হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা ঃ পর্ব - ২৮

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ১৩ জুন, ২০১৪, ০৭:৪৭:৫৫ সন্ধ্যা

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় তখন মাগুরার উপনির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় এবং আজকের এই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দল সরকারের অধীনে নির্বাচন করা নিরাপদ মনে করে না। এর প্রেক্ষিতে প্রথমে জামায়াতে ইসলামী এবং পরে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নতুন ফর্মুলা আবিষ্কার করে সরকারকে তা মেনে নেবার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। শুরু হয় ভীষণ আন্দোলন। তখনকার এ আন্দোলন ও দাবী কী অসাংবিধানিক ছিল না? কোথায় ছিলেন তখন আজকের এসব বুদ্ধিজীবিরা? তখন কেন আপনারা বলেননি যে, এটা একটা অসাংবিধানিক আন্দোলন? আজকে যারা হেফাজতের দাবীকে অসাংবিধানিক বলে হেফাজতে ইসলাম রাষ্ট্রদ্রোহের মতো কাজ করেছে বলে বিভিন্ন মিডিয়া তোলপাড় করে ফেলছেন তাদের অনেকে তো সেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন করেছিলেন। তখন আপনাদের মনে ছিল না যে, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক একটা দাবীতে আন্দোলন করছেন?

এভাবে যদি আলোচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, আমাদের সংবিধানের প্রতিটি সংশোধনের আগেই যে ইস্যু সামনে এসেছে অর্থাৎ যার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করতে হয়েছে তার সবই ছিল তৎকালীন প্রেক্ষিতে অসাংবিধানিক।

১৩ দফা দাবীর মধ্যে এমন কোনো বিষয় নেই যা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আসলে কী ছিল? কোন প্রেক্ষিতে এবং কী লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল? মুক্তিযুদ্ধ কী হয়েছিল একটা স্বাধীন দেশে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে পঙ্গু হওয়া মুক্তিযোদ্ধা অর্থের অভাবে বৃদ্ধ বয়সেও রিক্সা চালিয়ে জীবন চালাবেন আর স্বাধীনতার বিরোধী রাজাকার, আলবদররা বীরদর্পে পতাকা লাগানো গাড়িতে ঘুরবেন, বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্যের মালিক হবেন তার জন্য? তাঁরা কী যুদ্ধ করেছিলেন চাইলেই একজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা সাজতে পারবেন আর ইচ্ছামত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার ঘোষণা দেয়া যাবে তার জন্য?

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কী ছিল? আজকের নতুন প্রজন্মকে গোয়েবলসীয় থিওরীতে বোকা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁদের কোনো অবদানই ছিল না তাঁরাই আজ কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন। গত ৭ এপ্রিল ২০১৩ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল (অবঃ) আইনুদ্দীন বীরপ্রতীক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে কারোর দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির অধিকার নেই। তখন যাদের যুদ্ধ করতে হয়নি, এখন তারা দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করল কেন? নবম বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন ফ্রন্টফাইটার হিসেবে নিজের অধিকার নিয়ে আমি কথা বলছি। কোন্‌ অধিকার বলে তাঁরা কথা বলছেন? শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুনরা একাত্তরে কি নাবালগ ছিলেন? তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে যাননি কেন? আজ তাঁরা কোন মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছেন?

মূলতঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমি যা বুঝি তা হলো, দীর্ঘদিন যাবত পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত হতে হতে সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরণের প্রতিশোধের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিল। এ সবেরই পটভূমিতে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ যেন পূর্ব পাকিস্তানের সকলের চোখ খুলে দিল। প্রশ্ন দেখা দিল,

দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের। পরবর্তীতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন পথ পরিক্রমায় ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবী পেশ করেন (৫ ফ্রেব্রুয়ারী ১৯৬৬)। অন্যদিকে পূর্ব বাংলার সংগ্রামী ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত হয়েছিল ১১ দফা কর্মসূচি (১৪ জানুয়ারী ১৯৬৯)।

(বাংলাদেশের রাজনীতি ঃ প্রকৃতি ও প্রবণতা - ২১ দফা থেকে ৫ দফা)

উপরের বিশ্লেষণ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ১৩ দফা মেনে নিলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নষ্ট কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ ধ্বংস হবে বলে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা আসলে সাধারণ মানুষকে জুজুবুড়ির ভয় দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। পাশাপাশি যারা এর প্রবক্তা তাদের ঈমান নিয়েও সন্দেহ সৃষ্টির দরজা অবারিত হয়ে যায়।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১২৯৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

238310
২৪ জুন ২০১৪ দুপুর ০১:৪৪
আমি মুসাফির লিখেছেন : ১৩ দফায়তো নাস্তিকদেরই অসুবিধা হবে এবং তথকথিত প্রগতিশীরদেরও তাই নানা টালবাহানা করে ্টাকে নস্যাৎ করাই চাই।
২৪ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:০১
184759
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, ভাই আমি মুসাফির। যাদের সমস্যা হবে তাদেরই গা জ্বালা বেশি। এটা তো বুঝতে হবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File