হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা ঃ পর্ব - ৩০
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ১৭ জুন, ২০১৪, ১১:৫৭:৩৪ সকাল
বক্তব্য ঃ
৩। ১৩ দফা বাস্তবায়িত হলে নারীরা ঘরে বন্দী হয়ে পড়বে। কাজেই এটা নারী অধিকারের পরিপন্থী।
বিশ্লেষণ ঃ
১৩ দফার কোথাও বলা নেই যে, নারীদেরকে ঘরে বন্দী করে রাখতে হবে। বরং হেফাজতে ইসলাম তাদের উল্লেখিত দাবীর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘দেশের নারী সমাজকে ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানী থেকে বাঁচিয়ে রেখে সর্বোপরি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই উপরোক্ত কর্মকান্ড বন্ধ করার দাবী জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। ইসলাম নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং যৌন হয়রানী থেকে বেঁচে থাকার জন্য হিজাব প্রথা বাধ্যতামূলক করেছে এবং পুরুষদেরকেও বৈধ সম্পর্কের বাহিরে নারীদের সাথে দৃষ্টি অবনত রেখে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে বলে চমৎকার ভারসাম্য রক্ষা করেছে। কাজেই হিজাব পালন করে অথবা যৌন উদ্দীপনা তৈরি করে না এমন শোভনীয় পোশাক পরে নারীরা নিরাপদ কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে বা ঘর থেকে বের হতে কোন বাধা নেই। ইসলাম নারীর নিরাপত্তার দিকটা কঠোর ভাবে দেখে কেবল সুযোগ সন্ধানীরাই এটাকে নারী অবদমন বলে প্রচার চালায়। আমাদের কথা পরিষ্কার যে, হিজাব বা শালীনতার সাথে নারীদের নিরাপদ পথচলাচল, শিক্ষার্জন ও কর্মক্ষেত্রে যেতে কোন বাধা নেই।’
আসলে যাঁরা এসব কথা বলছেন তাঁরা হয়ত পরিষ্কারভাবে জানেনই না যে, নারীদের প্রকৃত অধিকার কী? অধিকার সম্পর্কে অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া বলছে, Rights are legal, social, or ethical principles of freedom or entitlement; that is, rights are the fundamental normative rules about what is allowed of people or owed to people, according to some legal system, social convention, or ethical theory. Rights are of essential importance in such disciplines as law and ethics, especially theories of justice and deontology.
অধিকার সম্পর্কে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণামূলক নিবন্ধে বলছে, Right is the power or privilege to which is entitled or a thing to which one has a just claim. (সূত্র ঃ Thesis on womens rights in Bangladesh Perspective)
আবার নারীর অধিকার সম্পর্কে উইকিপিডিয়া বলছে, Women's rights are the rights and entitlements claimed for women and girls of many societies worldwide.
In some places these rights are institutionalized or supported by law, local custom, and behaviour, whereas in others they may be ignored or suppressed. They differ from broader notions of human rights through claims of an inherent historical and traditional bias against the exercise of rights by women and girls in favour of men and boys.
আসলে নারী অধিকার নিয়ে দাবী বা আন্দোলন আজ নতুন কোনো বিষয় নয়। আমরা যদি ইতিহাস পাঠ করি তাহলে এ ব্যাপারে অবশ্যই একটা স্বচ্ছ ধারণা লাভ হবে। সংক্ষেপে জানার জন্য নিচে দেখুন ‘ইভ্টিজিং - কারণ ও প্রতিকার’ গ্রন্থে নারী অধিকার ও তাদের আন্দোলনের ইতিহাস কী বলে।
আধুনিক যুগে সবচেয়ে বিপ্লবাত্মক এবং নীতিভ্রষ্ট যে আন্দোলন শুরু হয় তা হলো ‘নারী মুক্তি’ আন্দোলন। বিংশ শতাব্দীতে এসে এ আন্দোলন তথাকথিত উন্নতির চরম শিখরে উপনীত হয়েছে এবং এর ফলাফল প্রকৃত বিবেকবানদের কাছে অত্যন্ত স্বচ্ছ ভাবে পরিষ্ফুট হয়ে উঠেছে। আর এ নারী মুক্তি আন্দোলন ও মানবতার নামে অপরের অধিকারকে অস্বীকার এবং হরণ করা হচ্ছে। এমন কী যারা সত্যিকারের এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন না তাঁদেরকেও বিভিন্ন ছুতোয় বাধ্য করা হচ্ছে। এসব কাজে পশ্চিমা সমাজ এককভাবেই নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে বলা যায়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, যে আপদ থেকে রক্ষার জন্য আজ তারা মরিয়া ও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে, মুসলিম বিশ্ব তা-ই এখন সাদরে বরণ করে নিতে উদ্যত হয়েছে। পাশ্চাত্যের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণে আমরা এতটাই অভ্যস্ত ও আন্তরিক হয়ে উঠেছি! নারী মুক্তির নামে নারীদেরকে মিল-কারখানার কাজে টেনে আনা হচ্ছে এবং তাদের আনন্দময় পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তিকে নষ্ট করা হচ্ছে নানা রকম চিত্তাকর্ষক ও মোহনীয় শ্লোগানে। শুধু তা-ই নয় বরং আমাদের সামাজিক শৃঙ্খলা ভাঙ্গতে কৌশলে পুরুষদের বিরুদ্ধে নারীদেরকে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে।
মূলতঃ ধর্মহীনতার ফলে নারী জাতিকে যেভাবে মর্যাদাহীন করে তোলা হয়েছিল তার প্রতিবাদেই নারী মুক্তি আন্দোলনের জন্ম হয়। অথচ নারী মুক্তি আন্দোলনের নেতারা যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এর যাত্রা শুরু করেছিলেন খুব অল্প সময় পরেই তার সীমা লঙ্ঘিত হতে শুরু করল এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই পাশ্চাত্য জগত সংযম ও অমিতাচারের চরম সীমায় এসে পৌঁছাল। নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও অবাধ মেলামেশার কনসেপ্ট নিয়ে পাশ্চাত্য সমাজ দর্শন তৈরি হলো। সমান অধিকারের অর্থ কেবল মানবিক অধিকার ও নৈতিক মর্যাদার ক্ষেত্রেই নয় বরং সামাজিক জীবনেও এক হতে হবে। এর ফলে দাম্পত্য জীবনের দায়িত্ব,
সন্তান-সন্ততির লালন-পালন, গৃহ-ব্যবস্থাপনা, পারিবারিক সেবা আর নারীর কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না বরং তা স্বাধীন ব্যবসা থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে অফিস আদালত, কল-কারখানা, খেলাধূলা সব ক্ষেত্রেই পুরুষের প্রতিযোগী হিসেবে দাঁড় করাল। বিয়েই নারী-পুরুষের আত্মিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে এ বিশ্বাস হালকা হতে শুরু করল।
কর্মক্ষেত্রে যাবার ফলে নারী আর্থিকভাবে শক্তিশালী হলো ঠিকই কিন্তু এক সময় তাদের মধ্যে এ ধারণার সৃষ্টি হলো যে, আমি যদি সবই করতে পারি তবে শুধুমাত্র শারীরিক প্রয়োজন মেটাবার জন্য বিয়ে করে কারো অধীন হবার প্রয়োজন কী? বরং মুক্ত বল্গা থাকলেই তো যখন যার সাথে খুশী সে চাহিদা মেটানো যাবে, তাতে করে স্বাদেরও পরিবর্তন ঘটবে। জীবন এক ঘেঁয়ে না হয়ে তাতে নতুনত্ব আসবে, জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য সাধিত হবে। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার অধিকার নারীদের মধ্যে নগ্নতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও সৌন্দর্য প্রদর্শনের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে দিল।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১১৭১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন