হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা ঃ পর্ব - ৩১
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ১৮ জুন, ২০১৪, ০৩:৫৫:৫৪ দুপুর
নারী মুক্তির যে আন্দোলন পাশ্চাত্যে শুরু হয়েছিল তার ঢেউ এসে প্রাচ্যেও আছড়ে পড়ল। এর উদ্যোক্তারা বলতে লাগল, আবহমানকাল থেকে প্রচলিত নীতিই নারী উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কিছুর মূলোৎপাটন করে নৈতিকতার সেকেলে বন্ধন ছিন্ন করে নারীকে স্বাধীন করতে হবে। নারীর প্রেম, ভালোবাসা, সতীত্ব এসব একজনের জন্যই বন্ধক রাখতে হবে এটা কেমন কথা? স্বামী থাকলেই যে, আরেক জনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা যাবে না এটা নারীকে বন্দী করে রাখার কৌশল। এ ধরণের প্রশ্ন চারদিকে প্রচারিত হতে থাকে।
শিল্প বিপ্লবের সম-সাময়িককালে সংঘটিত ফরাসী বিপ্লব (১৭৮৯ খৃঃ) নর-নারীর মনে অনেক জোর এনে দেয়। শুরু হয় ব্যক্তি স্বাধীনতার চর্চা। এই দর্শন ক্রমশঃ মানুষকে স্বার্থপর করে তোলে। মানুষ নিজেকে নিয়ে বড় বেশি মগ্ন হয়ে পড়ে। প্রথমে প্রশ্ন ওঠে, যার যার বিয়ের পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের অধিকার তো শুধুমাত্র তারই। এ অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে প্রণয়-অভিসারের চর্চা শুরু হয়। এখানেই থেমে থাকেনি। ব্যক্তি স্বাধীনতার পরবর্তী যুক্তি হলো, বিয়ের পরে মানুষ কি আর মানুষ থাকে না? তার মানে কি আর ভালোবাসা, কামনা-বাসনা থাকে না? সারা জীবন একজনকেই ভালোবাসতে হবে, একজনের সাথেই কাটাতে হবে - এ কেমন কথা! এ তো স্বাধীনতার বিপরীত কথা। কোন কোন মহলে সতর্কতার সাথে এসব কথা উচ্চারিত হতে শুরু করে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে জর্জ স্যান্ড এ দলের নেত্রী ছিলেন। যে সকল মৌলিক নীতি-বিশ্বাসের ওপর মানব সভ্যতা ও নারীর মান-সম্মান ও সতীত্ব নির্ভর করে, এ মহিলা তার সবই ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলে। সে বিবাহিত অবস্থায়ই অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক তৈরি করে এবং এর পরই সে তার প্রেমিক পরিবর্তনের খেলা শুরু করে।
ফ্রান্সের কবি আলফ্রেড মুসে তার অন্যতম প্রেমিক। সে জর্জ স্যান্ডের বিশ্বাসঘাতকতায় মর্মাহত হয়ে মৃত্যুর আগে অসিয়ত করে যায়, স্যান্ড যেন তার অন্তেষ্টিক্রিয়ায় থাকতে না পারে। দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে তার সাহিত্যের মাধ্যমে ফরাসী যুবক-যুবতীদের চরিত্র প্রভাবান্বিত হতে থাকে। তার রচিত উপন্যাসে লেলিয়ার পক্ষ থেকে সে ষ্টেনোকে লিখেছে ঃ জগতকে দেখার আমার যতটুকু সুযোগ হয়েছে, তাতে আমি অনুভব করি, প্রেম সম্পর্কে আমাদের যুবক-যুবতীদের ধারণা কত ভুল! প্রেম শুধু একজনের জন্যই হতে হবে অথবা তার মনকে জয় করতে হবে এবং তাও আবার চিরদিনের জন্য, এই ধারণা ভুল। যাবতীয় অন্যায় কল্পনাকেও নিঃসন্দেহে মনে স্থান দিতে হবে। আমি এ কথা মেনে নিতে প্রস্তুত, কতিপয় লোকের দাম্পত্য জীবনে বিশ্বস্ততার পরিচয় দেয়ার অধিকার আছে কিন্তু সিংহভাগ লোকই অন্যরূপ প্রয়োজন বোধ করে এবং তা অর্জনের যোগ্যতা তাদের রয়েছে। এর জন্য দরকার, নারী-পুরুষ একে অপরকে স্বাধীনতা দেবে, পারস্পরিক উদারতা দেখাবে এবং যেসব কারণে প্রেমের ক্ষেত্রে হিংসা সৃষ্টি হয়, তা অন্তর থেকে নির্মূল করবে। সকল প্রেমই সত্য। তা উগ্র হোক বা শান্ত, সকাম হোক বা নিষ্কাম, স্থায়ী বা অস্থায়ী, আত্মঘাতী বা সুখদায়িনী।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
৮৮৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Click this link
মন্তব্য করতে লগইন করুন