হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা ঃ পর্ব - ২২

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২৭ মে, ২০১৪, ০৪:৪৪:৩৮ বিকাল

আইন মন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, সরকারের কাছে ১৩ দফার একটিও গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর মধ্যে একটিরও সাংবিধানিক ও আইনগত কার্যকারিতা নেই। এসব দাবী দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। তাই এসব দাবী পূরণের উদ্যোগ নেয়ার আইনি অধিকার সরকারের নেই। তিনি আরো বলেন, সংবিধান ও প্রচলিত আইনের আলোকে পর্যালোচনা করে আমরা তো হেফাজতের একটি দাবীও গ্রহণযোগ্য বলে দেখছি না। তাঁরা বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার প্রতিরোধের দাবী করেছেন। এ ব্যাপারে তো আইন রয়েছে। তাঁরা নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণের বিরুদ্ধে বলেছেন। এটা তো এই যুগে সম্ভব নয়। এখন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক। পুলিশ, সেনাবাহিনীতে নারীরা যোগ দিচ্ছেন। এ ধরণের দাবী তো মধ্যযুগেরও আগের। সেটা এখন চলবে না। (দৈনিক প্রথম আলো, ১১ এপ্রিল ২০১৩, অনলাইন সংখ্যা)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মানব সভ্যতার এগিয়ে আসার পেছনে নারী-পুরুষ সবারই সমান অবদান রয়েছে। যারা নারীদের অবরুদ্ধ করতে চায় তারা আসলে দেশের প্রগতি এবং উন্নয়নের পরিপন্থী। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নারী সমাজকে পিছিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র রুখে দিবে।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, অগ্রগতিতে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের সমৃদ্ধির পথে উভয়ের সমন্বিত প্রয়াসে চলছে সব কর্মকান্ড। নারী হিসেবে আমাদের প্রাপ্য অধিকার খর্ব করার অধিকার আমরা কাউকে দেইনি।

সমাবেশে ঘোষণা পত্রে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষা নাজমা শাহীন বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী। এই ১৩ দফা প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দেন তিনি। (দৈনিক কালের কন্ঠ, ১১ এপ্রিল ২০১৩, অনলাইন সংখ্যা)

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের ঘরে আটকে রাখতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব। নারীদের জন্য আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তাই সজাগ থাকতে হবে। (দৈনিক প্রথম আলো, ১৯ এপ্রিল ২০১৩, অনলাইন সংখ্যা, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ এপ্রিল ২০১৩)

বাংলাদেশ ইমাম ওলামা সমন্বয় ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইসমাইল হোসেন বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম যে ১৩ দফা দাবী করেছে তা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। এটি জামায়াতের সৃষ্টি। (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ এপ্রিল ২০১৩)

নির্মুল কমিটির নেতারা বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর প্রত্যেকটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরণের দাবী জানিয়ে তারা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছে। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট প্রমোদ মানকিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা হতাশ নই, কিন্তু কিছুটা আতঙ্কিত। হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ইসলামের হেফাজত করা একমাত্র আল্লাহর দায়িত্ব। তাঁর দায়িত্বে অংশগ্রহণের কথা শয়তান ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না। হেফাজতের ১৩ দফা বাংলার মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়ার একমাত্র দফা। তাদের কোনো দাবীর একটাও ইসলাম সমর্থন করে না। আয়েশা খানম বলেন, হেফাজতের মতো মৌলবাদী সংগঠনগুলো যাতে গড়ে উঠতে না পারে সে জন্য শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন, নারীনীতির বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরী। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, হেফাজতে ইসলাম নামটাই শিরক। একটা শিরক নাম ধারণ করে কেউ মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকবে তা হতে পারে না। সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন শুধু সরকার বিরোধী নয়, এটা রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলন। সরকারের একটি অংশ যারা দেশের উন্নতি চায় না, নারী প্রগতিতে বিশ্বাস করে না, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিশ্বাস করে না তারা হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে। কিন্তু তা হতে দেয়া হবে না। ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর প্রত্যেকটাই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, হেফাজতের দাবীসমূহ রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের শামিল। (দৈনিক জনকন্ঠ, ২১ এপ্রিল ২০১৩, অনলাইন সংখ্যা)

আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ফ্রি-ষ্টাইলে যে যার মতো করে দাবী-দাওয়া তুলে ধরবে, আর সরকার তা বাস্তবায়ন করবে তা হবে না। কেউ ইসলামের বরখেলাপ করছে কি না এটা দেখবে রাব্বুল আলামিন। ইসলামকে হেফাজত করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২১ এপ্রিল ২০১৩)

আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবী দিয়েছে। তাদের এ দাবী আমরা পূরণ করব কেন? জনতার রায় নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে তাদের দাবী বাস্তবায়ন করতে হবে। (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২১ এপ্রিল ২০১৩)

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ধর্মের অপব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে হেফাজত। কিন্তু এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রের বাইরে যেতে চায় না। যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের ঘরে আটকে রাখতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব। (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২১ এপ্রিল ২০১৩)

প্রতিবাদী নারী গণসমাবেশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নারী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, বাংলাদেশে যতদিন পর্যন্ত একজনও নারী কর্মজীবী থাকবেন, ততদিন পর্যন্ত এ দেশে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা মানতে দেয়া হবে না। (দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৬ এপ্রিল ২০১৩, অনলাইন সংখ্যা)

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১০৪৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

227319
২৮ মে ২০১৪ সকাল ১১:০৭
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : তাহলে হাম্বা বাচুরদের পিঠে আরোহণ করা ধর্মীহীন আবালগুলোই ইসলামের হেফাজত করতে একমাত্র ষোল এজেন্ট?
২৮ মে ২০১৪ দুপুর ০১:২১
174266
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : ঠিক বুঝলাম না ভাই।
228271
৩০ মে ২০১৪ দুপুর ১২:২৮
আমি মুসাফির লিখেছেন : উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, অগ্রগতিতে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের সমৃদ্ধির পথে উভয়ের সমন্বিত প্রয়াসে চলছে সব কর্মকান্ড। নারী হিসেবে আমাদের প্রাপ্য অধিকার খর্ব করার অধিকার আমরা কাউকে দেইনি।
এসব মহিলা যদি মুসলমানী বা ্সলামের দৃষ্টিতে বিষয়টি দেখত তাহলে হেফাজতে ইসলামীর সাথে এক মতই পোষণ করতেণ।
৩০ মে ২০১৪ দুপুর ০২:১৩
175087
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : নারীর অধিকার কে খর্ব করল? ইসলাম? নাকি তথাকথিত আধুনিক সভ্যতা?
নারীকে ইসলামের মতো এত সম্মান আর কে দিয়েছে?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File