বনভোজন
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২৮ মে, ২০১৪, ০৪:৪১:২৫ বিকাল
এক দেশে একটি বিশাল জঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গলে ছিল হাজার হাজার হরিণ। সেই হরিণগুলোর মধ্যে একটি ছিল সোনার হরিণ। একদিন একটি হরিণ তেষ্টার জল খুঁজতে লাগল।
জঙ্গলের ভেতরে খুঁজতে খুঁজতে হরিণটি একটি পুকুরের নাগাল পেল। সে দৌড়ে গিয়ে জল পান করল। এমনিতেই হরিণটি তৃষ্ণার্ত ছিল, জল দেখে তার তৃষ্ণা আরো বেড়ে গেল। জল খেতে খেতে পরিসি'তি এমন পর্যায়ে দাঁড়ালো যে হরিণটির শরীর ভারী হয়ে গেল। সে মাটির সঙ্গে শরীর এলিয়ে দিল। এমন সময় সোনার হরিণটি পুকুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হরিণটিকে দেখে সোনার হরিণটি এগিয়ে এলো। সে দেখল এতো তারই বন্ধু বুম্বু।
সোনার হরিণটি বন্ধু বুম্বুকে ওঠালো। তারপর থেকে গল্পের শুরু।
- কীরে বুম্বু? এভাবে মাটির সঙ্গে শরীর এলিয়ে দিয়ে আছিস কেন?
- আর বলিস না, তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছিল। তাই ঘুরতে ঘুরতে এসে এই পুকুরের দেখা পেলাম। আমি এতো জল খেয়ে ফেলেছিলাম যে, আর একটা সময়ও দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। পড়ে গেলাম।
- ঠিক আছে, এখন ভাল লাগছে তো?
- হ্যাঁ, এখন ঠিক আছি।
- এবার শোন, আমি ঠিক করেছি আমরা ৩০/৪০ জন মিলে একটি বনভোজনের আয়োজন করব।
- এটা অতি উত্তম প্রস্তাব। অন্য সবাইকে বলেছিস?
- হ্যাঁ, বলেছি। তোকে বলাটাই বাকি ছিল। তাই তোকে বলতে তোর ঘরে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম তুই ঘরে নেই। এদিক দিয়ে ফিরে যাবার সময় দেখলাম তুই এখানে।
- বনভোজনটা কোথায় হচ্ছে এবং কবে হচ্ছে?
- এটি হচ্ছে নদীর ওপারে। আর কালই আমরা করতে চাই।
- দারুণ সংবাদ। ওহ্, দেখেছিস বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো অথচ কেউই টের পেলাম না।
- চল, বাড়ি ফিরি। নাহলে সবাই টেনশন করবে।
- হ্যাঁ চল।
এই বলে দুই বন্ধু হাতে হাত ধরে রওনা দিল বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়ি যেতে যেতে তাদের কথা হলো অভিভাবকরা রাজি হবেন কি না .......
ভাবতে ভাবতে কখন যে তারা বাড়ি পৌঁছে গেছে লক্ষ্যই করেনি। যে যার ঘরে গিয়ে তাদের অভিভাবকদের কথাটা জানালো। অভিভাবকরা প্রথমে একটু বেঁকে বসল। এত ছোট বাচ্চাগুলো একা একা অচেনা অজানা জায়গায় গিয়ে কিছু যদি করে বসে তাহলে তাদের দুঃখ কেউ বুঝবে না।
- ও মা, কি ভাবছ? প্রশ্ন করে বুম্বু।
বুম্বুর প্রশ্নে চুপসে যায় মা লীলা। জানে না সে ছেলের এরকম প্রশ্নে কী জবাব দেবে?
- মা, কথা বলছ না কেন? আবারও জিজ্ঞাসা করে বু্ম্বু।
- কোথায়? ছোট্ট জবাব লীলার।
- তাহলে এতক্ষণ ধরে আমি কথা বলছি, তুমি বলছ না কেন?
- এমনি।
- মিথ্যা। তুমি নিশ্চয় আমাদের যেতে দেবে না।
- তুমি জানলে কীভাবে?
- তুমি তো তাই ভাবছ। আমাকে কেন যেতে দেবে না মা?
- দেখ বুম্বু, তোমরা অতি ছোট হরিণ শাবক। এই অবস'ায় আমি কেন অন্য কোন বাবা মা‘ই কোন বাচ্চাদের একা একা এরকম অচেনা অজানা জায়গায় যেতে দেবেন না। চারদিকে কত বাঘ, ভাল্লক, সিংহ আরো কত হিংস্র প্রাণী!
- তাহলে তুমি সবার বাবা মা‘র সাথে কথা বল।
নানাভাবে জোরাজোরির পর যখন লীলার মুখে একটাই উত্তর ‘না’, তখন বুম্বু তা সহ্য করতে না পেরে কান্নাকাটি শুরু করল।
পরিসি'তি সামলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে লীলা যায় সবার সাথে কথা বলতে।
- আপা, একটু বাইরে আসবেন?
- জ্বে আফা, কী কন? খাড়ান আইতাছি। দিপ্পীর মা এভাবেই কথা বলেন।
কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে লীলা দেখল দিপ্পীর মা আসছেন। লীলা তাকে সালাম জানালে সেও সালামের জবাব দেয়।
-জ্বে আফা কন, কী কইবেন?
- জ্বি, আপনি কেমন আছেন?
- গরীবের আবার ভালা থাকা.....
- সবসময় নিজেকে গরীব বলেন কেন? আপনি কি গরীব?
- বাদ দ্যান হেই সব কথা। কি জানি কইবার আইছিলেন?
- ও হ্যাঁ, আপা আপনি কি শুনেছেন বাচ্চারা সবাই মিলে প্ল্যান করে বনভোজনের আয়োজন করেছে?
- জ্বে আফা, হুনছি। তয় পোলাপানগোরে এ্যাকলা ছাড়ন ঠিক না।
- আপা, আমি এসেছি এই জন্যেই। বুম্বুর জেদের ঠেলায় আমি এসেছি।
- আফা, ছলেন বাহি পোলাপানগোর বাপ মা কি কয়?
- চলেন।
তারা সকলের মা বাবার সাথে কথা বললেন। তাদেরও এক মত, বাচ্চাকে একা যেতে দেয়া যাবে না। গেলেও সাথে বড় একজনকে যেতেই হবে। না হলে বাচ্চারা হারিয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত সবার মতে সিদ্ধান্ত হলো গেলে বড় একজনকে নিয়ে যেতে হবে। তখন বুম্বুর মা বলল, বড় যদি কেউ একজন যায় তাহলে বাকিরা কি দোষ করল?
অনেকে কানাঘুষো করে বলল, ঠিক আছে, আমরা সবাই মিলে নদীর ওপারে বনভোজনে যাব। বাচ্চারা আনন্দে লাফিয়ে উঠল।
পরদিন খুব মজা করতে করতে তারা বনভোজনে গেল এবং সারাদিন হৈ চৈ করে আনন্দ করে ফিরে এল। তারপর বাচ্চারা যার যার হোমওয়ার্ক শেষ করে লক্ষী বাবুর মতো ঘুমিয়ে পড়ল।
(আজ থেকে ২ বছর আগে আমার ছোট্ট মামণিটা যখন ক্লাস ফাইভে পড়ত তখন তার লেখা একটা গল্প। তার খুব শখ, একটা গল্পের বই লিখবে। আমি বরাবর তাকে উৎসাহ দিয়ে আসছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, তার লেখার একটা গতি তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমার ব্লগার ভাইবোনদের মূল্যবান মতামত জানতে চাই।)
বিষয়: বিবিধ
১৫১৩ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিক্ষাটি তো ভালোই! ট্যালেন্ট মামনিটাকে আমাদের আদর, অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা দিবেন! ওর জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো! লিখতে বলবেন এবং পোস্ট করিয়ে দিবেন আরো আরো!
মন্তব্য করতে লগইন করুন