্বাসের ওপর ডারউইনের আক্রমণমূলক চিন্তাধারার কারণেই যৌন স্বাদ আস্বাদনের প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যুবকরা যখন দেখল যে, ধর্ম তাদের যৌন স্বাদ আস্বাদন প্রবণতার বিরোধী, তখন তারা ধর্মকেও অকেজো ও হীন নগণ্য প্রমাণ করার শত-সহস্র কার্যকারণ সন্ধান করে নিল।
এর ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর পর ফ্রান্সের নাট্যকার, সাহিত্যিক ও দার্শনিকদের দ্বিতীয় দলের আবির্ভাব হয়। এ দলের নেতা ছিল আলেকজান্ডার দুমা ও আলফ্রেড নাকেট। তারা মত পোষণ করতো যে, স্বাধীনতা ও জীবনের সুখ-সম্ভোগে মানুষের জন্মগত অধিকার রয়েছে। এর উপর নৈতিক রীতিনীতি এবং সামাজিক বাধা-নিষেধ চাপিয়ে দেয়া ব্যক্তির প্রতি সামাজিক নির্যাতন ছাড়া আর কিছুই নয়। এ মতবাদ প্রচারে এ দল তাদের সবটুকু শক্তি নিয়োগ করে।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১০৮৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন