হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা ঃ পর্ব - ৮
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ২৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:৩৬:২৮ বিকাল
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা ঘোষণার পরপরই বিরুদ্ধবাদীরা এমন কী সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে বিষোদগার করা শুরু হলো। বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এর অপব্যাখ্যা করে প্রচার চলতে থাকল। বিভিন্ন চ্যানেলে মাঝরাতের টক শো‘তে উপস্থিত ব্যক্তিগণ বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পর্কিত দাবীর ভুল ব্যাখ্যা ও উপস্থাপন শুরু করলেন। অবশেষে সকলের ভ্রান্ত ধারণা নিরসনকল্পে হেফাজতে ইসলাম তাদের ঘোষিত ১৩ দফার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি লিফলেট প্রচার করে সাধারণ মানুষের মাঝে এবং পরবর্তীতে দৈনিক পত্রিকায় এ ব্যাখ্যা প্রকাশ করে। তাদের ব্যাখ্যা নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো।
ব্যাখ্যা ঃ ১
বাংলাদেশ মসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ দেশের জনসংখ্যার ৯০ ভাগই মুসলমান। আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস মুসলমানদের ঈমানের প্রধান বিষয়। এ দেশের মানুষ ধর্মপরায়ণ এবং তাদের ধর্মীয় চেতনা অত্যন্ত শানিত। আযানের ধ্বনিতে এ দেশের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে। ইসলামের আচার-আচরণ, সংস্কৃতি তাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এ বিশাল ধর্মপ্রান জনগণের বিশ্বাস, চিন্তা চেতনার প্রতিফলন হিসেবেই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসকে সংবিধানের প্রধান মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে মহাজোট নেতৃত্বাধীন এবং বামপন্থীদের প্রভাবাধীন বর্তমান সরকার কারো মতামতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করে। সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়ে তদস্লে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি যুক্ত করে। সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একতরফাভাবে এ কাজটি করে দেশকে ধর্মহীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করেছে, যাতে বামপন্থী ও নাস্তিক ও ধর্মবিদ্বেষীদের বহুদিনের পুরোনো আকাঙ্খা পূরণ হয়। এর মাধ্যমে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানের উপর প্রচন্ড আঘাত হানে সরকার। দেশের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখসহ দল মত নির্বিশেষে সব মানুষ এর প্রতিবাদে ফেটে পড়েন এবং হরতালসহ নানা কর্মসূচী পালন করে আসছেন। কিন্তু সরকার কারো কোন দাবীর প্রতি কর্ণপাত করছে না। এরপর সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির আলোকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে শুরু করে। ইতিমধ্যেই যার প্রতিফল আসতে শুরু করেছে। পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিরোধী বক্তব্য সংযোজন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বইয়ে অশালীন যৌন শিক্ষা বিষয় যুক্ত করা এবং ধর্মীয় চেতনা ধ্বংস, অপসংস্কৃতি বিস্তারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। দেশে নাস্তিক্যবাদের বিস্তার এবং ধর্ম অবমাননা ভয়াবহ রূপে দেখা দেয়, যা জাতি ইতোমধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছে। এ কারণে সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি পুণঃস্থাপনে এ দেশের তৌহিদি জনতা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে রাজপথে নেমেছে। হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত যৌক্তিক কারণেই দেশের মানুষের ঈমান-আকীদা ও চিন্তা-চেতনার সাথে জড়িত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তাদের প্রধান দাবী হিসেবে পেশ করেছে। এরই মধ্যে ৬ই এপ্রিল লংমার্চের মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি মানুষ এ দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সরকারী বাধা উপেক্ষা করে ঢাকার মহা সমাবেশে জড়ো হওয়া লাখ লাখ তৌহিদি জনতার সাথে সারা দেশের মানুষ এ দাবীসহ ১৩ দফা দাবীর প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এটি এখন তৌহিদি জনতার প্রাণের দাবী। এ দাবী অত্যন্ত পরিষ্কার ও যৌক্তিক।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১০৭৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন