হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা ঃ পর্ব - ২৭
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ১২ জুন, ২০১৪, ০২:৩৬:২০ দুপুর
১৯৭৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে স্বপরিবারে হত্যার পটভুমিতে খন্দকার মুশতাক আহমেদ ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারী করে নিজের গদি পোক্ত করার চেষ্টা চালান। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এ অধ্যাদেশকে আইন আকারে স্বীকৃতি দেন এবং একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন। পঞ্চম সংশোধনীর আগে বহুদলীয় ব্যবস্থা অসাংবিধানিক ছিল কি না? উত্তর হচ্ছে, ছিল কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থে এ পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল।
স্বৈরশাসকের পুরো সময়ে যত পরিবর্তন হয়েছে তা সবার জানা আছে। প্রতিবারই প্রয়োজন হয়েছে আর পরিবর্তন করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে যখন গণতন্ত্র উদ্ধার হলো এইচ এম এরশাদের কাছে থেকে, তখন বিরোধী দুই জোটের (৭ ও ১৫ দল) দাবী ছিল, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে অস্থায়ী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তখনকার সংবিধানে অস্থায়ী সরকারের কোনো রূপরেখা না থাকায় মারাত্মক একটা জটিলতা দেখা দেয়। যার ফলশ্রুতিতে এরশাদ সাহেবের মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম বলেছিলেন, ক্ষমতা তো একটা কাগজ নয় যে, জিরো পয়েন্টে তা উড়িয়ে দেয়া যাবে।
পরবর্তীতে জাতির প্রয়োজনে এহেন ক্রান্তিলগ্নে সমস্ত নেতা-নেত্রীরা একত্রে বসে একটি ফর্মুলা বের করেন যার মাধ্যমে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ পদত্যাগ করবেন। তখন প্রেসিডেন্ট শূন্য পদে বিচারপতি সাহাবউদ্দিনকে আহমেদকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন দেবেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট শপথ নেবার পর প্রেসিডেন্ট এরশাদ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাহাবউদ্দিন আহমেদের কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করবেন। এবং সেভাবেই তখন সমস্যার সমাধান করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো, এ ধরণের অস্থায়ী সরকারের ব্যবস্থা দ্বাদশ সংশোধনীর আগে পর্যন্ত ছিল না। তাহলে এটা কী অসাংবিধানিক পদ্ধতি ছিল না? আবার যেহেতু সাহাবউদ্দিন সাহেব ক্ষমতায় নয় বরং তাঁর অস্থায়ী দায়িত্ব পালনের পর তাঁর পূর্ব কর্মে অর্থাৎ প্রধান বিচারপতির ভূমিকায় ফিরে যেতে আগ্রহী ছিলেন, তাই তিনি বিরোধী জোটকে শর্ত দিয়েছিলেন তাঁরা যদি সর্বসম্মতিক্রমে সংবিধান সংশোধন করে এটার ব্যবস্থা করেন তাহলেই তিনি অস্থায়ী সরকারের প্রধান হতে রাজী আছেন। উল্লেখ্য যে, বিরোধী জোট তখন বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঝরাতে সংবিধান সংশোধন করে দেশ ও জাতিকে অন্ধকার থেকে উদ্ধার করেছিলেন। প্রশ্ন হলো, বিচারপতি সাহাবউদ্দিন সাহেবের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও বিজ্ঞ একজন ব্যক্তি কী জানতেন না যে, তাঁর দাবী অসাংবিধানিক তথা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক? সেদিন বিরোধী জোটের নেত্রীদ্বয় কীভাবে সেই অসাংবিধানিক আবদারকে মেনে নিয়েছিলেন এবং সে অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করেছিলেন?
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১১৫১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছু হয় যেটা স্বাভাবিক। কিছু মানব রচিত বিধানের দোহাই দিয়ে সব কিছু নিয়ন্ত্রন করা যায়না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন