হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা ঃ পর্ব - ২৯

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ১৫ জুন, ২০১৪, ০৪:০৯:৪৮ বিকাল

বক্তব্য ঃ

২। এটা মধ্যযুগীয় দাবী। এর সাথে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা মানলে দেশ মধ্যযুগে ফিরে যাবে।

বিশ্লেষণ ঃ

এই বক্তব্যটা আসলে একটু বিভ্রান্তিমূলক। আসলে মধ্যযুগীয় বলতে কোন্‌ সময়কে বুঝানো হয়েছে? এটা কী আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগ না কি রাসুল (সাঃ) এর যুগ কিংবা অন্য কোনো সময়? যা হোক, বক্তাগণ যদি এ বিষয়টি খোলাসা করে বলতেন তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বুঝতে সুবিধা হতো।

যদি আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগ বলা হয় তাহলে জানা প্রয়োজন আসলে এ সময়টি কখন ছিল? তখন সমাজের অবস্থা কী ছিল? ইতিহাস পাঠে যতটুকু জানা যায় তা হলো, আইয়্যামে জাহেলিয়াত এমন এক অন্ধকার যুগকে বলা হয়, যখন মানুষের মাঝে মানবতাবোধ, মনুষ্যত্ববোধসহ যাবতীয় মানবীয় গুণাবলী লোপ পেয়েছিল। কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট হলে তাকে জীবন- মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো। এক গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের যুদ্ধ, হানাহানি লেগেই থাকত। মদ্যপান থেকে শুরু করে জেনা-ব্যভিচারে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল চারদিক। হেন পাপ নেই যা তারা করতো না।

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার মধ্যে এমন কোনো ধারা নেই যার ফলে দেশ মধ্যযুগের সেই আইয়্যামে জাহেলিয়াত অবস্থানে ফিরে যাবার মতো কোনো সুযোগ আছে। বরং আমরা বর্তমানে যে সময় পার করছি তার অনেক কিছুই সেই আইয়্যামে জাহেলিয়াতের মতো, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও জঘন্য অবস্থা।

যদি তাদের বক্তব্য হয়ে থাকে, মধ্যযুগ বলতে রাসুল (সাঃ) এর যুগ তাহলে আমার মনে হয় শতকরা একশ জনই বলবেন যে, আমরা সেটাই চাই। কেননা সমগ্র সৃষ্টির ইতিহাসে রাসুল (সাঃ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়ের মতো এমন স্বর্ণযুগ আর কস্মিনকালেও ছিল না এবং আসবেও না। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সমস্ত অন্ধকার ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে মানুষকে সত্যিকারের আলোর পথ দেখানো এবং রাষ্ট্রকে কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার অনুপম নিদর্শন রয়েছে এখানে।

কেউ যদি মনে করে থাকেন রাসুল (সাঃ) শুধু নামাজ-কালাম শিখিয়েছেন কাজেই যখন নামাজ পড়ব তখন তাঁর নির্দেশ মানব, রাজনীতিতে আবার ধর্মীয় নির্দেশনা কীসের? তাহলে আমি বলব, তিনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কারণ তিনি আল্লাহর পবিত্র কালাম কুরআন এনেছেন আমাদের জন্য, যা সামগ্রিক একটা জীবন ব্যবস্থা এবং তার ওপর আমল করে শিখিয়ে দিয়েছেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তা কীভাবে ব্যবহার করতে হবে। একদম বাথরূম থেকে শুরু করে রাষ্ট্র চালানো পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে চমৎকার ব্যবস্থা। যাদের ভেতরে এ ব্যাপারে কিঞ্চিৎ পরিমান সন্দেহও আছে, তাঁদের প্রতি অনুরোধ - জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একবার অন্তত আন্তরিকভাবে তাঁর বিধানাবলী প্রয়োগ করেই দেখুন সত্যিকারের শান্তি আসে কি না?

ঘড়ির কাঁটাকে কখনো পেছনে ছুটানো যায় না। তবে সকলের বুঝার সুবিধার জন্য একটি বিষয় আলোচনা করা প্রয়োজন। আগের দিনে যখন চাবি দেয়া ঘড়ি ব্যবহার করা হতো তখন প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘড়ির চাবিতে উল্টাদিকে পাক ঘুরাতে হতো। এর ফলে ঘড়ির সিপ্রং সংকুচিত হবার ফলে এক ধরণের শক্তি বা এনার্জি সেখানে তৈরি হয় যা ঘড়ির কাঁটাকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টা ঠিক মতো চলতে শক্তি জোগায়।

যদি ফুটবল মাঠে কোনো খেলোয়াড়কে খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করা যায়, তাহলে দেখা যাবে সে ফুটবলে শট দিবার আগে তার পা‘কে পেছনে কিছুদূর পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে, এরপর সে বলে শট নিচ্ছে। তার অর্থ, বলে সে যে শক্তিতে শট দিচ্ছে সে শক্তি অর্জনের জন্য তাকে তার পা পেছনে কিছুদূর নিতে হচ্ছে। আমরা যদি সৃষ্টির যে কোনো কিছুর মাঝেই লক্ষ্য করি তাহলে একই অবস্থা দেখতে পাবো সব জায়গায়।

মোট কথা হলো, প্রকৃতিগত কারণে সবকিছু পেছনে গিয়ে শক্তি অর্জন করে সে শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সামনে অগ্রসর হয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব মুহম্মদ (সাঃ) আনীত বিধান সর্বকালের জন্য অনুপম আদর্শ এবং শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা। সুতরাং, সেখান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে সামনে এগোবার পথ তৈরি নিশ্চয় জাতিকে কোনো অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যাবে না। আর আমাদের আর্থ-সামাজিক যে অবস্থা তাতে এ মুহুর্তে এটার কোনো বিকল্প নেই।

যে দাবী বাস্তবায়িত হলে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, সাম্যের সমাজ ব্যবস্থা বিরাজ করবে তা দেশকে পিছিয়ে দেয় কীভাবে তা সচেতন কোনো মানুষের মাথায় আসে না। আধুনিক বিজ্ঞান এত ব্যাপক বিস্তার লাভ করার পর যখন মানুষ স্বপ্ন দেখছে অন্য কোনো গ্রহে বসতি স্থাপনের, বিজ্ঞান ছুটে চলেছে আমাদের জানাশোনা সীমার বাইরে আরো কী আছে তা খুঁজে বের করতে, যখন ইসলাম ধর্ম বিরোধীরা বিশ্বব্যাপী ইসলামের মূল্যবোধকে ধ্বংস করতে আদাজল খেয়ে লেগেছে তখনও তারা প্রমাণ করতে পারেনি যে, রাসুল (সাঃ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনকাল ব্যর্থ ছিল, তাঁরা সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছিলেন কিংবা রাষ্ট্রকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিলেন। অথচ আমাদের দেশের তথাকথিত পদলেহনকারী বুদ্ধিজীবিগণ বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক কিংবা সংকীর্ণ রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা থেকেই হোক তাঁরা এ জাতীয় কথা বলতে কোনো দ্বিধা করছেন না।

সাধারণ মানুষের মাঝে আজ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে কী এসব ব্যক্তি অহেতুক এ ধরণের জুজুবুড়ির ভয় দেখিয়ে দেশে সত্যিকারের ইনসাফ কায়েমে বাধা দিচ্ছে নিজেদের স্বার্থহানীর ভয়ে?

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

৯৯৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

235161
১৫ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মধ্যযুগ বা মিডল এহজ বলতে যে সময়কাল বুঝায় সে সময় ইউরোপ ছিল অজ্ঞনতায় আচ্ছন্ন। অন্যদিকে ইসলামি দুনিয়া এবং প্রাচ্য ছিল সভ্য ও উন্নত। মধ্যযুগিও বলে যারা দাবি করে তাদের বুঝা উচিত এই দাবিগুলির জন্যই তখন ইসলামি দুনিয়া সাফল্যের শির্ষে উন্নিত হয়েছিল।
১৬ জুন ২০১৪ সকাল ১০:০৬
181915
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : জ্বী ভাই। এ সামান্য বুঝটুকুই ওদের নাই।
235642
১৭ জুন ২০১৪ রাত ০২:৩৯
সাদাচোখে লিখেছেন : আপনার, ঘড়ির কাটা পেছনের দিকে ঘুরানো আর ফুটবলে শর্ট দেবার আগে পা পেছন দিকে নেবার যুক্তি - বেশ চমৎকার হয়েছে। আগে শুনিনি।

মূলতঃ ইয়াহুদীরা আল্লাহর বিধান হতে রিচ্যুয়াল/শরীয়া সমূহকে আকড়ে ধরে কিংবা প্রাকটিশ করে ভাবছে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে ফেলছে। আর খৃষ্টানরা আল্লাহর বিধান হতে শরীয়া বাদ দিয়ে আকিদা (যদিও মেইন স্ট্রীমের সব গ্রুপ ই বিকৃত ধারনা লালন করছে) আকড়ে ধরে ভাবছে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে ফেলছে। ইদানিং আমাদের মধ্যেও অনেকে শরীয়া কে এ্যামপাসাইজ করছে আর কেউ বা আকিদাকে। মূলতঃ ইসলাম আকিদা ও শরীয়াকে সমান তালে অগ্রসর করেছে, পরিপূরক করেছে আর হজরত মোহাম্মদ সঃ তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে - এটা শুধু থিউরী নয়, এটা বাস্তবায়ন যোগ্য। এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য পাবার জন্য একমাত্র পথ।
১৭ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:২৮
182180
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : খুবই প্রাণবন্ত এবং উপভোগ্য একটি মন্তব্য। খুব ভালো লাগল।

ভিশু ভাই পরিকল্পিত রমজানের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করছ তো?
১৮ জুন ২০১৪ রাত ০১:৪৬
182601
সাদাচোখে লিখেছেন : সরি, আমি জানিনা তো। আমি ওনার কোরআন নিয়ে একটা লিখা পড়েছিলাম গতকাল।

এখন আবার দেখবো। গঠনমূলক যে কোন কিছুর সাথে থাকতে আমার কোন সমস্যা নেই।
১৮ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
182638
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : খুব জমছে সেখানে। অনেকে অংশগ্রহণ করছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File